এক ধরণের দিনলিপিও বলা যায়
১.
ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রো স্টেশনে লোকটি বেহালা বাজাতে শুরু করলো। জানুয়ারির সকাল। তিনি ৪৫ মিনিট ধরে বেহালা বাজালেন। ব্যস্ত সময় তখন। ওই ৪৫ মিনিটে ১১শ' মানুষ স্টেশনে এসেছিল। কিন্তু সবাই ব্যস্ত। তিন মিনিট পরে একজন বৃদ্ধ চলতে গিয়ে একটু থামলেন, তার দ্রুত চলে গেলেন। এক মেয়ে চলার পথে একটা ডলার রেখে গেলেন। একজন কয়েক সেকেন্ড থেমে বেহালা বাদন শুনে চলে গেলেন। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বেহালা শুনলো তিন বছরের এক শিশু। কিন্তু মা তাকেও নিয়ে গেলেন।
ওই ৪৫ মিনিটে মাত্র ৬ জন খানিক সময়ে থেমেছিলেন, ২০ জন চলার পথে অর্থ দেওয়ায় বেহালা বাদক পেলেন ৩২ ডলার। যখন বেহালা থামিয়ে লোকটা চলে গেল, কেউ তা খেয়ালও করলো না।
পুরো বেহালা বাদনের আয়োজন করেছিল ওয়াশিংটন পোস্ট। মানুষের পছন্দ ও অগ্রাধিকার নিয়ে একটা জরিপের অংশ হিসাবে।
বেহালা বাদক হলেন জশুয়া বেল। এই সময়ের সেরা বেহালা বাদক। এর দুইদিন আগে তিনি বস্টন থিয়েটারে বেহালা বাজিয়েছেন, টিকেটের গড় মূল্য ছিল ১শ ডলার, প্রতিটি টিকিটই বিক্রি হয়ে যায়। অথচ মেট্রো স্টেশনে তাঁরই বেহালা বাদন কেউ শুনলো না।
আমরা যখন খুব ব্যস্ত থাকি, তখন কি সৌন্দর্য খুঁজি? ভাল কিছু দেখলে প্রশংসা করার সময় পাই?
উপসংহার হল, আমরা যদি সামান্য সময় বের না করে বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবি মানুষটির বেহালা না শুনি, তাহলে ভাবুন তো অতি ব্যস্ততার কারণে কত কিছুই না আমরা মিস করি।
জশুয়া বেলের মেট্রো স্টেশনের ওই বেহালা বাদন যাদের ইউটিউব আছে সহজেই শুনতে পারবেন।
অতি ব্যস্ততার কারণে আমরা সবাই যে ভাল ভাল অনেক কিছু মিস করি তা কিন্তু ঠিক না। আবদুল মান্নান সৈয়দ মারা যাওয়ার পর একটি বই প্রকাশ হয়েছে, নাম মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়। সেখানে তাঁর এক বন্ধুর কথা লিখেছেন তিনি। সেই বন্ধুটিকে তাঁর মা সঙ্গে নিয়ে গেছেন নিউমার্কেটে। যথারীতি ছেলে ভাল ভাল সব কিছু নয়ন ভরে দেখলেন। বাসায় ফিরেই তাঁর মা রেগে বললেন, খবরদার আর কখনো তুই আমার সঙ্গে কোথাও যাবি না।
২.
যাই একটু বসুন্ধরা সিটি ঘুরে আসি
৩.
ভাল ভাল সব কিছু দেখা ভাল, তবে দেখেই ইশারা করা মনে হয় ভাল না। ইশারার ফলটা দেখুন
অকালপ্রয়াত কালু দাসের স্ত্রী একবার আমাকে ইশারা করেছিল,
আমি রাজি হইনি। তা সে গেল খেপে। তৎক্ষণাৎ নালিশ জানাতে ছুটল
পাড়ার দাদা লালটুকে। লালটু সব শুনেটুনে বলল-- " কীরকম ইসারা
করেচিলি?" কালু দাসের স্ত্রী ইশারা করে দেখাল, লালটু রাজি হয়ে গেল।
কালু দাসের স্ত্রী গেল বেদম চটে, লালটু কে তো সে চায়নি, চেয়েছে
আমাকে। দ্বিগুন রাগ বুকে চেপে সে গেল এলাকাপ্রধানের বাড়ি।
সেখানে আরেক কেচ্ছা-- কালু দাসের স্ত্রী কিছু বলার আগেই এলাকাপ্রধান
তাকে ইশারা করে বসল। এইবার কালু দাসের স্ত্রী তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে
এলাকাপ্রধানকে চড় মেরে বেরিয়ে গেল। এলাকাপ্রধান লালটুকে ডেকে
বললেন এই ঘটনা ।লালটু জিজ্ঞেস করল-- "কী ইসারা করেচিলেন
স্যার?" এলাকাপ্রধান দেখালেন, লালটু সাবধান হয়ে বাড়ি ফিরে গেল।
কথায়-কথায় আমাকে একদিন বলল-- "সোন, ওই সালা কালুর বউটা
বহৎ দেমাগি । ওকে যেন ইসারা টিসারা দিসনি, কেলিয়ে দেবে । স্যার
এই রকম ইসারা করেচিলেন, স্যারকেও ছাড়েনি" বলে স্যারের করা ইশারা
আমায় যত্ন সহকারে দেখাল । আমি এরপর একদিন কালু দাসের স্ত্রীকে
জিজ্ঞেস করলাম-- " কী গো, এলাকাপ্রধান নাকি তোমাকে ইশারা
করেছেন?" কালু দাসের স্ত্রী অবাক হবার ভান করে বলল-- "কীরকম
ইশারা বলুন তো ?'' আমিও বোকার মতো ইশারা করে দেখালাম আর
কালু দাসের স্ত্রী রাজি হয়ে গেল ।
(ইশারা-শ্রীজাত)
৪.
প্রথমে বললাম ভাল ভাল সব দেখার কথা। তারপর বললাম ইশারা না দেওয়ার কথা। দিলেন তো ফাঁসলেন। অর্থাৎ বিয়ে তখন করতেই হবে। বিয়ে নিয়ে দুটা গল্প বলি। কারণ এই ব্লগে সদ্য বিবাহিত দুইজন আছে।
বিবাহে প্রবল অনিচ্ছুক এক লোককে বলা হলো:
সারাটা জীবন একা একাই কাটাবে? ভেবে দ্যাখো, তুমি যখন মরণশয্যায়, তখন তোমার মুখে পানি দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না।
কোনো প্রতিযুক্তি দেখাতে না পেরে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল লোকটা।
অনেক বছর পরের কথা। দীর্ঘ সংসারজীবন যাপনের পর লোকটি বৃদ্ধ অবস্থায় শুয়ে আছে মৃত্যুর অপেক্ষায়। তাকে ঘিরে আছে তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা। শুয়ে শুয়ে সে ভাবছে:
কেন যে বিয়ে করেছিলাম! পানি খেতে ইচ্ছে করছে না তো!
সদ্যবিবাহিত ওরা। নতুন বাসায় উঠলো। একদিন কাজ করে ছেলেটা বাসায় ফিরলো। স্ত্রী বললো, বাথরুমের পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে। ঠিক করে দাও। ছেলেটি তখন বললো, আমি কেন ঠিক করবো, আমি কি প্লাম্বার।
আরও কিছুদিন পর। বাসায় ফিরল ছেলেটি। বউটি বললো, টেবিলের পায়াটা ভেঙে গেছে, ঠিক করে দাও। ছেলেটি বললো, আমি কেনো ঠিক করবো, আমি কি কাঠমিস্ত্রি?
আরও কিছুদিন পর, বাসায় ফিরতেই বউটি বললো, বর্ষা শুরু হয়েছে, ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়ছে। ঠিক করে দাও। এবারও ছেলেটি বললো, কেন ঠিক করবো, আমি কি রাজমিস্ত্রী?
তারপর একদিন বাসায় ফিরে ছেলেটি দেখে পানির পাইপ ঠিকঠাক, টেবিলের পায়া লাগানো, ছাঁদ থেকেও পানি পরে না। ছেলেটি বললো, বাহ! সব ঠিক করে ফেলেছো।
ছেলেটি খুশী হয়ে বললো, ভেরি গুড। তা কত নিল।
বউটি এবার বললো, পাশের বাড়ির লোকটি সব ঠিক করে দিল। কোনো টাকা নিল না। খালি বললো আমি যদি তার জন্য কেক বানাই অথবা তার সঙ্গে বিছানায় যাই তাহলে সে সব ফ্রি করে দেবে।
এবার ছেলেটি জানতে চাইলো, তা কত পাউন্ড কেক বানালে?
মেয়েটি বললো, কেক কিভাবে বানাবো, আমি কি বাবুর্চি, আমার কি ওভেন আছে?
সুতরাং যারা বিয়ে করলেন, কোনো ক্ষেত্রেই নিষ্ক্রিয় থাকবেন না আশা করি।
৫.
এবার আরেক ধরা খাওয়ার গল্প বলি।
লি এর বয়স ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে। লি কোরিয়ার সবচেয়ে বড় কবি, জাতীয় কবিও বলা যায়। একা থাকেন। তাঁর সহকারি সিওজি নিজেও একটা গল্পকার। লি-এর বাসায় পার্ট টাইম কাজ করতে আসে স্কুল বালিকা ১৭ বছরের উয়োন জিও। লি উয়োনকে পছন্দ করা শুরু করে। লি কল্পনা করে উয়োনকে। কল্পনায় কামনা করে। কল্পনায় লি নিজেকে তরুণ ভাবে। উয়োনের সঙ্গে শারিরী ভালবাসা কল্পনা করে।
তরুণ লি আর উয়োনের সেই সব ভালবাসা-ভালোবাসাবাসি নিয়ে গল্পও লেখেন ৭০ বছরের এই কবি। সেই গল্প তাঁকে লুকিয়ে রাখতে হয়, প্রকাশ করতে পারেন না।
সেই গল্পটি হাতে পায় তাঁর সহকারি সিওজি। তারপর নিজের নামে প্রকাশ করে দেয়। তুমুল আলোচিত হয় গল্পটি। সেরা গল্পের পুরস্কারও পায়। তারপর শুরু হয় নতুন বিপত্তি।
সিনেমাটির নাম A Muse, কোরিয়ার এক বিতর্কিত উপন্যাস নিয়ে করা। ভিন্ন স্বাধের সিনেমা যারা পছন্দ করেন তারা দেখতে পারেন।
আবার যারা গল্পটি অবাস্তব মনে করলেন তাদের বলবো, আবদুল মান্নান সৈয়দের মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায় বইটি পড়ার জন্য। অকপটে একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেম-ভালবাসাবাসির কথা লিখে দিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার পর সেগুলো প্রকাশ পেলো। তরুণ বয়সের ভালবাসা না, ৭২ বছর বয়সের। তাও একাধিক নারী। কঠিন প্রেম, শরিরের প্রেম সবই আছে সেখানে।
আহা! তাইলে বয়স নিয়ে আর না ভাবি
৬.
সবশেষে অন্য ধরণের এক গল্প বলি। ঠিক গল্প না, সত্যি কথা। উপরের লেখার সঙ্গে ঠিক মানায় না হয়তো, তবুও লোভ সামলাতে পারলাম না।
রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের নতুন সহ সভাপতি হয়েছেন। নতুন পদ পাওয়ার পর দলের সভায় এক ভাষণ দেন। সেই বক্তৃতার কয়েকটা লাইন বলি
ছোটবেলায় আমি ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালবাসতাম। যে দুই পুলিশকর্মী আমার ঠাকুমাকে রক্ষা করতেন, তাঁরাই আমাকে খেলা শিখিয়েছিলেন। তাঁরাই আমার বন্ধু ছিলেন। এক দিন তাঁরা ঠাকুমাকে খুন করেন। আমার জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। বাবা তখন বাংলায় ছিলেন। তিনি এলে আমরা হাসপাতালে যাই। জীবনে প্রথম দেখলাম, বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। আমার দেখা সব থেকে সাহসী মানুষ ছিলেন তিনি। তবু তাঁকে কাঁদতে দেখলাম সে দিন।.... কাল সকলে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। রাতে মা আমার ঘরে এসে কেঁদে ফেললেন। কারণ তিনি জানেন, ক্ষমতার মধ্যে আসলে বিষ রয়েছে।
ক্ষমতার মধ্যে যে বিষ থাকে আমরা কজন আসলে বুঝতে পারি?
১. আহারে!

২. কি দেখলেন?ইশারা করলেন ?
৩. ইশারা ভালু না।
৪. সাধু সাবধান ।
৫. বয়স নাকি আপনি আটকে রেখেছেন ?
৬. বিষ কই? টাকার বস্তা ।
জট্টিল পোস্ট । আপনাকে
ইশারায় শিষ দিয়ে আমাকে ডেকো না কামনার চোখ দিয়ে আমাকে দেখো না লাজে মরি, মরি, মরি গো।। ষোলটি বছর পার হয়েছে বুঝিনি কখনো আগে জীবনে প্রথম ফাগুন এলে মনেতে আগুন লাগে সে আগুন তুমি লাগালে কখন এখন আমি কী করি লাজে মরি, মরি, মরি গো।। না পারি রইতে না পারি সইতে পাগল করে যে দিলে নেভে না জলে এ কোন জ্বালা অঙ্গে জড়িয়ে নিলে সে জ্বালা আমি তাকে প্রেমের সাগরে দুজনেই ডুবে মরি লাজে মরি, মরি, মরি গো।।
আহারে কি গান !! আহা !! থ্যাংকু ইশারা মাসুম ভাই
ওতো ধরে ব্যাখা বিশ্লেষনের টাইম নাই এক কথায় খাসা হয়েছে দাদা
বসতো দেখি ফর্মে
আমাদের দেশের ক্ষমতায় বিষ নেই... মধু আছে
লুকজন থাকলে, ফর্ম কোনো ব্যাপার না।
পুরানা ফর্মে মাসুম ভাই।
সিনেমাটা নামিয়েছি। কাল দেখবো।
রাহুলের ভাষনটা আমার ভালো লেগেছে। উপমহাদেশের পারিবারিক রাজনীতির উত্তরাধিকারী হলেও আমার কাছে মনে হয় রাহুলের সেই যোগ্যতা আছে।
আমাদের দেশে ক্ষমতার মধ্যে শুধু মধু না সাথে আরো অনেক কিছুই আছে। যা পাইলে শুধু মিষ্টিই লাগে না সাথে নেশাও হয়।
আমেরিকার এক ভার্সিটির একজন অর্থনীতির অধ্যাপক এসেছিলেন সেদিন। তাঁর ছাত্র ছিলেন রাহুল গান্ধি। তিনি বললেন, রাহুল অত্যন্ত ঠান্ডা, নরম-সরম মানুষ। ঠিক রাজনীতির মানুষ না। দেখা যাক, ক্ষমতায় গেলে কি করেন।
রাজনীতি সিনেমাটা দেখে বোঝা যায় ক্ষমতায় বিষ থাকলেও সেই বিষ খেতেই পাগল ক্ষমতার জন্য লোভী মানুষেরা।
মাসুম ভাই বসুন্ধরা সিটি গিয়ে কি কি দেখে আসলেন, কেমন দেখলেন কিছুই তো আর জানালেন না!
চলো যাই বসুন্ধরা সিটি, দেখে আসি
আমি গিয়ে কি. দেখব? আমার জন্য দেখার ভালো কিছূ কি আছে !!
আপনার এ-ধরনের লেখাগুলো বেশ লাগে।
শ্রীজাতের এই কবিতা নিয়ে এক জায়গায় বেশ মজা হয়েছিল, মনে করে একচোট হাসলাম।
আবদুল মান্নান সৈয়দ-এর "মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়"-বাংলা বই-এর জগতে এক বিপুল বিস্ময় হয়ে রইবে বলে ধারণা করি।
শ্রীজাতের কবিতাটা ফেসবুকেই প্রথম পড়ি, বইপড়ুয়া গ্রুপেই। মান্নার সৈয়দের মক্ষীরাণি আমাকে বড়ই অবাক করছে।
দিলরুবা আফারে স্বাগতম
আপনে এই ধরনের লেখাতেও বস মাসুম ভাই। হ্যাটস্ অফ
থ্যাংকস মীর।
দারুন লেখা, ভাল লাগলো।
থ্যাংকস
দিনলিপি ভাল লেগেছে
ধইন্যা বাজি
লেখার মুড ঠুসঠাস এত পরিবর্তন করতে পারা কঠিন একটা কাজ,
আপ্নে খুব ভাল পারেন জিনিসটা!
মন্তব্য করুন