ভ্যাঁ সমাচার.........
এক দেশে ছিল এক রাজকন্যা। রাজকন্যার বাবা কিন্তু রাজা ছিল না, মা'ও রানী ছিল না, তাদের কোনো রাজ্যও ছিল না। তারপরও সবাই মেয়েটিকে রাজকন্যা হিসেবেই জানতো।
রাজকন্যার ভীষণ একটা দোষ ছিল।সে কারো সাথে মিশতে চাইতো না।তার নিজের পরিধির বাইরে কারো কোলে সে যেত না ।কেউ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে উত্তরে বলতো ভ্যাঁ...। তখন কেউ আর তাকে কিছু বলতো না। তাদের বাসায় কেউ বেড়াতে এসে যদি তাকে কোলে নিতে চাইতো সে ভ্যাঁ... করে উঠতো। আর এতে বাসায় আসা মেহমান তো ভীষন ঘাবড়ে যেত। আবার তাকে যদি কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেত সেখানেও কেউ যদি তার দিকে তাকিয়ে হাসতো, কিংবা কোলে নেয়ার জন্য হাত বাড়াতো সে শুরু করতো ভ্যাঁ... । তার ভ্যাঁ... শুনে অন্যরা ঘাবড়ে গিয়ে বলতো রাজকন্যা বোধহয় আমাদের পছন্দ করেনি। আর তখন রাজকন্যার বাবা-মাকে বলতে হতো না না , আসলে ঠিক তা নয়, নতুন জায়গা তো তাই এমন করছে। তখন বদ টাইপের দু’একজন রাজকন্যার বাবা-মা’কে বলতো কেন ও তো ওদের বাসাতে কেউ গেলেও ভ্যাঁ... করে।
রাজকন্যার বাবা-মায়ের তো টেনশনে অবস্থা কাহিল। তাদের এমন লক্ষী মেয়েটা কথায় কথায় এমন ভ্যাঁ... করে কেন? তারা যখন তাদের রাজকন্যাকে জিজ্ঞেস করে মা, তুমি সারাক্ষন ভ্যাঁ... কর কেন? মানুষ তোমাকে খারাপ বলবে না? তুমি দেখ না অন্য সব বাবুরা কি সুন্দর হাসে,সবার কোলে যায়,সবার সাথে খেলা করে।সবাই তাদেরকে কত পছন্দ করে, আর তুমি কি কর? সারাক্ষণ ভ্যাঁ...। বাবা-মায়ের মুখে ভ্যাঁ... শুনে রাজকন্যা তো হেসেই কুটি কুটি হয়ে যেত।
রাজকন্যার বাবা-মায়ের টেনশন তো কিছুতেই কমে না। এর মধ্যে দেখতে দেখতে রাজকন্যার জন্মদিন চলে এলো। রাজকন্যার বাবা-মায়ের কাছের মানুষজন বলতো,মেয়ের জন্মদিন কিন্তু ঘটা করে করতে হবে।আমরা সবাই আসব।অনেক মজা করব। রাজকন্যার বাবা-মা মনে মনে বলতো, হুঁ খুব আনন্দ হবে!!
তারপর একদিন রাজকন্যার জন্মদিনের দিনটি চলে এল।রাজকন্যার বাবা-মা তাদের খুব কাছের মানুষজন নিয়ে জন্মদিনের আয়োজন করল। বেলুন ফুলালো,ঘর সাজালো। কেক আনল।এরপর যখন একে একে মেহমান আসতে শুরু করল রাজকন্যাকে রাজকন্যার মা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিল।মাথায় মুকুট দিল।হাতে চুড়ি দিল।পায়ে নুপূর দিল।জামায় পরীর ডানা লাগালো।তখনো রাজকন্যা আয়নায় নিজেকে অবাক হয়ে দেখছিল আর মুখ চিপে চিপে হাসছিল। রাজকন্যাকে মনে হচ্ছিল ছোট্ট একটা লাল পরী।রাজকন্যার বাবা আবার ফাঁকে ফাকে রাজকন্যার ছবিও তুলছিল।
এরপর যখন মোটামুটি সব মেহমানই চলে এলো রাজকন্যাকে যখন তার বাবা কোলে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল, রাজকন্যা একটু একটু করে কপাল কুঁচকাচ্ছিল। তারপর যখন কেক কাটার জন্য সবাই মিলে রাজকন্যার পাশে এসে দাঁড়ালো ,ছবি তোলার জন্য পোজ দিল এবং প্রায় এক সাথেই হ্যাপি বার্থ ডে বলে উঠল ঠিক তখনি কেক কাটার আগেই রাজকন্যা বিকট শব্দে ভ্যাঁ... করে উঠল।
যথারীতি সবাই তখন ঘাবড়ে গেল।কারণ মেহমান যতক্ষণ ছিল মোটামুটি ততক্ষণই রাজকন্যা ভ্যাঁ...এর মধ্যে ছিল।
মেহমানরা সবাই তো বিব্রত।বিব্রত রাজকন্যার বাবা-মাও।যদিও এমন একটা ঝুঁকির সম্ভাবনার ভাবনা তাদের আগে থেকেই ছিল। তারপর ও ভেবেছিল হয়তো শেষ মুহূর্তে এমনটি নাও হতে পারে।
অতঃপর কি আর করা ? শুরু না হওয়া অনুষ্ঠান শেষে মেহমানরা সবাই চলে যাওয়ার পর রাজকন্যার বাবা রাজকন্যাকে কোলে নিয়ে বলল,এটা কি হলো মা? তুমি ভ্যাঁ... করেছ কেন? রাজকন্যা কি বুঝেছে কে জানে, বাবার গালে গাল লাগিয়ে খিক খিক করে হেসে উঠল।
আর তা দেখে রাজকন্যার মা বলল,আমাদের রাজকন্যার জন্মদিনের অনুষ্ঠানটা একদম আনকমন হয়েছে,তাই না? এই মেহমানরা অন্য কোনো বাচ্চার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে অন্তত নিশ্চিত হতে চাইবে,তাদের বাচ্চা নতুন মানুষ দেখলে ভ্যাঁ... করে কিনা?
মা’র কথা শুনে রাজকন্যা মিটি মিটি হাসতে লাগল।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা রাজকন্যে ও তার মা বাবাকে!
শুভ জন্মদিন, রাজকন্যা।।
রাজকন্যার জন্য অনেক অনেক আদর। আমারও একটা রাজকন্যা আছে, এখন তাকে ঘিরেই আমার জগৎ।

শুভ জন্মদিন, রাজকন্যা।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা রাজকন্যে ও তার মা বাবাকে!
মন্তব্য করুন