বাজি
আজিমুদ্দির আজকে কামেকাজে একদমই মন বসতেছে না। আজকে সন্ধ্যায় মোহামেডান-আবাহনী খেলা। ফেডারেশন কাপের ফাইনাল। ফুটবল তার হারানো অতীত ফিরে পাইছে, আগের মত আর ম্যান্দামারা টুর্নামেন্ট না, সারা দেশজুড়ে মারমার কাটকাট এইটা নিয়ে। পাড়া-মহল্লায় কথাকাটাকাটি, মাইরপিট, ধাওয়ানি, দাবড়ানি। বাড়ির ছাদে ছাদে আকাশি-হলুদ কিংবা সাদাকালো পতাকা। আজকে স্কুলগুলাও একটু আগে ছুটি দেয়া হবে যাতে পোলাপান বাসায় গিয়ে খেলা দেখতে পারে।
আজিমুদ্দি আছে বিরাট টেনশনে। অফিসে মন বসতেছে না। খেলার উত্তেজনার সাথে বাড়তি টেনশন হইল আজকের বাজি নিয়া। আজিমুদ্দি অনেক হিসাব নিকাশ করে আজকের খেলায় বেশ ভাল অংকের বাজি রাখছে। হারলে বিরাট লস, জিতলে চারগুণ ফেরত। মনটা খুচখুচ করতেছে, যা করলাম ঠিক করলাম তো? এইরকম পাগলার মত সিদ্ধান্তটা না নিলেই হইত মনে হয়। উচাটন মন নিইয়া আজিমুদ্দি একটু আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যায়, অস্থিরতা কাটাইতে বাসের পিছে না দৌড়াইয়া একটা বেনসন ধারায়া রিকশায় উঠার মত বিলাসিতাও করে ফেলে।
...
খেলার আর বাকি আছে ৫ মিনিট। খেলা ১-১ সমতা। খেলা শুরুর পর থেকে আজিমুদ্দি বেশ শান্ত। অন্যান্য সময় খেলা দেখতে গেলেই বেচারার প্যালপিটিশান শুরু হইয়া যায়, পছন্দের দল এই বুঝি খাইল গোল। আজকে আশ্চর্যরকম শান্ত আজিমুদ্দি। খেলার শুরুর পর থেকেই বুঝতে পারছে বাজির সিদ্ধান্তটা ভাল হইছে, নিজের বুদ্ধির নিজেই তারিফ করে মনে মনে। এখন মনে হচ্ছে ৫ মিনিট কেন, অতিরিক্ত সময়ের পরে পেনাল্টিতে গেলেও নো চিন্তা, আজকে কোন টেনশন নাই। হা হা হা ...
...
সমাপ্তি-১
খেলা শেষ হওয়ার যখন আর ২ মিনিট বাকি ঠিক তখন মোহামেডান দিল একটা ভইরা আবাহনীর জালে! আজিমুদ্দি পুরান ঢাকার মানুষ, বাড়িও ওইখানে, আশপাশের মহল্লার বলতে গেলে সবাই মোহামেডান। গোলের সাথে সাথেই বিরাট চিৎকার, হাউকাউ লাইগা গেল। পারলে খেলা শেষের আগেই পোলাপান মিছিল বাইর করে ফেলে এমন অবস্থা! আজিমুদ্দি নিজেও মোহামেডানের সাপোর্টার। বুকের একদিকে প্রিয় দলের জন্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে, অন্যপাশে যে একটু ব্যথাও হয় না- তা না। তবে ব্যাপার না। এই সংকট থেকে রক্ষার জন্যই তো সে বাজি ধরছিল! প্রিয় দল জিততে যাইতেছে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হইতে পারে! কিছু টাকা নাহয় বাজিতে হারলামই। কি আছে জীবনে! মোটামুটি খুশিমনে শেষ বাঁশির জন্য অপেক্ষা করে সে, শেষ হইলেই ছাদে গিয়া মিছিলের সাথে গলা মিলাবে আর আরেকটা স্বস্তির বেনসন ধরাবে ...
সমাপ্তি-২
খেলা শেষ হওয়ার যখন আর ২ মিনিট বাকি ঠিক তখন আবাহনী দিল একটা ভইরা মোহামেডানের জালে! আজিমুদ্দি পুরান ঢাকার মানুষ, বাড়িও ওইখানে, আশপাশের মহল্লার বলতে গেলে সবাই মোহামেডান। গোলের সাথে সাথেই বিরাট চিৎকার, হাউকাউ লাইগা গেল অফসাইড অফসাইড বইলা। কে শুনে কার কথা! গোল! পারলে খেলা শেষের আগেই পোলাপান মিছিল বাইর করে ভাংচুর শুরু করে এমন অবস্থা! আজিমুদ্দি নিজেও মোহামেডানের সাপোর্টার। বুকের একদিকে প্রিয় দলের জন্য একটা চাপা ব্যথা অনুভব করে সে, অন্যদিকে আনন্দের একটা সুবাতাস বয়ে যায় বুকের অন্য সাইডে! যাক টাকাগুলা চারগুণ হইয়া ফেরত আসতেছে! এই সংকট থেকে রক্ষার জন্যই তো সে বাজি ধরছিল। প্রিয় দল হারতেছে এই দুঃখ ভুলার জন্য এর চেয়ে মোক্ষম আর কী হইতে পারে! মোটামুটি খুশিমনে শেষ বাঁশির জন্য অপেক্ষা করে সে, শেষ হইলেই ছাদে গিয়া মিছিলের সাথে গলা মিলাবে আর আরেকটা স্বস্তির বেনসন ধরাবে ...
গল্পটা দারুণ। সমাপ্তিতে দ্বৈততার বিষয়টাও ভালো হয়েছে।
থ্যাংকু! দ্বৈততাটা দেখানোর জন্যই আগেপিছে একটু ল্যাজ লাগায়ে গল্প ...
খুব ভালো লিখেছেন তো।ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ ...
অবশেষে নড়বড়ের লেখা!
এই ধরণের বাজিতে যাই হোক, সেফসাইডে থাকা যায়। দ্বৈত সমাপ্তি ভালো লেগেছে।
হমম, অবশেষে ... আইলসার আইলসা হইছি দেশে আইসা ...
হুট কইরা লেখছি নাইলে আরেকটু গুছায় লেখা যাইত।
গল্পটা আরেকটু বাড়াইতেন!
ইউনিভার্সিটিতে একবার ইটালীর খেলার সময় এমন বাজি ধরছিলাম।
বাজি হারছি কিন্তু ফাউল বন্ধুটা টাকা দেই নাই। ডাবল লস হইছিলো।
হা হা হা ...
আপনার নতুন কোন লেখা নেই কেন?
মন্তব্য করুন