ধরাকে সরা
সবাই যার যার ধরা খাওয়ার গল্প বলে যাচ্ছে, আমিও বাদ থাকি কেন? যথারীতি উৎসর্গ কানু গ্রুপকে।
আমার এই ক্ষুদ্র জীবদ্দশায় ধরা খাওয়ার কাহিনী অল্পই, এতেই প্রমাণ হয় আমি কতটা চামবাজ ছিলাম - তারমানে কাহিনী ঘটায়েও ধরা না খাওয়ায় পারদর্শী ছিলাম আরকি ;-)। যেমন-
১. স্কুলের ঘটনা, এইট-নাইনে পড়ি। আমাদের স্কুলে ডাইরি লিখতে হত নিয়মিত, কি কি পড়া দিল, কোন টিচার পড়া ধরে কত নাম্বার দিল, কি মন্তব্য দিল এইগুলা থাকত আরকি। প্রতিদিন স্কুল থেকে কোন স্যারকে দিয়ে সাইন নিতে হত- স্কুলে গেছিলাম তার প্রমাণ; আবার সেইটা গার্জিয়ান দেখে সাইন করে দিত- সুযোগ্য সন্তানের অগ্রগতি দেখার সুব্যবস্থা। স্কুলে দুই নাম্বারি কিছু করে পার পেয়ে যাওয়ার একমাত্র বাধা ওই ডাইরি। আমরা ৩ জন ছিলাম জানি দোস্ত। তো একদিন চিন্তা করে দেখলাম আমরা টানা অনেকদিন স্কুল করে ফেলছি, মিস দেয়া হচ্ছে না! প্ল্যান মোতাবেক আমরা পরদিন একত্রে স্কুল ফাঁকি দিয়ে ফেললাম। পরদিন জেরার মুখে মোটামুটি কি কি অসুস্থতার কথা বলব সেইটা মহড়া দিয়ে গেছি; কীসের কী! ক্লাস টিচার কিছুই জিগাইলেন না- খালি ডাইরি নিয়া বিশেষ মন্তব্যের স্থানে লিখে দিলেন- "স্বেচ্ছাচারিতায় অভ্যস্ত" ! বিশেষ মন্তব্য মানে ভয়াবহ ব্যাপার। পরের ঘটনা আপনারা বুঝে নিন।
২. এইটা আমার বেঁচে যাবার কাহিনী, বন্ধুদের ধরা খাওয়ার কাহিনী। স্কুলে ঈদে-মিলাদুন্নবী তে ক্লাস বন্ধ থাকত, তার বদলে সকাল থেকে মিলাদ, দোয়া, আলোচনা ইত্যাদি- দুপুরের দিকে ফাটাফাটি একটা তবারকের প্যাকেট। আমাদের মূল লক্ষ্য ওই প্যাকেট। স্কুলে অলিখিত নিয়ম, ওই একদিনই চাইলে স্কুলড্রেসের বদলে পাঞ্জাবী পরা যাইত। আমরা কতিপয় পথভ্রষ্ট বালক পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল সকাল বাসা থেকে বের হয়ে স্কুলের পাশের কলোনীর মাঠে ক্রিকেট খেলতে লেগে গেলাম, উদ্দেশ্য প্যাকেট বিতরনের আগে আগে ঢুকা। আমরা কয়েকজন বাদে সবাই যে যার লাল, নীল, বেগুনী বাহারি পাঞ্জাবী পরে হাজির। খেলা ভালই আগাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ দেখি স্কুলের এক স্যার টের পেয়ে মাঠে চলে আসছেন। আমরা বুলেটের বেগে কলোনীর চিপাচাপা দিয়ে পালায় গেলাম, তারপরে আধাঘন্টা রাস্তায় ঘুরাঘুরি করে সুবোধ বালকের মত স্কুলে ঢুকতে গেলাম। ওই স্যার সেয়ানা লোক, তখন ধরতে না পারলেও বাহারী পাঞ্জাবীগুলা ঠিকই চিনে রাখছিলেন। আমাদের ধরার উপায় নাই, কিন্তু ফ্যাশন করে পাঞ্জাবী পরে আসারা গেটে হাতেনাতে ধরা পড়ল। এর পরের ঘটনাও বুঝে নিন।
৩. এইটাও স্কুলের কাহিনী, নাইনে পড়ি, ধরা পড়েও বেঁচে যাবার কাহিনী। বিষ্যুদবার ভোরবেলা একটা স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ি তখন। আটটা পর্যন্ত পড়ি, এরপরে সাড়ে দশটায় স্কুল। বাসা কাছেই, মাঝখানের সময়ে চাইলেই বাসায় চলে আসা যায়, কিন্তু বাসায় ভুজুং-ভাজুং দিলাম যে পড়া শেষে আমরা একত্রে ডিসকাস করে পড়ালেখা করি ইত্যাদি ইত্যাদি। আসল উদ্দেশ্য ২ ঘন্টা মনের আনন্দে টো টো করা আর দোকানে ভিডিও গেম খেলা। ভালই চলতেছিল। পড়া শেষে স্যারের ওইখানেই ব্যাগ রেখে যেতাম, খামাখা বোচকা নিয়ে ঘুরার কি মানে? ক্লাসের আগে আগে ব্যাগ নিয়ে সোজা স্কুলে। একদিন ধুমায় গেম খেলতেছি, হঠাৎ বন্ধু কয় দোস্ত সোয়া দশটা বাজে। কয় কি! দৌড়ায় স্যারের বাসায় আইসা দেখি অবস্থা ডেঞ্জারাস, স্যার তালা-তুলা মাইরা স্কুলে চলে গেছে। কোনমতে জান হাতে নিয়া দৌড়ায় স্কুলে গিয়া কমনরুমে স্যাররে ধরলাম, ইনায় বিনায় বল্লাম যে স্যার এই আকাম ঘটায় ফেলসি। স্যার মুখে গম্ভীর হইলেও ভিতরে রসিক- টেনে টেনে বললেন-
"ভা-লো-ক-রে-ছো----", সাথে মারফতী হাসি।
"স্যার, এখন কি করব?", আমাদের করুণ জিজ্ঞাস্য।
"আমি কি করে বলব তোমরা কি করবে?"
"স্যার, আপনি চাবি দেন, আমরা গিয়ে ব্যাগ নিয়ে আসি"
"চাবি তো তোমাদের দেব না", এই বলে একটা সুমধুর হাসি দিয়ে চলে গেলেন।
দুরুদুরু বুকে ক্লাসে গেলাম। প্রথম পিরিয়ডেই ক্লাস টিচার বললেন ডাইরি নিয়া আস, সাইন করে দেই। নির্বিকার মুখে বললাম স্যার ডাইরি আনতে ভুলে গেছি। স্যার একটু গরম চোখে তাকায়ে ছেড়ে দিলেন, ভাল করে আমার আশপাশ দেখলেই বুঝতেন ডাইরি কেন, কোন বইখাতাই আমার সাথে নাই। এরপরে ধরলেন ওই বন্ধুরে, সেই বন্ধু দেখি গড়গড় করে সব বলে দিতে থাকল! স্যার, আমি আর "ও" অমুক স্যারের কাছে পড়তে গেছিলাম, ব্যাগ ফালায় আসছি, ডাইরি কেন-কিছুই নাই, বইখাতা ছাড়া স্কুলে আসছি ... আমি তো পুরা হা!! গাধাটার সমস্যা কি, তোরে এখন সত্যবাদী হইতে কে বলছে! মনে মনে দোয়া পড়তে থাকলাম- আজকে খবরই আছে। জীবনে কি পূন্য করছিলাম জানি না, ক্লাস টিচারও এমন বেকুব হইলেন যে খানিকক্ষণ ওই পোলার দিকে তাকায় রইলেন, তারপরে কিছু না কইরা ছাইড়া দিলেন। বড় বাঁচা বাঁচছিলাম ওইদিন, ঘটনা ব্যাপক খারাপ হইতে পারত।
১. গার্জিয়ানের হাতে সাইজ
২. বন্ধুবান্ধবরা বানাইছিলো
৩. আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এক পিকিউলিয়ার কিছিমের টিচার ছিলেন, অনেক রকম আজীব বৈশিষ্ট্যের একটা ছিলো S-এর উচ্চারণ "শ"এর মতো করে বলা। ফার্স্ট ইয়ারের প্রথম দিকেই উনি চাইতেন সবাই লাইব্রেরি থেকে দুইকেজি ওজনের ঢাউস রেফারেন্স বইটা তুলে ক্লাসে নিয়ে আসবে। প্রত্যেকের হাতে বই থাকা চাই। বিশপঁচিশমাইল জার্নি করে কে ঐ বই নিয়ে যাবে ক্লাসে! তাই আমরা ফটোকপি দুতিন পাতা খুলে বসে থাকি। স্যার দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলেন,
-"পুশতক (পুস্তক) কোথায়?"
-"অনেক ভারী স্যার, আনতে সমস্যা..."
-"তাহলে এই বশতা(বস্তা)গুলো কীসের?" (মেয়েদের ঝোলাগুলো একটা অব্যবহৃত বেঞ্চের উপর থাকতো)
==========================================
নাহ্ নড়বড়ে মোটের উপর সুবোধ বালকই ছিলেন দেখা যায়, ধরা অতো গুরুতর ছিলো না, ব্যাপার না, এখনও সময় আছে, এ ধরণী ধরাময়। কানু গ্রুপের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ
হা হা ... আপনার স্যারের ঘটনায় একটা ঘটনা মনে পড়ল। কলেজে পড়ি তখন। নতুন এক বাংলা স্যার আসছেন ক্লাস নিতে। এসে বললেন আমার ক্লাসে সবার হাতে বই থাকতে হবে, কালকে থেকে সবাই বই নিয়ে আসবে। আমরা অনেকেই গা করি নাই। পরদিন এসেই বললেন যারা বই আননি, তারা বের হয়ে যাও। আমরা বই-না-আনা পার্টি বের হয়ে গেলাম। ব্যাপারটা খারাপ না, পুরা সময়টা মাঠে ফুটবল খেলে কাটায় দিলাম।
পরেরদিন সবাই বই ঠিকই নিয়া গেছি। স্যার আবারও বললেন বই না থাকলে বেরিয়ে যাও। আমাদের একদলের আগে থেকে প্ল্যান করা ছিল, বই ডেস্কে রেখে হাসিমুখে বের হয়ে গেলাম, আবারো এক পিরিয়ড ফুটবল। ৩য় দিনের মাথায় আবারো একই ঘটনা ঘটানোর পর স্যার আর কখনো বই না থাকলে বের হয়ে যাইতে বলেন নাই।
আইডিয়াল নাকি?
আমি আমার ধরা খাওয়ার গল্প কাউকে বলবো না ......।
কাজীদা নাকি রায়হানভাই কার পোস্টে বলে আসলা তখনই লিখতে বসবা, কেউ ধরে রাখতে পারবে না... এখন কথা ঘুরাও ক্যান?
হাতেনাতে ধরা
কানুগ্রুপ কি ... তাহা তানবীরাপু টের পায় নাই
আমি জীবনে কোনদিন ধরাই খাইনাই, ভালো ছেলে ছিলাম তো।
তাইলে কি কি ভাল কাজ করছেন সেইটার ফিরিস্তি দিয়ে একটা পোস্ট দেন
হা হা হা, ধরা খাওয়ার দেখি অন্ত নাই.....হা হা হা...
হা হা ... আসলেই, এই ধরায় ধরাময় জীবন
শিরোনাম দেইখা মাইনাস দাগাতে চাইছিলাম; উৎসর্গপত্রে আম্রার নাম নাই; কি বেইজ্জতি পরে ভিতরে ঢুইকা আম্রার নাম দেইখা শান্তি পাইলাম;
চা বানায়ছিলেন রেসিপি অনুজায়ি? চা কেমন হইছে
হ্যাঁ, আপনাদের পদ্ধতিতে চা বানাচ্ছি এখন নিয়মিত, ভাল হচ্ছে। আগের চেয়ে কড়া
... এসো রান্না শিখির প্রথম পর্ব সুপারহিট ... এখন পরের পর্বের অপেক্ষায় 
আম্রা আপাতত ডিমভাজি নিয়া গবেষনা করতেসি; গবেষনা শেষ হইলে আপ্নারে সঠিক পদ্ধতিতে ডিম ভাজি শিখায় দিব
মোটামুটি চলনসই, সুগোল ডিমভাজি আমিও করতে পারি ... দেখি আপনাদেরটা খাইতে ভাল হয় কিনা ...
মন্তব্য করুন