আমার প্রথম প্রেম (পর্ব দুই)- প্রেমের আবেদন পত্র
ফ্ল্যাশ ব্যাকঃ
পড়ার টেবিল, ছাত্র জীবনের প্রথম হার্ডেল-এর প্রস্তুতি, শিশির ভেজা সাদা আর গেরুয়া রঙ আর মাতাল ঘ্রাণের শিউলি ফুলের গালিচাময় উঠুনে আমার হৃদয় চারিণীর আগমন তারপর আমাকে প্রেম বাণে বিদ্ধ করে সমান্তরাল ধাতব পাতদ্বয়ের উপরে দিয়ে চালিত ধাতব যানে করে তার প্রস্থান আমার শহর থেকে।
অতঃপর ------
তার চলে যাওয়ার পর জীবনে প্রথম পরিচয় হলো উদাস শব্দটার সাথে। কিছুই ভালো লাগত না। মনে হত কেন আমার দুটো ডানা নেই!! মায়ের অতি আদরে (শাসনে) বড় হওয়া আমার একা একা কোথাও যাওয়ার অনুমতি ছিল না। কিন্তু মনে মনে যাওয়াতেতো কোন বারন নেই। তাই দিনে বেশ কয়েকবার যাওয়া হতো রাজধানী শহরে, যে শহর সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারনা ছিল না। তারপরও ক্লান্ত হতাম না। কিন্তু ঘোল দিয়ে কি আর দুধ ডাকা যায়! তখন যুগটা ছিল তারময়। মোবাইল, তারবিহীন শব্দের আমদানি ঘটেনি। দ্রুত যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল দূরালাপনি। কিন্তু আমাদের বা ওদের বাসায় এই যন্ত্রের উপস্থিতি না থাকায় ওর সাথে দ্রুত যোগাযোগের কোন উপায় ছিলো না। এই সময় স্বর্গের নারদের রুপ নিয়ে আমাদের যোগাযোগের দুত হয়ে আবির্ভাব ঘটে তার বড় বোনের। এই সেই ঘসেটি বেগম যে আমার প্রেমে চির ধরিয়েছিল। যাহোক আজ এখানে ঘসেটির বিপরীত মুখি কাজের কোন স্থান নেই। আজ কথা হবে শুধু ভালোবাসার। এই ঘসেটি ছিল আমার বালক উচ্চবিদ্যালয় জীবনের কিশোরী বন্ধুদের একজন। আমাদের দুজনের বয়েস প্রায় সমান আর আত্মার সম্পর্ক থাকায় তখনকার দিনের এই আঁতেল-এর লিস্টে তার নাম ছিল একেবারে উপরের দিকে। আমাদের মাঝে সেই যুগের সবচেয়ে স্বল্প খরচের যোগাযগের মাধ্যম চিঠি (“পত্র মিতালী” শব্দ তখন ছিল হটকেক, যদিও তখন শুধু এই নামটাই জানতাম। সাক্ষাত করা সুযোগ কখনো হয়নি) আদান প্রদান চলছিল আমার দশম শ্রেণীতে পদার্পনের প্রথম থেকেই। সেই চিঠি গূলোর বিষয় ছিল খুবই গতানুগতিক। ঘসেটির চিঠির হলুদ খাম গুলোই পরে হয়ে উঠে আমার হৃদয় চারিণীর সাথে আমার যোগাযোগের একমাত্র বাহন। যেদিন সে রাজধানীর উদ্যেশ্যে ট্রেনে চাপে সেদিন তার কাছে আদায় করে নিয়েছিলাম যেন ঘসেটির প্রতিটি খামে একটা আলদা কাঙ্ক্ষিত চিঠি থাকে আমার জন্য। তখন প্রতি ১৫ দিন পর পর রাজধানী থেকে আমার জন্য একটা হলুদ খাম বয়ে আনত আমাদের এলাকার পিয়ন। এই পিয়ন ছিল আমার সেদিন গুলোর অন্যতম প্রিয় মুখ।
যা হোক শুরু হলো আমাদের চিঠির আদান প্রদান। তখনই প্রথম মনে হলো দরিদ্র ছাত্রের এই খামের পেছনে টাকা খরচের সার্থকতা। ওর চিঠি গুলোর একটা আলাদা বৈশিষ্ট ছিল। ওগুলো নিউটনের ৩য় সুত্র মেনে চলতো। আমার চিঠিগুলো দিন দিন বড় হতে থাকলে ওর গুলো বিপরীত অনুসারে ছোট হয়ে আসতো। ছোট হতে হতে এক সময় এক দুই লাইনে চলে আসত সেগুলো অবশেষে অদৃশ্য হয়ে যেতো। কিন্তু আমার ফিরতি উস্মাময়(!!) চিঠির কারনে আবার লিখা শুরু করত সে পরবর্তি পার্সেলে। এভাবে নিজেরা একজন আরেকজন কে জানান দেই নিজেদের পরস্পরের ভালোলাগার। ঘসেটির খামে আসতে থাকে আমার হৃদ স্পন্দন দ্বিগুন করে দেওয়া “আপনি কেমন আছেন” লাইন গুলো।
ওই সময়ে আমার একটা অভ্যাস তৈরি হয়। আমি তাকে ঘিরে আমার সব অনুভুতি গুলো লিখে রাখতে শুরু করি ডায়রির পাতায়। আমার প্রতিমুহুর্তের ভাবনা, তার চিঠি না পাওয়ার অভিমান, তার প্রতি আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা শব্দ হয়ে আঁকতে থাকে আমার ডায়রির পাতা গুলো। তখনই আমার আঁতেল মনের সাথে পরিচয় হয় আমার কবি মনের। লিখে ফেলি তাকে প্রথম দেখা দিনের স্মৃতি নিয়ে প্রায় দু পৃষ্ঠার এক কবিতা (হারিয়ে গেছে) রবিন্দ্রনাথের “শেষের কবিতা” তখন বাইবেল সম মনে হত। সব সময় তার একটি লাইন বাজতো মনে --
“দোঁহাই তোদের একটুকু চুপ কর, ভালোবাসিবারে দে মোরে অবসর”
ইচ্ছে হতো সব বইয়ের প্রথম পাতায় এই কথা লিখে রাখি আর একটা বোর্ডে লিখে ঝুলিয়ে রাখিয়ে মায়ের সামনে। এর কিছুই করা হয়নি যদিও।
ওর সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হয় ওদের গ্রামে এক ধর্মিয় অনুষ্ঠানে। প্রায় ৭য় দিন ব্যাপী স্থায়ী ছিল সেই অনুষ্ঠান। তখন ছিল ১০ম আর ১১শ শ্রেণীর মধ্যকালীন সময়। সরকারের ছাত্রদের গিনিপিগ বানানো প্রকল্পের প্রথম দিকে থাকায় আর মেট্রিকুলেশনে ভালো রেজাল্ট করায় আমার বিভাগের সেরা কলেজে ভর্তি হওয়া শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল (কলেজে ভর্তি করা হত এস এস সি-এর রেজাল্টের উপর নির্ভর করে) তাই হাতেও সময় ছিল প্রচুর, তার সদ্ব্যবহার করলাম ওদের গ্রামে গিয়ে। শুরু হলো আমাদের টম এন্ড জেরি খেলা। কেন জানি আমার সামনে আসতে লজ্বা পেতো সে, সবার চোখ ফাকি দিয়ে টুক টাক কথা হতো। সেখানে আমি পেলাম আমাকে দেওয়া ওর প্রথম উপহার, একটা অডিও ক্যাসেট। সে ছিল হিন্দি সিমেনার ভক্ত তাই পেলাম “1942 love story” এর অডিও, যা পরবর্তিতে আমার শোনা সর্বাধিক অডিওর লিস্টে নাম লেখায়। একবারের জন্যও হাত ছাড়া করিনি কখনো।
গ্রামের অনুষ্ঠান শেষে আমাদের বাসায় তাদের সদলবলে আগমন। টম এন্ড জেরি চলছে তখন চরম পর্যায়ে। হঠাৎ ওর একটি প্রশ্ন আমাকে সুযোগ করে দেয় ওর তখনকার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস জেনে নেওয়ার (নিজেকে সেফ সাইডে রাখার) প্রশ্নটি ছিল - আপনার পছন্দের পাত্রিটি কে? সুযোগ বুঝে আমিও আমার ধনুর প্রথম বানটা ছুড়ে দিলাম ওর দিকে ঘুরিয়ে। বললাম সরাসরি বলা যাবেনা তবে কিছু নমুনা দোয়া যেতে পারে। তাতেই রাজি- আর আমিও দিলাম নমুনা যার ৯৫% ভাগ ছিল ওকে ঘিরে শুধু নামটা স্পষ্ট করা হয়নি। ঠিক পাল্টা ভাবে সেও বলেছিল ওর পরছন্দের কথা যার নাম ছাড়া পুরোটার নায়ক ছিল এই অধম। আর আমার ভালবাসার পাখি তাতে আরো কয়েকগুণ ডানা মেলে। আমাকে অন্যরকম এক অনুভূতির সমুদ্রে ডুবিয়ে আবার ওর প্রস্থান। আমার উপদেষ্টামণ্ডলীতে (বন্ধুবর্গে) আমি আমার ভালোবাসার বিল উত্থাপন করলাম।
উপদেষ্টামণ্ডলীতে চলতে থাকে আমার বিল নিয়ে চুল ছেঁড়া বিশ্লেষন। প্রথমেই তিরস্কৃত হই দেরী হওয়ার কারণে। তারপর আসতে থাকে না উপদেশ, আদেশ, লাভ-ক্ষতি, ভালো খারাপের না উক্তি। এর মধ্যে শুরু হয় ১১শ ক্লাস। বালক, বালিকা বিদ্যালয় থেকে কো-এডুকেশনে আসা সহপাঠীদের মধ্যে দেখলাম নানাবিধ পরিবর্তন যার কিছুই আমাকে ছুয়ে যায়নি। হঠাৎ একদিন উপদেষ্টামণ্ডলীর আদেশ আর দেরী নয়, শুভস্য শীঘ্রম। ঠিক করা হলো আমার এক বন্ধুর খালার বিয়েতে যাওয়া হবে আর আমার প্রধান মিশন আমার হৃদয় চারিণীকে “হ্যাঁ” করানো। অতঃপর তাদের বাসায় আমার গমন সঙ্গে আমার ভালোবাসার সাক্ষি ডায়েরী।
ভালই কাটছিল দিনগুলো। তার কাছাকাছি হওয়ায় অনুভূতির রাসায়নিক ক্রিয়ার গতিও গিয়েছিল বহু গুণ বেড়ে, যদিও আমার বরাবরের লাজুক হৃদয় চারিণী সবসময়ই ছিল এক নির্দিষ্ট দূরত্বে আবার সেই টম এন্ড জেরি। একদিন পাকড়াও করা হলো ওকে, বলা হলো আমার ভালোবাসার মানুষ নিয়ে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে আজ। আমার প্রায় দেড় বছরের অনুভূতি সঞ্চয় করে রাখা ডায়েরীটা তার হাতে তুলে দেওয়া হলো। আরো বলা হলো ঠিক দুই দিন পরে আমার ডায়েরী আমার চাই এবং দুইদিন পরের খালি পাতাটা খালি থাকবে কিনা ভরাট হবে তার সম্পুর্ন নির্ভর করছে তোমার উপর। দুই দিন পরের পাতাটা ছিল ১৭ ই অক্টোবর। ঠিক সেদিন আমার ডায়রীটা আমি পেয়েছিলাম তার ভাঁজে ছিল তিনটি লাল পাপড়ি আর লেখা ছিলো----
---------------------------“ ভালোবাসি তোমাকে – I Love you.”--------------------------------
চরম রমান্টিক!! একটানে পড়ে ফেললাম
জাতি আরো লেখা পড়তে চাই!!
চলুক.......
ধন্যবাদ
বয়েসটা ছিল তেমন ঃ
ওরে রুমান্তিকের শেষ মাথার লামা বাজারে দেখি গ্যাছেন গা।
বাজারে গিয়া লাল গেঞ্জি বিচরাইতাছি
ভাষানতর ঠিক আছে। মেয়ের ইংরেজি গিয়ান ভালো
ধন্যবাদ - Thank you
ওরে রোমান্টিক
ওরে
রুমান্টিক
অ মাঝি ভআই,
আ্ঁই ত বদ্দা আগত্তুন লঅত্ অঅনর উর ফিদা হোছন । ছোড থাইকতে একবার আঁইও একজনর প্রেমত পরজিলাম । তয় ডঁঅদ্দার হাতত ধরা পড়িয়ারে এএন ছ্যাঁচা খাইই যে আর কনঅদিন হেই রাস্তাত্ নঅযাই । তুঁইত বদ্দা সেয়ানা পোয়া । ধরা-টরা নঅপড় পাঁরলার ! ভালা থাইক্কুন ।
কাদের বদ্দা,
অনে টাইটল পইড়জুন না !!! অ্যাঁই লি লাইক্কি পইলা পেরম।
তয় বদ্দা এহন সেয়ানা অইগিদি ইরি. এহন আর এই পথত অ্যাঁই নাই
বাহ।
চলুক।
মন্তব্য করুন