একজন আর্জেন্টাইন সাপোর্টারের নার্ভাস কথাবার্তা।
১৯৯৪ বিশ্বকাপের সময় থেকে বিশ্বকাপ নিয়ে পাগলামী শুরু করেছিলাম। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে। জীবনের শ্রেষ্ট কিছু সময় কেটেছিল তখন বিশ্বকাপ দেখা নিয়ে। বিশ্বকাপের প্রতি প্রেমের তখনই শুরু। আমি তখন পিচ্চি। আমার চেয়ে বয়সে ১৩ বছরের বড়, ভাইয়া রাত জেগে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো দেখত, বাসার আর সবাই ঘুমাতেন, আমি আর ভাইয়া খালি জেগে থাকতাম, কয়েকবার চা, মুড়ি, বিস্কুট খাওয়া চলত, মধ্য বিরতীতে চলত খেলার বিশ্লেশন, আমি তখন ফুটবলের তেমন কিছুই বুঝতাম না, খালি শ্রোতাই্ হতে হত। মাঝে মধ্যে ভাইয়ার কিছু বন্ধু এসে যোগ দিত খেলা দেখায়। প্রতিটি খেলার শেষে আমরা ভোর রাতে রাস্তায় বেরুতাম, তখন পাড়ার রাস্তায় আরও অনেককের দেখা মিলত। সবাই খেলা শেষে বেড়িয়েছে। স্বপ্নের মত দিন ছিল।
ভাইয়া ছিল ব্রাজিলের বিশাল সাপোর্টার। ভাইয়ার এক নম্বর সাগরেদ হয়েও কিভাবে জানি আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হয়ে গেলাম। হয়ত ব্রাজিলের সাপোর্টার হিসেবে ভাইয়ার কথা শুনতে শুনতে ব্রাজিলের প্রতি ত্যক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার যদ্দুর মনে পড়ে এটা একটি কারন, আরেকটি কারনের নাম ছিল বাতিস্তুতা। বিশ্পকাপের আগে পত্রপত্রিকায় বাতিস্তুতার গুনগানে মুগ্ধ হয়ে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হয়ে গিয়েছিলাম। তখন ক্রীড়ালোক পত্রিকায় মনে হয় স্টারেদের বড় বড় পোষ্টার দিত। আর্জেন্টিনার টিম পোষ্টার সেখান থেকে যোগার করেছিলাম।(এটা ৯৮ হতে পারে, ঠিক মনে নেই)
ম্যারাডোনা যখন ডোপ টেষ্টে ধরা পড়ল তখন বিশাল কষ্ট পেয়েছিলাম। তারপর তো খুবই বাজেভাবে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ল। এরপরের সবকটি বিশ্বকাপেই আর্জেন্টিনার কাহিনী খুবই করুন। একের পর এক বিশ্বকাপে বসে থাকি আর্জেন্টিনা কিছু একটা করবে, কিন্তু কিছুই হয় না। বাসায় আমার ছোটভাইয়া(আমার থেকে ৬ বছরের বড়) দেশী ফুটবলে আবাহনীর সাপোর্টার ছিল। দেশে তখন ফুটবলের বিশাল জোয়ার। আমাদের বাসায় আবাহনীর নীল পতাকা ছিল। খুব সম্ভবত ৯৮ বিশ্বকাপে আমি সেই ফ্ল্যাগের মাঝে এক প্রস্ত সাদা কাপড় সেফটিপিন দিয়ে জুড়ে দিয়ে আর্জেন্টিনার পতাকা বানিয়ে উড়িয়েছিলাম। তখন আর্ট স্কুলে আকা শিখতাম, ক্লাসে গিয়ে খালি তিনটানে আর্জেন্টিনার ফ্ল্যাগ আকতাম নীল রং এর। কী উপভোগ্য দিনই না ছিল। আজকে সেইসব মনে পড়লে খুব ভালও লাগে, আবার খারাপও ।
ব্রাজিলকে কোনদিনই এক নম্বর সাপোর্ট করিনি।তবে তাদের সুন্দর খেলার জন্যে আর্জেন্টিার পড়েই তাদেরকে সাপোর্ট করতাম। কিন্তু জানি গতবার আর্জেন্টিনায় মন ভরে নি, ব্রাজিল যেন কাপ জিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অভাগা যেদিকে যায় সবকিছুই শুকিয়ে যায়। ব্রাজিলের কি দশা হল গতবার!
এইবারের ব্রাজিলের টিমটাকে দুই চোখে দেখতে পারতাম না কেন জানি। কোন ষ্টার নেই এটা একটা কারন। আরও একটা কারন, এবার ব্রাজিলকে কেন জানি ক্রিকেটের অস্ট্রেলিয়ার মত লেগেছে। অহংকারী। যেকোনমতে জেতার চেষ্টাকারী দল। অথচ ব্রাজিল এমনিতেই জয়ী দল। সৌন্দয্যের চর্চাকারী দল। ব্রাজিল বাদ পড়াতে তাই কোনই দু:খ নেই। এই ব্রাজিল কাপ নিলে হয়ত ব্রাজিলের প্রথাগত স্টাইলে খেলার ধারায় ছেদ পড়ত।
একটু পড়ে আর্জেন্টিনার খেলা। খুবই ভয়ে আছি। আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হলেও এটা বলতে পারি, আর্জেন্টিনা কোন সময়ই ভরসা করার মত কোন দল না। আমি যতকাল ধরে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার ততকাল দেখেছি, হটফেবারিট দল নিয়ে এসেও আর্জেন্টিনা বাজেভাবে হারে। তাদের উপরে তাদের অন্ধ সমর্থকরাও ১০০ পারসেন্ট ভরসা করতে পারে না। যতটা ব্রাজিলের সমর্থকরা ব্রাজিলের উপর পারে। ব্রাজিল হল সেই দল যাদের উপরে ভরসা করা যায় যে তারা ধারনা অনুযায়ী রেজাল্ট করবে। ব্রাজিল পুরোই বস টিম। কিন্তু আর্জেন্টিনা, সেরা আক্রমন ভাগ, মেসি ইত্যাদি থাকলেও বড় ম্যাচের আগে তাই কেউ বলতে পারে না আর্জেন্টিনা জিতবেই।
গত ৪ টা বিশ্বকাপে ভাল দল নিয়ে এসেও আর্জেন্টিনা নিরাশ করেছে। সাপোর্টার হিসেবে প্রতিবার আশায় বুক বেধেও হতাশ হয়েছি। আর কত? যদিও ভয় আছে মনে, তবুও চাইছি, এবার আর্জেন্টিনা অন্তত কাপটা জিতুক।
পাগলা ম্যারাডোনা, জাদুরক মেসি, সুযোগসন্ধানী হিগুয়েইন, পরিশ্রমী তেভেজকে দেখে এবার মনে হচ্ছে হয়ত আর্জেন্টিনা তা পারবে। এখন থেকে ৩/৪ ঘন্টার মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে, ১৬ বছরের হতাশা আর ৪ বছরে এক্সটেনশন হবে নাকি কাটবে। মনটা এলোমেলো হয়ে আছে।
এলোমেলো মনটাকে স্থির করার চেষ্টা করুন। নাহলে খেলার মজাটা উপভোগ করতে পারবেন না ব্রাদার। যা হয় হবে, বাদ দেন তো।
আরি, এলোমেলো মন নিয়ে খেলা দেখাতেই তো বিশ্বকাপের মজা
ভাই এইভাবে ভয় দেখায়েন না। ইনশাল্লাহ, আমরা জিতব।
বিশ্বকাপের মজাটাই গেল। উয়েফা কাপ দেখে কি হবে?
আর্জেন্টিনা ব্রাজিল নাই। কাপ এখন ইউরোপের।
প্রীয় রন্টি...
কোথাও থেকে ঘুরে আসো। কি আর বলব। সান্তনা দেবার ভাষা নেই। মনটাকে শান্ত রাখো। পৃথিবীতে এমন ঘটতেই পারে।
তবে এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আর্জেন্টিনা নিয়ে ফালাফালি একটু কম কইরো।

তুমি ঠাশ কইরা অতীত এ নিয়া গেলা!!!
ক্রীড়ালোক, আমাদের অনেক অনেক খেলালোচনা!
তোমার লেগস্পিন...
আমাদের ছোট্ট পেসেজে ক্রিকেট...
তোমার শৈশব...আমার কৈশর...
অদ্ভত এক ভালোলাগা রন্টি!
......রনি ভাই...
কি বলব রনিভাই,
পুরনো দিনগুলোকেই এখন জীবন মনে হয়। এখন যে দিন যাচ্ছে তাকে মনে হয় শাস্তি।
প্রতিনিয়ত মিস করি। আমার খেলা, খেলা বিষয়ক চিন্তাভাবনা, বই পড়া এমন অনেক বিষয়ের শুরুটা আপনি করে দিয়েছিলেন, আপনি না থাকলে আমি এখন অন্যরকম হতে পারতাম, এজন্যে অনেক কৃতজ্ঞতা ।
ম্যরাডোনাকে দাঁড়িতে একদম পাকিস্তানী দেখায়
পুরাই একমত।
টুটুল ভাই আমাকে এই পোষ্টে একেবারে বোল্ড আউট করে দিল দেখা যাচ্ছে। দুইবছর আগের পোষ্ট। এখনও ধমকা হাওয়ার মত হাসছিই হাসছি।
মন্তব্য করুন