ইউজার লগইন

সেই যে আমার নানা রংয়ের দিনগুলি..(আপাততঃ শেষ পর্ব)

"তুমি মুনমুন না?"

"না আপু, আমি কুমকুম, মুনমুন আপু দেশের বাইরে"

"তুমি কি কাকলী ?"

"আপু আমি রিমি, কাকলী আপু শশুর বাড়ীতে, ও আজকে আসতে পারছে না, বাচ্চাটার শরীর ভালো না"

এই ভাবে অনেকের সাথে দেখা হচ্ছিল যাদের চেহারা বড় হয়ে কিছুটা পরিবর্তন হয়ে বড় বোনের মতো হয়ে গেছে , কিম্বা হয়তো এতো বছর পর আমিই চিনতে ভুল করছিলাম। আমার স্কুলের সহপাঠি অনেকেই আমাকে চিনতে পারার সাথে সাথে বলছিল "বানিজ্যিক ভূগোল, রাইট?" প্রথম দুই একজন বলার পর আমি স্মৃতি হাতরাতে শুর করলাম। তারপরই বিস্মৃতির অতল থেকে উঠে আসলো আমার জীবনের এক বিপ্লবী ঘটনা।

আমার ইচ্ছা ছিল কমার্স নিয়ে পড়বো, কিন্তু স্কুলে তখন কমার্স ছিল না। সাল তারিখ আমি মনে রাখতে পারি না, তাই ইতিহাস, পাতিহাসের ভয়ে সাইন্স নিলাম। আমাদের সময় অপশনাল সাবজেক্ট ছিল উচ্চতর গণিত, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, বানিজ্যিক ভুগোল। অংকের কথা শুনলে আমার গায়ে জ্বর আসে তাই উচ্চতর গণিত নেয়ার প্রশ্নই আসে না। বাকী দুই সাবজেক্ট এর মধ্যে একটাতে "খাদ্যমান ঠিক রেখে রান্না করার নিয়ম, কিভাবে কাপড় ইস্ত্রি করতে হয়, কাপড় ধোয়ার নিয়ম, সেলাই শিক্ষা, রান্না শিক্ষা, শিশুর যত্ন, রোগীর সেবা" ইত্যাদি ব্যাপার স্যাপার আছে। ক্লাস সিক্স্ থেকে এসব পড়ে আসছিলাম, খুবই বিরক্তিকর একটা সাবজেক্ট মনে হতো আমার কাছে। লেটার মার্কস পাওয়া সহজ বলে আমাকে ঐ বিষয় নিয়ে পড়তে হবে, কিম্বা আমি মেয়ে বলে বানিজ্যিক ভূগোল নিতে পারবো না এসব আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। আমার ইচ্ছার কথা প্রিন্সিপাল স্যারকে যুক্তিসহকারে লিখিত ভাবে জানানোর পর স্যার রাজী হলেন। আমি সকল বাধা অতিক্রম করে অপছন্দের বিষয়গুলি থেকে মুক্তি পেলাম। আমাদের ব্যাচ এ "বানিজ্যিক ভূগোল" বিষয়ে আমি একমাত্র মেয়ে স্টুডেন্ট ছিলাম বলে অনেকে আমাকে মনে রেখেছে।

একটা মেয়েকে দেখে মনে হলো, আরে এই তো সেই মেয়ে। কলেজের দিনগুলোর শুরম্নতে ইংরেজী সাহিত্যের কাস চলছিল। পিছনের সারিতে আমরা কয়েকজন, এক বই নিয়ে সবাই টানাটানি করছি। পিয়াকে ওর মা সারারাত লাঠি হাতে নিয়ে পড়ায়, সে আমাদের পিছনের সীটে ঘুমাচ্ছে। আমরা গা ঘেষাঘেষি করে বসে ওকে আড়াল করার চেষ্টা করছি। আমাদের সামনের সীটে গভীর মনোযোগ দিয়ে মেয়েটা পড়ছে। স্যার এক একজনকে রিডিং পড়তে বলছেন, আর প্রশ্ন করছেন। সবাই চুপচাপ। স্যার মেয়েটাকে বললেন, "ইউ, স্ট্যান্ড আপ"। মেয়ে গভীর মনোযোগী, স্যারের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। আমাদের ডাকে পিয়া ধড়মড় করে উঠে বসেছে। ঘটনা কি? স্যার আরো দুই একবার ডাকার পর কাছে এসে একটা ধমক লাগালেন, মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে স্যারকে সামনে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায আমরা হতভম্ব। স্যার বইটা হাতে নিয়ে দেখেন টেঙ্ট বুকের মলাটে গল্পের বই। 

ব্যাচমেটদের সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে ছোটবেলায় পড়া কচি মুখগুলি খুঁজছিলাম। কারো কারো চেহারায় আমুল পরিবর্তন হয়েছে। অন্য কোথাও পরিচয় হলে কোন ভাবেই মানতে রাজী হতাম না যে, কোন এক সময় সে আমার সাথে পড়েছে। আবার কাউকে দেখে মনে হলো মাত্র কয়দিন আগেই তাকে দেখেছি। আমাদের আগের ব্যাচ এর কারো সাথে আমাদের সখ্যতা না থাকলেও পরবর্তী কয়েক ব্যাচের সাথে আমাদের নিয়মিত আড্ডা হতো সেই সময়। শাহ্ নাজের ছোট বোন আর ওর বন্ধূরা আসার পর জমে উঠলো আড্ডা। এইভাবে কয়েক ঘন্টা পার হয়ে যায়।

স্কুলে ক্যামেরা আনা, ছবি তোলার ব্যাপারে ছিল কড়া নিয়ম। সেদিন যখন সবাই সবার ছবি তুলছিলাম, তখন মনে হলো স্থান আর পাত্র সব একই আছে শুধু কাল বদলেছে, সাথে বদলে গেছে অনেক নয়িমনীতির বেড়াজাল। তুহিনের কথা মনে পড়ছিল। আমার কাছে একদিন জানতে চাইছিল শাহ্ নাজ কি রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাই নাকি নিভিয়ে? মশারী টাঙাতে পছন্দ করে নাকি করে না? আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম এসব জেনে কি হবে? বললো " না মানে, এখন থেকেই অভ্যাস করতে চাই, ওকে যদি বিয়ে করি পরে যাতে অসুবিধা না হয়।" পোলা কলেজে পড়ে, প্রেম করে আরেক মেয়ের সাথে, বিয়ের আগে অভ্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা? ওর কথা শুনে মাটিতে পড়ে থাকা কোন জিনিষ খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আমাকে বললো কি খুঁজছিস, বললাম "তোর মাথার স্কুটা কোথায় পড়েছে, সেটাই খুঁজছি।" শাহ্ নাজ আমাকে একদিন বললো কে একজন জানতে চেয়েছে আমি যেহেতু জিন্স পড়ি বেশী, আমার বিয়েতে কাতান শাড়ী না দিয়ে জিন্স টি শার্ট দিলে আমার কোন আপত্তি আছে কিনা। সেই সময় এসব কথা শুনলে ভীষণ অবাক হতাম, কখনো লজ্জায় লাল নীল সবুজ বেগুণী হতাম, কখনো বিব্রত হতাম। এখনও এসব কথা মনে পড়লে হাসি পায়, আমাদের আড্ডবাজীতে উঠে আসে সেই সব দিন গুলির কথা।

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সাঈদ's picture


আহা এত তাড়াতাড়ি শেষ করলেন কেন ? দারুন লাগছিল কাহিনী। কিছুদিন আগে আমার বাসায় স্কুলের ফ্রেন্ড দের গেট টুগেদার হয়ে গেল। ১৮ বছর পর দেখা। অনেকের আসল নাম ভুলে স্পেশাল নাম টাই মনে ছিল। চেহারাতে ও কত পরিবর্তন। কলেজের গেট টুগেদারে যাইনা, আমার কোন বন্ধু ছিলনা কলেজে।

সোহেল কাজী's picture


দারুন লাগছিলো, এভাবে শেষ করে দিলেন?
আমি মেথ কম্পোলসারী নিছিলাম। জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল্গুলার মইধ্যে একটা ছিলো সেই ডিসিসান।
আজকাল অনেকের চেহারাই মনে ভাসে কিন্তু নাম মনে করতে পারিনা। আসলে বড় হওয়াটা বড় কষ্টের একটা ব্যাপার।

শিখর দবির's picture


শেষ!!! কইষ্যা মাইনাস।

আপন_আধার's picture


তিন পর্বেই শেষ ? খেলুমনা .........

মাসরুর's picture


হুমম.... আইডিয়া তো খারাপ না। জিনস পরা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে বিয়ের সময় হাজার হাজার টাকার শাড়ি না দিয়ে জিনস দিলেও চলবে!!!!! ;-)

নজরুল ইসলাম's picture


পড়তে ভালো লাগছিলো। আমার স্কুলে একটা রিইউনিয়ন করতে হইবো...

তানবীরা's picture


আমিও বানিজ্যিক ভূগোল ছিলাম কিন্তু আমাদের সময় ঐচ্ছিকে এটা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এটা কি স্কুলের ব্যপার ছিল যে মেয়েরা বানিজ্যিক ভূগোল নিতে পারবে না ?

অতিথি পাখি's picture


কি শুরু করলেন ? সবাই দেখি আজকেই শেষ পর্ব দিয়ে দিচ্ছে ।।
কাজি সাবও সমাপ্তি টেনেছেন উনার সিরিজের !!

নীড় সন্ধানী's picture


আজকে এই নিয়ে তিনটা শেষ পর্ব পড়লাম । :(

১০

টুটুল's picture


নতুন করে প্রথম পর্ব শুরু করেন :)

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সুবর্ণা's picture

নিজের সম্পর্কে

কী লিখব বুঝতে পারছিনা, পরে এক সময় লিখব|