ইউজার লগইন

মিডিয়ায় শ্রমিক যোগান দেবে কে?

নিমন্ত্রণ এসেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০ বছর পূর্তি উতসব। দুই দিনের উতসবে দুটি সেমিনারের আয়োজন ছিল। প্রথম সেমিনারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‌বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার সংস্কৃতি। আর দ্বিতীয়টির প্রতিপাদ্য-বাংলাদেমের সম্প্রচার সাংবাদিকতা:সীমাবদ্ধতা, সম্ভাবনা ও করণীয়। নিমন্ত্রণ ছিল দ্বিতীয়টির বক্তা হিসেবে। অন্যান্য বেসরকারী টেলিভিশনের সংবাদ ব্যবস্থাপকরাও নিমন্ত্রিত ছিলেন। সহ আলোচক ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ যৌথভাবে উপস্থাপণ করেন এটিএন বাংলার মাহফুজ মিশু এবং এস এম মহিউদ্দিন। দুইজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। যারা আলোচক ছিলাম তাদের কারোই মূল প্রবন্ধ মনোপুত হয়নি। না হওয়ার প্রধান কারন, প্রবন্ধটিতে সম্প্রচার সাংবাদিকতার যে বিষয় গুলো তুলে ধরা হয়েছে, তার বেশির ভাগই এক-দুইটি চ্যানেলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সামগ্রিক চিত্র নয়। আর অভিযোগ বা সমস্যা আকারে যে চিত্র বা ঘটনা গুলো তুলে আনা হয়েছে, সেটা ক্যান্টিনের গসিপ বা আড্ডার বিষয়।যেমন মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে- বেসরকারী টিভি চ্যানেল গুলোতে গেত এক দশকে দক্ষ প্রযোজক তৈরি হয়নি। প্রবন্ধকারদের মতে,এখনকার প্রযোজকদের কাজ হলো রিপোর্টারদের মধ্যে এডিট প্যানেল সরবরাহ করা। এই তথ্যটির সংগে আমরা আলোচকরা একমত হতে পারিনি। কারন গত এক দশকে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল গুলোতে অনেক মেধাবী প্রযোজক তৈরি হয়েছে। তাদের কাছ থেকে নিত্য সংবাদ ভিত্তিক নতুন ভাবনার অনুষ্ঠান আসছে, তবে একথা ঠিক প্রবন্ধকার যে টেলিভিশন চ্যানেলটিতে কাজ করেন, সেখানকার বার্তা প্রযোজকদের কাজ প্যানেল বন্টনেই সীমিত।
তবে সেমিনারে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়লো অন্য প্রসংগে। যখন আলোচকদের পক্ষ থেকে বলা হলো- সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের টেলিভিশন চ্যানেল গুলোতে নিশ্চিন্তে কাজ দেয়া যাচ্ছেনা। বলা যায় অন্যান্য সাধারন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীর সংগে এই বিশেষায়িত বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা করা যাচ্ছেনা। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা পিছিয়েও পড়ছে। আলোচক টেলিভিশিনের সংবাদ ব্যবস্থাপকরা যখন অভিযোগের সুরে বললেন- সাংবাদিকতার ছাত্র-ছাত্রীরাও আজকাল সংবাদ উপস্থাপনার সুযোগ না পেলে কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এর পাল্টা জবাব দিতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, টেলিভিশন মালিকদের অর্থের উতস নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। এবং জানালেন টেলিভিশনে সম্প্রচার শ্রমিক সরবরাহ করা তাদের কাজ নয়। যখন আমার পালা এলো কথা বলা তখন আমি জানালাম-এখন সম্প্রচার সাংবাদিকতায় চাকরির বাজার রমরমা। কিন্তু টেলিভিশন চ্যানেল গুলো দক্ষ কর্মী পাচ্ছেনা। সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে যারা উত্তীর্ণ হয়ে বের হচ্ছে, বা পাঠ চলাকালীন কাজ শুরু করে দিয়েছে, তাদের বেশিরভাগই দেশ-বিদেশের ঘটনাবলীর বিষয়ে হালনাগাদ নয়। তাদের লেখার মান ও উচ্চারণও যথাযথ নয়। এই প্রসংগটি যখন আনা হলো তখন উত্তাপ ছড়িয়ে যায় সেমিনার রুমে। সেমিনারের সভাপতি গীতি আরা নাসরিন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেরও সভাপতি, তিনি বললেন- মিডিয়াকে শ্রমিক সরবরাহ করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক তৈরি করবে। নিজেদের উপযোগি দক্ষ শ্রমিক তৈরির দায়িত্বটি নিতে হবে মিডিয়াকেই। তৈরি করতে হবে বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। গীতি আরা নাসরিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আলোচকদের জন্য ৫ মিনিট বরাদ্দ রাখলেও, নিজে বক্তব্য রেখেছেন ১২ মিনিট। আর সভাপতির বক্তব্যের পরে আর কারও বক্তব্য রাখার সুযোগ থাকেনা বলে আলোচকরাও তার বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে পারেননি। যদি সেই সুযোগ থাকতো, তাহলে গীতি আরা নাসরিনের কাছে প্রশ্ন তোলা যেতো- সাংবাদিকতার সকল ছাত্র-ছাত্রী কি গবেষক হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সবাই যদি গবেষক হন, তাহলে সরকারি- বেসরকারি চাকরির বাজারে যে দক্ষ কর্মী দরকার তাদের পাওয়া যাবে কোথা থেকে? এখন সম্প্রচার সাংবাদিকতার দিকে ঝোক বেশি সবার। এই মাধ্যমে কর্মীর চাহিদাও আছে। সেই চাহিদা মতো কেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম তৈরি হবেনা? এই প্রশ্ন গুলো আনুষ্ঠানিক ভাবে গীতি আরা নাসরিনকে করা যায়নি। আগামীতে কোথাও দেখা হলে, প্রশ্নটি তার বরাবর করা যাবে আশা করি। সেই সংগে তাকে আরেকটি প্রশ্ন করার আশা রাখি, সেটি হলো- তিনি এবং তার মতো শিক্ষকরা যে বিভিন্ন দাতা, গবেষনা সংস্থা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গবেষনা করেন, এবং সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করেন এটা কতোটা নৈতিক? ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠরেত অবস্থায় মিডিয়াতে কাজ নিলে, তাদের গবেষনা কর্মীতে ঘাটতি পরে যায়, তাই বুঝি কোন শিক্ষাথী মিডিয়াতে কাজ করতে চাইলে, তারা ক্ষুব্ধ হোন?
মিডিয়ার ব্যবস্থাপনায় যারা কাজ করছি তাদের বক্তব্য হলো- গণযোগাযোগা ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদেরই মিডিয়াতে আসতে হবে, তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোন বিভাগ থেকে আসতে পারে। তবে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের যেহেতু বিষয়টিতে ৪/৫ বছরের পড়ালেখা করা থাকে, তাই তারা সহজেই এই খবর কি, খবরের উতস গুলো সম্পকে সহজে বুঝতে পারে। এর সংগে যদি তাদের বাচন ভংগি, উচ্চারনের পারদর্শিতা যোগ হয়, তাহলে পড়াচলাকালীন বা পড়া শেষে মিডিয়াতে কিছু দক্ষ কর্মীর প্রবেশ ঘটতে পারে। বলে রাখা ভাল দেশে সরকারী পর্যায়ে একটি গণমাধ্যম ইনষ্টিটিউট আছে। তার কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক আছে। সেখান থেকে যথাযথ দক্ষ কর্মী মিডিয়াতে যোগ হয়েছে এমন নজির দুর্লভ। আর বেসরকারি পর্যায়ে কেবল প্রেজেণ্টার প্রশিক্ষন কেন্দ্রই গড়ে উঠছে। যেখান থেকে সংবাদ উপস্থাপকের দেখা মিলেনা। এই বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক বিভাগকে যদি সম্প্রচার সাংবাদিকতার বুনিয়াদি প্রশিক্ষনের উপযোগি করে তোলা হয়, তাহলে কোন ক্ষতির দিক কি আছে, আর মিডিয়ার জন্য শ্রমিক তৈরি করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাম্ভির্য্যে কোন প্রভাব কি পড়ে? প্রশ্ন গুলোর উত্তরের জন্য কোন মুক্ত আলোচনার অপেক্ষায় রইলাম।

পোস্টটি ৫ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

রাসেল আশরাফ's picture


ভুট্টার খৈ নিয়ে গ্যালারীতে বসলাম।

 রাফিঅফ্লাইন's picture


এই বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক বিভাগকে যদি সম্প্রচার সাংবাদিকতার বুনিয়াদি প্রশিক্ষনের উপযোগি করে তোলা হয়, তাহলে কোন ক্ষতির দিক কি আছে,

কোন ক্ষতি নাই। বরং সেইটাই উচিৎ, না হলে যে কোন সময় এই বিষয়ে (টিভি রিপোর্টিং, প্রেজেনটেশন, ভিডিং এডিটিং ইত্যাদি) নতুন নতুন বিভাগ খুলে যাবে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যে কোন এগুলো শুরু করবে। আলোচ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ তখন আঙুল চুষবে, আর এর ছাত্র-ছাত্রীরা প্রেসক্লাবে ফেস্টুন নিয়ে-অনশন করে দাবী করবে "অমুক চাকরীতে শুধু সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের নিতে হবে", "অমুক চাকরীতে কোটা থাকতে হবে".....।

অতিথি's picture


এখন বুঝলাম চাকরীর বাজারে দক্ষ কর্মীর অভাব কেন!!!!! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি এখনি এই বিষয় গুলো উপলব্ধি না করেন তাহলে আমাদের বেকারত্ব যাবে না আর আমাদের চাকরীর বাজার দক্ষ কর্মীও পাবে না। আমি একজন আইটি প্রফেশনাল হিসেবে দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের কে বাইরের দেশ এর কাজ ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে কারন আমদের দক্ষ জনশক্তি নেই। এখন মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটা স্কুল খুলতে হবে কারন তাদের কে বুঝানো দরকার তারা এখনো কোন দুনিয়াতে আছেন। আমি গবেষনার বিপক্ষে না কিন্তু সবাই কে গবেষনা করতে হবে এই কথা এই প্রথম শুনলাম এবং বুঝলাম আমরা কেনো হাহাকারের মধ্যে আছি।

তানবীরা's picture


যখন ছোট ছিলাম যারা খবর পড়তেন, তাদের উচ্চারন বাচনভঙ্গী হা করে গিলতাম, ঈর্ষনীয় ছিল। আর এখনকার খবরের উচ্চারন Sad আর অনেকে এমন নাক টেনে টেন রিডিং পড়েন যে রীতিমতো ইরিটেটিং সেটা Puzzled

Oni's picture


সাধারণত থিসিস যারা নেয় তারা গবেষনা করবে, বাকিরা নিশ্চই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবার জন্য সাংবাদিকতা বিষয়টি পরে থাকে। আমার মতে পেশাদার সাংবাদিকরা শিক্ষকতায় আসলে দক্ষ কর্মী তৈরি হবে, তা না হলে গবেষক শিক্ষকেরা তাদের মতই গবেষক সরবরাহ করে যাবেন। আমার এক টিচার মজা করে বলতেন, আর কিছু না পারলে এসে আমাদের সাথে জয়ন কর!

অন্য প্রসংগ, মিডিয়াতে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন শোনা যায়, কিন্তু জনবল নিয়োগের সেরকম উদ্যোগ চোখে পরে না কেন?

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.