আমার প্রিয় সেই পাইলট স্কুল ।
আমার হাই স্কুল জীবন কেটেছে সিলেট সরকারি পাইলট হাই স্কুল নামে একটি বিদ্যালয়ে ।আমার স্কুল জীবনে অনেক ঘটনা রয়েছে ।তার কয়েকটি ঘটনা আজ ব্লগ এ তুলে ধরছি ।
১।অঙ্কে ডাবল জিরোঃতখন আমি ক্লাস সিক্স এ পরতাম মানে একেবারে প্রাইমারি পাস করে নতুন হাই স্কুলে ।সিক্স এর অঙ্ক তখন একেবারে বুঝতাম না ।কিভাবেই বা বুঝব কারণ তখন আমার কোন টিচার ছিলনা ।যাই হোক যখন ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষা হয়েছিল এর পরিশ্রুতিতে আমি অঙ্কে ডাবল জিরো পেয়েছিলাম ।কিন্তু খাতা আমি বাসাতে দেখাইনি ।আবশ্য এর থেকে পরে পার পেতে পারি নাই ।কারণ আমাদের ক্লাস টিচার নুরুল ইসলাম স্যার আমার বাবাকে ফোন দিয়ে এ কথা জানান ।এমনি স্যার বাসায় এসে পর্যন্ত এই কথা বলে যান । তখন বাসাতে পিটুনি না খেলেও অবস্থা যা হয়েছিল তা আর বলার মত নয় ।
২। টিফিন টাইমে ঘুরাফেরাঃ ক্লাস সিক্সে থাকতে আম্মু আমাকে আনা নেয়া করতেন । আমাকে সময় বলে যেতেন স্কুল থেকে যেন না বের হই । কিন্তু আমি আম্মু চলে যাবার পরই টিফিন টাইমে রাস্তা ঘাটে , নদীর পারে ঘুরতে বের হয়ে যেতাম । একদিন ধরা খাওয়ার পর বাসাতে নিয়ে গিয়ে ধোলাই দিয়েছিলেন।
৩।স্কুল পালিয়ে সাইবার ক্যাফেতেঃতখন ক্লাস নাইনে মাত্র উঠেছি । মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট আমি খুব ভাল মত ব্যাবহার করতে পারতাম ।কিন্তু কম্পিউটার নামক বস্তুটিকে নামে মাত্র চিনতাম কেননা ওই সময়ে কম্পিউটার এত পরিচিত ছিলনা ।আমার এক বন্ধুর কাছে শুনে ছিলাম কম্পিউটার ইন্টারনেটে অনেক কিছু দেখা যায় ।এটা শোনার পর আর পায়কে আমাকে ।একদিন স্কুল পালিয়ে গেলাম সাইবার ক্যাফেতে ।যদিও এর আগে স্কুল বহুবার পালিয়েছিলাম ।গিয়ে প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম পিসির পাশে বসে ।কিন্তু সেই সাইবার ক্যাফের এক কর্মকর্তা আমাকে পিসি ব্যাবহারে অনেক হেল্প করেছিলেন ।এবং এটাই ছিল আমার প্রথম পিসির ব্যাবহার ।এর পর বাবার কাছে বায়না ধরি একটি পিসি কিনে দেবার জন্য ।কিন্তু বাবা বলেছিলেন এখন নয় তুমি এসএসসি পরীক্ষা দাও এর পর ৩মাস সময় আছে তখন কিনে দিব ।ইচ্ছা মত চালাতে পারবে ।আমার বাবা কথা রেখেছিলেন এসএসসি পরীক্ষা যেদিন শেষ হয় তার কয়েকদিন পরেই আমকে কম্পিউটার কিনে দেন ।
৪। অ্যাসেমব্লি ক্লাস ফাকি মেরে নদির পাড়ে হাওয়া খাওয়াঃঅ্যাসেমব্লি ক্লাস গরমের দিনে অনেক খারাপ লাগত ।আমাদের স্কুলের মাত্র কয়েক গজ দূরে ছিল সুরমা নদী ।আমরা বন্ধুরা মাঝে মাঝে সেই ক্লাস ফাকি মেরে নদীর পার হাওয়া খেতে যেতাম ।ফিরে আসার সময় আমরা গেট দিয়ে ঢুকতাম না ।কারণ সেখানে হেড স্যার বেত হাতে দাড়িয়ে থাকতেন ।আমরা সবসময় পিছনের দেয়াল টপকে আসতাম ক্লাসে ।
৫। মারপিট করে জামাকাপর ছিরাঃ এই ঘটনাটি ঘটেছিল আমার এক ক্লাসমিটের সাথে স্কুল জীবনের শেষের দিকে ।সে আমাকে প্রাই গরু বলে ডাকত ।একদিন মন মেজাজ ভাল ছিলনা ।ডাকা মাত্রই ছুটে গিয়ে ওকে এমন মার দিয়েছিলাম ওর শার্ট ব্লেজার সব ছিরে গিয়ে ছিল ।আমার বন্ধুরা ওকে না আটকালে হয়ত ওর মাথাই ফাটাতাম ।এর পর থেকে সে আর এরকম করতে সাহস পায় নেই ।আমাকে দেখলে সে বিড়ালের মত চিচি করে সড়ে যেত ।
৬। সেই মেয়েটির প্রেমে পরাঃ টেনে মাত্র উঠেছি মেয়েটির নাম বলা যাবেনা ।আমি এক টিচারের বাসায় ইংরেজি পরতে যেতাম ।সেখানে গার্লস স্কুলের একটি মেয়ে পরতে আসত । মেয়েটি সুন্দরি ছিলনা ঠিক । তবে চেহারা ছিল মায়াময় । আমি তার প্রেমে পরে গিয়েছিলাম । আমার বন্ধু রাহাত(ছদ্দনাম)সে আমাকে অনেক বুঝিয়ে সরিয়ে আনে ।বলেছিল এখন এসবের সময় না দোস্ত ।আমি ফিরে আসলেও মেয়েটিকে ভুলতে পারি নেই ।আজও মাঝে মাঝে মেয়েটির সাথে দেখা হয় ।কিন্তু মজার ব্যাপার হল তার সাথে শুধু চোখাচোখি ছাড়া কোন কথাই হয়নি ।আমার কেন যেন মনে হয় মেয়েটি আমাকে কিছু বলতে চাইত কিন্তু দ্বিধার কারনে পারতনা ।
৭। অপারেশন নোবেল স্কুলঃ ঘটনাটি একটু বড় ।তখনো টেনে পরতাম ।।অর্থাৎ স্কুল জীবনের প্রায় শেষের দিকে । ।বিভিন্ন ধরনের দুষ্টামি বাঁদরামির দিক থেকে বন্ধুদের ভিতরে আমার নাম ছিল ।ক্লাস টেন এ থাকতে একদিন টিফিন টাইম এ আমার বন্ধুকে বললাম দোস্ত চল একটা এডভেঞ্চার করি আমাদের এই স্কুল এর ভিতরেই ।ও একটু অভাক হয়ে বলল স্কুলের ভিতরে তুই কিভাবে এডভেঞ্চার করবি ।আমি বললাম তুই আজ ছুটির পর আমার সাথে দেখা করবি ।ও আমার কথামত তাই করে ।
ও আমার পরিকল্পনা শুনে চমকে উঠল ।আমি স্কুলে বোমা ফাটানোর প্লান করেছিলাম মানে পটকা ফাটানোর ।
ও আমাকে বলেছিল দেখ এগুলা ভালনা তুই ক্লাস চলার সময় কিভাবে এসব করবি?আর টিফিন টাইম এ এসব করতে গেলে তো খাবি ধরা ।আমি ওকে বললাম আমি বোমা টিফিন টাইম এ ফিট করব আর ফাটবে ১ ঘণ্টা পর ।তুই রাজি কিনা বল ।তুই রাজি থাকলে ভাল । না হলে আমি একলা করব ।ও বলল আমি রাজি হলাম কিন্তু ২জন এ এটা করা ঠিক হবেনা তুই দেখ আর কাউকে এখানে জরাতে পারিস কিনা ।আমি একটু চিন্তা করে বললাম ঠিক আছে দেখি ।পরদিন আমার অন্য আরেক বন্ধু অনিককে এই কোথা বললাম সে রাজি হলেও বলল কিন্তু তুমি কিভাবে এটার টাইম দেবে ?আমি ওদের বললাম ওইটা নিয়ে তোদের ভাবতে হবেনা ।তখন রাহাত বলল তুই কবে এটা করতে চাস ।আমি বললাম আগামি শনিবার ।আমাদের স্কুলের পিছনে বন্দর বাজার নামে একটা বাজার ছিল ।সেখানে অনেক দোকানেই তখন বিভিন্ন ধরনের পটকা বা আতশবাজি পাওয়া যেত ।আমি সেদিনই দুটা পটকা কিনে বাড়ি নিয়ে যাই ।আমি পটকা দুটিকে খুলে নতুন করে একটি বানাই ।মানে এতে করে শব্দ বেশি হবে । আমেরিকানদের অপারেশন নোবেল ঈগল এর নামানুসারে আমাদের এই অভিজানের নাম দেই অপারেশন নোবেল স্কুল ।
শনিবার টিফিন টাইম এ আমরা তিনজন গিয়ে হাজির হই স্কুলের পিছনের একটা পরিত্যক্ত বাড়ির আঙ্গিনায় ।ওরা দুজন তখনও বুঝতে পারছিনা আমি কিভাবে বোমাতে টাইম দিব ।ওরা তখন আমার হাতে মশা মারার কয়েল আর স্টেন দেখে হতবম্ভ ।আমি ওদের দুজনকে বললাম তোরা পাহারা দে দেখিস কেউ আসে কিনা ।এই বলে আমি সেই বাড়ির আঙ্গিনার কোণে কাজে লেগে গেলাম ।প্রথমে কয়েলটিকে স্টেন এ বসালাম ঠিক জেমস বন্ড যেভাবে বোমা বসাত ।এর পর সময় মেপে পটকা মানে বোমাটি মাটিতে রেখে ওটার সলতা মানে বোমার সুতাটিকে কয়েলের এক প্রান্তে লাগিয়ে দিলাম । এরপরই ম্যাচ দিয়ে আগুন জ্বেলে কয়েল জ্বালিয়ে দিলাম ।ওদের বললাম দোস্ত কাজ শেষ । তখন অনিক বলল এখানে এসে যদি কেউ দেখে ফেলে ।রাহাত তখন বলল এখানে কেউ এমনিতে আসেনা ।চল ক্লাসে যাই ঘণ্টা পরে গেলতো । ক্লাসে বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলনা ।ফিজিক্স ক্লাস শেষে বায়োলজি ক্লাসের কয়েক মুহূর্ত পরেই ঘটল কান ফাটানো বিস্ফরন আমাদের ম্যাডামের চশমা হাত থেকে ছিটকে গেল ।তিনি ভয় পেয়ে বললেন কি হল এটা ?কেউ বলে হয়ত বাইরে চাকা পাঞ্চার হয়েছে কোন গাড়ির আবার কেউ বলল কোন বদমাশ পোলাপান হয়ত কাছে পিঠে পটকা ফাটিয়েছে ।আমরা তিনজন তখন মুচকি হাসছিলাম ।আসল সত্য জানি কেবল আমরা তিনজন ।
এরকম অনেক ঘটনা আমার স্কুল জীবনে আছে ।স্কুল লাইফ বেশ কয়েক বছর আগেই শেষ করেছি ।কিন্তু আজও সেই মুহূর্ত গুলোর কথা মনেপরে ।মনেপরে আমার সেই বন্ধুদের কথা আর টিচারদের কথা ।আমার বন্ধুরা এখন অনেক দূরে ।তবুও মাঝে মাঝে ওদের সাথে দেখা হয় । স্কুল লাইফ আর ফিরে পাওয়া যাবেনা । কিন্তু আমাদের জীবনের সুন্দর মুহূর্ত গুলোর মধ্যে স্কুল লাইফ হচ্ছে একটি । সেই কথা গুলো মনে পরলে চোখ দিয়েও পানি চলে আসে । I Love my school.
সেদিন আমার সেই প্রিয় শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্যারের সাথে দেখা হয়েছিল । স্যার কেমন যেন একটু বুড়ো হয়ে গেছেন । আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছিলেন ।
আমার সেই প্রিয় স্কুলের প্রতি রইল অনেক ভালবাসা ।
ভাল লাগলো আপনার ছেলেবেলা পোস্ট।
এইসব দুষ্টামি বোধহয় সবাই একটু আধটু করে থাকে।
আমি ক্লাস সেভেনে থাকতে একবার অংকে জিরো পেয়েছিলাম,
তখন স্বপ্নেও দেখিনি যে কখনো ইস্কুল কলেজ পাস করতে পারবো!
আপনার লেখার হাত ভাল, নিয়মিত লিখবেন এই আশাই রইল।
কিছু টাইপো আছে, একটু ঠিক করে নিবেন।
ভাল থাকুন। অনেক ভাল। সবসময়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে পরার জন্য । আমার নিজের লেখা কিছু গল্প আছে আস্তে আস্তে সেগুলো ব্লগে প্রকাশ করব ।
স্কুল জীবনের স্মৃতিচারণ ভাল লাগলো ।
লিখতে থাকুন হাত খুলে।
কি খবর?
আছেন কেমুন?
সাথে আছি-লিখতে থাকুন।
আহা শৈশব-কৈশোর...
লেখাটা ভাল লেগেছে। কিন্তু লেখার স্টাইলটা ভাল লাগেনি। স্কুলে কলেজে আমরা যেমন ব্রড কোয়েশ্চেনের উত্তর দিতাম আগে, সেই টাইপ করে লেখা। হাত খুলে - মন খুলে লিখুন। পরীক্ষার খাতা মনে করে নয়
ধন্যবাদ সবাইকে ।
আপনি তো ভালো পোলা আছিলেন। আমার অবশ্য রেকর্ড এত ফেয়ার ছিলো না। সেইসব কথা মনে পড়ে গেলো এই লেখা পড়ে।
আমি যখন এ স্কুল এ অধ্যায়ন করেছি তখন আমার বাবা তুল্য প্রিয় শিক্ষকদের সংস্পর্শে থেকে যা শিখেছি অন্য স্কুল এ পড়লে তা হয়তো পারতাম না। প্রধান কারণ হিসেবে বলতে পারি আমাদের এই স্কুল বয়েজ স্কুল হিসেবে এটা সম্ভব হয়েছে। এখানে আমি ভেঙ্গে কিছু বলতে চাইনা। আমার মনে হয় স্কুল এর ছাত্র বন্ধুরা বুঝতে পেরেছেন। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলতে পারি আমি এই স্কুল এর ছাত্র ছিলাম বলেই আজ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি। যখন স্কলারশিপ নিয়ে ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভর্তি হই তখন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির ডিন মহোদয় বলেছিলেন "তুমি মহারাজা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছো বলেই আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছো। মহারাজার ছেলে রাজপুত্র হয়। তোমার সাফল্য কামনা করছি বাছা" আসলেই উনার কথাগুলো চিরন্তন সত্য। আজ মহারাজার ছাত্র ছিলাম বলেই "তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের উপর প্রকৌশলী" হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। আজ আমার ক্যারিয়ার সুন্দর করে গড়ার পেছনে স্কুল এর অবদান অতুলনীয়। স্কুল এর বন্ধুরা তোমাদের বিকশিত হবার পেছনে স্কুল এর ভুমিকা তুলে ধরার জন্য আমি এডমিন প্যানেল থেকে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। সুভ রাত্রি।।
দেড়িতে হলেও ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করুন