ভালো লাগার-ভালোবাসার টিম ওয়েস্ট ইন্ডিজ...
বেশ কয়েক মাস আগে রায়হান ভাইয়ের সাথে কথার পিঠে কথা চড়াইতে চড়াইতে আমি বলছিলাম বাংলাদেশের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা হইলে আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাপোর্ট করুম। তুলনামূলকভাবে যূক্তিপ্রবণ মানুষ হওয়াতে রায়হান ভাই আমার সেই সিদ্ধান্ত নিয়া মারাত্মক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান নাই। কিন্তু আমি যা কইছিলাম তাতে সত্যতা ছিলো। বাচ্চাকালে আমি যেই স্কুলে পড়ছি সেই স্কুলের গেইম টিচার ছিলেন একজন জাতীয় ক্রিকেটার, সেই টিচার আজম স্যারের কল্যাণে আমার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ তৈরী হইছিলো ৭/৮ বছর বয়সেই। আর সেই আগ্রহ তৈরী হওয়ার সময়টাতে যেই বিশ্বকাপটা মনোযোগ দিয়া অনুসরণ করি, সেই ৭৯'তে দ্বিতীয়বারের মতোন চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যেই দলের নেতৃত্ব তখন ক্লাইভ লয়েডের হাতে, বোলার জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, এন্ডি রবার্টস আর কলিন ক্রফ্ট। গ্রীনিজ-লয়েড-কলিন কিং আর ভিভিয়ান কিং রিচার্ডস যেই দলের ব্যাটিং তান্ডব চালায়। তারে বাদ দিয়া অন্য কোনো দলরে সমর্থন করতে হইলে ক্রিকেট বাদে অন্য কোনো মানদণ্ড তৈরী করতে হয়।
পরবর্তীতে আর ওয়ার্ল্ড কাপ শিরোপা নিতে না পারলেও ক্রিকেট খেলাতে অ্যাটিচিউড তৈরী হইছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার মারফতই। যেই ক্রিকেটাররা খেলাটারে কেবল চাকরী হিসাবে দেখে না, যারা ল্যাপটপ বহনটারে খেলায় জিতে যাওয়ার কোনো সমাধান হিসাবে ভাবে না, যারা প্রতিনিয়তঃ নিজস্ব সৌকর্য্যে সাজায় তাদের রনকৌশল। খেলাটারে নিপাট খেলা হিসাবেই নিতে চায়। ক্রিকেটিয় আচরন প্রকাশ করতে যারা ওয়ার্ল্ড কাপের মতোন আসরেও খেলায় হাইরা যাওনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিতে রাজী থাকে।
কালো মানুষদের সম্পর্কে যেই অনুভূতি সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে তৈরী হইতেছিলো, কেবল ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়া অনেক খানি পাল্টাইয়া দিতে সক্ষম হয় ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জবাসী খেলোয়াররা। আর আমরা যারা ৭০'এর প্রজন্ম তারা মুগ্ধতা নিয়া অনুসরণ করি তাগো। অনেকে মনে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট কেবল আক্রমণাত্মক ঘরাণার...তাগো জ্ঞাতার্থে জানাইতে চাই টেস্ট ক্রিকেটে শিল্পের চর্চা করছে এমন ব্যাটসম্যানরাও ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই ছিলো...জর্জ হেডলি, রোহান কানহাই, সোবার্স সব কালো মানুষের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে যখন একজন স্পিনার অন্তর্ভূক্ত হইলো সে'ও হইলো রেকর্ড গড়া স্পিনার...সেই ল্যান্স গিবসের রেকর্ড ভাঙতে প্রায় ২০/২৫ বছর লাগছে আম্পায়ার-পীচ আর স্বদেশের পরিচিত মাঠের সহায়তা নিয়া অনিল কুম্বলের।
আমি ক্রিকেট খেলা বলতে যেই অ্যাপ্রোচের কথা ভাবি তার বিচ্ছুরণ একসময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেইকাই ঘটছে। মাঝে একটা প্রজন্মের খেলা থেইকা অবসর নেওনের পর হঠাৎ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে শূন্যতা দেখা দেয়। নতুন প্রজন্ম ক্রিকেটের চাইতে বেশি উপার্জনের সম্ভাবনায় বাস্কেটবল খেলতে শুরু করে। তাতে অ্যাপ্রোচটা থাকলেও স্কিল্ড প্লেয়ারের সংখ্যা কমতে শুরু করে। আমরা যারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট সমর্থন করতাম...তাগো কণ্ঠস্বর ম্রিয়মাণ হয়।
তবে অনেক গ্যঞ্জামের পর এইবার যেই দল নিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ খেলতে আসছে সেইদলে আমি সম্ভাবনা দেখতেছি। হয়তো এইবার এরা বিশ্বকাপের ফাইনালে চইলা যাইবো এতোটা ভাবতে পারি না। কিন্তু টের পাই এই দল আবারো বিশ্ব কাঁপানোর মতোন খেলোয়ার পয়দা করতেছে...যারা আবারো বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীগো এই খেলটা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী তৈরীতো সহযোগিতা করবো...
জয়তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ!





সবই তো বুঝলাম, কিন্তু এই দলটির কাছে বাংলাদেশের এরকম নাস্তানাবুদ হওয়ার ক্রিকেটিয় কারণ কি আছে? আপনার মতামত জানতে ইচ্ছে করছে।
ক্রিকেটিয় কারণ খুব সাধারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশ দলরে নিয়া হোম ওয়ার্ক করছে। তারা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের দূর্বলতাগুলি চিহ্নিত কইরা সেইভাবে বোলিঙ করছে। তামিম শুরুতে আউটসাইড দ্য অফস্ট্যাম্পের বলরে স্কয়ারার ড্রাইভে খেলে এইটা তারা ধরতে পাইরা প্রথম ওভারে ৩ স্লিপ দাঁড় করাইয়া একই ডেলিভারি করাইছে কেমাররোচরে দিয়া...তৃতীয় বলেই তামিম ফাঁদে ধরা পড়ছে। ইমরুল শর্ট অফ লেংথে ভালো খেলে না তারে সমানে সেই বল দিয়া গেছে। সাকিব স্পিনে সাধারণতঃ ক্রস ব্যাটে খেলে এইটা ধরতে পাইরা বেন বল করছে অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরে দিয়া, সাথে বাংলাদেশের নিজেগো তৈরী করা ফাঁদ পীচের বাড়তি টার্ন কাজে দিছে।
বড় দলের খেলোয়াড়রা এইরম কৌশলী খেলাটা শিখে বেইসিক হিসাবে আর আমাগো অনেক খেলোয়াড় বেইসিক শিখে জাতীয় দলে আসনের পর। এই যে পার্থক্য সেইটাই হইলো ক্রিকেটিং অ্যাটিচিউড। আমি জ্বীনের বাদশা'র পোস্টে খেলা শুরুর আগেই একটা কমেন্ট করছিলাম তারো আগে দেওয়া ফেইসবুক স্টেটাস তুইলা দিয়া...সেইটা একবার পড়লেই বুঝবেন আমার প্রেডিকশান কি ছিলো। তবে আমি নিশ্চিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও বাংলাদেশের এইভাবে ভাইঙ্গা পড়ার বিষয়টা মাথায় রাখে নাই। বড় দল হওনের মানসিকতাটা এখনো সুদূরপরাহত বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে...আরো অনেকদূর যাইতে হইবো।
আপনের ভাষায় 'ক্রিকেটিয় কারণটা খুব সাধারণ' হইলেও আপনে বলার আগ পর্যন্ত ব্যাপারটা বুঝতে পারি নাই।... আমার মনে হইতেছিল- আজকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারগো খেলায় মন ছিলো না, তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজটাই ছিলো হাল ছাইড়া দেওনের মতো। মনে হইতেছিল তারা ক্রিকেট খেলতে মাঠে আসে নাই, আসছে কবিতা লেখতে! এমনকি আউট হওয়ার পরও তামিমের এক্সপেশনে মনে হইতেছিল - এ নিয়ে তার মাথা ব্যথা নাই! (এইটা আমার অতি-আবেগজনিত দৃষ্টিবিভ্রমও হইতে পারে!)
যাই হোক, কারণটা বুঝায়া বলার জন্য ধন্যবাদ।
আজকের খেলায় কেনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের জিতনের সম্ভাবনা বেশি ছিলো সেইটা জ্বীনের বাদশা'র পোস্টে করা আমার কমেন্টটা পড়তে পারেন। সেইখানে আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল আর তার স্ট্র্যাটেজি কি হইতে পারে তা নিয়া বলছি...বাংলাদেশ ওয়জ বীটেন বাই ক্যারিবিয়ান্স স্ট্র্যাটেজিক্যাল গেইম রিডিং...এইটা স্পষ্ট।
কবিতা লেখা এতো সহজ তাইলে
এগো কবিতা লেখতে দিলে দেখবেন খাতা ছিড়া কলম ভাইঙ্গা ফেলছে
জিম লেকার ইংলিশ ক্রিকেটার ছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের নয়।
শেষমেশ আপনার দলই জিতলো তাহলে
(
হ্যাঁ- ইন্ডিজের খেলায় এখনো একটা মানবিক ব্যাপার আছে। ল্যাপটপের উদাহরণটা ভালো দিয়েছেন।
স্লাইট অফটপিকঃ জিম লেকার কিন্তু ইন্ডিজ নন, ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতেন। আপনি মনে রেকর্ড গড়া স্পিনার হিসেবে ল্যান্স গিবসের নাম বলতে চেয়েছেন। প্রথম ৩০০ উইকেট পাওয়া স্পিনার।
ভালো একটা ভুল ধরছেন...বেশি উঁৎসাহে ল্যান্স গিবসের জায়গায় জিম লেকার গুলাইয়া ফেলছি...ধন্যবাদ সুহান।
ওয়ালশ এর ঘটনা মনে পড়লে এখন স্বপ্ন মনে হয়।
লারার ব্যাটে এডজ হলে সে সোজা ব্যাট বগলে হাঁটা দেয়, আম্পায়ারের ডিসিশান লাগে না।
হেকলিং শিল্পে এরা শিশু (এখন কী অবস্থা জানি না)।
পোবল দিক্কার।
কথা সত্য, আমারো তাই মনে হইছে
টাইমিংও করছেন! এই সময় মনেহয় পাকিস্তান টিম জিন্দাবাদ কইলেও কেউ কিছু কইবনা।
আমি জ্বীনের বাদশা'র পোস্টে কিন্তু খেলার আগেই কমেন্ট করছি আর ফেইসবুক স্টেটাস দিছি তারো আগে...তখন তো আর জানতাম না বাংলাদেশ এইরম ভাবে ভাইঙ্গা পড়বো...
সব দোষ ভাস্কর দা আপনার।আপনি এই সর্বনাশের মুল হোতা।
এবার যেমনেই হোক ইংল্যান্ডের দিন জিতায় দিবেন।

যান ইংল্যান্ডের লগে ৫ রানে হইলেও বাংলাদেশ জিতবো...
একটা অবাক করা খবর দিই। এত খারাপের মধ্যেও পজিটিভ খবর। কাল রুবেলের বলের স্পীড খেয়াল করছিলেন? গেইলরে করা চার নম্বর বলটার গতি ছিল 149.7 kph (93.02 mph)। বাংলাদেশের পেসার নব্বইয়ের উপরে বল করছে ভাবা যায়।
তাই নাকি! খেয়াল করি নাই...
এক সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলাম । এখনো আছি তবে আগের মতন না। নিজ দেশ আগে - এই ফর্মুলায় নিজ দেশের ভক্ত।
কিন্তু কালকের খেলা দেখে চরম হতাশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে খুব ভালো ভাবে হোম ওয়ার্ক করে এসেছে, ফিল্ডিং সাজানো দেখেই বুঝা গেছে। আর বিডি সেখানেই ধরা মানে রাম ধরা।
ভালু
মন্তব্য করুন