ফেইসবুক স্টেটাসমালা ৫ (আন্দোলনের দিনগুলি অথবা দিন গুনি)
এক.
তুমি জানতেই না যে কখন তুমি এসে ঠাই গেড়েছো আমার আঙিনায়
আমি তোমার শেকড়ে জল ঢালি, স্মৃতির মতোন করে এলিয়ে রেখেছি
অর্গানিক ইতিহাস। মাটি আর মমতার উর্বরতা বেড়ে তুমি বৃক্ষ হবে,
অন্ধ হবে; ঘ্রাণে আর শব্দে তুমি ফলবতী, ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়বে সভ্যতায়।
দুই
মানুষকে নাকচ করে দেবার অধিকার কারো নেই!
তিন
আমরা কি চাই, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসী নাকি কেবলই বিচার? যুদ্ধাপরাধীদের নির্মূল করতে চাই নাকি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাই আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ? আমরা কি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে চাই নাকি তাকে আওয়ামী-বিএনপি'র পা চাটা একটি বৈধ রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দেখতে চাই? শাহবাগে সমবেত মানুষের মিছিলে অংশগ্রহণরতদের এই সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকাটা জরুরী...
চার
বহুদিন পর এতো মানুষকে একসাথে শ্লোগানে গলা মিলাইতে দেখলাম-শুনলাম...বহুদিন পর!
পাঁচ
জীবন জুড়ে ছন্দপতন
বিষণ্ন অস্থির লাগে
মন পড়ে রয় শাহবাগে।
স্বপ্নে লাগে মোটিভেশন
দেশের প্রেমে প্রাণ লাগে
মন পড়ে রয় শাহবাগে।
মায়ের চোখে শিখা লেলিহান
বাবার প্রতিশোধ জাগে
মন পড়ে রয় শাহবাগে।
ছয়
এই ফাগুনে আমরা হয়েছি আগুন। দারুণ দখিনা হাওয়ায় উদ্বেলিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছি অস্তিত্বের ক্ষয়ে যাওয়া আঙিনায়! এই ফাগুনেই আমরা পাল্টে দেবো ইতিহাসের খোলনলচে; এই ফাগুনেই তারুণ্যের বেয়াড়া শপথ মেনে নিয়ে নতজানু হবে যতো বুড়োধুরো সুবিধাবাদীরা...
সাত
আমাদের জাতীয় জীবনের ইতিহাসে যা কিছু অর্জন তারমধ্যে ভাষার অধিকার আর মুক্তিযুদ্ধই সবচে' গুরুত্বপূর্ণ; এরমাঝে রাষ্ট্রীয় মান ভাষা'র কাঠামোগত অধিকার নিয়ে নিছে পশ্চিমবঙ্গীয় ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা; আর মুক্তিযুদ্ধের অধিকার নিয়ে ক্ষমতাবাজ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাড়াকাড়ি চলে...রাজাকারের ফাঁসির দাবী কেবলই প্রতিশোধের গল্প নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী বিয়াল্লিশ বছরের বঞ্চনা-লাঞ্ছনার পর সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ আর জাতীয়তার অধিকার বুঝে নিতে শাহবাগে সমবেত হয়েছে।
আট
ফুলের মুকুট পরে শ্লোগান দিচ্ছিলো মেয়েটা। বয়স বড়জোর ১৫/১৬। কৈশোরক স্বরে তার স্বর চড়ছিলো তারা সপ্তকে আর বয়ঃসন্ধির দাপটে খানিকটা ভেঙে ভেঙে যাচ্ছিলো। অথচ আমার তাকে মনে হলো জোয়ান অফ আর্ক...
নয়
শাহবাগ জনস্রোতে ভেসে গেলে আমি ভুলে যাই বয়স, বলিরেখা, ব্যাকপেইন, বাড়ি ফেরার তাড়া, অফিসের ঠিকানা, ব্যর্থ ইতিহাস, যোগবিয়োগ কিম্বা বিজ্ঞাপনের অসহ চিৎকার।
দশ
পাল্টানোটা জরুরী। খোলনলচে পাল্টে না ফেললে একদিন গর্ত খুড়ে ঠিকই বেড়িয়ে আসবে সোমত্থ ইঁদুর; কখনো বা মনিহারী সাপ। তার আগেই পাল্টে দিতে হবে আঙিনার বিস্তৃত জমিন...ভিটেমাটির চড়াই উৎড়াই।
এগারো
আন্দোলনের মানুষদের চেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নেতৃত্বের ঢঙে ব্যখ্যাকারীরাই। তাদের লেখা পড়লে বা কথা শুনলে মনে হয় হিটলারের মতো হাত তুলে রেখে সবক দিচ্ছে সারাদিন-সারারাত শ্লোগান তুলে স্বর ভেঙে ফেলা মানুষদের। আন্দোলনের নৈতিক বিজয় নিয়ে এইসব নেতৃত্বপ্রবণ ব্যখ্যাকারীরা যতোটা সরব নিজেদের নৈতিকতায় তার সিকিমাত্র মন দিলে জনতার শক্তি আরো শক্তিশালী হতো...ফায়দাবাজদের দাপট কমতো!
বারো
গতোকাল ব্লগার আহমেদ রাজীব হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে সারারাত আর ঘুমাতে পারিনি। অল্পতেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিলো। ওভার রিয়্যাক্ট করছিলাম। আজকে শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলেও চিন্তা-ভাবনা গুছিয়ে করা যাচ্ছে। আর তাই যতোই তথ্য জানতে পারছি ততোই বুঝতে পারছি জামায়াত-শিবিরের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যখন শাহবাগ আন্দোলনে বিভক্তি দেখা দিলো, একদল সময় মেনে আন্দোলন আর অন্য দল অটূট আন্দোলনে থাকতে চাইলো; তখনই পাল্টা আক্রমণ করে জামায়াত আন্দোলনে অংশগ্রহণরত সাধারণ মানুষদের ভয় পাইয়ে দেবার পরিকল্পণায় নামলো। কিন্তু সাধারণ মানুষের অনমণীয় দৃঢ়তায় শাহবাগের গণজাগরণ আবার পূর্নোদ্যমে শুরু হয়ে গেছে যেটা জামায়াত-শিবির কল্পণাও করতে পারেনি...এতো মানুষের স্রোত দেখলে জামায়াতিরা এখন দেয়ালে পিঠ নয় মুখ গুজে বসে থাকবে। আর তাই প্রয়োজন আমাদের মতো দলবিহীন মানুষদের সংহতি।
কেবল জামায়াতিরাই নয়, আরো যারা আমাদের এই জাগরণে ভয় পাচ্ছে; কেউ বর্তমানের ভয় আর কেউ ভবিষ্যতের ভয় তাদের সবার প্রতিই খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে পাশের মানুষটিকে। অনেকেই অনেক রকম উস্কানী দেবে আমাদের বন্ধনছিন্ন করার হীন তাগীদে...তাদেরকে দেয়ালে ঠেলে দিয়ে আমাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা শাহবাগ প্রজন্ম! আমাদের ক্ষমতা দখলের খায়েশ নেই!
আমাদের ক্ষমতা দখলের খায়েশ নেই! এইটা বুঝতে সরকারের একদিন লাগছিলো
এখনো অনেক পথ পারি দিতে হবে
কিছু্ই ভালো লাগছে না। পুরো অস্থিরতায় আঁকড়ে ধরেছে।
শাহবাগ জনস্রোতে ভেসে গেলে আমি ভুলে যাই বয়স, বলিরেখা, ব্যাকপেইন, বাড়ি ফেরার তাড়া, অফিসের ঠিকানা, ব্যর্থ ইতিহাস, যোগবিয়োগ কিম্বা বিজ্ঞাপনের অসহ চিৎকার।
নয় আর দশ
মন্তব্য করুন