মানুষটি আমার বড় ভাই, বন্ধু, বাবার মত। আমার আইডল...
বাবার সাথে আমার সেরকম সখ্যতা কোনো কালেই ছিল না। আমার সব ভাল মন্দ সম্পর্ক ছিল মায়ের সাথে। আজ সে বাবা নেই, মাও নেই। পরিবারের ছয় ভাই বোন সবাই ঢাকায় থাকি। জীবনে আমরা কত জায়গায় যে ছিলাম ! বাবার চাকরীর সুবাদে দেশের এপ্রান্ত থেকে সে প্রান্ত...। অনেক জেলা, অনেক সংস্কৃতি। কত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ! কত বন্ধুরা আমার। অনেকের সাথে যোগাযোগ আছে, অনেককে হারিয়ে ফেলেছি। কত বালিকারা... । আজ যেসব জেলার কথা মনে পড়েছে মানে যেসব জেলাতে ছিলাম আমরা। রাঙ্গামাটি, কুষ্টিয়া, খুলনা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা...। বিভিন্ন জেলাতে থাকার কারনে ভাষাগত একটা সমস্যা হয়েছে আমাদের। বাবার বাড়ি লক্ষীপুর হওয়া স্বত্তেও আমাদের সব ভাইবোনের কথা শুনলে কারো পক্ষে চট করে বলা বলা মুশকিল, আমরা অরজিনালি কোন জেলার বাসিন্দা।
তো, যে প্রসঙ্গে আজকের লেখা....
কেনো জানিনা, অন্য ভাই বোনদের চেয়ে বড় ভাইয়ার সাথে আমার ব্যক্তিগত টিউনিংটা অনেক ভাল। তাঁর চলন, বলন সব কিছুই আমাকে আকর্ষণ করে। আমি প্রভাবিত হই। এত সুন্দর করে বাংলা শুদ্ধ উচ্চারনে কথা বলার লোক আমি হাতে গোনা দু'চারজন পেয়েছি জীবনে। আমার জীবনে যা কিছু ভাল তার সব কিছুর পেছনেই বড় ভাইয়ার অবদান রয়েছে। এ মানুষটি আমার বড় ভাই, বন্ধু আর বাবার মত। আমার আইডল। কোনো দিন আমাকে কোনো কাজে বাধা দেননি। নিষেধ করেননি কোনো কাজ করতে। শুধু কাজটির ভাল মন্দ দিক নিয়ে বুঝিয়েছেন। তারপর আমার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমি জীবনের সব ক্ষেত্রে ভাল মন্দ তাঁর কাছেই শিখেছি। তাঁর কাছে আমার দায়ের শেষ নেই। আমার জীবনের সব চেয়ে খারাপ সময়ে এগিয়ে এসেছেন তিনি। অর্থ, বুদ্ধি আর পরামর্শ দিয়েছেন। আমাকে কোনোদিন কষ্ট সইবার সুযোগ দেননি। এই মানুষটার মত রসিক, প্রাণখোলা মানুষ জগতে বড় কম।
ফেনীতে থাকাবস্থায় কলোনীর একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করতেন ভাইয়া। দুই পরিবারেই সেটা জানতো। কারোই আপত্তি ছিলনা তাতে। আমিও চাইতাম, মেয়েটির সাথে ভাইয়ার বিয়ে হোক। আমার সাথে পড়লেও মেয়েটিকে আমি দিদি ডাকতাম। তাদের বাসায় ছিল আমার অবাধ যাতায়ত। যেতে যেতেই হয়ত কী করে জানি মেয়েটির ছোট বোনের সাথে আমার প্রেম হয়ে যায়। একসময় দুই পরিবারের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে সবাই বেঁকে বসেন। এক ঘরে দুই বোনকে বিয়ে দিতে রাজি হয়না কেউ। বড় ভাইয়াও আমাদের বিষয়টা জানলেন একসময়। আমার সাথে এ নিয়ে কথা বললেন। কথা বললেন নিরু'দির সাথেও। অবশেষে, নিরুদি সরে গেলেন ভাইয়ার জীবন থেকে বা ভাইয়া সরে গেলেন নিরুদির জীবন থেকে...। আর নিরুদির ছোট বোন মুন্নী হারিয়ে গেল আমার জীবন থেকে...। মুন্নীকে তার বাবা মা গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন। নিরুদির আগেই একসময় বিয়েও দিয়ে দিলেন। শুনে তব্দা খেয়ে গেলাম আমি।
ঢাকায় স্থায়ী ভাবে আমার বসবাস শুরু হয় ৮৬ সালে। ভাইয়ার বাসায় এসে উঠলাম। ভাইয়া প্রতিদিন অফিসে যাবার সময় বালিশের নিচে ২০ টাকা/৫০ টাকা রেখে যেতেন। আমি টের পেতাম ঘুম থেকে উঠে। সারাদিন আমার ক্যাম্পাস/আড্ডা/ বিড়ি খাওয়া চলে যেত সেই টাকায়।
ভাইয়া তখন লিখতেন- চিত্রালী, পূর্বানী, বিচিত্রা আর আনন্দ বিচিত্রায়। বাসায় নিয়মিত এসব পত্রিকা রাখা হত। মনে আছে, বিচিত্রায় ভাইয়ার একটা লেখা নিয়ে প্রায় ৬ মাস বিতর্ক চলেছিল পাঠকদের মধ্যে। সে লেখার শিরোনাম ছিল- নারী পুরুষ তফাৎ। শাহাদাৎ চৌধুরী তখন বিচিত্রার সম্পাদক। তারো অনেকদিন আগে থেকেই ভাইয়া লেখালেখি করতেন। সেটা যদ্দুর মনে পড়ে ৭৯/৮০ সাল। তার দেখাদেখিই আমিও টুকটাক লিখতে থাকি। তার কিছু ছাপা হয়, বেশিরভাগই হয় না। আজকের এইযে আমি দু'চার লাইন অখাদ্য-কুখাদ্য লিখছি- তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ভাইয়ার। ভাইয়ার অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতাতেই লিখালিখিতে আমার অণুপ্রবেশ। পরবর্তীতে ছোট দুই ভাইবোনও এ লাইনে হাত পাকায়...। কিন্ত আমার সে ভাই, কী এক অভিমানে অনেকদিন আর কোনো পত্রিকায় লিখেননা।
ভাইয়ার অনেক বন্ধূ আর শুভাকাঙ্খী। তাঁর বন্ধু ভাগ্যকে আমার ঈর্ষা হয়। বিধাতা মনে হয় এখানেও আমাকে ঠকাননি। ভাইয়ার সব কাজের একটা প্রভাব যেহেতু আমার উপরে পড়ে, সুতরাং এটা বাদ যাবে কেনো ? সৌভাগ্যবান আমি, তাঁর মত আমারও অনেক বন্ধু। অগত্যা আর শান। ভাইয়ার দুই ছেলে মেয়ে। অগত্যাটা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে আর শান এবার ইন্টার দিল। ভাইয়া থাকেন শ্যামলীতে।
আমার আদর্শ মানুষ, সবচেয়ে আপন মানুষ, প্রিয় ভাইয়ার আজ জন্মদিন। তিনি পাশে বসে আছেন। আমি এ লেখাটা লিখছি। একটার পর একটা ফোন বাজছে তাঁর। সবাই তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। প্রিয় ভাই আমার, আপনি ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। আজীবন আমাকে ভাইয়ের, বন্ধুর আর বাবার স্নেহ- ভালোবাসা দিয়ে যান। মহান সৃষ্টিকর্তা আপনার মঙ্গল করুক...
ফার্স্ট কমেন্ট।

মেসবাহ ভাই এত বড় লেখা লিখসে? বাবাহ্। এ উপলক্ষে তো তাকে খিচুড়ি খাওয়াতে হয়।
যাই প্রথম থেকে লেখাটা পড়ে আসি।
তারমানে কি আমি সবসময় ছোট লেখা লেখি ?
আপনেরে মাইনাস
শুভ জন্মদিন
কেক্কুক খাইতে চাই
থ্যাংকু বইন
আপনার ভাইকে অশেষ শুভেচ্ছা। আর লেখাটা কিন্তু বেশ ভালো হয়েছে। আসলে মন থেকে লেখা সবই ভালো হতে বাধ্য।
আপনেরেও থ্যাংকু "লেখাটা ভাল হইছে" কওনের লাইগা
আপনার ভাইকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দ্বিতীয় প্যারাটা পড়ে মর্মাহত হলাম। চমৎকার লিখেছেন । ভাই এর জন্য সুন্দর উপহার
শুভেচ্ছা আপনাকেও
একই কথাগুলো আমার পক্ষ থেকেও।
শুভ জন্মদিন।
শুভকামনার জন্য অনেক থ্যাংকু মীর
ভাইয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

আপনার ভাইয়া লাকি, আপনার মতো ভাই পেয়েছে
থ্যাংকু লীনা
আপনার আদর্শ মানুষ, সবচেয়ে আপন মানুষ ভাইয়াকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
শুভেচ্ছা আপনাকেও ব্রাদার
বিগ ব্রাদার রে শুভেচ্ছা
...
থ্যাংকু স্মল ব্রাদার

কৈ তুমি ? এই শহরে না ওই শহরে ?
আপনেরে মাইনাস। কেক ছাড়া জন্মদিনের পোষ্ট।
ভাইয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।
কেক খাওয়ামুনে, টেনশন নিওনা !
তোমারে মীর খোঁজে
জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা....
আর.. শ্যামলীতে ভাল লোকজনই থাকে... এইটা আপনার জানা থাকা উচিত
হ, শুধু কী শ্যামলী ? তাও আবার ২ নং রোড
ভাইয়ারে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

কুষ্টিয়া কই থাকতেন?
ভেড়ামারাতে বাবার অফিস ছিল।
পরবর্তীতে আমরা ছিলাম- মিলপাড়াতে
ভাইয়ারে তো কম জ্বালান নাই। হুদাই মুন্নীর পিছনে ঘুরলেন। যান, আজ ভাইয়ার কাছে যা্ইয়া মাফ চান।
খুবই চমৎকার করে ভাইয়ার কথা লিখেছেন, খুবই ভালো লাগলো। আমার নিজের বড়ো ভাইয়ের সঙ্গে আপনার ভাইয়ার অনেক মিল।
একবার আমার সম্মানে আয়োজিত এক ঘরোয়া রিসেপশনে (অনেকগুলো প্রাপ্তিযোগ ঘটেছিল আমার, উপলক্ষ ছিলো সেটাই) আমি আমার বড়ো ভাইকে দেখিয়ে সবাইকে বলেছিলাম,
'ওই যে দেখতে পাচ্ছেন সাদাসিদে সাধারণ একজন মানুষ, তিনি আমার বড় ভাই, আমার দেখা সবচেয়ে অসাধারণ মানুষ তিনি। তিনি আমাকে পিতৃস্নেহে বড়ো করে তুলেছেন। আজকের এই অবস্থানে আমাকে নিয়ে আসতে তাঁর অবদান অপরিমেয়।'
আজকে, ভাইয়ার জন্মদিনে এই কথাগুলো আপনার হয়ে আপনার ভাইয়াকে উৎসর্গ করলাম।
অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তাঁর জন্য। এবং অশেষ শুভকামনা আপনার পরিবারের সবার জন্য।
কত সুন্দর করে বললেন কামাল ভাই। সত্যি বলছি, আমার কান্না আসছে....অনেক ধন্যবাদ আপনাকে......
বড় ভাইকে জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আমার ভাইও ঠিক এই কাজটাই করেন।
মায়াবতী, আপনিও আমার মতই সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছেন
বড়ভাইরে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
পছন্দের মানুষগুলারে সামনাসামনি বলা যায় না যে তারা কতটা মূল্যবান আমাদের জীবনে।
মাসুম্ভাইয়ের মতের সাথে একমত পোষন করলাম, ভাইয়ার কাছে গিয়া মাফ চাইয়া লন মুন্নীর কারনে যেম্নে বদনাম হইলেন!
কী যে কওনা শিলা বিবি...
টুনটুন'রে যদি শিলা কন, তাইলে আপ্নের চক্ষুর ধার নিয়া চিন্তায় পড়ার সময় আইছে দাদাভাই!
টুনটুন কে ?
এই হইল টুনটুন
শুভ জন্মদিন ভাইজান।
আমার সৌভাগ্য, অসাধারণ এই মানুষটির সানিধ্য আমিও পেয়েছি। ভাইজানের দীর্ঘ সুস্থ ও সুখী জীবন কামনা করি।
(এই লেখাটির জন্য ধন্যবাদ, মেসবাহ ভাই)
ভাইয়াকে জন্মদিনের শুভকামনা ..... লেখালেখি করেন বলেই নামটা জানতে আগ্রহ হচ্ছে
ভাইয়ার পুরো নাম মাহবুবুল আলম ফারুক। স্বনামের পাশাপাশি ভগনাঙশ নামেও লিখতেন....
শুভ জন্মদিন মাহাবুব ভাই!
গত বছর মাহাবুব ভাইয়ের জন্মদিনের কথা মনে ছিল, এবার ভুলে গেছি। গত বছর তিনি আমাকে বলেছিলেন, জন্মদিনের সকালে উঠে কিছু দিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে চলে যাবেন, একদম একা! পেরেছিলেন কিনা জানি না।
যাই, জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।
জানাইতে পারছেন ?
না, পারি নাই! এস ইট ইজ।
মাহাবুব ভাইয়ের বকাঝকা খেতে আমার ভাল লাগে।
মেসবাহ ভাই আপনার ভাইয়ার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা আমাকে আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলেছে। মাহাবুব ভাইকে অনেক অনেক জন্ম দিনের শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে আপনাকেও এত সুন্দর লেখা উপহার দেবার জন্য।
এখানে বলে রাখি আমার বড় ভাইএর নাম মাহাবুব। অনেক বড় আমাদের চেয়ে। আমরা তাকে দাদা ডাকি। আজ তার ও জন্মদিন। কিন্তু আমি কথা শিল্পী নই তাই তার কথা ছন্দে গন্ধে বর্নে রঙ্গে প্রকাশ করতে পারিনি। আবারও জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার মাহবুব ভাইয়ের জন্য ১ দিন পরে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
আমরা ভাইয়াকে ভাইজান ডাকি।
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
আপনার ভাইয়াকে শুভ জন্মদিন
লেখা ভালো লাগলো
থ্যাংকু ওমরের বন্ধু নজু ভাই
আপনার ভাইয়াকে শুভ জন্মদিন
লেখা ভালো লাগলো
আপনেরেও থ্যাংকু বৈদেশি ক্যাপ্টেন আপা
খুব ভালো লাগলো। সার্থক বড় ভাইয়ের যোগ্য ছোট ভাই। বড় ভাইকে শুভ জন্মদিন!
আপনার বড় ভাইয়ের একটা কষ্ট আমি বুঝতে পারি। সেটা হচ্ছে, তাঁর কোনো বড় ভাই নেই, ভাবী নেই।
যেমন, আমারও নেই। ইস্! কত ভালো লাগতো একজন বড় ভাই এবং ভাবী থাকলে ... আমার ছোট ছয় জনের সেই ভাগ্য হলেও আমার হয়নি। কী অদ্ভুত ধাঁধাঁ তাই-না!
মন্তব্য করুন