হক এবং তালুকদার সাহেবের বিয়ে বৃত্তান্ত
হক সাহেব পাখী ভালবাসেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রজাতীর পাখী সম্পর্কে জানা, তাদের ছবি সংগ্রহ করা তার জীবনের অন্যতম নেশা। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। দেখতে এখনও নেহায়েত সামর্থবান। পত্রিকায় লেখালেখি করেন পাখী নিয়ে। থাকেন ডিওএইচএস এলাকায়। তো হক সাহেবের জীবনের এক কাহিনী সম্প্রতি জেনেছি। ৭০ সালের শেষ নাগাদ হক সাহেব বিয়ে করেন। বিয়ের ৩/৪ মাসের মাথায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে ভদ্রলোক ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কাজ করতেন বিমান বাহিনীতে। সেসময় তিনি বন্দী হন। তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কয়েক মাস কেটে যায়। প্রথম দিকে তার বাসার সাথে যোগাযোগ হত। পরে তাও বন্ধ হয়ে যায়। অনেক মাস কেটে যায় কিন্তু তিনি আর ছাড়া পান না। এক সময় তার পরিবারের কাছে খবর আসে- তিনি নিহত হয়েছেন মানে তাকে পাকিস্তানে হত্যা করা হয়েছে। ঘরে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। এক সময় দু পরিবারের সিদ্ধান্তে হক সাহেবের ছোট ভাইয়ের সাথে হক সাহেবের বিধবা (!) স্ত্রীর বিয়ে হয়।
দেশ স্বাধীন হয়। তারও ৮/৯ মাস পরে হক সাহেব ছাড়া পান পাকিস্তান জেল থেকে। ফিরে আসেন বাংলাদেশে। ছুটে যান পরিবার আর প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে। তাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে যায় পরিবারের অন্য সদস্যরা। বাসায় বসে বাবার কাছে বিস্তারিত শুনেন তিনি। তারপর কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। সেই যে বাড়ি ছাড়েন, আর কোনো দিন ফিরেননি বাড়িতে। রাগে-অপমানে-দুঃখে আর অভিমানে আর কোনো দিন বাড়িতে যাননি। বিয়েও করেননি। সংসার করা আর হয়নি তার।
তালুকদার সাহেবের কাহিনীটা ভিন্ন। আমাদের আড্ডায় অর্থাৎ চারুকলার ছবির হাটে আসতেন মাঝে-মধ্যে। কার রেফারেন্সে আসতেন, এদ্দিন পরে তা আজ আর মনে নেই। আড্ডাবাজ মানুষ। বিমানের পাইলট ছিলেন। ফটোগ্রাফি আর ট্রেকিং ছিল যার নেশা। বাংলাদেশ বিমান চালাতো বলে আমরা তাকে ক্ষেপাতাম। ফ্লাই করে আসলে জানতে চাইতাম- কোথাও গোত্তা খেয়ে পড়েছে কিনা ? আমাদের হাতে গোনা ২/৪ জনের সাথে তার সখ্যতা থাকলেও অন্যদের সাথে তেমন বাৎচিৎ হত না। বিভিন্ন সময়ে আমাদের অনেকের মোবাইলে বিভিন্ন ধরণের অ্যাডাল্ট জোকস পাঠাতেন এই ভদ্রলোক। একদিন আমরা কয়েকজন তাকে ডেকে দাবড়ানী দেবার পর থেকে জোকস পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
আমাদের ছবির হাটের এক বন্ধু চাকরী করতো শিল্পকলা একাডেমিতে। চারুকলাতে পড়াবস্থায় এক মেয়ের সাথে প্রেম হয় তার। পরে চারুকলা থেকে পাশ করে চাকরী পেয়ে বিয়ে করে সে মেয়েকে। টোনা-টুনির সংসার ওদের। ওদের বাসা ছিল মোহাম্মদপুরে। তো, বিয়ের ৫/৬ মাস পরে শিল্পকলা থেকে সরকারি বৃত্তি নিয়ে সে গেল ইউকেতে। ২ বছরের জন্য। এর মধ্যে তার বৌ প্রায়ই আসতো ছবির হাটের আড্ডায়। রাতে বাসায় ফেরার সময় তালুকদার সাহেব তার নিজের গাড়িতে করে মেয়েটিকে বাসায় পৌঁছে দিত। তালুকদারের বাসাও ছিল মোহাম্মদপুরে। এটা সপ্তাহে ২/৩ দিন ঘটতো। আমরাও কেউ কিছু মনে করতাম না। এভাবে বাসায় পৌঁছে দিতে যেয়ে আমাদের বন্ধু পত্নী এবং তালুকদারের মধ্যে একটা অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে উঠে। বলাবাহুল্য, তালুকদার এবং মেয়েটির বাড়ি ছিল বরিশালের কোনো একই উপজেলায়। তাদের এই সম্পর্কের বিষয়টা আস্তে আস্তে আমরা ছবির হাটের সবাই টের পাই। কী করে জানি, বিষয়টি ইউকেতে অবস্থানরত বন্ধুটির কানেও যায়। বন্ধুটি তার বৌ বা তালুকদার কাউকে কিছু না বলে চেষ্টা তদবীর করে কাগজ-পত্র পাঠিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডে।
সেখানে গিয়ে শুরু হলো আরেক সমস্যা। তালুকদার বেটা বিমান নিয়ে লন্ডনে গেলেই সেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতো, দেখা করতো। বন্ধুটি সারাদিন থাকতো ট্রেনিংয়ে। আর তালুকদার এবং বন্ধুর স্ত্রী সারা লন্ডনময় ঘুরে বেড়াত, শপিং করতো। একবার হাতে নাতে ধরা পড়লো। নিজের বৌকে অনেক বুঝালো। বৌ তখন ঘোরের মধ্যে। তালুকদারের অনেক টাকা। সেই টাকার মোহের কাছে হার মানলো মেয়েটির ভালোবাসা আর সংসার। অনেক বোঝাপড়া করে অবশেষে মেয়েটিকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দেশে ফিরে মাস খানেকের মধ্যে মেয়েটি ডিভোর্স লেটার পাঠায় লন্ডনে ছেলেটির কাছে। ছেলেটিকে সাইন করে সেটা পাঠিয়ে দেয়। ওদের ডিভোর্স হয়ে যায়। মেয়েটি মাস তিনেক পরে পাইলট তালুকদারকে বিয়ে করে। এরপর থেকে ওরা আর ছবির হাটে আসেনা। আমাদের সাথেও দেখা হয়না। তবে কেমন আছে জানিনা আমরা...
চুপচাপদেখেগেলাম
দেখা শেষ ?
ইনাম তালুকদার
তাদের ফোন নাম্বার নাই? ফোন কইরা খোজ নেন কেমন আছে তারপর আর একটা পোষ্ট দেন আমরাও জানবো।
আপনি কেমন আছেন?
আমি বালাই আছি।
তাগো খোঁজ নেওনের মত ইচ্ছা আমগো কারো নাই...
দুনিয়াটা এত্তো ছোট হয়ে যাচ্ছে...একটু খুঁজতেই নেটে তাদের পাওয়া গেল...সবাই নিজের মত ভাল থাকুক...
~
এটাই জীবন।
সবই কেপাল!
হুমমমমম
কেমন আছেন দাদাভাই? সুস্থ হইছেন?
কষ্টের কথা শুনালেন!
হ, দুইজন মানুষের দুই রকম বিয়ে...
এতো বেশি পারসোনাল ডিটেইলস দেয়া কি ঠিক হলো ভাইজান
আরে ক্যাপ্টেন, এটা তো শতভাগ সত্য ঘটনা।
নামের একটা অংশ আর পেশা ছাড়া তেমন কি কিছু বলেছি, যাতে বুঝা যায়... ?
দাদাভাইও আজকাল ফোন ধরে না
শেষ নাই কাহিনীর-- কত্ত রঙ্গ জানে রে মানুষ।
মন্তব্য করুন