ফ্রম ঢাকা টু মাইজদী এবং পল্টিবাজী
মুকুল ফোন করেছিলো গত শুক্রবার। নোয়াখালী থেকে। ১ জুলাই তার বিয়ে। বিয়েটা হবে লক্ষীপুরে। আর ২ জুলাই বৌ-ভাত। সেটা মাইজদীতে। দুটোরই দাওয়াত দিয়েছে। আমার মত অনেককেই ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছে মুকুল। বেচারা মুকুল ! গত কয়েক বছর থেকে হা-পিত্যেস করতে করতে জান যায় যায় অবস্থা। সবার প্রেম হচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে। তার কোনোটাই হচ্ছে না। সে গরীব মানুষ। মফশ্বলে থাকে... ইত্যাদি মায়াকান্না শুনতে শুনতে আমরা প্রায় সবাই বিরক্ত। অবশেষে তার নিজের মুখে যখন শুনলাম- তার বিয়ে... স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। অবশেষে ছেলেটার একটা কিছু হচ্ছে...
যাবার ব্যাপারে কথা হলো সবার সাথে। সবাই রাজী হল। সবার মধ্যে- আরিফ জেবতিক, সাঈদ, রুবাই, বিমা, রায়হান ভাই, ভাস্কর, বৃত্তবন্দী, জয়িতা, রাসেল, টুটুল, আমিসহ অনেকে...। এরপর প্রস্তুতি নেবার পালা। এরপর নির্দ্দিষ্ট কোনো কারন ছাড়া যারা যারা পল্টি দিলো- আরিফ, রুবাই, সাঈদ। বিমা গেল বৌ নিয়ে কক্সবাজার। মাসুম ভাইও পরিবারশুদ্ধ কক্সবাজার। টুটুল মটর সাইকেল এক্সিডেন্ট করেছে, সুতরাং সে আর নাজও বাদ। লীনাও ব্যক্তিগত কাজ থাকাতে যেতে পারবেনা , জানালো। বাকী রইলাম আমরা ৭ জন। ঠিক হলো- আর কেউ না গেলেও এই ৭ জন যাবো। সে অনুযায়ী রায়হান ভাইসহ শুক্রবার বিকালে গিফট কিনলাম। শনিবার সকাল ৭ টায় শাহবাগ থেকে রওয়ানা হব, ফাইনাল।
শনিবার সকাল ৬.৪৫ মিনিটে মাইক্রো এল। মধ্যরাত থেকেই তুমুল বৃষ্টি। গাড়ীতে উঠে ফোন করলাম জয়িতাকে। ভাবলাম ওকে বাসা থেকে তুলে নেব। ও বললো- অফিসে বিশেষ জরুরি মিটিং। তাকে না থাকলেই নয়। মানে দাঁড়াচ্ছে- সে যেতে পারবেনা। রইলো বাকী ছয়। শাহবাগ গেলাম। যথাসময়ে বৃত্ত এসে হাজির। ওকে তুললাম গাড়ীতে। ভাস্কর কে ফোন করলাম। সে বাসায়। বেরুতে পারছেনা। তাকে আনতে গেলাম তার বাসায় নিকেতনে। ৭ টা ৩০ বাজে। রাসেল উঠার কথা শাহবাগ থেকে। শাহবাগ এসে ওকে খুঁজলাম। কোশাও পাওয়া গেলো না। আরো অপেক্ষা করলাম। নাস্তা করলাম। রাসেলের পাত্তা নাই। ফোন করলাম তার মোবাইলে। সেটা বন্ধ। অন্য ২ জনকে ফোন করে জানা গেলো- রাসেলের কোনো ফোন নেই। মহাবিরক্ত হলাম। অবশেষে আর কী করা। রাসেলকে ছেড়েই রওয়ানা হলাম কমলাপুরের উদ্দেশ্যে। ৮.২০ মিনিট বাজে। সেখান থেকে রায়হান ভাইকে তুলতে হবে। কমলাপুরের কাছে যাবার পর বৃত্তের ফোনে কল এলো। রাসেল ফোন করেছে। সে মাত্র শাহবাগ এসেছে। তাকে বুঝিয়ে বলা হলো- কমলাপুর চলে আসতে। আমরা কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনে অপেক্ষা করছি... রাসেল এল। সাতটার জায়গায় নয়টায় আমরা যাত্রা শুরু করলাম...।
পথে গাড়ীতে গ্যাস নেয়া হলো। রায়হান ভাই আর রাসেল নাস্তা খেলো। অন্যরা চা । তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই বারোটার সামান্য পরে আমরা চৌমুহনী চৌরাস্তা পেরুলাম। সেখান থেকে ৯/১০ কিলো মুকুলের বাসা। দুই কিলো যাবার পর রাস্তা আটকানো। জানা গেলো, বাস আর টেম্পোর মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জন কলেজ ছাত্র-ছাত্রী নিহত হয়েছে। বাসটি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সামনে আর যাওয়া যাবে না। অবশেষে আমরা আবার চৌরাস্তায় ফিরে আসলাম। তারপর সোজা পশ্চিম দিকে ১২ কিলো... চন্দ্রগঞ্জ বাজারের পাশ দিয়ে আরেক রাস্তা ধরে ছয়ানী নামক এক বাজার পেরিয়ে শর্টকার্ট রাস্তায় মাইজদী যাবো। ইতিমধ্যে তুমুল বৃষ্টি। হেডলাইট জ্বালিয়েও রাস্তায় কিছু দেখা যাচ্ছেনা। ছোট রাস্তা। আস্তে- ধীরে এগুচ্ছে আমাদের গাড়ি। দু জায়গায় পুল ভাঙ্গা। অনেক কসরৎ করে শেষে আমরা যখন মাইজদী মানে মুকুলের বৌভাতের অনুষ্ঠানে পৌঁছলাম- তখন ২.২৫ মিনিট। মুকুল, তার বৌ এবং ভাইদের সাথে দেখা হলো। বৃষ্টি হচ্ছেই... গাড়ি থেকে নেমে ভাস্কর, রাসেল, বৃত্ত আর রায়হান ভাই দৌড়ে গেলেন রাস্তার ওপাড়ে। চা না খেলে নাকী তাদের আর চলছে না ! আমি অবাক তাকিয়ে রই !
অবশেষে চা খেয়ে তেনারা এলেন। খাবারের জন্য তাড়া দিলাম। কারন ফিরতে হবে আবার। রায়হান ভাই দাঁড়িয়ে, বসে, বাঁকা হয়ে, সুন্দরী নারীদের ধাক্কা দিয়ে ছবি তুললেন মুকুল আর তার বৌয়ের। অবশেষে আমরা খেতে বসলাম- বিকাল তিনটা নাগাদ। খাওয়া-দাওয়া হলো। এলাহী অবস্থা মাশাল্লাহ ! পোলাও, সালাদ, সাদা ভাত, সব্জী, মুরগী, খাশী, গরুর গোশত, জর্দা, দধি... । খেয়ে যথারীতি গপ্পে মজে যাই। যাবারই কথা। ড্রাইভার এসে জানালো, ৫ টায় গ্যাস স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। সো, আমাদেরকে ৫ টার মধ্যে গ্যাস নিতে হবে। এক্সিডেন্টের কারনে বন্ধ রাস্তা তখনো খোলেনি। ইচ্ছার বিরুদ্ধে আবার রওয়ানা হলাম। মূল রাস্তায় না যেয়ে আগের মত গ্রামের রাস্তায় রওয়ানা হলাম আমরা। ছোট রাস্তা। অনেক কসরৎ করে অবশেষে ৬ কিলো রাস্তার বদলে আমরা ২১ কিলো পেরিয়ে চৌমুহনী চৌরাস্তায় এলাম। গ্যাস নিলাম। আমাদের সহযাত্রীদের চা না খেলে নাকী অনেক সমস্যা হবে... তেনারা আবার চা খেতে ঢুকলেন। আমরা রওয়ানা হলাম ৫ টায়।
কুমিল্লা আসলাম সাড়ে ছয়টায়। সহযাত্রীদের আবার চায়ের তেষ্টা পেয়েছে। থামতে হলো। একটা গ্যাস স্টেশনে নেমে তেনারা চা খেলেন। ২/১ টা গাড়ীকে গ্যাস দিচ্ছে দেখে আমাদের ড্রাইভার অনুরোধ এবং পরে ঝাড়ি মেরে ১০০ টাকার গ্যাস নিলো। এরপর ৬.৪০ মিনিটে আবার যাত্রা। ৭ টার দিকে দেখা গেলো একটা স্টেশনে গ্যাস দিচ্ছে। ড্রাইভার আবার থামালো। এবার অবশ্য কোনো ঝামেলার ছাড়াই গ্যাস ভরে নিলো। আর আমাদের তেনারাও চা খেলেন না। মনে হয় চায়ে তেনাদের অরুচি ধরেছে... কোনো ঝামেলার ছাড়াই কাঁচপুর ব্রিজে এলাম। ড্রাইভার যাত্রাবাড়ির জ্যাম এড়ানোর জন্য ডাইনে মোড় নিলেন। অর্থাৎ নতুন ডেমরা ব্রিজ দিয়ে আমরা পার হলাম। সামান্য এগিয়ে আবার ডাইনে মোড়। রায়হান ভাই মহাখুশি। কারন গাড়ি যাবে তার বাসার সামনে দিয়ে। আমরা শেখের জায়গা পেরিয়ে নন্দীপাড়ায় এসে আটকে গেলাম। ছোট রাস্তা। সবাই আমাদের ড্রাইভারের মত চালাকী করে যাত্রাবাড়ি দিয়ে না যেয়ে এই রাস্তায় ঢুকেছে। গাড়ী এক ফুট আধা ফুট করে এগুচ্ছে। নন্দীপাড়া পেরিয়ে মাদারটেক। রায়হান ভাই নেমে গেলেন। আমাদের গাড়ি ধীরে ধীরে বাসাবো পেরিয়ে যখন খিলগাঁও ব্রিজের নিচে তখন রাত প্রায় দশটা। ব্রিজের নিচ দিয়ে শাহজাহানপুর পেরিয়ে মালিবাগ মোড়ে আবার জ্যাম। বায়ে মোড় নিয়ে কাকরাইল- শেরাটন হয়ে সোনারগাঁ মোড়ে নামলো ভাস্কর। আমরা তিনজন মানে রাসেল, আমি আর বৃত্ত নামলাম ফার্মগেট। ১০ টা ২০ মিনিট। তেনাদের দুইজনের আবার চায়ের তেষ্টা পেয়েছে। আমাকেও বললো। স্যরি বলে বাসার দিকে হাঁটা ধরলাম। তেনারাও যার যার বাসার পথে পা বাড়ালেন...।
অবস্থা যা বুঝলাম, বিয়ের খাবারটাও মোবাইলে খেয়ে ফেললে ভাল করতেন
আগে বললে কী আর এত কষ্ট করতে হয় !
মেসবাহ ভাই রায়হান ভাইকে দেওয়া ঝাড়িগুলা গাপ করছে এইখানে, রায়হান ভাই আইস্যা বিস্তারিত বলবে, মেহবাহ ভাইয়ের কালচারাল জোনএর সাথে আমার কালচারাল জোন ম্যাচ করছে আমি আর কোনো কথাই কমু না।
কালচারাল পক্ষপাতিত্ব হয়ে গেলনা!
তাতো হৈইবোই। আমরা এক এলাকার বাসিন্দা না...
দারুণ ধারাবিবরণী
থ্যাংকু থ্যাংকু...
ফকিরি এলাকায় বাড়ি বলে, আপনে আমারে যে ঝারি মারলেন ঐটা তো লিখলেন না।
কানাকে কানা বলিলে কানার মনে বড় ব্যথা পায়...
আমি কৈ নাই। অনেকদিন আগে কোনো এক জ্ঞানী মাইনসে কৈয়া গেছে...
যেতে পারি নাই। তবে মুকুলরে সবচেয়ে বড় উপকারটা আমিই করতে চাইছি। মুকুলরে বলছিলাম, যতো রাতই হোক, যে কোনো উপদেশ, পরামর্শ বা টিপস এর জন্য আমার ফোন তার জন্য খোলা থাকবে।
মুকুল কি পরামর্শ সেবার জন্য ফোন করছিলো ?
অবস্থা যা বুঝলাম, বিয়ের খাবারটাও মোবাইলে খেয়ে ফেললে ভাল করতেন
শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও সমবেদনা
অবস্থা যা বুঝলাম, বিয়ের খাবারটাও মোবাইলে খেয়ে ফেললে ভাল করতেন।
তা ভাবীজানের ছবি কই??
অন্যের বৌরে দেখা শরিয়তে নিষেধ আছে, তাই নারে মুকুল
চুপচাপ পড়ে গেলাম।
কালকে আমরা নোয়াখাইল্যা হইছি। গেলাম-খাইলাম-ভাগলাম পুরা ভিনি-ভিডি-ভিসি।
চা খাওয়ার বহর দেইখ্যাতো পুরা হু।আ এর উপন্যাস মনে হচ্ছিল।
এসব লুকজন নিয়ে কেউ বাইরে যায়
মুকুলতো আমারে ফুন করে দাওয়াত দিল না, এর মানে কি? আমি কি ফেলনা তাইলে?
(
আমি আন্তর্জাতিক কল করি নাই। সব লুকাল কল।
হ

আমরা আভ্যন্তরীণ কল ছাড়া কোনো কল করিনা
মুকুলকে বিয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
বিয়েতে বৃষ্টি হওয়া নাকি ভাল। কেন আমি জানি না মুরুব্বিরা বলে।
আপনার ধারা বিবরনির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা এই বিয়ে খেয়ে যাবার যাত্রার খুঁটিনাটি যেনে অনেক জ্ঞান অর্জন করলাম তবে দাদা ভাই ইয়ে মানে অডিও করে পোস্ট করলে বেশি সুবিধা হইতো?
ইয়ে, মানে অডিও পোস্ট মাইনে কী বইন ?
এত্তো কিসে চা খাওয়া! আপ্নে পিকনিকের স্টাইলে উনাদের "নোটি নোটি" বলে ডাক দিলেন না কেন!
তাতা'পু@ মুক্লা আমারেও ফুন দেয় নাই!!
(
তুমি যখন জাতীয় ব্যক্তিত্ব ছিলা, তখন দিছি। এখন তো তুমি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। ইন্টারন্যাশনাল কলের খরচ ক্যাম্নে পামু @ জেবিন।
হ, মুকুলের লগে একমত
মুকুলের জন্য সহানুভূতি
বড় ভালু লুক ছিলো
আহারে
মেসবাহ ভাইয়ের থ্রি কোয়ার্টার নোয়াখাইল্লা একসেন্ট শুইনা আমরা যেমনে ডরাইছিলাম, তাতে চা না, ঐ সময় ঢাকা ফিরা আসনের নিশ্চয়তা পাইতে আমাগো আসলে দরকার ছিলো এলকোহল জাতের কোনকিছু। সেইটা যেহেতু পাওন যায় নাই
তাই চা খাইয়াই নির্বোধ হইয় পইড়া থাকনের চেষ্টা চালাইতেছিলাম আমরা।
এরিও বাইছা, আন্নে ইঁয়ান কিয়া কৈলেন ? আঁই বুজি নোয়াখাইল্যা কতা কৈতাম হারিনা...!!
আমারে না কৈলেও কিন্তু আমি যাইতাম। গাড়ি তো আমার বাসার সামনেই ছিল।
তাইলে গ্যালেন্না ক্যান ?
বন্ধুদের দেইখা খুবই খুশি হইছি। আল্লাহ সবাইরে একশ বছর হায়াত দিক।
কিন্তু আমার বউয়ের ছবি কই? রায়হান ভাই, আপনার ছবিগুলা পাঠান তাড়াতাড়ি প্লিজ।
ক্যান, এই বদ দোয়া দিলা ক্যান মুকুল !
হ মুকুল, বৌ নিয়া আইসা পড়। জম্পেশ একটা আড্ডা হোক, সাথে খাওয়া-দাওয়াও...
বিরাট মিস হৈয়া গেলো
মুকুল , আর বিয়া করবা না ?
মন্তব্য করুন