খোলা চিঠি--
আমি প্রতিক্ষায় ছিলাম। হাসপাতালের রিসিপশনে বসে ছিলাম। কখন তার যাবার সময় হবে। আমি সেই তখন ভদ্রতা বজায় রেখে আবার আসবার কথা বলে বিদায় দেব। সেই সমটা কতক্ষন পর হবে , আধাঘন্টা একঘন্টা-------------------
জানি সে একজন নারী। তার রয়েছে প্রখর ব্যাক্তিত্ব। সেই ব্যাক্তিত্ব তোমাকে করেছে বিমোহিত। তার উচ্চারন, তার কথা বলবার ভঙ্গি একেবারেই গতানুগতিকের বাইরে। তোমার দিকে তাকিয়ে তোমার মুখ থেকে কথাগুলি শুনছি। তোমার অসুস্থ্য চোখে মুখে তার কথা বলবার সময় এক ধরনের উজ্জ্বলতা খেলা করছে। সেই নারী বিবাহিতা। তুমি বলছো সে তোমার বন্ধু।
বন্ধু তবে এতদিন বলনি কেন? বন্ধুর জন্য আমার সাথে এত লুকোচুরি কেন? বন্ধুর জন্য তুমি এত ব্যাকুল কেন? আমারও তো অনেক বন্ধু আছে কিন্তু সেখানে তো কোন লুকোচুরি নেই।
সে অত্যান্ত ব্যাস্ত একজন। কিন্তু তোমার জন্য তার অঢেল সময়। সেই নারী তোমাকে এই হাসপাতালে রিসিভ করেছে। আমি ঢাকায় এসে পৌঁছাবার আগে সে তোমার সাথে দেখা করতে আরও দুইবার এসেছে। আথচ তোমার ঢাকায় আসা আর আমার আসার মধ্যে সময়ের ব্যাবধান দুই দিন। আর আমি এসেছি দুই দিন । এই দুইদিন তোমাকে না দেখতে পেয়ে সে ব্যাকুল হয়ে গেছে, তাই বাধ্য হয়ে তুমি আমাকে বলেছো তার কথা। কি অবলিলায় বলে গেলে! সে তোমাকে কত বুঝে।! কত যত্ন করে।! অথচ রফিক দেখ আমি ষোল বছর তোমার সাথে আছি। আমি ছাড়া তুমি এখনও বুঝোনা কোন শার্টের সাথে কোন প্যান্ট পরবে। ঢাকা যাবার সময় আমি তোমার ব্যাগ গুছিয়ে দেই যাতে তোমার ফ্যাশন নষ্ট না হয়।
এবারে আমার মিথ্যার প্রসঙ্গ। তুমি আমাকে বলেছো তুমি তার সাথে ফোনে একদিন কথাও বলেছ। আমি তোমার কাছে তখন তা অস্বীকার করেছি। কিন্তু আজ বলছি হ্যাঁ রফিক আমি তার সাথে কথা বলেছি। আমি আমার মোবাইল ফোন থেকে তার সেলোফোনে তার সাথে কথা বলেছি। সে বার বার জিজ্ঞাসা করেছে আমি ফোন নাম্বার কোথায় পেয়েছি ? আমি তাকে বলেছি --কোথাও না এমনি নাম্বার চাপতে চাপতে আপনার কাছে চলে গিয়েছে। আমার স্বভাব বিভিন্ন নাম্বারে ফোন করা এবং কথা বলা যদি মনের মত কেউ জুটে যায়।--- আমাকে সে চিনে ফেলেছে । সেই রাতেই তুমি আমাকে বলেছিলে টি এন্ড টি ফোনে বিল এসেছে বারশো টাকা । নেট বিল আঠারোশো টাকা। তোমার মোবাইল বিল কত লাগে মাসে একটু হিসাব করো। না তুমি রাগ করে বলোনি। তুমি কখনই আমার সাথে রাগ করনি। আর আমি মনে মনে যোগ বিয়োগ করার চেষ্টা করেছি।
তুমি অনেক চেষ্টা করতে তার ফোন এলে আমাকে লুকিয়ে কথা বলবার। কিন্তু আমিতো তোমাকে চিনি। তোমার প্রতিটি মুখের পেশির সঞ্চালন আমার নখদর্পনে। আমাকে লুকানোর চেষ্টা আমাকে খুব অবাক করে দিত। কি এমন ফোন যে আমাকে লুকাতে হবে এবং সেই সময়ের কোন নাম্বার আর ফোনে পরে খুঁজে পাওয়া যেত না। পহেলা ফাল্গুনের সকালে তুমি ফ্রেসরুমে যাবার পর তিনটি মিসকল আসে। তুমি ভুল করে মোবাইল সেটটি সঙ্গে নাও নি। আর তা ছিল আমার মাথার পাশেই। এবারে একটি ম্যাসেজ এল। তোমার মোবাইল সেটে এস,এম,এস এলে এস,এম,এস এর প্রথম কয়েকটা শব্দ লেখা দেখা যায়। আমি তা দেখেই মোবাইল নাম্বারটা নিয়েছিলাম এবং সেই দিন দুপুরেই আমি তাকে ফোন করেছি। আমি তাকে তোমার পরিচয় দেইনি। আমি নিজের পরিচয়ও দেই নি। আমি তাকে বলেছি আমি এক গৃহিনী থাকি ঢাকা থেকে অনেক দূরে। খুব ফিল করছি ঢাকাকে কারন আজ পহেলা ফাল্গুন।
হ্যাঁ আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছি নিজেরই লজ্জায়। তোমাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেও আমার নিজেকে ছোট মনে হত। এত নীচ আমি হতে পারি নি। আমার ব্যাক্তিত্ব তোমাকে তোমার কোন ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করতে বাধা দিয়েছে, আমি এত নীচে নামতে পারি নাই। আমি সেই শিক্ষাও পাইনি। তোমার মনে আছে নিশ্চই আমি তোমাকে বলেছিলাম--- রফিক আমরা মানুষ। মানুষের মন কখন কি করে তার কোন ঠিক নেই এখানে আমাদের কোন হাত নেই । তোমার যদি কখনও অন্য রখম চিন্তা আসে আমাকে বলো আমরা চেষ্টা করবো সেই সমস্যার সমাধান করতে কিন্তু কখনও আমাকে লুকাবে না আমাকে অপমান করবে না। -- তুমি কথা রাখতে পারনি। তুমি আমার সামনে তোমাকে খুব নীচু করে ফেলেছ। আমি যাকে ভালবাসি তার ব্যাক্তিত্ব সৌর্য্যবীর্য্য আমার কাছে ছিল চিরউন্নত। সেই তোমার ভূলুন্ঠিত ব্যাক্তিত্ব আমাকেই লজ্জায় ফেলে দিল।
আমি ঢাকায় আসাতে তুমি খুব খুশি হয়েছ। আমি তোমার কাছে এসেছি বলেই তুমি ভাল আছ। আমাকে সকাল হবার আগেই ফোন কর-- কখন আসবে? আমি রাতে বাড়িতে যখন যাই তুমি করুন চোখে বার বার করে বল --আর একটু থাক। আবার বাবুর কথা ভেবে বলো -যাও। কিন্তু তোমার আর এক সত্তা তার সাথে দেখা করবার জন্য উদ্গ্রীব। আমি ঠিক জানি না কোনটা প্রেম। প্রেম কি একই সাথে দুই জনের জন্য প্রবাহিত হয়। ভালবাসা প্রবাহিত হয়। আমরা আমাদের সন্তানদের সমান ভাবেই ভালবাসি। আমাদের বাবা মাকে ভালবাসি। প্রেম আর ভালবাসা এক নয়, কখনই এক নয়। তোমার সাথে বসবাস এখন একটি অভস্থ্যতা বা স্বভাবের অংশ। তোমার আমার সম্পর্ক কি এখন শুধুই দায়িত্ব বোধ? আমি তা বিশ্বাস করি না। কিন্তু তবুও কিসের কাঁটা বুকের মাঝে বিঁধিয়ে দিয়ে জানায় একটু ছন্দ পতন যা আমার মনের মাঝেই বিরাজমান তোমার আচরনে নেই।
আমি জানি না তুমি তার মাঝে কি ব্যাক্তিত্বের প্রকাশ খুঁজে পেলে রফিক। ঘন নীল শাড়ী তার সাথে মিল করে পরা ঝুমকো পাথরের গয়না , ঠোঁটে মেরুন লিপিস্টিক , চোখ জুড়ে দেয়া কাজল ও হাসপাতালে রুগীর দর্শনাথী হিসাবে গালের ব্লাসন তাকে আমার চোখে ক্লাউন করে তুলেছে। হয়ত তার প্রতি রাগের কারনেই এটা আমার মনে হয়েছে। কিন্তু তুমি জানো আমি এই সব খুব অপছন্দ করি এবং আমার জানা মতে তুমিও করতে। এক এক জন নারীর শাড়ী গয়না ও কস্মেটিকস এর অপব্যাবহারে কত হাসাহাসি করতাম এবং এখনও করি।
কতক্ষন বসে ছিলাম আমি ওখানে। রাত এগারোটা। সে এসেছে রাত নয়টায়। আমি জানি না আমি কটার সময় ওখানে এসেছিলাম। তার যাবার সময় হয়েছে। আমাকে খুঁজেছ। আমি মোবাইল তোমার পাশেই রেখে এসেছি। আমি কেবিনে ঢুকবার সাথে সাথে তোমরা দুইজনই আমায় অনেক প্রশ্ন করবে আমি কি উত্তর দেব কিভাবে দেব সব ঠিক করেই আমি কেবিনে গেলাম ।
আমি জানি এই চিঠি তুমি কখনও ই পাবে না । কখনই পাবে না। এ ব্যাপারে আমার যন্ত্রনা আমি কখনই তোমাকে বুঝতে দেই না দেব না। যখন খুব কষ্ট হয় আকাশের তারা গুনি। তুমি কাল বার বার করে বলছিলে --তোমার কি হয়েছে? আমি কিভাবে বলি আমার মনের অসুখ হয়েছে। তোমার সাজানো সুন্দর কথাগুলি একটি একটি করে মিথ্যে প্রমানিত হচ্ছে আমার কাছে। তোমার মুখের মিথ্যেগুলি আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। তোমার প্রতি খুব করুনা হচ্ছে। কিভাবে তুমি আমার সামনে খুব সাধারন হয়ে যাচ্ছ দেখে আমার খুব লজ্জা হচ্ছে। আজ আর নয় রফিক তোমার মনে যে সব প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে তার উত্তর আমি অন্য চিঠিতে অন্য দিন দেব।
গল্প? ট্যাগ করে দিতেন। ভালো লাগলো গল্পটা
এবার থেকে দেব। ধন্যবাদ।
খোলা চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় রইলা।।
একটু গুছিয়ে নিয়ে লিখি ভাই। একটূ অপেক্ষায় থাকুন।
অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ।
নতুন করে কিছু বলার নেই..
আপনি বরাবরই ভালো লেখেন ....
আগ্রহ নিয়ে থাকলাম
ধন্যবাদ ভাই।
আপনি তো কিছু বললেন না। শুধুই ইমো----
হুমম। লেখাটা ভালো। কেউ এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে না গিয়েও এভাবে লিখতে পারে? জানা ছিলো না। আর কেউ যদি এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় তাহলেও কি সে এভাবে লিখতে পারে? তাও তো জানা নেই।
লেখাটা পছন্দ হইসে। পছন্দ করার সুযোগ একবারই, নাহলে বারবার পছন্দ করতাম। আবার জানেন কি, কখনো-কোন একদিন এই লেখাটাই হয়তো প্যানপ্যানানি (খুব ভয়ে ভয়ে শব্দটা লিখলাম, উল্টো ভাবার সুযোগ নেই) মনে হবে। মানুষের মন বড় বিচিত্র, যা বেঁচে থাকলে ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। কখনো গহনার বদনামের তুবড়ি ছোটে, কখনো বা পরিহীতার কল্যাণে সেটিও প্রশংসিত হয়। এ প্রশংসা কি গহনার না পরিহীতার? না সাময়িক সেই মায়ার, যেই মহামায়া এক সময় গহনা ছাড়াও সৌন্দর্য কতো প্রস্ফুটিত তা দেখার সুযোগ দিয়েছিলেন?
(এই রকম একটা পেইন মন্তব্য এত সুন্দর লেখার সাথে যাচ্ছে না, স্যরি মেট্)
খুব সুন্দর মন্তব্য করেছেন। আসলে সময়ের সাথে সবকিছু নির্ভর করে। আমি যখন আমার বাবার মৃত্যু সংবাদ আমার ছোট বোন কে দিলাম তখন তার মোবাইলের সেই মধুর গান (আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম) আমার মাঝে বিরক্তি উৎপাদন করেছে । মন শুধু বলেছে ফোন ধরেনা কেন? কিন্তু অন্য সময় তা মনটা কত ভাল করে দেয়।
ধন্যবাদ।
মানুষ মরে গেলে ঝরে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়।
আসলে ভালোবাসা বলতে কি কিছু সত্যিই আছে কি না জানা নেই। রক্তের সম্পর্কের বাইরের সব সম্পর্কই আরোপিত, প্রয়োজন, মোহ।
এ পরিস্থিতি যার জীবনেই আসুক, তাকে সান্ত্বনা দেয়ার কোন ভাষা নেই।
ভালবাসা ছাড়া আর আছে কি? মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায় কারনে অকারনে বদলায়।
কিভাবে পারেন আপু মানুষের মনকে এভাবে পড়তে? মাইন্ড রিডার নাকি আপনি?

আপনি ভাল থাকুন।
মন্তব্য করুন