মঞ্চে যাত্রা দেখলাম
কাল রাতে যাত্রা দেখতে গিয়েছিলাম। আমার জীবনে এই প্রথম সরাসরি যাত্রা মঞ্চের সামনে বসে যাত্রা দেখা। যাত্রার নাম “নীচু তলার মানুষ”। আমরা প্রথম সারির দর্শক। উঁচু মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রায় আধাঘণ্টা পার হয়ে গেল এই মূহুর্তে শুরু হচ্ছে আজকের যাত্রা ‘নিচু তলার মানুষ’ এই ঘোষনা শুনতে শুনতে। মঞ্চে মাইক টেষ্ট করছে। গঙ্গাজল ছিটাচ্ছে। গঙ্গাজল শব্দটা আমার ভাষায়, কারন এক ধুতি পরা লোক মঞ্চে বোতল থেকে পানি ছিটালেন তারপর মঞ্চকে ছুঁয়ে প্রনাম করলেন।
আমাদের কারখানার কিছু কর্মচারী, শ্রমিক মিলে একটি নাট্টদল তৈরি করেছিল পঁচিশ বছর আগে। সেই নাট্টদলের নাম ‘আদর্শ নাট্টদল’। তাদের পচিঁশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানের প্রথম দিনে এই যাত্রা। এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনি ঘোষনা করবেন আমার জানু। অর্থাৎ আমরা প্রধান অতিথির দলের লোক। প্রথমেই মাঠে প্রবেশ করতেই শুনলাম মাইকে একজন বলছেন--সুধীমন্ডলি একটু অপেক্ষা করুন আমাদের প্রধান অতিথির দেরীর কারনে অনুষ্ঠান শুরু করতে দেরী হচ্ছে, তবে তিনি চলে এসেছেন। প্রধান অতিথির নামের আগের পরের বিশেষন নাইবা বললাম :bigsmile ।
আমি ঘড়ি দেখলাম। আমাদের আসতে বলেছে ৮টায়। উদ্বোধোনী ৮’৩০এ । এখন ৮’টা বাজে। যাই হোক একে একে সব অতিথি মঞ্চে উঠলেন। এবার দেখি বক্তা বলছেন -- আমরা গভীর আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আজ আমাদের সাথে এখানে উপস্থিত আছেন আমাদের প্রধান অতিথির পত্নি, আমরা ---পত্নিকে মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ করছি। পুরাই মফিজ হয়ে গেলাম। বলে কি এই গাধারা!
একজন দেখি স্কট করে নিয়ে যাবার জন্য চলেও এল। বড় মেয়ে আমার হাত ধরে ফিসফিস করে বলল --মা যা অবস্থা এখন যেন আমাকে আবার গভীর আনন্দের সাথে না ডাকে। মঞ্চে হাসি মুখে উঠে প্রধান অতিথির দিকে কটমট করে চাইলাম, দেখি বেচারা হাসি থামাবার প্রানপন চেষ্টা করছে। এবারে ফুল দেবার পালা। মঞ্চের সবাইকে ফুল দেবে, কিন্তু এখানে আমি বেশী তাই ফুল কিনতে লোক গেছে এক্ষুনি আসবে। বসে আছি সংএর মত। একজন এসে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি স্যারের পর বত্তৃতা দেবেন, নাকি আগে? আমি বেশ জোরের সাথেই বললাম --না না আমি কিছু বলবো না।
যথা সময়ে উদ্বোধনী হল।
উদ্বোধনীর পর মঞ্চ থেকে নামতেই কয়েকজন মিলে বললো -স্যার মঞ্চ রেডি হবে এখন একটু ভিতরে চলেন চা খাই। ঠিক আছে চা খেতে আপত্তি নেই। চা খাবার ঘরে ঢুকে দেখি ডিনারের ব্যাবস্থা। প্রধান অতিথি তার অফিসারদের জিজ্ঞাসা করলেন তারা জানতো কিনা ডিনারের কথা। তারা বলল- বড় বড় প্লেট কেন যেন দেখছি!?
উহ্ সে যে কি ঝাল আর লবনে মাখানো মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস আর বুটের ডাল।? মেয়ে দেখলাম খুব মজা করে খাচ্ছে আর বলছে মা খুব ঝাল কিন্তু খুব মজা হয়েছে । খাবার শেষ পর্যায়ে বলল--মা ডেজার্ট দেবে না। ডেজার্ট না পেলে যে ঝালে মরে যাব।
--চুপ কর আমার ব্যাগে চকলেট আছে হাত ধুয়ে মুখে দিও।
--না না এক্ষুনি দাও।
ঝালের চোটে আমার জানু বলেই ফেলল ----বেশী চিনি দিয়ে চা পাওয়া যাবে। একজন দৌড় দিয়ে চা আনতে গেল। সেই চা আসবার সাথে সাথে একজন হন্তদন্ত হয়ে খবর আনল স্যার চলেন আপনারা সিটে বসলেই যাত্রা শুরু হবে। চা না খেয়েই দৌড়। সেই দৌড় দিয়ে বসেই আছি মঞ্চ আর ঠিক হয় না। যাত্রা শুরু হল রাত সারে দশটায়। প্রথমেই চারজন মেয়ে এসে গান গাইল ‘একবার যেতে দে মা আমার ছোট্ট সোনারগাঁয়’। গানের সুর আছে তাল আছে কিন্তু শ্রুতিমধুরতা নেই। এটাই যাত্রার স্টাইল। (মেয়েগুলির মেক আপ দেখে ও কন্ঠস্বর শুনে জানু আমার কানে কানে বলল -এই এরা কি কমন জেন্ডার ?- গাধা - বলে ধমক দিয়ে যাত্রা দেখায় মন দিলাম।)
এরপর একজন মেয়ে এসে গাইল “ আকাশটা কাঁপছিল কেন? জমিনটা নাচছিল কেন? বড়পীর ঘামছিল কেন সেইদিন সেইদিন? খাজাবাবা গাইছিল গান যেইদিন যেইদিন।“ শুরু হয়ে গেল যাত্রা। এ যাত্রা চলবে সারা রাত। আর বসে থাকা যায় না। রাত সারে এগারোটায় ফিরলাম বাড়িতে। গাড়িতে উঠেই মেয়ে বলল--মা আমাদের রাসেল স্যারের নাম ইয়াসিন স্যার খাজা বাব রখেছেন, কারন স্যার আমাদের সব কথা শুনেন। ইয়াসিন স্যারকে কোন ছেলেমেয়ে এবং শিক্ষকরাও পছন্দ করেন না। রাসেল স্যার আমাদের প্রিয় স্যার। এবার এই বছরের স্লোগান পেয়ে গেলাম।
----কি পেলি?
---- আকাশটা কাঁপছিল কেন? জমিনটা নাচছিল না কেন? ইয়াসিন ঘামছিল কেন সেইদিন সেইদিন? রাসেল বাবা গাইছিল গান যেইদিন যেইদিন
ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । আমি যাত্রা শিল্পকে ছোট করে দেখছি না। তাদের প্রতি সম্পূর্ন শ্রদ্ধা রেখেই একটু মজা করলাম।
সুন্দর। শুভ সকাল রুনা আপু। কেমন আছেন?
শুভ সকাল ভাইয়া। আমি ভাল। আপনি ভাল আছেন তো?
ইয়াপ। নেভার বীন বেটার। সকালে ঘুম থেকে ওঠা একটা দারুণ ব্যপার
জাগো নির্মল নেত্রে রাত্রির পরপারে,
------------------------------
জাগো স্বার্থের প্রান্তে প্রেমমন্দিরদ্বারে।।
হা হা ব্যপক মজা পাইলুম...
আমরাও মজা পেয়েছি বলেই তো ঘটনা লিখলাম। সবচেয়ে মজার অংশ ছিল আমার মঞ্চে বসে থাকা।
ব্যাপক খাওন দেক্লাম চোখের সামনে... কিন্তু কিচ্ছু করার নাই
উহ্ সে কি ঝাল
পুরাই জোস ।
ধন্যবাদ আপা।
রুনাপার পোস্ট পড়ে আপনার যাত্রা দেখা আমাদেরও হলো। আর একজনের সাথে গল্প করছিলাম গানটা নিয়ে । সে এক বিরাট ইতিহাস শোনালো। ইতিহাস সত্যি হলে দারুণ গান এইটা।
গ্রামে শীতকালে যাত্রা হতো মাসব্যাপী। কোনদিন আম্মা দেখার অনুমতি দেয় নাই। তবে যাত্রার মেয়েদের দেখতাম সেজেগুজে থাকত, রাত্রে যাত্রার প্রধান আকর্ষণ নাকি এদের নাচ।আর নাচের ফঁাকে স্কার্ট বাতাসে উড়তো।
আমিও কোন দিন দেখিনি। বেইলি রোডে নাটক দেখতে যেতাম মাঝে মাঝে বাবার সাথে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আর বাবার দরকার হয়নি।
জ্যোতি আমি ও শুনেছি রাত যত গভীর হয় ওদের গায়ের কাপড় নাকি তত কমতে থাকে।
শুধু স্কার্ট না --- তবে এটা আমাদের নিজস্ব প্রগামতো এখানে এসব কিছু হবার সম্ভবনা নেই। আজ আবার ওদের সমাপনি অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিয়েছে। জানু কে বললাম গভীর আনন্দের সাথে যেন প্রয়াধান অতিথির পত্নিকে না ডাকে।
দুনিয়াটাই এক যাত্রা পালা
তাদের জীবন যৌবন জ্বালা পালা
তাদের পেটের জ্বালা আর দর্শকের যৌবন জ্বালা এখানে আবার আছে আয়োজকদের টাকার জ্বালা
'নিচু তলার মানুষ' এর কাহিনী তো বললেন না !
দেখিছি তো মোটে এক ঘণ্টা তাতে যা বুঝেছি তা হল--বড় বোন জমিদার গিন্নী কিন্তু বাচ্চা কাচ্চা নেই , আর ছোট বোন পাড় মাতালের বঊ প্রতি বছর বাচ্চা হয় শেষেরটা জমিদার ১০ হাজার টাকায় কিনে নেয়।
এ----র----প--------র --------২৫ বছর পার হয়। আমরা ও চলে আসি।
দারুন লিখেছো। আহা খাওয়া দাওয়া
সু্য়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন
সুয়া উড়িলরে...। মাথার মধ্যে বেজেই যাচছে গানটা
সূয়া উড়িল উড়িল জীবের ও জীবন
সূয়া উড়িল রে--
---------------------- তুমি তো আমার মাথাতের ঢুকিয়ে দিলে গান টা।
সিনেমার সাবজেক্টটা খুব গা রী রী করা। চরিত্রের মানসিকতা কত বিপরীত ধর্মী।
আমার মাথায় বেজেই যায় তাই তোমার মাথায় transfer করে দিলাম
আকাশটা কাঁপছিল কেন? জমিনটা নাচছিল কেন? বড়পীর ঘামছিল কেন সেইদিন সেইদিন?

কিন্তু দুই দুইকহান রিং পাইলা
কই?
ঢাকায় আসলে অভিনয় কইরা দেখাইয়েন। নাইচাও......
সূয়া উড়িল উড়িল জীবের ও জীবন
সূয়া উড়িল রে-- আমার মাথায় ও ট্রান্সফার হয়ে গেলো
প্রধান অতিথির পত্নি বলে কথা
এই সম্ভাষন শুনলে তুমি ও বলতে -- হায় আমি কেন এলাম।?
সূয়া উড়িল উড়িল জীবের ও জীবন
সূয়া উড়িল রে-
হিঃ হিঃ মজারু পোস্ট।
ইদানিং মাঝে মাঝেই আপনার লেখা পাচ্ছি, খুব ভাল লাগছে।
এমনি নিয়মিত ভাবে দিবা রাত্রির কাব্য শুনিয়ে যেতে থাকুন। ভাল থাকুন।
খুব ভাল বলেছ বি বা দিবা রাত্রির কাব্য তবে রসাত্বক কাব্য। ভাল থাক ভাই।
বুটের ডালের সাথে গরুর চর্বি মেশায় নাই, আর বোরহানি ?
আমার ফ্রেন্ড , আই মিন জুনিয়র চৌধুরি যায় নাই?
গরুর চর্বি না মেশালে তো উত্তর বঙ্গের ঐতিয্য রক্ষা হবে না। মিশিয়েছে মনে হয় ঝালের জন্য দেখার বা বোঝার চেষ্টায় যাই নি।
না আপনের দোস্ত যায় নি যে পেটুক বেচারা
হুম হুম করে খেতে শুরু করেই ঝাল ঝাল বলে চিৎকার শুরু করে দিত।
যাত্রা কখনো দেখআ হয়নি
পোষ্ট টা সুন্দর হইছে
মন্তব্য করুন