হারিয়ে পাওয়া
সেদিন সকাল থেকেই খুব ব্যাস্ত আমি । বেলা ১২টার দিকে বড় মেয়েটার স্কুল থেকে ফোন এল। আপনার মেয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে, সে সাইকেল চালাতে পারছে না। তাকে কি আমরা রিক্সায় তুলে দেব, নাকি আপনি কোন ব্যাবস্থা নিবেন? -- আমি আসছি, বলেই গাড়ি নিয়ে স্কুলে গেলাম। সেখান থেকে তাকে নিয়ে হাসপাতাল। হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে রুগীর সবকাজ শেষে বাসায় ফিরলাম। আইস ব্যগ নিয়ে বসেছি পায়ে বরফের শ্যাক দিতে এমন সময় নীচ থেকে চিৎকার । দৌড়ে নিচে যেয়ে দেখি ছোটটার পায়ের চামরা ছিলে রক্তারক্তি কান্ড। তাকে বাগান থেকে নিয়ে এসে পা ধোয়ানো থেকে শুরু করে তার সম্পূর্ন শুশ্রাষা করে, তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। এবার আমার ফোন বেজে উঠল। জানের জান জানু জানালো সে এই মুহুর্তে সীমান্ত ট্রেন ধরে রাজশাহী যাবে, আমি যেন তার ব্যাগ গুছুয়ে দেই, সে আসছে। বাচ্চাগুলি যে আহত হয়েছে সে কথা বলারও ফুসরুত পেলাম না। ব্যাগ গুছিয়ে দিলাম । তিনি আসলেন ব্যাগ নিলেন, চলে গেলেন।
তাকে বিদায় দিয়ে বিছায় এসে শুলাম। আঙ্গুলটা চুলকাচ্ছে। চুলকাতে যেয়ে বুঝলাম আংটিটা নেই। সে আর নেই। আমার বাবার দেয়া , আমার ত্রিশ বছরের সাথী আমার সাথে নেই। কখন শেষ তাকে দেখেছি মনে করতে পারলাম না। সেই কবে ক্লাশ এইটে বৃত্তি পাবার আনন্দে বাবা আমাকে ওটা উপহার দিয়েছিল। কালের বিবর্তনে মধ্যমা থেকে অনামিকা হয়ে সে আমার কানি আঙ্গুলে আশ্রয় নিয়েছিল। আমার আঙ্গুলে আর কোন আংটি কখনই উঠেনি।
আমার প্রচন্ড খারাপ লাগতে শুরু করলো। আমি কোন কিছুর জন্য কখনই কষ্ট অনুভব করি না। কোন নশ্বর জিনিসের জন্য তো নয়ই। সেই আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। আমার কাছ থেকে যেন আমার জীবনের অনেকখানি হারিয়ে গেল। তার সাথে আমার অনেক স্মৃতি। সে আমার অনেক অনন্দ বেদনার কাব্যের সাক্ষি। আমার কান্না খুব কঠিন জিনিস। আমি খুব গভীর কষ্ট না পেলে কখনই কাঁদি না। সেই আমি ব্লগে বসে আছি। ফেসবুকে বসে আছি। বিনা কারনে চোখ দিয়ে পানি পরছে। বাচ্চাগুলি আশেপাশে ঘুরছে আর বারবার বলছে মা কেঁদো না, মা আর কেঁদো নাতো আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। জানুকে প্রথম জানালাম । ওকে বলতে যেয়েই কেঁদে ফেললাম। সেই কান্না আমি কিছুতেই রুখতে পারছিলাম না। শুধু মনে হচ্ছিল, বাবা যেন আমার কাছ থেকে রাগ করে চলে গেল। শুধু বাবাকেই মনে পরছে। আংটিটা যেন বাবার পরশ হয়ে ছিল।
তার হয়তো অনেক অভিমান ছিল অনেক অনেক কারন তাকে আমি কখনই মন দিয়ে দেখি না, ভাবি না তার থাকা না থাকাকে নিয়ে। সে সরে গেল। আমাকে আমূল নাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। তাকে হারিয়ে আমি বুঝলাম যে সে আমার কে ছিল? কতখানি ছিল?
রাজশাহী থেকে জানু ঢাকায় গেল। আজ সকালে ঢাকা থেকে ফিরল। আঙ্গুলের আংটির দাগটা ছূঁয়ে বলল- পেলেনা না।
বলল --যেটা গেছে তার মূল্য অনেক, জানি কোন কিছুই ওটার বিকল্প নয়।
আঙ্গুলে আর একটি আংটি পরিয়ে দিয়ে বলল-- ওটা ছিল বাবার, আর এটা আমার।
হাতে চাপ দিয়ে বলল-- আমি তো আছি। দু চোখ ফেটে পানি এল। ওকে জড়িয়ে ধরে নিরবে বসে রইলাম।
বাচ্চাদের স্কুলে পাঠালাম। জানু ওয়াশ রুমে যাবার পর ওর ব্যাগ থেকে সব কাপড় বের করছি। সবগুলি কাপড় বের করেই দেখি একা আমার আংটিটি নিরিহ ভঙ্গীতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এত্ত জোরে চিৎকার করেছি যে জানু ভয় পেয়ে ওয়াশ রুম থেকে জিজ্ঞাসা করল --কি হয়েছে। আমি ছুটে এসে ওয়াশ রুমের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিলাম। ও তারাতারি দরজা খুলে দিতেই আংটিটি দেখালাম। ---ওহ্ মাই গড, কোথায় ছিল? ভাগগিস কোথাও পরে যায় নি। জানুর ব্যাগ গুছিয়ে দেবার সময়ই ওটা আঙ্গুল থেকে খুলে ওর ব্যাগে পরে যায়।
আমি হঠাৎ করে তাকে পেয়ে গেলাম। সে হারিয়ে গিয়েছিল আমার কাছ থেকে। সে আমার অস্তিত্বের সাথে এমন ভাবে মিশে ছিল যে তাকে ভুলেই গিয়েছিলাম। সে ঠিক কোন মুহুর্তে আমার কাছ থেকে সরে গিয়েছিল টেরই পাইনি। তাই ব্যাগের মাঝে বসে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। যেন বলছে, কেমন মজা আমাকে আর অবহেলা করবে?
অনেক স্মৃতিময়, ভালোবাসা জড়ানো একটা লেখা। যার যায় সেই বুঝে... যাক, ফিরে পেলেন আপনার প্রিয় জিনিসটি। আপনি ভাগ্যবতী।
আসলেই অনেক স্মৃতিময় দাদাভাই। ফিরে পাবার অনন্দ সত্যিই অতুলনিয়।
ওরে বাবা এ তো দেখি রীতিমত রহস্যপোন্যাস!!!
শেষে তাক লাগিয়ে দিলে...!!!!
শুরুতে যে কষ্ট টা লেগেছিল, তা নিমেষেই উড়ে গেল। তাই মজা করলাম। খুব সুইট হয়েছে লেখাটা।
ভালো থেক ছানা-পোনা জানু আর তেনাকে নিয়ে
শাপলা আমার তেনাকে ফিরে পাবার আনন্দের সাথে যোগ হল তোমার মন্তব্য। এই মন্তব্যও আমাকে খুব আনন্দ দিল।
তুমি ও ভাল থাকো তোমার ছানা ও উনিকে নিয়ে।
উফ্ প্রিয় একটা লেখা।
ভাল লাগল । আপনার লেখাও আমার খুব প্রিয়।
ছি ছি, আপনার জানু এরম? আংটিটা মাইরা দিতে চাইছিলো?
কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না, আর রতনে রতন চেনে।
প্রথমে খুব কষ্ট লাগলেও পরে খুব খুবই ভাল লাগল । আপনার ছানাপোনা সহ জানুকে নিয়ে আনন্দে থাকুন, সারাজীবন,সারাবেলা ।
আপনারাও ভাল থাকুন।
আহারে! কত মায়া দিয়ে লিখলেন! চোখ ভিজে গেলো।
আপনের জানুটাও দেখি লুক ভালু।
তোমাদের মায়াই তো মনের কথা লেখার আনন্দ পাই।
দারুন ভাবে খুজে পেলেন!
আর এই মায়াময় অসাধারন লেখাটা পড়ে ফেললাম।
ভালো থাকবেন আপু, শুভকামনা!
আপনি ও ভাল থাকুন সব সময়। ওটা পেয়েছি এটাই অনেক বড়।
:মজা
আহ্ দারুন একটা মায়া ভরা লেখা। বাচ্চারা এখন কেমন আছে? ভালো থাকুন সবসময়।
বাচ্চারা সবাই ভাল আছে, আমি ও ভাল আছি। আপনি ও আপনারা ভাল থাকুন।
পাবে যে সে ব্যাপারে আমি মোটামুটি শিওর ছিলাম। বারবার জিগগেস করলাম দেখলে না? খুব ভাল লেগেছে। আমার ধারনা সঠিক হয়েছে দেখে
তুমি যে খাজাবিবি তা জানলে তো আস্থা রাখতাম। এরপর থেকে যে কোন সমস্যায় মুসকিল আছানের জন্য তুমি আছ ---- হক মওলা।
যখন থাকে তখন তেমন গুরুত্ব দেই না, হারিয়ে গেলি বুঝি কি গেল!
খুব ভাগ্যবান হলে আবার ফিরে পাই, তা না হলে...
~
thanx
মায়া মায়া লেখা পড়ে ভাল লাগলো খুব। ভাল থাকুন।
মায়া মায়া লেখা লিখে আমারও খুব ভাল লাগল।
বাচ্চারা অসুস্থ, এর মাঝে হারিয়ে ফেললেন আংটিটা জেনেই খারাপ লাগছিলো বেশ, আবার যেই শুনলাম খুজে পেয়েছেন দারুন স্বস্থি লেগেছে। এখন তো এই কাহিনী পড়ে মজাই লাগলো।
স্মৃতি তুমি বেদানা!
মন্তব্য করুন