-----স্বাধীনতা সে আমার স্বজন হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন------------।
এই ভদ্রলোকটিকে কি কেউ চেনেন?---- এর নাম আবদুর রশিদ।
এর কথা আমি কিভাবে লিখব, কোথা থেকে শুরু করব? ভাবতে ভাবতেই দিন চলে যাচ্ছে। শুধু এটুকু বলতে পারি আবদুর রশিদ বেঁচে আছেন। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে ফেরেন--যেন তাদের মাঝেই তিনি খুঁজে পান তার দাদা, বাবা, চাচা, বড়ভাই, মেজভাই, ছোটভাই, বড় বোন, ছোটবোন, মা ও দাদীকে।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের এক বৃহষ্পতিবার সে এক রক্তাক্ত দিন রক্তাক্ত সময়। -------কে আমার ঘর ভেঙ্গেছে স্মরন আছে? সে আমার রক্তে ভেজা দিন।? চেতনায় হানছে আঘাত------------------
“আপা সরকার যে বলে ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন সেই ৩০ লক্ষের মাঝে কি আমারা আছি? যদি থাকি তবে কোথায়? আর যদি না থাকি তবে বলে না কেন ওরা ছাড়া ২০ লক্ষ , আমরা ১০ লক্ষ নিজেদের নিজেরাই লালন করব।“
১২ বছরের এক কিশোর চোখের সামনে দেখেছে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের কষ্টদায়ক নির্মম মৃত্যু। এখনও তার বাষ্পরুদ্ধ আত্মচিৎকার
------------------আজও আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,
আজও আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ন নৃত্য দেখি ,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজও আমি তন্দ্রার ভেতরে।
এদেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃসপ্নের রাত,সেই রক্তাক্ত সময়
বাতাসে লাশের গন্ধ, মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।-------------- ------------------------------
--------------------------------------------
সারারাত আমার ঘুম আসে না
তন্দ্রার ভিতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুন চিৎকার,
নদীতে পানার মত ভেসে থাকা পচা লাশ মুন্ডুহীন বালিকার,
কুকুরে খাওয়া বিভৎস শরীর ভেসে উঠে চোখের ভিতরে।
আমি ঘুমাতে পারি না,
আমি ঘুমাতে পারি না,
রক্তের কাফনে মোড়া কুকুরে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা,
স্বাধীনতা,
সে আমার স্বজন হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন।
স্বাধীনতা,
সে আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ঐ আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।
এই কবিতাটা যেন আব্দুর রশিদেরই কথা।
আমার কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন সৈয়দপুরের শান্তিবাহিনীর চেয়ারমেন কাইয়ুম কোথায়?
সৈয়দপুরের বাঙ্গালী হত্যার নায়ক কাইউম ও সেলিম খান পাকিস্তানে পালিয়ে যায়, আর মওলানা মতিন মারা যায় এবং ইজহার আহমেদ এখন জতীয় পার্টির নেতা।
রাজাকার ইজহার আহমেদ বলেন ---৭১ এ আমি ছিলাম রিলিফ কমিটির সদস্য। আমি বিহারী হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী ছিলাম না এবং কোন হত্যাকান্ড, লুটপাট ও ধর্ষণের ধটনায় জড়িত ছিলাম না । সৈয়দপুরে এই সব হত্যাকান্ড ঘটায় মিলিটারীরা । এদের সহোযোগীতা করে সেই সময়ের রিলিফ কমিটির চ্যায়ারমেন ও সৈয়দপুর জামায়াতের আমির মহম্মদ কাইয়ুম, সদস্য সেলিম খান, মওলানা মতিনসহ আরও অনেকে। এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে আমার চোখের সামনে যে হত্যাকান্ডটি ঘটেছিল সেটি হলো সৈয়দপুর বাঁশবাড়ী মহল্লার বিস্কুট ফ্যাক্টরীর মালিক ওয়াদুদের পরিবারের ঘটনাটি। আমি এদের বাঁচাতে ব্যর্থ হই।
১২ এপ্রিল। মিলিটারি ট্রাকে এক ট্রাক লাশ এল দিনাজপুর থেকে। মিলিটারিরা লাশগুলি রাখলো রেলওয়ে হাসপাতালে। বলা হলো এগুলি বিহারীদের লাশ। দিনাজপুরের সব বিহারিদের মেরে ফেলেছে বাঙ্গালীরা। এটি ছিল পাক আর্মিদের একটি চাল। তারা গুলিচালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করেছে এদের। পরে পাকিস্তানীরা জেনেছে এরা বিহারী। তখন পার আর্মীরা এই লাশগুলি নিয়ে আসে সৈয়দপুরে। বেলা বারটায় আসে ট্রাক। খবর ছড়াতে থাকে। হাসপাতালে ভীড় বাড়তে থাকে। ক্ষিপ্ত হতে থাকে বিহারীরা। পাক সেনারা বিহারীদের ডেকে ডেকে লাশ দেখিয়ে বলে দেখে যাও তোমাদের স্বজাতির কি পরিনতি করেছে বাঙ্গালীরা।
বেলা ২টায় কার্ফিউ জারী করা হয় সৈয়দপুর শহরে। বাঙ্গালীরা ঘরে অবরুদ্ধ। বিহারীরা অবরুদ্ধ বাঙ্গালীদের প্রতিটি ঘরে ঢুকে ঢুকে চালায় তাদের নৃসংশ নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ। রেলকারখানায় আটকা পরে যারা তাদের একে একে জ্বলন্ত বয়লারে ও ফার্নেসের ভিতরে জীবন্ত ঢুকানো হয়। সেদিন সারা শহরে হত্যা ২৯৭জনকে আর কারখানায় হত্যা করা হয় ৯৬ জনকে।
আমি রশিদের জীবনের সেই দুঃসময়ের কথা লিখতে পারলাম না তবে লিখব কাল বা পরশু।
বিঃদ্রঃ কিছুতেই ছবই পোস্ট করতে পারলাম না।
যদিও এখন বিহারীদের খুবই করুণ দশা। যাক্ আপনার লেখাগুলো রক্ত গরম করে তোলে একদম।
রুনা আপু কি সৈয়দপুরের গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন?
এই লিংকুতে একটু চোখ বুলাবেন?
http://www.amrabondhu.com/riton/437
ধন্যবাদ ভাই। আসলে আমার সমস্যা ইন্টানেট এর স্পিড এ। এত স্লো যে ছবি দেয়াই দুঃসাধ্য। মাঝে মাঝে আসে। শুধু আমরা বন্ধুতে নয় ফেসবুক বা মেইল বা অন্য কোথাও একই সমস্যা।
কত শত অমানবিক আর নৃশংস হত্যাকান্ড যে ঘটেছিল সেসময়। যারা ঘটিয়েছে তাদের অনেকে বয়স জনিত কারনে মরেছে। কিছু কিছু বেঁচে আছে আজও। এবং বলা যায় বহাল তবিয়তেই বেঁচে আছে খোলশ পাল্টে।
স্তব্ধ!
আরো লিখুন
আপনার লেখাগুলো মন দিয়ে পড়ি ও অন্যদের পড়তে দেই।
এমন লেখা আরো আসুক। সাথে আরো তথ্য, ছবি যোগ করলে ভালো হত।
চালিয়ে যান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দপুরে সংগঠিত ঘটনা সং্গ্রহ করে লিখতে থাকুন।
বাকহারা।
স্তব্ধ!
মন্তব্য করুন