বুঝিনি
ছোট বেলার কথা ! কিন্তু আজো মনে হয় এই সেদিনের ঘটনা ! বাবা থাকতেন কোলকাতায় । সেখানে ব্যবসা ছিল । ব্যবসার কাজে নানা দেশে যেতেন বাবা । কাছে পেতামনা খুব একটা ! ভালমতো মিস করতাম তাকে ! কাছে না পাওয়ার এই যন্ত্রণা বাবা কিন্তু পুষিয়ে দিতেন অন্যভাবে । নানা দেশ হতে আনা নানা রঙের জামা- কাপড় নিয়ে আসতেন আমাদের জন্য । একবার এনেছিলেন হালকা গোলাপি রঙের একটি হাফ সার্ট, ফুল-পাখি- মানুষ-জীব-জন্তুর নানা ছবিতে ভরা ! ছোটবেলা যত জামা কাপড় পরেছি, আজও মনে পড়ে ওটিই ছিল সবচেয়ে প্রিয় জামা আমার । সমবয়সীরাতো বটে বড়রাও অনেকে খুঁটিয়ে দেখতেন ছবিগুলো !
তো একদিন ওই জামা পরে বড় ফুফুর বাড়ি গেলাম । সবাই আদর করলেন, তবে বেশি করলেন জামাটির তারিফ । ওটা পরে আমাকে নাকি প্রিন্স প্রিন্স লাগছিল ফুলু আপু আর রানী ভাবীর ! ওরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন ছবিগুলো । আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে বলছিলেন, ‘এটা ডালিয়া, এটা রোজ,এটা কবুতর, এটা মুনিয়া আর এটা............’ কথা শেষ না করে প্রচন্ড জোরে হাসতে লাগলেন দু’জনে ! আমি বল্লাম, ‘কি হলো ! হাসছেন যে বড় ?’
-‘ও তুমি বুঝবেনা !’ ভাবী বল্লেন । আমি হা করে তাকিয়ে থাকছি দেখে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে দিলেন ।
-‘যান যান’, গাল মুছতে মুছতে আমি বল্লাম, ‘লিপিস্টিক লাগিয়ে দিলেন যে !’ খিল খিল করে হেসে উঠে দুজনে জামার বাম পকেটের ছবিটির প্রতি নির্দেশ করলেন ! দুটি ছেলেমেয়ে লিপলক করে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে আদর করছে ছবিটিতে । এতে হাসির কি উপকরণ ছিল বুঝিনি ।
পরের ঘটনাও সেই জামা নিয়ে । স্কুলে কি একটা অনুষ্টান ছিল । পছন্দের জামাটি পরে গেলাম ! হুজুর কাছে ডেকে নিয়ে বল্লেন, ‘বেশ সুন্দর জামাতো ! বাবা এনেছেন নিশ্চয় !’
-‘জ্বি !’ আমি বল্লাম ।
তিনি দেখলেন । তুষ্ট নাহয়ে বেশ রুষ্ট কন্ঠে বল্লেন, ‘যা ভাগ এখান থেকে । এই জামা পরে আর কখনো স্কুলে আসবিনে ! বুঝলি ?'
তাও বুঝিনি কিছু !
কেন উনি নতুন জামা দেখে রুষ্ট হলেন সেটা বুঝলামনা।
লেখাটা মনে হয় মন দিয়ে পড়েননি । জামাটা ছিল ছবিতে ভরা । দুটি ছেলে মেয়ের একটি ছবি ছিল, যাতে তারা পরস্পরকে আদর করছিল ঠোঁটে ঠোঁটে । হুজুরের পক্ষে এটা মেনে নে'য়া সহজ ছিলনা ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করুন