মাফ করে দিও সবাই
বন্ধুরা, ক্ষমা করে দিও সবাই । ২৩/১০/১৪ তারিখ সকালে স্বজনরা হাসপাতালে নিয়েগেছিল, ফেরা হবে ভাবিনি । আল্লাহর রহমত আর সবার আন্তরিক শুভেচ্ছায় ফিরে এসেছি, তবে ডানপিঠে ‘ডান পা’ পুরো এবং তার দোসর ডান হাত আংশিক বিগড়ে আছে । আরে আমার হাত আমার পা, আমার কথা শুনবেনা ওরা ? “কি করা যায় !” ডাক্তারকে বললেন, “এক্সপার্ট কিছু হালকা ব্যায়াম শিখিয়ে দেবে । প্রতিদিন করুন, বুড়োদের রাগ-অভিমান পড়েও যেতে পারে”।
ও বন্ধুরা ! আসল কথাই যে বলা হয়নি । চব্বিশ বছর ধরে “মধু মেহে”র সাথে ঘরকন্না । ছোটখাট মান-অভিমান/খিটিমিটি [সুগার লেবেল উঠা-নামা করা] যে হতোনা তা নয় । মাঝে মাঝে মাথায় ও চড়ে [চক্কড় হতো বা মাথা ঘোড়াতো] বসতো রানী । নর্মালী রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে এ’রকম হয় । একটু চিনিপানা বা গ্লুকোজ গুলে খাওয়ালে রানী আবার শান্ত দশ পনেরো মিনিটে, একেবারে আদরের রাঙা বউটি যেন ! কিন্তু এবার [২৩/১০১৪’র সন্ধ্যায়] কি হলো জানিনা । হারামীর অভিমান আর ভাঙেইনা ! চিনিপানা, গ্লুকোজল কিছুতেই আর কাজ হয়না না । ঘাড় তেড়া করে পড়ে রইল । আমারো ও কি কম রাগ ? অভিমানী বরটির মতো দেরী না করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম । চোখ ভেঙে ঘুম আসছিল, কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা । ঘুম ভাঙলো ভোর সোয়া পাঁচটায় । মাথাটা ঝিমঝিম করছিল তখনো, কেমন ভারী ভারী মনে হচ্ছিল । টয়লেটে গেলাম, ওজু কালাম সেড়ে নামাজ পড়লাম । চা করে বনফুলের স্পেসাল টোস্ট দিয়ে খেলাম [বাঙ্গালীতো চা পান করেনা, চা খায়] । বউ গেল রেগে । খালি কাপটি নিয়ে উঠতে যাব, কানপট্টি জুড়ে চেমড়ী বউয়ের বত্রিশ সিক্কার আদর ! বুড়ো শরীরে তন্বী-তরুণীর এহেন আদর কি সইবার পারে ? ধপাস্ পড়ে গেলাম, একেবারে পপাত্ ধরণীতল ! রুমমেট গেল জেগে । অবস্থা আঁচ করে “ হাসপাতাল হাসপাতাল’ ‘অ্যাম্বুলেন্স অ্যাম্বুলেন্স” বলে চিৎকার করে পাড়া মাথায় করল । পড়শিরা দৌঁড়ে এল । কেউ বলল, ‘গাড়ী গাড়ী জলতি-------- জলতি’ । আমার লাল টুকটুকে [আসলে মেরুন] বউটি [গাড়ীটি] ঝটপট রেডি । তারপর উল্কা বেগে যাত্রা, মনে হচ্ছিল শেষ যাত্রা বুঝি !
হাসপাতালের ওরা সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত ইমার্জেন্সি বেডে ফেলে রাখলো আমায়, না চিকিৎসা, না ঔষধ, না খাওয়া । অবশ্য ভগ্নীরা এসেছিলেন বার কয়, ব্লাড নিয়ে গেছেন । টেকনিশিয়ানরাও আসেন বার বার, আমার হাঁটুর কাপ, জোড়, গোড়ালী, পায়ের পাতা, আঙুলের গোড়া, কনুই, হাতের তালু আর পিঠে প্লাস্টিকের হাতুড়ি মস্ক করেন । ডাক্তারের কথা জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে, ‘এই এলো বলে’ । এদিকে আমার “ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ” । ধৈর্যেরওতো একটা সীমা আছে । এক পর্যায়ে রেগে গেলাম খুব । চিৎকার/চেঁচামেচি করলাম বেশ, ওতেই কাজ হলো । ডাক্তারের দল, নার্সের গুষ্টি, সহকারীদের দঙ্গল, মায় ডিপার্টমেন্ট-চীফ পর্যন্ত ছুটে এলেন । “কি হয়েছে ?” সবার প্রশ্ন । আমি শুধু একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম সবাইকে, “হাউ লঙ্ দ্যা হসপিটাল কুড কেপ্ট ওয়েটিং অ্যান ইমাজোন্সী পেসান্ট ?” সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেন, ক্ষমা চাইলেন । দ্রুত চিকিৎসা শুরু করার নির্দেশ দিয়ে গেলেন চীফ । এই জন্যই সম্ভবতঃ বলা হয়ে থাকে, “ব্রুকেসি অল ওভদ্যাওয়ার্লড” ।
বন্ধু অনিমেষ রহমান, বিষাক্ত মানুষ [মুরাদ ভাই] ও ভাই মিশু ।
হাঁ বন্ধুরা ! ক্ষমা করে দিয়েন ! বিশষ করে বন্ধু অনিমেষ রহমান, বিষাক্ত মানুষ [মুরাদ ভাই] ও ভাই মিশুর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ! কোন কোন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলেও সবার মতের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা পোষণ করি আমি, আপনাদের প্রতিও ।
টুটুল ভাই !
প্রথম থেকে আপনি আমাকে সন্দেহ করেছিলেন বলে এক মন্তব্যে জানিয়েছিলেন । যুদ্ধাপরাধীর বিচার বা পাকিস্তান সম্পর্কে আপনাদের সাথে আমার মতের অমিল আদর্শগত নয়, পদ্ধতিগত । মানবতা বিরোধী ইন্টারন্যাশনাল অপরাধ ট্রাইবুনালে প্রথম নিয়োগকৃত প্রধান প্রসিকিউটর যুদ্ধাপরাদের সাথে তার নিজের সমপৃক্ততার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে জয়েন করতে পারেননি । অন্য একজন প্রধান প্রসিকিউটর জানেনা কোন মাসে পাটগাছ বড় হয় বা পাট ঝাড়ের আড়ালে আকাম কুকাম করা যায় । একজন প্রধান বিচারপতি স্কাইপ দূর-আলাপণে ধরা খেয়ে বিদায় নেন । একটি রায় ঘোষণার আগে ফাঁস হয়, একজন সাক্ষীকে গুম করা হয় এবং একজন সাক্ষীর চেহেরা প্রসিকিউটর এবং বিচারক ব্যতীত কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি । আমার নিজের দেশের বিচার ব্যবস্থায় এত সব অসংগতি মানতে কষ্ট হয় টুটুল ভাই ! আমার মতামতের জন্য মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ দিয়েন ! আপনার “রাসেল কেন” লেখাটি আজো মনে আছে ।
মনে পড়ে ।
হ্যাঁ খুব মনে পড়ে ওনাদের ! ব্লগে আমাকে প্রথম ভাই ডেকে অনুপ্রেরণা ও টিপস দানকারী বোন লীনা দিলরুবা, মীর ভাই, আনন্দ বাবু, জ্যোতি, শর্মী যারা এখন আর লিখেন না তাদের সবাইকে মনে পড়ে ! অনেক করেও মীর ভাইকে ফেরানো গেলনা, এ দূঃখটা থেকেই গেল । ওনাদের সবার কাছে ঋণী আমি । লেখার কিছুই জানতামনা । মীর ভাই আর বোন লীনা দিলরুবার অকৃত্রিম প্রেরণায় আমার এই পথ চলা । বিপদের দিনে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রাসেল ভাই আর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা । ওনাদের কথাও সতত মনে পড়ে । ওঁদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ।
আর একজনকে খুব মনে পড়ে, তিনি রন । সব সময় প্রিয় ব্লগ খুলে বসে থাকেন, অথচ খুব একটা লিখেন না । সারাক্ষণ চুপচাপ থেকে নিভৃতে কি বলে যাচ্ছেন তিনি জানতে একান্ত কৌতুহল আমার ! জানাতে আজ্ঞা হোক ভাইজান ।
ফাহিমা দিলশাদ ।
খুব ছোট তুমি এখনো । ছোট একটি ফুল বা প্রিটি প্রজাপতি । তোমার প্রথম কবিতা দারুণ নাড়িয়ে দিয়েছিল আমায় । কবিতার ভাষায় মন্তব্যও করেছিলাম । তোমার মাঝে অপার সম্ভাবনা দেখতে পাই আমি । ভাল থেকো দিলশাদ । দেখতে জানলে পৃথিবী অনেক সুন্দর, আবার একইসাথে কদর্যও । ভালটাই তোমার জন্য কামনা করি সব সময় ।
শান্ত ভাই ।
সব লেখায় মন্তব্য নাদিলেও আপনার সব লেখা আমি পড়ি । ব্লগের বড় লেখকরা যখন অনেকটা হাত গুটিয়ে, আপনি দুহাত উজাড় করে লিখে ব্লগের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রেখেছেন । ধন্যবাদ দিয়ে কর্তব্য শেষ করতে চাইনা । হৃদয়ের গহন হতে আপনার জন্য স্নেহ আর ভালবাসা । ভাল থাকুন বন্ধু, ভাল থাকুন ।
গত এক মাসে অনেক নূতন বন্ধু এসেছেন এ বি’তে । ওনাদের প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা । ওনাদের পোষ্ট ধীরে ধীরে পড়ব, আঙুলগুলো অসাড় হয়ে আছে--- এক আঙুল দিয়ে যদি পারি মন্তব্য করবো ।
ভাল থাকুন সবাই ।
সেরে উঠুন পুরোপুরি, খুবই তাড়াতাড়ি। দোয়া এবং শুভকামনা রইল।
মানুষের দোয়া এবং শুভকামনা আল্লাহ্র অপূর্ব রহ্মত । আল্লাহ আপনাকে অপার শান্তিতে রাখুন ।
মনটা চাইছে এখনি দেশে গিয়ে আপনাকে হাসপাতালের বেড থেকে উঠিয়ে পুরোটা শহর রাতের বেলা রিক্সা করে ঘুরি। প্রথমে যেতাম পুরান ঢাকার কোনো এক হোটেলে, পেট পুরে বিরিয়ানী খেয়ে আবারও রাস্তায়। সকাল বেলা হাতের সামনে যেই হোটেল সেই হোটেলে ঢুকে জীলাপির সাথে এক কাপ চা।
আর ব্লগের এই খুনসুটি কেউ সিরিয়াসলি ধরে না। এটা নিয়ে সামান্যতম মন খারাপ ও করবেন না। আর মনে রাখবেন ঢাকা আসলে এবার আপনাকে ছাড়ছি না, রাতের বেলা ভরপেট বিরানী খেয়ে কোনো একটা ওভারব্রীজ বা হাতিরঝিলে গিয়ে বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে রাতভর গান
সুস্হ হয়ে উঠুন অতি শীঘ্রই!
এ টি এম কাদের | নভেম্বর ২৭, ২০১৪ - ৫:৫৪ অপরাহ্ন
(নতুন মন্তব্য)
আপনাকে পড়ে ম্নে হচ্ছে ভাল হয়ে গেছি । ইচ্ছে করছে এখনই দেখা হোক আপনার সাথে । কতকালের জানাশুনা যেন !
আমি ঢাকা থাকিনা ভাই । দেশে এলে পিতৃভূমির অজ পাড়াগাঁয়ে বাস করি । শহরের দূষিত হাওয়া সয়না, নিঃশ্বাস নিতে ক্ষট হয় । ঢাকায় রিক্সা করে ঘোরা কি নসিবে আছে ? কয়দিনই বা আর আছি !
ভুল হয়ে গেছে ভাই । ওটা এবয়েট করা ঊচিত্ ছিল আমার । অসুস্থ শরীরে দীরঘদিন পর ব্লগ খুলে নিজের ব্যাপারে নিগেটিভ কিছু পড়ে মন খারাপ হয়েগেছিল । কষমা চাই প্রিয়সহ সবার কাছে ।
ভাল থাকুন ।
আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি 'প্রিয়'র ব্যাপারে আপনার পোষ্টে আলোচনা ভালো লাগলো না মোটেও। আপনার মতো বিজ্ঞজনের কাছে এরকম নিম্নমানের আচরণ আশা করি নাই। ভালো থাকবেন ভাই।
শান্ত ভাই ! প্রথমে আপনার প্রতি আন্ত্রিক কৃৃ্তজ্ঞতা রইল ভুল ধরিয়ে দে'য়ার জন্য । এড়িয়ে যাওয়া ঊচিত্ ছিল আমার । ভুল হয়ে যায় কখনো । নিঃশর্ত কষমা চাই প্রিয়সহ সবার কাছে !
সেরে উঠুন পুরোপুরি, খুবই তাড়াতাড়ি। শুভকামনা রইল।
আপনাদের দোয়াই এখন আমার একান্ত চাওয়া ।
আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। ভালো থাকবেন।
উচ্ছল ভাই, কেমন আছেন ? অনেকদিন পর এলেন । ভাল থাকুন ।
প্রিয় আপু আপনাকে যা বলেছে সেই কথাগুলো আমারও, প্রিয় আপু প্রকাশ্যে বলেছে আর আমি বলতে পারিনি কারণ লেখা দেখলাম আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এখন কি তাহলে আপনি আমাকে যে শুভ কামনা জানিয়েছেন তা ভুলে গিয়ে আমার মনটাকেও নোংরা বলবেন?
কোন মানুষকে না জেনে তার মনে কত কষ্ট লুকিয়ে আছে তা অনুভব না করে জাজমেন্টাল হওয়া কি উচিৎ?
যাই হোক ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এই কামনা করছি।
অফকোর্স নট । দূরতম গর্জন ও শান্ত ভাই'র প্রতি আমি কি লিখেছি সেটা পড়ে দেখার অনুরোধ রইল । এরপরও যদি তোমার রাগ রাগ থাকে আই অ্যাম আন্ডান । দূঃখিত ।
আপনাকে পড়ে ম্নে হচ্ছে ভাল হয়ে গেছি । ইচ্ছে করছে এখনই দেখা হোক আপনার সাথে । কতকালের জানাশুনা যেন !
আমি ঢাকা থাকিনা ভাই । দেশে এলে পিতৃভূমির অজ পাড়াগাঁয়ে বাস করি । শহরের দূষিত হাওয়া সয়না, নিঃশ্বাস নিতে ক্ষট হয় । ঢাকায় রিক্সা করে ঘোরা কি নসিবে আছে ? কয়দিনই বা আর আছি !
ভুল হয়ে গেছে ভাই । ওটা এবয়েট করা ঊচিত্ ছিল আমার । অসুস্থ শরীরে দীরঘদিন পর ব্লগ খুলে নিজের ব্যাপারে নিগেটিভ কিছু পড়ে মন খারাপ হয়েগেছিল । কষমা চাই প্রিয়সহ সবার কাছে ।
ভাল থাকুন ।
ওহ! এতকিছু হয়েছে যে এর কিছুই জানি না
মন্তব্য করুন