গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও শহীদ নূর হোসেন
যে অধিকারের জন্য ৩০ লাক্ষ মানুষ শহীদ হতে হল, তার এক দশক পরেই জন্ম নিল বাংলার মাটিতে এক বিশ্ব বেহায়া স্বৈরাচার, মানুষের নুন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে যখন বঞ্চিত হল, তখন এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গন আন্দোলন গড়ে তুললো,.....১০ই নভেম্বর ১৯৮৭..সকাল থেকেই গুলিস্তান, জিরু পয়েন্ট, পল্টন এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এসে জড়ো হতে লাগলো,..তরুন, কিশোর, বৃদ্ধ সকল বয়সী প্রতিবাদী মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠলো পুরো এলাকা...সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। সবাই স্বৈরাচারী এরশাদের হাত থেকে মুক্তি চায়, চায় গনতন্ত্র...যেখানে মানুষের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।
হাজার হাজার মানুষের মাঝে যেন একটি মুখ, একটি বুক, একটি পিঠ সবার নজর কেড়েছে, কে সেই যুবক? সেই যুবকের নাম ছিল নূর হোসেন। পঁচিশ বছরের মটর মেকানিক টগবগে যুবক নূর হোসেনের পরনে ছিল জিন্সের ট্রাউজার। খালি পা, শার্টটা কোমড়ে প্যাঁচানো। শরীরের বুকে পিঠে সাদা রঙে লেখা স্লোগান - স্বৈারাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। ছুটছিল সে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। সমবেত জনতার চোখ বার বার আটকে যাচ্ছিল ওর বুকে। ওর পিঠে। এ রকম জীবন্ত পোষ্টার যে আগে কেও কোনদিন দেখেনি।....এতো পৃথিবীর সকল পোস্টার ব্যনারকে হার মানিয়েছে।
....এক মুহুর্তের জন্যও থামছিল না সে। বায়তুল মোকাররম, জিরো পয়েন্ট আর পুরানাপল্টন এলাকায় এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করলো এই এক যুবক। পুলিশের অনেকেই ক্ষুদ্ধ হচ্ছিল ওর কর্মকান্ডে। ছুটে ছুটে প্রায় প্রতিটি খন্ড খন্ড মিছিলের অগ্রভাগে হাত উচিঁয়ে প্রতিটি মানুষের মনের কথাগুলো যেন সে একাই বলে দিচ্ছে - স্বৈারাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।....কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় মিছিলের উপর গুলি। সেই গুলি এসে পড়ে নূর হোসেনের বুকে। মাটিতে খসে পরলো একটি নক্ষত্র, মৃত্যু হল একটি তাজা প্রানের, জেগে উঠলো হাজার নূর...!
একজন নূর হোসেনকে হত্যার করার পর সারা দেশে তাই জেগে উঠেছে হাজার হাজার নূর হোসেন। গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারের বুটের তলা থেকে মুক্ত করতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারপর ঠিক তিন বছর পরেই, নব্বই সালে মুক্তি পেয়েছে গণতন্ত্র। নিপাত গেছে স্বৈরতন্ত্র।...আবার জন্ম হয়েছে নব্য নির্বাচনিক স্বৈরতন্ত্র, তা আজ ২৩ বছর ধরে চলছে গনতন্ত্রের নামে, বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যদিও এরা গনতন্ত্রের নাম ভাঙ্গিয়ে চলে, বাস্তবে গনতন্ত্রের মুল ভিত্তিকেই বারবার গলাটিপে হত্যা করেছে, যারা যখন ক্ষমতায় ছিল তাদের ইচ্ছে মত দেশ চালিয়েছে।
"নূর হোসেন এর বাবার নাম মুজিবর রহমান। স্কুটার চালক। ঘটনার দিন নূর হোসেন এর পরিবার কিছুই জানতে পারে নি। পরদিন পত্রিকায় ছবি দেখে সবাই জানতে পারলো কি ঘটেছে তাদের ছেলে নূর হোসেনর। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বার বার অনুরোধ করেও বাবাকে ছেলের খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশেরা। এমনকি নূর হোসেন এর লাশও একবারের জন্য দেখতে দেয়া হয়নি পরিবারের কাউকে।
নূর হোসেন এর জন্ম ১৯৬১ সালে। ঢাকার নারিন্দায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই নূর হোসেন ও তার পরিবার ৭৯/১ নং বনগ্রাম রোডের এই বাড়িতে থাকতেন। তাদের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝটিবুনিয়া গ্রামে। বনগ্রাম রোডের রাধা সুন্দরী প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করার পর নূর হোসেন এর পড়ালেখা ছিল অষ্ট শ্রেনী পর্যন্ত। স্কুলের নাম গ্রাজুয়েট হাই স্কুল। পড়াশোনা বন্ধ করে নূর হোসেন মটর মেকানিক্যাল কাজ শেখা শুরু করেন।"
জীবন্ত নূর হোসেনকে স্বৈরাচারী ও তার দোসররা যতটা ভয় পেয়েছিল, তারচেয়ে বেশী ভয় পেয়েছিল তাঁর লাশকে। আর সে কারণেই গুম করতে চেয়েছিল তারা নূর হোসেনকে। একই কারণে রাতের আঁধারে মাটিচাপা দিয়েছিল তারা নূর হোসেনকে - অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে।
আজ আমরা বলতে পারি, সেদিন যে দাবীতে নূর হোসেন শহীদ হয়েছিলো, সে দাবী পুরন হয় নি....যে আকাঙ্খা নিয়ে ৭১ এ ৩০ লাখ শহীদ হয়েছিল, সে স্বপ্নও আজ পুরন হয় নি।...এই দায় আমাদেরও, যারা জীবনের জন্য জীবন দিয়ে গেলো, তাদের আজ আমরা ভুলতে বসেছি, তাদের সাথে বার বার প্রতারণা করে চলেছি।..অনেকেই ভুলে গেছে, অনেকেই ভুলতে বসেছে, অল্প কিছু মানুষ নূর কে স্বরন করে, স্বরন করে নূর সহ সকল শহীদের, একদিন হয় তো তাদের সপ্ন পুরন হবে যারা এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, হতাশার সকল গ্লানি মুছে বিজয় একদিন আসবেই মেহনতি মানুষের গনতন্ত্রের।
শহীদ নুরের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
শহীদ নুরের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
সেই স্বপ্নটা বুকে লালন করি... হয়তো আমি দেখে যেতে পারবো না... পরের প্রজন্ম পারবে...
উক্ত নীতিমালা ভঙ্গের কারনে আপনার লেখাটি ব্লগের প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে নেয়া হইলো! নীতিমালা মেনে ব্লগে লেখালেখি করার অনুরোধ রইলো!
মন্তব্য করুন