রাজনীতি নিয়ে সিনেমা- ১: গণহত্যা পর্ব
কখনো সক্রিয় রাজনীতি করিনি। কিন্তু নিজেকে আমি রাজনীতিবিমুখ মনে করি না। রাজনীতি আমার প্রিয় বিষয়, পঠনেও। এমনকি সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিনেমা আমার সবচেয়ে পছন্দের। আর সেটি যদি সত্য কোনো ঘটনা নিয়ে হয় তাহলে আরও বেশি পছন্দের। এখনও আমি খুঁজে খুঁজে রাজনীতি নিয়ে তৈরি সিনেমা কিনি এবং দেখি।
একবার সামুতে রাজনীতি, সংঘাত ও কর্পোরেট ক্রাইম নিয়ে সিনেমার একটি তালিকা করেছিলাম। সেই তালিকা পূর্ণাঙ্গ ছিল না। অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা করবো। সেই চেষ্টা থেকেই এই লেখা।
এবার কর্পোরেট ক্রাইম বাদ দিলাম। এই ধরণের ছবি নিয়ে আলাদা করে লেখার ইচ্ছা আছে। এবার কেবলই রাজনীতি। আর রাজনীতি থাকলে সংঘাতও থাকবে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ফিকশন বাদ দিয়েছি। আমার তালিকায় আছে সেই সব সিনেমা যার মধ্যে সত্যতা আছে। একটি লেখার মধ্যে সব সিনেমা আনা সম্ভব না। তাই পর্ব থাকছে। এটি প্রথম পর্ব।
প্রথম পর্বকে গণহত্যা পর্বও বলা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে গণহত্যা হয়েছে। এসব গণহত্যা নিয়ে তৈরি সিনেমার সংখ্যাও কম নয়। প্রথম পর্ব সেইসব সিনেমার সংখ্যাই বেশি। গণহত্যা ছাড়াও গৃহযুদ্ধও স্থান পেয়েছে এই তালিকায়।
১. আরারাত: ১৯১৫ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ সময়ে তুর্কিরা যে গণহত্যা চালিয়েছিল তাকে বিশ শতকের প্রথম গণহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। এ সময়ে ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঠিক পর পর এই গণহত্যা হয়েছিল। তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে এই গণহত্যা অস্বীকার করে আসছে। তারা বলে আসছে যে, অটোমান সাম্যাজ্য ভাঙ্গার সময়ে গণ অসন্তোষের কারণে হত্যা ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছিল।
মূলত আর্মেনীয়দের নিশ্চিহ্ন করতে পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যাযজ্ঞ চালনো হয়েছিল। প্রথমে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। বাকিদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় কাছের মরুভূমিতে। পথে অনাহারে ও অত্যাচারে মারা যায় আরও অনেকে। বাকিদের মরুভূমিতে হত্যা করা হয়েছিল।
ভান উপত্যাকায় সংগঠিত গণহত্যা নিয়ে ছবি আরারাত। আরারাত সেখানকার একটি পাহারের নাম। ঐ এলাকার একজন খ্রীশ্চান পাদ্রীর লেখা কিছু নোট এবং গণহত্যা থেকে বেচে যাওয়া একজন চিত্রশিল্পীকে কেন্দ্র করে ছবিটি তৈরি। বলা যায় একটা সিনেমার মধ্যে এক সিনেমা। আর্মেনীয় একজন পরিচালক সেই গণহত্যা নিয়ে ছবি করার পরিকল্পনা নেয়। সেই সিনেমা তৈরি এবং আনুসাঙ্গিক কিছু ঘটনা নিয়ে এই সিনেমা।
আর্মেনীয় গণহত্যার সঙ্গে বাংলাদেশের গণহত্যার অনেক মিল। পাকিস্তানিরা যেমন স্বীকার করে না, তেমনি তুরস্কও স্বীকার করে না। আজও আর্মেনীয়রা লড়ছে সেসময় যে গণহত্যা হয়েছিল তার স্বীকৃতি পেতে।
এবার বাড়তি কিছু তথ্য। আর্মেনীয় গণহত্যা শুরু হয়েছিল প্রায় ২৫০ জন বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকে কেন্দ্র করে। এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল তখনকার অটোমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাত পাশা। আর্মেনীয় গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া সঘোমন তেহলিরিয়ান ১৯২১ সালে জার্মানির বার্লিনে প্রকাশ্য দিনের আলোয় জনসম্মুখে তালাত পাশাকে খুন করে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে এই প্রতিশোধের বিচার। অসংখ্য সাক্ষী থাকা সত্বেও বিচারকরা সঘোমন তেহলিরিয়ানকে মুক্তি দিয়েছিলেন। কারণ তিনি এমন একজনকে খুন করেছেন যিনি ১৫ লাখ মানুষকে খুনের আদেশ দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে যারা গো আজম-নিজামীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তি তোলেন তাদের এই তথ্যটি মনে রাখা প্রয়োজন।
২. কিলিং ফিল্ডস: কম্বোডিয়ার খেমার রুজদের সেই সময়কার ঘটনা নিয়ে ছবি। তথাকথিত কমিউনিষ্ট এই খেমার রুজ, যারা ইতিহাসে ধিকৃত অন্তত ৩০ লাখ মানুষের গণহত্যার জন্য। কম্বোড্য়িায় ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। কমিউনিষ্ট পার্টি অব কাম্পূচিয়ার অনুসারীদেরই খেমার রুজ বলা হত।
১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল সরকারী বাহিনীকে পরাস্ত করে খেমার রুজ গেরিলারা কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন দখল করে নিয়েছিল। খেমার রুজ গেরিলাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পলপট। খেমার রুজ গেরিলারা নমপেন দখল করার পলপট সরকার কম্বোডিয়ার নামকরণ করে “ডেমোক্রেটিক কাম্পূচিয়া”। তারপর মূলত কৃষি সংস্কারের নামে ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ চালায় এই সরকার।
মজার ব্যাপার হচ্ছে মার্কিণ বিরোধিতার নামে নমপেন দখল করলেও এই খেমার রুজরা ছিল সিআইএ মদদপুষ্ট। সীমান্তের দেশ ভিয়েতনামের বিরোধীতার জন্য সিআইএ খেমার রুজদের সাহায্য করেছিল। পরে ভিয়েতনামের হাতেই পতন ঘটেছিল খেমার রুজদের।
দি কিলিং ফিল্ডস সিনেমাটির শুরু ১৯৭৩ সাল থেকে। তখনও খেমার রুজরা নমপেন দখল করেনি। এরপর আবার কাহিনী চলে যায় ১৯৭৫ সালে, যখন খেমার রুজরা ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন সাংবাদিক সিডনি স্যেনবার্গ খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আটকে পরে নমপেনে। সঙ্গী দোভাষী ডিথ প্রান। কিভাবে সেখান থেকে বের হয়ে আসে সেটাই মূলত সিনেমা। খেমার রুজদের গণহত্যার দলিল এই ছবিটি।
৩. কাতিন: ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মান দখল করে পোল্যান্ডের একটি অংশ। আর ১৭ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত রেড আর্মি দখল করে নেয় পোল্যান্ডের পূর্বাংশ। রেডআর্মি কিছুটা বাঁধার মুখে পড়েছিল। এসময় সাড়ে ৪ লাখ যুদ্ধবন্দী থাকলেও পরে ৪০ হাজার রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সোভিয়েত ইন্টানন্যাল সিকিউরিটি সার্ভিস বা এনকেভিডির (আসলে সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশ) হাতে যুদ্ধবন্দীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের নেওয়া হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায়। বন্দীদের তালিকায় সেনা সদস্য ছাড়াও ছিল শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। ১৯৩৯ এর অক্টোবর থেকে ১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ চলে তাদের উপর। এর উদ্দেশ্য ছিল আসলে কে বাঁচবে আর কে মরবে সেটি নির্ধারণ করা। যাদের মধ্যে সামান্যতম সোভিয়েত বিরোধী মনোভাব পাওয়া গেছে তারাই তালিকাভূক্ত হয়।
পিপলস কমিশার ফর ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স ও ফার্স্ট র্যাংক কমিশার অব স্টেট সিকিউরিটি ল্যাভরেনিটি বেরিয়া ১৯৪০ সালের ৫ মার্চ স্টালিনসহ সোভিয়েত পলিটব্যুরোর সব সদস্যের কাছে একটি নোট পাঠায়। তাতে যুদ্ধবন্দীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ ছিল। পলিটব্যুরো তাতে সম্মতি দেয়। ১৯৪০ সালের ৩ এপ্রিলের পর থেকে অল্প সময়ের মধ্যে ২২৪৩৬ জনকে মেরে ফেলা হয় ঠান্ডা মাথায়, আয়োজন করে। তখন গুপ্ত পুলিশের চিফ এক্সিকিউশনার ভাসিলি মিখাইলোভিচ ব্লোখিন একাই গুলি করে মেরেছে ৬ হাজার পোলিশ বন্দীকে।
১৯৪১ সালে জার্মানি রাশিয়া আক্রমন করে। ১৯৪২ সালে কিছু পোলিশ রেলশ্রমিক কাতিনে গনকবর আবিস্কার করলেও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। ১৯৪৩ সালের এপ্রিলে কাতিন জার্মানের দখলে চলে গেলে তারাই গণকবর আবিস্কার করে। পোলান্ডের প্রবাসী সরকার তখন লন্ডনে। এই সরকার ১৯৪৩ সালে বিষয়টি নিয়ে সোভিয়েত ব্যাখ্যা দাবি করলে স্টালিন পাল্টা দাবি করে যে পোলান্ডের এই সরকার নাজীদের সাথে হাত মিলিয়েছে। তারপর স্টালিন আরেকটি প্রবাসী সরকার (মস্কো ভিত্তিক) সমর্থন দেওয়া শুরু করে। সেসময় লন্ডন প্রবাসী পোলিস প্রধানমন্ত্রী সিকোরসকি ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের মাধ্যমে তদন্ত চেয়েছিলেন। ১৯৪৩ সালের ৩ জুলাই এক বিমান দূর্ঘটনায় মেয়েসহ তিনি মারা যান। মনে করা হয় এর সঙ্গেও সোভিয়েতের হাত ছিল।
১৯৪৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আবার কাতিন সোভিয়েতের দখলে চলে আসে। দখল পেয়েই শুরু হয় পুরো ঘটনা ভিন্নখাতে নিয়ে জার্মানির উপর চাপিয়ে দেওয়ার কাজ। যুদ্ধের পর বিষয়টি আবারো ধামাচাপা দেওয়া হয়। নুরেমবার্গ ট্রায়ালে এটি প্রথমে স্থান পেলেও পরে তা বাতিল করা হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম ১৯৯০ সালে স্বীকার করে যে কাতিন হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী তারাই। গর্ভাচেভ তখন ক্ষমতায়। জানানো হয় এটি ছিল সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশের কাজ। তবে বিষয়টির সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। কে দায়ী সেটি সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে নারাজ রাশিয়া। এমনকি এটিকে গণহত্যা বলতেও রাজী না। পোলান্ড রাশিয়ায় এসে তদন্ত করতে চাইলেও তাতেও রাজী নয় তারা।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন এই গণহত্যার কারণ একটিই। আর সেটি হচ্ছে-পোল্যান্ড সোভিয়েতের সীমান্তের দেশ। তারা চায়নি সীমান্তে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে পোল্যান্ড টিকে থাকুক। যারাই পোল্যান্ডকে শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে তাদেরই মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশের কথা মনে পড়ছে?
কাতিন পোলিশ ছবি, পরিচালক আন্দ্রে ওয়াজদা (Andrzej Wajda)। ২০০৭ সালের ছবি।
৪. মিসিং-১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ক্যু হয়েছে চিলিতে। চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে সরিয়ে দিয়ে জেনারেল অগাস্টো পেনোসে ক্ষমতা দখল করে কমিউনিস্ট বিরোধী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, যা ছিল ১৯৯০ পর্যন্ত। ক্যুতে খুন হন আলেন্দে।
এই দিন মার্কিন সাংবাদিক চার্লস হরমান ফিরছিলেন চিলিতে। আসতে গিয়ে পথে তিনি হয়তো সাক্ষী হয়েছিলেন এই ক্যুর। দেখে ফেলেছিলেন কিছু। তাই আর বাসায় ফিরতে পারেননি তিনি। চিলিতে ছিল বউ সিসি স্পাসেক। আমেরিকা থেকে ছেলের খোঁজে চলে আসলো বাবা জ্যাক লেমন। তারপর খোঁজার পালা।
এখানেই তৈরি দৃশ্য আর ক্যুর সময় তোলা ডকুমেন্টশন এক করে দিয়েছেন পরিচালক কোস্তা। স্টেডিয়ামে আটক হাজার হাজার চিলিবাসী বা নদীতে ভেসে যাওয়া লাশ-মনে করিয়ে দেয় ৭১ কে।
বাবা এবং ছেলের বউ ঠিকই খুঁজে খুঁজে এই ক্যুর পেছনে মার্কিন দূতাবাস ও সিআইএর হাত বের করে ফেলতে শুরু করলে এক পর্যায় পাওয়া গেছে বলে ছেলের লাশ ফেরত দেওয়া হয় বাবা ও স্ত্রীকে।
এখন কে না জানে এই ক্যুর পেছনে ছিল সিআইএ। বাবা পরে মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার স্বার্থে সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। সত্য ঘটনা নিয়ে ছবি এই মিসিং।
আরেকটা তথ্য দিই, সেসময়ের চিলির মার্কিন রাষ্ট্রদূত নাথানিয়েল ডেভিস কোস্তা গাবরাসের বিরুদ্ধে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা করেছিলেন।
৫. শুটিং ডগস: রোয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে ছবি। ইকোল টেকনিক অফিসিয়াল রোয়ান্ডার একটা মাধ্যমিক স্কুল। এটি চালায় ফাদার ক্রিস্টোফার। আর শিক্ষক হিসেবে লন্ডন থেকে চলে এসেছে জো, এক আদর্শবাদি যুবক। ১৯৯৪ সালে ১১ এপ্রিল রোয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট খুন হলে শুরু হয় গণহত্যা। হুতুরা সংখ্যাগরিষ্ট। তাদের হাতে মারা যায় টুটসিরা। জাতিসংঘ বাহিনী তখন ছিল রোয়ান্ডায় মতা ভাগাভাগি পর্যবেক্ষনে। গণহত্যা শুরু হলে স্কুলে ক্যাস্প করে জাতিসংঘ মিশন। একরাতে এখানে আশ্রয় নেয় আড়াই হাজার টুটসি। বাইরে তখন চলছে গণহত্যা। দৃশ্যটা এরকম-ক্যাম্পের ঠিক একশ গজের বাইরেই উল্লাস করছে হুতুরা, সবার হাতে এক-৪৭, রামদা, কুড়াল ইত্যাদি। বের হলেবা হত্যা। সারা শহর জুড়ে তখন এই হত্যা উৎসব। স্কুলের গাড়ি চালাতো যে তাকেও দেখা গেল রামদা হাতে। এখানে আশ্রয় নিয়েছে আরো কিছু সাদা চামড়া। সাংবাদিকও আছে।
সবার চোখের সামনে চলছে গণহত্যা। কেউ কিছু করছে না। ইউএন মিশনও না। তাদের নাকি খালি পর্যবেক্ষণ করার আদেশ, গুলি করার আদেশ নাই। একসময় সব সাদা চামড়াকে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। থেকে যায় ফাদার ক্রিস্টোফার ও জো। তারা অসহায় টুটসিদের ছেড়ে যাবে না। এক সময় জাতিসংঘ মিশনের কাছেও অর্ডার আসে ক্যাম্প ছেড়ে দেওয়ার। তারা চলে যাবে। টুটসিদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয় জাতিসংঘ বাহিনীই যেন তাদের মেরে রেখে যায়, তারা হুতুদের হাতে মরতে রাজি না। চলে যায় মিশন। এবার আর জো পারে না। আদর্শবাদী ভাবনা ছেড়ে মৃত্যু ভয়ে সেও চলে যায় মিশনের সাথে। থেকে যায় শুধু ফাদার ক্রিস্টোফার। জাতিসংঘ বাহিনী আড়াই হাজার টুটসিদের হুতুদের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় রোয়ান্ডা ছেড়ে।
বিবিসি প্রোডাকশনের ছবি। পুরো ঘটনাটিই সত্যি। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে গণহত্যার শিকার হয় ৮ থেকে ১০ লাখ টুটসি। ছবিটার শুটিং করা হয়েছে রোয়ান্ডার সেই সব স্থানে যেখানে গণহত্যা হয়। অরিজিন্যাল জায়গাগুলোইতেই শুটিং হয় এবং টেকনিশিয়ানরাও ছিল এমন টুটসি যাদের আত্মীয় স্বজন মারা গেছে এই সময়। এমনকি ধর্ষনের শিকার একজনও ছিল ছবিটার সঙ্গে।
৬. হোটেল রোয়ান্ডা: রোয়ান্ডার গণহত্যা নিয়ে সেরা ছবি। যাকে বলে আফ্রিকান সিন্ডার্স লিস্ট। গণহত্যা নিয়েও অন্যতম সেরা ছবি বলা হয় হোটেল রোয়ান্ডাকে। আবার ছবিটা নিয়ে সমালোচনাও আছে। যেমন রোয়ান্ডায় সে সময় অবস্থানরত ইউনাইটেড ন্যাশন অ্যাসিসট্যান্স মিশন ফর রোয়ান্ডা (ইউএনএএমআইএর)-এর ভূমিকা নিয়ে। বলা হয় তারা আসলে গণহত্যা থামাতে তেমন উদ্যোগ নেয় নাই। তাদের ভূমিকা ছবিটাতে সঠিকভাবে আসেনি।
হোটেল কর্মকর্তা পল একজন হুতু, তার বউ টুটসি। পল জীবন বাজী রেখে রক্ষা করেছিল হোটেলে আশ্রয় নেওয়া কয়েকশ টুটসিকে। এটা নিয়েই ছবি হোটেল রোয়ান্ডা। ২০০৪ এটি মুক্তি পায়।
৭. হ্যারিসনস ফ্লাওয়ারস: মূলত এটা একটা ফ্রেঞ্চ ছবি। নিউজউইকের পুরস্কার পাওয়া ফটো সাংবাদিক হ্যারিসন লয়েড। ১৯৯১ সালে যায় যুগোস্লাভিয়ায় ছবি তুলতে। তখন সেখানে চলছে সার্ব বাহিনীর অত্যাচার। খবর আসে যে হ্যারিসন মারা গেছে যুদ্ধের সময়। বিশ্বাস করে না বউ সারা। সাংবাদিক পরিচয়ে চলে যায় যুগোস্লাভিয়ায়। এক সময় ফিরিয়ে আনে হ্যারিসনকে।
কাহিনী সত্যি না। কিন্তু ঐ সময় যুগোস্লাভিয়ায় প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছিল। যে ম্যাসাকেরর বিভৎস দৃশ্য আছে সেটি আসলেই ঘটেছিল। ১৯৯১ সালের ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সিভিলিয়ানদের উপর যে ম্যাসাকার হয়েছিল তা এখন ইতিহাস। ছবিটা সেটি নিয়েই।
৮. সালভাদর: সালভাদরের গৃহযুদ্ধ চলেছিল ১২ বছর, ১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। এসময় মারা যায় প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। দেশটির সেনা সমর্থিক সরকার ও বামপন্থী ৫ টি দলের সমন্বয়ে গঠিত Farabundo Martí National Liberation Front (FMLN) এর মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল।
বলাই বাহুল্য যে, সেনা সমর্থিত সরকারের সমর্থক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময়ের ঘটনা নিয়ে অলিভার স্টোনের ছবি সালভাদর। যুদ্ধ শেষ হলে একটি ট্রুথ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিশনের কাছে লিপিবদ্ধ আছে কিভাবে হাজার হাজার মানুষের হত্যা হয়েছিল লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে।
৯. আমু: এবার একটা ভারতীয় ছবি, ভাষা ইংরেজি। আমু ছবিটার নাম।
ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে মারা যায় ৮৪ এর ৩১ অক্টোবর। এর পরের দুইদিন দিল্লী ও উত্তর প্রদেশের কিছু এলাকায় যা ঘটে তাকে আসলে দাঙ্গা বলা যায় না, বরং বলা চলে নির্বিচার হত্যা। কংগ্রেস নেতারা সদ্য তৈরি ভোটার তালিকা হাতে নিয়ে খুঁজে খুঁজে বের করেছে শিখ পুরুষদের। ট্রেন থামিয়ে টেনে বের করে আনা হয় শিখদের। পুড়িয়ে মারার জন্য কেরোসিন সরবরাহ করা হয়েছিল স্থানীয় কংগ্রেস নেতারাই। বলা হয় পাঁচ হাজারের বেশি শিখকে হত্যা করা হয়েছিল সেই দাঙ্গায়। এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশও সহায়তা করেছিল এই কাজে।
কংগ্রেসের জন্য এখনও একটি কলঙ্কের নাম সেই শিখ হত্যা। পরে এ নিয়ে অনেকগুলো তদন্ত কমিটি হয়েছিল। প্রকাশ পেয়েছিল জড়িত বা প্রত্ক্ষ মদদদাতা অনেক কংগ্রেস নেতাদের নাম। যেমন জগদিশ টেইলর। এমনকি সে সময়কার পুলিশ প্রধানকেও দায়ী করা হয়েছিল। একথা প্রমানিত যে, কংগ্রেস নেতারাই এই ঘটনা ঘটায়।
সরকারি ভাবে এখনও কারো বিচার না হলেও কিছু ক্ষেত্রে বদলা ঠিকই নিয়েছে শিখরা। খালিস্তান কমান্ডো ফোর্স ১৯৮৫ সালে কংগ্রেস নেতা ও পার্লামেন্ট সদস্য ললিত মাকানকে মেরে ফেলে। যে ২২৭ জনের নাম দায়ী হিসেবে বের হয়েছিল তাতে তিন নম্বর ছিল এই ললিট মাকানের নাম। আরেকজন দায়ী কংগ্রেস নেতা অর্জন দাসকেও একই ভাবে হত্যা করে এই ফোর্স।
সেই সময়ের ঘটনার প্রভাব নিয়ে এই ছবি। কঙ্কনা, ছবিতে যার নাম কাজু, আমেরিকায় থাকে। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরেছে। কাজুর মা একজন সিংগেল মাদার, দত্তক নেওয়া মেয়ে কাজু। ১৯৮৫ সালে ম্যালেরিয়ায় বাবা-মা মারা গেলে বেঁচে যাওয়া কাজুকে দত্তক নেয় তার এখনকার মা।
কাজু জানে সে দরিদ্র্য ঘরের মেয়ে, বস্তিতে বড় হয়েছে। নিয়তি তাকে নিয়ে যায় সেই বস্তিতে। কাজু বাবা-মার পরিচয় খুঁজতে থাকে। জানতে পারে আসলে সে সময় ম্যালেরিয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ধীরে ধীরে উম্মোচিত হয় আরেক ইতিহাস। কাজু আসলে শিখ বাবা-মার মেয়ে। তাঁর বাবা মারা যায় ১৯৮৪ এর দাঙ্গায়।
সেই ইতিহাস খুঁজে পেতেও কষ্ট করতে হয় কাজুকে। আসলে কাজুর নাম ছিল অমৃতা। তাঁর ছোটো ভাই আমু বলে। সে কারণেই ছবির নাম আমু। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি এক দাঙ্গা উম্মোচনের অসাধারণ এক কাহিনী আমু।
১০. জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ: সবশেষে গণহত্যার বিচারের ছবি। ১৯৪৩ সালের শেষ দিকে তেহরানে বসেছিল ত্রিপক্ষীয় নৈশ ভোজ সভা। ছিলেন স্টালিন, রুজভেল্ট আর চার্চিল। ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ জার্মান অফিসারকে বিচার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্টালিন। আপত্তি জানান চার্চিল। তার কথা ছিল যে সব সৈন্য তার নিজ দেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছে তাদের ঠান্ডা মাথায় ফাঁসিতে ঝুলানো ঠিক হবে না। এর পরিবর্তে যুদ্ধের জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার করার প্রস্তাব দেন তিনি।
এরপরই ইউএস ট্রেজারি সেক্রেটারি হেনরি মর্গেনথাউ জুনিয়রের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিচার বসে জার্মানিরই নুরেমবার্গে। বলা হয়েছিল যেখানে অপরাধ ঘটেছে সেখানেই বিচার হতে হবে। ১৯৪৫ এর ২০ নভেম্বর বিচার শুরু হয়। প্রায় ২শ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছিল। ১৯৪৯ পর্যন্ত তা চলে।
ছবির শুরুটা মার্কিন জাজ ডান হাওয়ার্ডের নুরেমবার্গ পৌছানোর মধ্য দিয়ে। এই চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন স্পেনসার ট্রেসি। যুদ্ধাপরাধী চার বিচারকের একজন ড. আর্নস্ট জেনিং (বার্ট লানকাসটার)। জুডি গারল্যান্ড ও মন্টোগোমারি ক্লিফট ছোট্র দুই চরিত্রে অভিনয় করলেও তাদের অসাধারণ অভিনয়ের রেশ সহজে যায় না। আর আছে জার্মান অভিনেতা, অভিযুক্তদের পরে আইনজীবী হান্স রোলফ (ম্যাক্সিমিলিয়ান স্কেল), সেরা অভিনেতার অস্কার পেয়েছিলেন।
বিচার হয়েছিল মূলত দুটি ঘটনা নিয়ে। ঘটনা দুটি সত্যি। একটি হলো একজন হিটলার বিরোধীকে (মন্টোগোমারি ক্লিফট) নপুংশক করা এবং আরেকটি হলো একজন ইহুদির সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় জুডি গারল্যান্ডকে শাস্তি দেওয়া নিয়ে।
ছবিতে আর্নেষ্ট জেনিং যখন স্বীকার করে নেয় যে সে অপরাধী, বিচার করে তাদের পাঠনোদের ক্যাম্পে কি করা হতো তা তাদের জানার কথা নয়। এই কথা বলে দায় এড়াতে পারে না সে। অভিযুক্তদের আইনজীবি তখন বলেছিলেন, জেনিং অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ায় বাকি তিন বিচারকও দোষী হয়ে পড়বেন। দোষী যদি তারা হন, তাহলে হিটলারের সঙ্গে চুক্তি করায় রাশিয়াও দোষী, চার্চিল হিটলারকে এক সময় প্রশংসা করায় চার্চিলও দায়ী, আর দায়ী মার্কিণ পুজিবাদিরা, যারা হিটলারকে অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হয়েছিলেন। বিচার করলে সবাইকে করতে হবে। ছবিতে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের একটা ডকুমেন্টারি বিচার কার্যের সময় দেখানো হয়।
ট্রায়াল রুমে প্রথমেই দেখায় বসে আছে অভিযুক্ত চার বিচারক। জার্মানীর চার বিচারক সরাসরি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তারপরেও তাদের যাবজ্জীবন হয়েছিল। অপরাধ -তারাই নিরাপরাধদের বিচারের নামে ক্যাম্পে পাঠাতেন আর সেখানে তাদের ভাগ্যে কি ঘটতো তা তো সবারই জানা।
হোটেল রুয়ান্ডা আর দ্য কিলিং ফিল্ডস্ আগে দেখেছি। তাও অবশ্য আপনার রাজনীতি, সংঘাত ও কর্পোরেট ক্রাইম বিষয়ক মুভির পোস্ট পড়েই। প্রথম প্রথম যখন মুভি দেখা শুরু করি তখন আপনার লিস্টগুলোই ছিলো ভরসা। বলা যায়, ঐ পোস্টগুলো পড়ে পড়েই আমি রাতে কি মুভি দেখবো ঠিক করতাম। মুভি দেখা শিখেছিই এভাবে। এজন্য আপনার প্রতি আজীবন ঋণী। এই পোস্টটা পড়তে বসে পুরোনো সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেল। ভাই ভালো থাকেন। শুভেচ্ছা
ভাল সিনেমা দেখাটাই বড় কথা। কে নাম দিলো সেটা বড় কোনো বিষয় না। শুভেচ্ছা।
হোটেল রুয়ান্ডা আর আমু কমন পড়ছে। এতো সিনেমা কখন দেখপো?
ইয়ে মানে লিষ্টে, গাদার এক প্রেম কাথা না কি জানি নামের একটা সিনেমা আছে সানি দেওল পাঠার, ঐ সিনেমাটাও এ্যাড করে দিয়েন, যুদ্ধ আছে ঐটাতেও
বাপ পাঠা, ভাই পাঠা, সে নিজে পাঠা = পাঠা খান্দান
পিঞ্জর সিনেমাটা দেখেছেন? উর্মিলা মাতুন্ডকার আর মানোজ বাজপেয়ী? অসাধারণ লাগে আমার ওটা।
খেলাঘর নামে একটা সিনেমা দেখেছি, রিয়াজ মোষ্ট প্রবাবলী নায়ক, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে বানানো সিনেমাগুলোর মধ্যে যে কয়টা আমি দেখেছি তারমধ্যে সেরা
গাদার টিভিতে কিছুক্ষণ দেখছিলাম, সহ্য করা সম্ভব না পুরো সিনেমা। ঐটা নাকি আবার ভারতের সবচেয়ে ব্যবসা করা ছবির একটা।
। ধর্মেন্দ্র অল্প বয়সে খারাপ ছিল না। আর সানিরে এক সময় পছন্দ হইতো ডিম্পলের বয়ফ্রেন্ড হিসেবে। আই লাইক হার। 
পিঞ্জর দেখি নাই। চান্স পাইলে দেখবো।
খেলাঘরটা দেখা হয় নাই।
আমার যখন অল্প বয়স তখন ধর্মেন্দ্রের বেশি বয়স। তাই চাচা মিয়াকে আমার পাঠা ছাড়া কিছু লাগে নাই কখনো। আর একজন ছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। ঘাড় বাঁকা রাজেশ খান্না আর রাজ বাব্বার এর কথা নাই বললাম। চাচা মিয়ারা বেয়াদপি নিয়েন না। যাহা বলিব সত্য বলিব
চাচা মিয়ারা মানে কী?

মানে ধর্মেন্দ্র, রাজেশ, শত্রুঘ্ন আর রাজ বাব্বার
কিন্তু নাসিরুদ্দিন শাহ বস্।
একমত। বিশ্বের সেরা অভিনেতাদের একজন।
পিঞ্জর ছবিটা আসলেই ভালো লেগেছে । উর্মিলার অতিঅভিনয় এই ছবিতে বেশ কাজে দিয়েছে ।
গাদার এক প্রেম কাথা না কি জানি নামের একটা সিনেমা আছে সানি দেওল পাঠার, ঐ সিনেমাটাও এ্যাড করে দিয়েন, যুদ্ধ আছে ঐটাতেও Wink বাপ পাঠা, ভাই পাঠা, সে নিজে পাঠা = পাঠা খান্দান
জটিল বলছো আপু
গ্রেট পোস্ট। এসব ছবিগুলা কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে বস?
লিনার পরামর্শ শোনেন
একটাও দেখি নাই।
কৌশিক এগুলা মনে হয় মুভি প্লাসে পাবেন। রাইফেলস স্কোয়ার।
দেখো। ভাল লাগবে।
একটাও দেখি নাই। আপনার পোষ্ট দেখে নাম নিয়ে রাখি কিন্তু এই জীবণে সব দেখার সময় সুযোগ পাব কিনা কে জানে!
কেন পাবে না। নিষ্চই সুযোগ পাবে।
আপনে ঘৃণার রাজনীতির প্রপাগান্ডা চালাইতেছেন, আপনার দিলে ভালুবাসা নাই, আপনের ব্যাঞ্ছাই
বস স্যালুট... এই পোস্টটা বান্ধায়া রাখনের মতো... শেয়ার দিলাম
যে যা প্রাপ্য সেটাই তো দেবো। ভালবাসা প্রাপ্য হলে ভালবাসা, ঘৃনা প্রাপ্য হলে ঘৃনা। অপাত্রে কিছু দেওয়া ঠিক না।
দুইটা কমন পড়ছে হোটেল রুয়ান্ডা আর শুটিং ডগস। অবশ্য প্রশ্ন আগেই ফাঁস হয়ছিলো আপনার কাছ থেকে।
বাকী গুলা দেখা লাগবে।

বাকিগুলো দেখে বইলেন কেমন লাগছে।
Ararat
The Killing fields
KATYN
Missing
Shooting Dogs
Hotel Rwanda
Harrison's flowers
salvador
Amu
এই সিনেমাটা ইউটিউবে ও আছে।
Judgement of Nuremberg
যাদের ইচ্ছা হয় ডাউনলোড দিয়েন। অবশ্য ডিজিটালবাসীদের কথা আলাদা।
দুইজনে একই টাইমে একই খাটনি করলাম?
আগে কইবেন্না মিয়া? ধুর... এখন আমার সময় ফেরত দেন
আপনে আগে কবেন না???
তাইলে আর কষ্টটা করতাম না।
মাসুম ভাইয়ের কাছে থেকে স্টারে কাবাব খেয়ে নেন।
আমি যে কষ্ট কইরা লিখলাম, আমারে কেউ খাওয়াবে না?
সবগুলা সিনেমার টরেন্ট লিঙ্ক দিলাম
ডাউনলোড করে নেন খুশি মতো
আরারাত
http://torrentz.eu/search?f=ararat
দ্য কিলিং ফিল্ডস
http://torrentz.eu/1bc2539807fbf3a1e1352fdca4272f5dc0b834a2
কাতিন
http://torrentz.eu/search?f=katyn
মিসিং
http://torrentz.eu/search?f=Missing+%281982%29
শুটিং ডগস
http://torrentz.eu/search?f=shooting+dogs
হোটেল রুয়ান্ডা
http://torrentz.eu/search?f=hotel+rwanda+2004+movie
হ্যারিসনস ফ্লাওয়ার্স
http://torrentz.eu/search?f=Harrison%27s+Flowers+%282000%29
সালভাদর
http://torrentz.eu/any?q=Salvador+%281986%29
আমু
http://torrentz.eu/search?f=Amu+%282005%29
জাজমেন্ট এ্যাট নুরেমবার্গ
http://torrentz.eu/search?f=Judgment+at+Nuremberg+%281961%29
বাহ, ভেরি গুড জব। সবার জন্য সহজ করে দিল সিনেমাগুলা দেখা। নজরুল ও রাসেল আশরাফকে অনেক অনেক ধইন্যা।
এই লিস্টের বেশির ভাগ ছবিই অদেখা। তয় হোটেল রোয়ান্ডাটা বছর খানেক আগে দেখছিলাম বইলা ঐটা নিয়া কিছু কথা কইতে চাই। আমি হয়তো জানি না এই পোস্ট গেরিলা সিনেমাটা নিয়া চলমান বিতর্কের কারনে করছেন কীনা তবু নিজের মনমতোই হোটেল রোয়ান্ডার এক্সপেরিয়েন্সরে মিলাইতে চাই গেরিলা'র গল্প কাঠামো নির্মাণের সাথে।
হোটেল রোয়ান্ডায় হুটু আর টুটসি বিরোধের বিষদ আলোচনার মাধ্যমেই পরিষ্কার কইরা দেওয়া হয়। বেলজিয়ান উপনিবেশ যে ঐ এলাকায় সংখ্যালঘু টুটসিগো কালচারালি'ও পৃষ্ঠপোষকতা করতো, টুটসিগো বিরুদ্ধে হুটুগো এই ক্ষোভও এই সিনেমায় গোপন রাখার কোনো চেষ্টা দেখি নাই। মূলতঃ পশ্চিমা ইন্টারভেনশন আর ইনভেশনের চিত্র তুইলা ধরতেই এই সিনেমার অবতারণা। গণহত্যাটা যেই কারনে অনেক ভয়াবহ হইলেও হুটু চরিত্রদের কিছু সংলাপে কিছু ঘটনায় তারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও লাগে।
একটা সিনেমা কতোটা ননপ্রোপাগান্ডার ধারক হইতে পারে এই সিনেমার মধ্য দিয়া সেইটা প্রমাণ হয়। উল্টা দিকে আমাগো গেরিলাতে রাজনৈতিক অবস্থানের কোনো উল্লেখ নাই, রাজনৈতিক সংগ্রামের কোনো অবতারণা নাই...কিন্তু সেইটারে মুক্তিযুদ্ধের ছবি হিসাবে আমরা কতো অবলীলায় দাবী কইরা বসতে পারি। বেশির ভাগ ছবিই আমার অদেখা হওয়াতে বাকী ছবিগুলি নিয়া কোনো আলোচনা করতে পারলাম না বইলা দুঃখিত।
আর হুটু'রা মূলতঃ ঘৃণাবাদে সওয়ার হইয়াই টুটসি নির্যাতনে ঝাপাইয়া পড়ছিলো এই তথ্যও আমরা জানতে পারি হোটেল রোয়ান্ডা সিনেমা থেইকা। এখন ঘৃণার জবাব আপনি কোন ভাষায় দিতে চান সেইটা নিয়া আলোচনা হইতে পারে। একজন ইহুদি বিদ্বেষী হিটলার যখন যুদ্ধে নামেন, তখন তিনি ইহুদিগো নির্মূলেই উদ্যোগী হন। এই হইলো ঘৃণাবাদের পরিণতি। রাজনৈতিকভাবে কোনো কিছু বিবেচনা করলে পাকিস্তানিমাত্রই হানাদার বাহিনী এই কনক্লুশানে আসবেন না। ঘৃণাবাদ আসে উগ্র জাতীয়তাবাদ থেইকা, নির্যাতন সেইখানে কেবল ছড়ানো বারুদ।
প্রথম কথা হলো, গেরিলা নিয়া উল্লেখযোগ্য কোনো বিতর্ক হয়েছে বলে অন্তত আমার মনে হয়নি।
আর সিনেমা ধরে বিশ্লেষণ করলে হোটেল রোয়ান্ডা নিয়েও সমালোচনা করা যায়। সমালোচকরাই করেন। বিশেষ করে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে। সেই তুলনায় শুটিং ডগস অনেক বেশি সত্যনির্ভর।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপরে আরেকটা যুদ্ধের ছবি দেখছিলাম নোম্যান'স ল্যান্ড, সেইখানেও হোটেল রোয়ান্ডার মতোন একই অভিযোগ করছিলো। কিন্তু হোটেল রোয়ান্ডায় পশ্চিমা ইন্টারভেইন আর ইনভেশনের বিষয় নিয়া সমালোচনায় প্রায় সব ক্রিটিকই একমত। একটা সিনেমারে আমি কখনো প্রামাণ্য দলিল ভাবতে পারি না। কারণ সিনেমাটিক রিয়ালিটি বইলা একটা বিষয় সিনেমার ইতিহাস নিয়া পড়তে গেলে পাতায় পাতায় উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে সিনেমায় আলোচনা উস্কাইয়া দেয়া যায় রিয়ালিটি নিয়া। সেই হিসাবে রোয়ান্ডারে আমার বেশ ভালো ছবিই মনে হয়। কোনো মতামতরে এইখানে চাপাইয়া দেওয়া হয়না। সব বিষয়েই একটা দ্বন্দ্বমূলকতা বজায় রাখছে পরিচালক।
আর উল্লেখযোগ্য বিতর্ক হইতে কি করতে হইবো সেইটা কন...সেই অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য বিতর্ক করি...
চেষ্টা চলুক। চালাইয়া যান।
কাঠামোটা আপনি লেইখা দিলে আমি অনুসরণ করতে পারবো...
কাঠামো লেখার মতো জ্ঞান ও পড়াশোনা আমার নাই।
তাছাড়া আজ আবার পড়লাম গেরিলা নিয়া সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের আলোচনা। ফলে আগ্রহও পাচ্ছি না।
একসময় সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামরে অনুরোধ কইরা পয়সার বিনিময় এবং অবিনিময়ে তরুল শিল্পীরা এক্সিবিশন ব্রোশিয়রে মতামত লিখাইয়া নিতো...এই বিষয়টা আপনেরো ভালোই জানা আছে আশা করি...
আর আজকের প্রথম আলোতে করা তার রিভিউটাতে তার নাম না দিলে ঐটারে যেকোনো সদরুদ্দির লেখা মনে হইলেও দোষ দেয়া যাইতো না...
আজকের লেখার জন্যও পয়সা পাবেন।
আর সদরুদ্দিনের মতো কেন? গেরিলার পক্ষে লিখছে তাই?
রিভিউ ভালো খারাপ কি পক্ষে কিম্বা বিপক্ষে এই মানদণ্ডে ঠিক হয়? যেই লেখাটা উনি লিখছেন এই টাইপ রিভিউ কামরুজ্জামান বাবু কিম্বা রুম্মন নামের যেই ছেলেটা আছে ওরাও এর মধ্যে মনে হয় শ'খানেক করছে...ব্লগনসাইট গুলিতেও এর চাইতে সুলিখিত পক্ষের রিভিউ দেখছি বেশ কিছু...
পলিটিক্যালে কারেক্ট একটা রিভিউ, এর বেশী কাটাকাটি করলে চেতনা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, আজকে মঞ্জুরুল ইসলামের রিভিউ পড়ে এটাই বুঝলাম রাজনীতিতে হাত পাকালে মাকাল ফল দেখেও লোকজন গন্ধম বলবে,
৬০০ শব্দে এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ছবি প্রমাণিত করতে চাওয়ার বিষয়টা আমার কাছে বেশ মজার লেগেছে, আলোচনার সময় লোকজন বলবে হুমম ছবিটার নির্মাণ দুর্বল, গল্পটাও ঠিক তেমন জমে নি, চরিত্রগুলো অযথা এসেছে, অনেক বেশী চরিত্র ছিলো, ঘটনার সাথে তাল মেলানো সম্ভব হয় নি, বলবে এত খুচরা গেরিলা অপারেশন না দেখিয়ে যদি একটা সম্পূর্ণ একশন দেখাতো প্লানিংসমেত, কি ধরণের ঝুঁকির ভেতর দিয়ে তারা গিয়েছে, তাহলে ভালো হতো,
কিন্তু তারপর বলবে এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ছবি সুতরাং এ ছবিটা সবার দেখা উচিত।
আমার এই পলিটিকালি কারেক্ট টাইপ রিভিউটা পইড়া আপনের কি মনে হইছিলো সেইটা কইলে নিজেরে সংশোধন করতে পারতাম।
http://www.amrabondhu.com/vashkar/2962
হোটেল রোয়ান্ডার মূল কাহিনী সত্যিকার ঘটনা থেকে নেওয়া। এখানে রিয়েলিটি প্রবল ভাবে উপস্থিত। নো ম্যানস ল্যান্ড সেটা না। স্পিরিটটা হয়তো বাস্তব। জাতিসংঘ বাহিনী সহায়তা করছিল এই ভুল মতামত তো চাপাইয়া দেওয়া হইল হোটেল রোয়ান্ডায়।
১৯৯৫ এর স্রেব্রেনিকা ম্যাসাকারের উপর A Cry from the Grave দেখতে পারেন ।
~
আমার তালিকায় আমি কোনো ডকুমেন্টারি রাখি নাই। তবে এটি দেখার ইচ্ছা হলো।
অসাধারণ লিস্ট!
সবগুলো সিনেমাই দেখেছি , এর মাঝে ৮ টা আবার সামহোয়ারে আপনার লিংক ধরেই । সিনেমাগুলো নিয়ে অ্যানালাইসিস করে একটা সম্পূরক পোস্ট কি দিতে পারি ?
অবশ্যই। গভীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকলাম।
এটাও প্রিয়তে... সময় করে দেখার জন্য!
অসাধারণ ধারাবাহিক। চালিয়ে যান মাসুম ভাই।
মন্তব্য করুন