বছরটা ভুলে যেতে পারলে ভালো হতো
২০১১ সালকে বিশ্বের অনেক দেশের অর্থমন্ত্রীরাই ভুলে যেতে চাইবেন। বিদায়ী বছরটি অর্থনীতির জন্য ভালো ছিল না। পুরোটা সময় কেটেছে মন্দার আশঙ্কার মধ্যে। বিশেষ করে, ইউরোপের জন্য বছরটি ছিল ভুলে যাওয়ার।
শেষ সময়ে এসে সামান্য হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত, চীন ও ব্রাজিলের মতো উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোর অর্থনীতিও কিছুটা ভালো। তবে পুরো বিশ্বকে টেনে তোলার মতো আশাবাদী হতে পারছেন না কেউই। মন্দা কাটছে, এ কথা বলা যাচ্ছে না।
সারা বিশ্বে মন্দা, তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিও চাপের মুখে—এমনটি বলার অবকাশ অবশ্য আমাদের অর্থমন্ত্রীর নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাপ এসেছে ভেতর থেকে। বিশ্বমন্দা সেই চাপকে আরেকটু দীর্ঘায়িত করছে। বাংলাদেশের জন্য ২০১১ সাল মূলত নীতির দুর্বলতা, সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতার বছর।
বছরটি যে ভালো যাবে না, তার পরিষ্কার ইঙ্গিত আগের বছরেই ছিল। শেয়ারবাজারের বিরাট ধস আর মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়েই শুরু হয় ২০১১। শেয়ারবাজারের দ্বিতীয় দফা ধসও নামে বছরটিতে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুরো বছর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। বছরের শেষ সময়ে এসে বাজার খানিকটা স্থিতিশীল হওয়ার আশ্বাস দিলেও অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
অর্থনীতির তত্ত্ব মেনে শেয়ারবাজারে এবার ধস নামেনি। এর জন্য নীতিনির্ধারক ও নিয়ন্ত্রকদের অদক্ষতা এবং কিছু মানুষের লোভই দায়ী। অদক্ষ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি সরকার। বলা যায়, কিছু শক্তিশালী মানুষের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাহবা কুড়িয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে দেরি করে নিন্দাও কুড়ান। এই সুযোগ নিয়ে কারসাজিকারীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠলে বাজারে দ্বিতীয় দফা ধস নামে।
২০১১ সাল সাধারণ মানুষকে কোনো স্বস্তিই দিতে পারেনি। শেয়ারবাজার লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে রাস্তায় নামিয়েছে। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে কঠিন করে রেখেছে। বিদায়ী সালটি ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতির বছর। ১২ মাসের ১০ মাসেই ছিল ১০ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি। টানা ১০ মাস ধরে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি থাকাটা একটি নতুন রেকর্ড। এই মূল্যস্ফীতি সামগ্রিক অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধিকে যে সংকটে ফেলে দিয়েছে, বছরের শেষে এসে তা স্বীকার করেও নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
২০১১ সালে সরকার বড় সংকটে পড়ে পদ্মা সেতু নিয়ে। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ঋণ দেওয়া স্থগিত করে দেয় বিশ্বব্যাংক ও অন্য দাতারা। এতে আটকে যায় ২৩০ কোটি ডলার। এই অর্থ পাওয়া শুরু হলে অর্থনৈতিক সংকট থেকে কিছুটা মুক্ত থাকতে পারতেন অর্থমন্ত্রী। কেননা, বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমতে শুরু করেছিল। ইউরোপ-আমেরিকার মন্দা বাংলাদেশের রপ্তানি কমিয়ে দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধিও হ্রাস করে। তাই ভরসা ছিল বৈদেশিক সাহায্য।
বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো থেকে ডলার পায়নি আমদানিকারকেরা। চাহিদা ও জোগানের এই অসামঞ্জস্যের কারণে এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৫ শতাংশের বেশি। ৬৯ টাকার ডলার হয়ে গেছে ৮১ টাকা। এতে চাপ পড়ে মূল্যস্ফীতিতে।
এর মধ্যে আবার সরকার ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে অতিমাত্রায় ঋণ নিতে শুরু করে। ভর্তুকি সব লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সরকার ঋণ নিতে বাধ্য হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ কেবলই বেড়েছে। ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতও ঋণ পেয়েছে কম।
২০১১ সালে অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই ছিল নিম্নমুখী। অথচ জুনে বাজেট পেশ ও পাসের সময়েও পরিস্থিতি এতটা খারাপ মনে হয়নি। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সরকার সংকটের কথা স্বীকারই করেনি। ফলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আসেনি কোনো পরিবর্তন। এতে সংকট আরও প্রকট হয়েছে। শেষ সময়ে এসে অবশ্য অর্থনীতির সংকট স্বীকার করে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। স্বীকার করে নেওয়া একটি ধাপ। এখন এ থেকে নীতিনির্ধারকেরা কী ব্যবস্থা নেন, তার ওপরই নির্ভর করছে নতুন বছরের অর্থনীতি।
২০১২ সালের জন্য প্রত্যাশা অনেক। শেয়ারবাজার স্বাভাবিক বাজারে পরিণত হবে, মূল্যস্ফীতি কমে আসবে, বাড়বে বিনিয়োগ, শুরু হবে পদ্মা সেতুর কাজ, আসবে বৈদেশিক সাহায্য, প্রবাসীরা আরও টাকা পাঠাবেন। প্রশ্ন হলো, এমনটি কি ঘটবে? অর্থমন্ত্রী কি পারবেন?
২০১২ সালে বিশ্ব-অর্থনীতির মন্দা কতটা দীর্ঘ হবে, এটাই এখন বিবেচ্য বিষয়। ক্ষমতা পাওয়ার পর ২০০৯ সালে মন্দা থেকে উপকার পেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। মূল্যস্ফীতি কমে আসছিল বলে সে সময়ে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব হয়। কিন্তু এবার তেমনটি হচ্ছে না। কারণ, মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। ফলে কৌশল পাল্টাতে হবে নীতিনির্ধারকদের।
২০১২ সালের জন্য অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে তিন বছর বয়সী সরকারের জন্য। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই এর মধ্যে প্রধান। টানা ১০ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি হয়ে আছে। মূল্যস্ফীতি এখন গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বলা হয়ে থাকে, অর্থনীতির যে সূচকটি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে, সেটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। একটি সরকারের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি মূল্যস্ফীতি। নতুন বছর রাজনীতির দিক থেকে খানিকটা টালমাটাল থাকবে বলা যায়। নতুন বছর সরকারের জন্য চতুর্থ বছর। এ সময় মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা সরকারের নিজের জন্যও প্রয়োজন। এ জন্য অর্থনীতিতে যে যমজ ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হবে। তা হলো, বাজেট ঘাটতি ও লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি। মূল্যস্ফীতির চাপ অসহনীয় হয়ে ওঠার মূল কারণই এই যমজ ঘাটতি।
সামনে পথ দুটি। প্রথমটি হলো, সরকারকে ব্যয় কমাতে হবে। কথাটি বলা সহজ, বাস্তবায়ন করা কঠিন। বিশেষ করে, অর্থনীতিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে ব্যয় সংকোচন খুব সহজ কাজ নয়। কারণ, ব্যয় সংকোচন মানেই এখন ভর্তুকি কমানো। ভর্তুকির ব্যয় কমাতে সরকারের পক্ষে এখন আর জ্বালানি তেল কেনা কমিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়তো হবে না। তাতে বিদ্যুতের সংকট প্রকট হবে। পথ তাহলে বিদ্যুতের দাম ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো। সরকার এই সহজ পথেই এখন হাঁটছে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। সুতরাং, ২০১২ সাল নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ অনেকটাই কম।
অর্থমন্ত্রীর সামনে আরেকটি পথ হচ্ছে, বৈদেশিক সাহায্য ছাড় করানোর ব্যবস্থা করা। সরকারি বিনিয়োগ এখন নাজুক অবস্থায়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির বাস্তবায়ন গত অর্থবছরের তুলনায় অনেকটাই খারাপ। প্রকল্প সাহায্য আনতে না পারাই এর বড় কারণ। ব্যবহার করতে না পারায় পাইপলাইনে এখন প্রায় ৬০০ কোটি ডলার আটকে আছে। আর এই সাহায্য আনতে হলে পদ্মা সেতুর একটি সুরাহা করতে হবে। দাতাদের প্রভাব কমানোর দাবি প্রায় সব মহল থেকেই থাকে। দাতাদের অযৌক্তিক শর্তে রুখে দাঁড়াবে সরকার, এমনটা প্রত্যাশা অনেকেরই। কিন্তু এবার সরকার যুদ্ধে নেমেছে একটি নাজুক বিষয়কে কেন্দ্র করে। সেটি হচ্ছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর দুর্নীতি। এই যুদ্ধে লাভ নেই, পুরোটাই ক্ষতি।
সংকট নিরসনে সবচেয়ে সহজ পথটাই হয়তো এবার বেছে নেবে সরকার। আর তা হলো আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া। ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিতে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই অর্থ লেনদেনের ভারসাম্যে কিছু প্রলেপ হয়তো দেবে, তবে এ জন্য অনেকগুলো শর্ত মানতে হবে সরকারকে। আইএমএফের শর্ত মানেই তো বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া। তাদের শর্ত মানলে বিনিয়োগ কমবে, প্রবৃদ্ধিও হ্রাস পাবে। তাতে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমলেও অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়বে। আইএমএফের অর্থ নিলে অর্থনীতিতে খানিকটা শৃঙ্খলা হয়তো ফিরবে ২০১২ সালে, কিন্তু তাতে মানুষের জীবনযাত্রায় বড় কোনো উত্তরণ ঘটবে না।
পাকিস্তান কখনোই উদাহরণ হতে পারে না। তাও প্রাসঙ্গিক হবে বলে লোভ সামলানো গেল না। ২০০৪-০৫ অর্থবছরের বাজেট-বক্তৃতায় সে সময়ের অর্থমন্ত্রী শওকত আজিজ বলেছিলেন, ‘আইএমএফকে “গুডবাই” জানানোর মধ্য দিয়ে বাজেটে অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’ কারণ, আইএমএফের একটি ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ তখনই শেষ হয়েছিল। বাংলাদেশ আবার আইএমএফের সঙ্গে নতুন ঋণ কর্মসূচিতে যাচ্ছে। এতে নতুন বছরে নীতির সার্বভৌমত্ব কতটুকু থাকবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
শেয়ারবাজার বাদ দিলে ২০১১ সালের শুরুটা ভালোই ছিল। শেষটা ভালো হয়নি। অনেক সমস্যা নিয়ে শুরু হচ্ছে ২০১২। সঠিক নীতি ও দক্ষ বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখা ছাড়া আমাদের কীই-বা আর করার আছে।
(আজ প্রথম আলোয় প্রকাশিত, বিশেষ সংখ্যায়)
ভারতের অর্থনীতির অবস্থা এই মূহুর্তে ভালো বলা যায় কি?
২০১১ তো গেলো কোন মতে...২০১২ তার চেয়েও অনেক খারাপ যাওয়ার সম্ভাবনা বিস্তর
খারাপ অর্থনীতির ও একটা ভাল দিক আছে - এতে আপনার হাত দিয়ে ভাল লেখা আমরা পাবো
~
ইউরোপের মন্দার তুলনায় ভাল। আর ডিসেম্বরের প্রাক্কলন বেটার।
মাসুম ভাই, সরকারের ব্যয় সঙকোচন বা কৃচ্ছ্রতা প্রয়োজন কিন্তু সরকার তো ২০১১'তেই ২০১২'এর অনেক ব্যয় বাড়াইয়া দিতেছে। ঢাকা ভাগ। মন্ত্রী পরিষদের আয়তন বাড়ানোর পরিকল্পণা আর বাস্তবায়ন। এমপিদের জন্য পারসোনাল সেক্রেটারী নিয়োগ। ট্রান্সশীপমেন্ট বা ট্রানজিটের অবকাঠামো তৈরী। আরো আরো পরিকল্পণা নিশ্চিত আছে দেশরে ডিজিটাল বানাইয়া পারিবারিক ব্যবসা জমাইতে, সেইসব আপনি আমার চাইতে অনেক ভালো বলতে পারবেন।
এর বাইরে সরকার শেয়ারবাজার ঠিক করতে দোষীদের খুঁইজা টাকা বের না কইরা ব্যাংক আর কালোটাকা বিনিয়োগ করাইতেছে। শিল্প-কলকারখানার চাইতে শেয়ার বাজারের জন্য মোটিভেশন বেশি সরকারের সে নির্বাচন মাথায় রাইখা এই সিদ্ধান্ত নিতেছে, দেশ গোল্লায় যাক। সেইদিন একজনের মুখে শুনলাম জামায়াতি-বিএনপি'র শেয়ার বিনিয়োগের একটা অংশ রিইনভেস্ট না করাতে শেয়ার বাজার ইমব্যালেন্স হইছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আবার এইটাও শুনি আওয়ামী নেতাকর্মীরা সমানে জামায়াতি নেতাদের কাছ থেইকা যুদ্ধাপরাধীর চান্দা তুলতেছে। ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেইকা হাজার কোটি টাকা নিয়া দেশের ক্রীড়াক্ষেত্র চলতেছে। আওয়ামী এমপি-ব্যবসায়ীরা অনেক জামায়াতিগো লগে বিনিয়োগের পার্টনারশীপেও নাকি আছে, যেই কারনে শেয়ারবাজারে এই পলিটিকাল ইনভেস্টমেন্টে সরকারের কোনো উদ্যোগ নাই। এইসব তথ্যের সম্ভাবনা আর অথেনটিসিটি নিয়া যদি কিছু বলতেন তাইলে খুব উপকৃত হইতাম। তাইলে মরার আগে সত্যটা অন্ততঃ জাইনা যাওয়া হইতো। অর্থমন্ত্রীর তথ্যমতো তিনবছর মূল্যস্ফীতির মধ্যে বসবাস করনের মতোন হেডম মনে হয় না আমার আছে।
মূল সমস্যা রেন্টাল পাওয়ার, এতেই হিসাব উল্টে গেছে। বাজেট ঘাটতি ও লেনদেনের ঘাটতি-সমস্যা এখানেই। শেয়ারবাজার নিয়ে শোনা কথার কোনো সত্যতা আমার জানা নাই। তবে এটা ঠিক খেলা শেষ হয়নি।
লেখাটা সকালেই পড়েছি।
ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার একটা চিত্র আজকের প্রথমআলোয় দেখলাম, এবি ব্যাংক ২০১০এ মুনাফা করেছিল ১০০০ কোটি টাকা ২০১১ তে করলো ৬০০ কোটি টাকা। তার মানে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা ৪০% কমেছে। এটি হলো পরিচালন মুনাফা, নীট মুনাফার হিসেব আসলে সেটির সাইজ কেমন দাঁড়ায় তা দেখার অপেক্ষায় আছি। এবি ব্যাংক শেয়ার বাজারের প্লেমেকার এর মধ্যে অন্যতম ছিলো।
অর্থমন্ত্রী আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর সাহেবের চাকরী বজায় থাকলে সার্বিক অর্থনীতির কোনো উন্নতি হবেনা।
অর্থমন্ত্রী আর গভর্নরের কান্ধে দোষ চাপানোটা আমার ঠিক মনে হয় না। যেই দেশের অর্থনীতি কালো টাকার মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করে সেই দেশে অর্থমন্ত্রী কিম্বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু করার থাকে না। স্টক মার্কেট বা মানি মার্কেটে কতোটা টাকার চলন হয় দিনে এইটার খবরই তো রাখার উপায় নাই।
অর্থমন্ত্রী আর গভর্ণনের পলিসির কারণেই তো কালো টাকার মালিকদের কাছে জিম্মি হতে হচ্ছে। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ না রেখে এবং কালো টাকার ঘোর বিরোধী থেকে এখন অর্থমন্ত্রী বলেন কালো টাকা সাদা করতে, এই অর্থমন্ত্রীকে দোষ না দিয়ে উপায় কী? উনার কোনো নীতিরই ঠিক নেই। ঠিক একই ভাবে ভুরি ভুরি উদাহরণ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণনের বিপক্ষেও দেয়া যায়।
স্টক আর মানি মার্কেট এর টাকার হিসাব যথাযথ জায়গায় আছেই। হিসাব ছাড়া এই দুই মার্কেট কোনোভাবেই চলতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাইটে গিয়ে মুদ্রা বাজার এবং সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেন্জ কমিশনের সাইটে গেলে বিনিয়োগবাজারের সব হিসেব পাওয়া যাবে। কে কত টাকার শেয়ার বিক্রি করলো, কত টাকার কিনলো, কত টাকা কমিশন আকারে সরকারি তহবিলে গেলো সব হিসেবই পাওয়া যায়।
কালো টাকার মালিকরা এই দেশে বহুদিন ধইরাই ফ্যাক্টর এই অর্থমন্ত্রী কিম্বা গভর্নরের লগে তাগো কোনো সম্পর্ক নাই বস। অর্থনীতি ঠিক করতে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা দেওয়াটা কখনো পদ্ধতি না, বরং সেইটা কালো টাকার মালিকগো অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দেয়ার আহ্বান। কালো টাকার মালিকগো সাদা হইয়া যাওয়া টাকায় রাজনৈতিক দলগুলি ইলেকশন করে..অথর্থমন্ত্রী নিজেও হয়তো সেইরম ফান্ড নেয় তা সত্য।
অর্থনীতিরে রাস্তায় আনতে যেইটা দরকার সেইটা এইসব কালো টাকার মালিকগো রাজনৈতিক দল দিয়া জীবনেও সম্ভব না। সমস্ত কালো টাকার মালিকগো চিহ্নিত কইরা তাগো অপরাধের শাস্তি দিয়া অবৈধ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরাইয়া নিয়া সেইটারে সাদা কইরা বাজারে ছাড়লেই সল্ভ্ড।
যেই দেশে সাইনবোর্ড কোম্পানীর স্টক বেচা হয়, সেই দেশে আপনে স্টক মার্কেটের হিসাব নিয়া কথা কইতেছেন? বুঝলাম না...দোহার থানার গণি মিয়া, যে বেকার বাজারে পান বেইচা ক্লায়কেশে সংসার চালায়...তারে যদি টিন নাম্বার জিগানো হয় তাইলে মার্কা জিজ্ঞেস করতে পারে, সেও কিন্তু এই দেশে স্টক মার্কেটিয়ার। এখন লেনদেনকৃত টাকার হিসাবের বাইরে তার যেই ইনকাম ট্যাক্স দেওনের কথা সেইটা কোথায় যায়? সেই অ্যামাউন্ট কি আর সাদা থাকে? সেইটা হুন্ডি হইয়া সিঙ্গাপুরের কোনো ব্যাংকের লকারে এসির বাতাস খায়...আপনে অর্থনীতির ছাত্রী এইসব তো আপনে বোঝেন আশা করি।
সবইতো বুঝলাম। সিঙ্গাপুরের প্রসঙ্গ টানাতে আরো পরিস্কার বুঝলাম। ডলারগুলো বের হয়েছে কিছু বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে। সুরন্জিত সেনগুপ্ত যদি শুটকি পাহারার বিড়াল চিনতে পারে তাহলে অর্থমন্ত্রী শুটকির গন্ধ পান না, না কি বিড়াল দেখতে পান না? সম্ভবত বয়সের কারণে উনার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়েছে আর ঘ্রাণশক্তিও কমে গেছে।
সুরঞ্জিত সাহেবও মন্ত্রী হওয়ার পর আর বিড়াল চিনেন না। এখন বিড়ালরে তার আদরের টেডি বিয়ার লাগে।
আপনে কইতে চান সুরঞ্জিতরে অর্থমন্ত্রী বানাইলে ভালো হইতো? বুড়া অর্থমন্ত্রীরে গাইল পাড়া সহজ হয় তাই মাল মুহিতের কান্ধে দোষ চাপাইয়া আওয়ামী সরকাররে বাচানের কৌশল মনে হয় আমার কাছে এই ধরনের সমালোচনারে। ওবায়দুল কাদের বহুত ঝাড়ছে মন্ত্রীগো একসময়। মন্ত্রী বানাইয়া তারে কাছে টানার পরেই সে প্রেমে পড়ছে, এখন আর তার কোনো কথা নাই। এখন টাকার অভাবে আর মুহিতরে গাইল পাড়ে না সে।
সুরন্জিতকে মন্ত্রী বানানোর কথা বললাম নাকী? কথা নানা দিকে না ছড়িয়ে একটা স্ট্যান্ডে আনেন, আমার মতে মুহিত ব্যর্থ এবং সব দোষ তার। আপনার মতে সে ব্যর্থ না সব দোষ তার না। এবার স্পষ্ট করে বললাম, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারীর হোতা সালমান সাহেবকে উনি কিছু করেন নাই, এই অপরাধে তার চাকরী যাওয়া উচিত।
খুনের মামলায় কেবল খুনীর বিচার হয় না। ইন্ধনদাতা, পরিকল্পণাকারীসহ সব সহযোগীদের শাস্তি দেয়া হয়। সেইটাই সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা। যেইসব ভুলরে আপনার সারফেইসে অর্থমন্ত্রীর ভুল মনে হইতেছে সেইসবের পরিকল্পণার সাথে আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রীরও প্ররোচনা এবং চাহিদা আছে। দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য আওয়ামী সরকারেরই পদত্যাগ করা দরকার। সেইটাই হইতে পারে সঠিক দাবী। একজন মুহিত নিশ্চিত আমার আপনার চাইতে অর্থনীতি কম বুঝে না। তার সমস্যা হইলো তারে ক্ষমতায় থাকা অনেক মানুষের নির্দেশ ক্যারী করতে হয়...আর তার নিজেরো ক্ষমতায় থাকার লোভ আছে। মুহিতের পদত্যাগ কোনো সমাধান হইতে পারে না বইলাই আমি মনে করি।
আপনি সুরঞ্জিতের অর্থনীতি বিষয়ক মন্তব্য উল্লেখ করলেন বইলা আমি মনে করলাম আপনি সুরঞ্জিতরে রেলমন্ত্রী না বানাইয়া অর্থমন্ত্রী বানানোটারে একটা সমাধান ভাবতেছেন।
প্রথম আলোতে পড়ছি। আপনি কেমন আছেন মামা?
ভাল আছি আফা
বছরটা ভুলে না গিয়ে সরকার মনে রাখার চেষ্টা করুক। তাইলে মনে হয় তাদের জন্য বিষয়টা ভালো হবে।
অর্থনীতি কম বুঝি। শুধু এইটুকু বুঝি আমার মাসিক আয় আর ব্যায়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনতে আমাকে খুব বেশী কষ্ট করতে হইতেছে। গতবছরেও হইছে, এই বছরও সেইটাই জারী থাকবে
লেখাটা প্রথম আলোতেই পড়ে ফেলসি।

ইউরোপের অরথনিতি নিয়ে লেখেন শখত মামা
(
আর ভাল লাগে না অনিশচয়তা
২০১৩ সালের মনদাতো মনে হচছে সবকালের রেকরড ভানগবে
মন্তব্য করুন