মরণেরে তুহু মম শ্যাম সমান
জুলমাত খোন্দকার ঘুম থেকে উঠে হকচকিয়ে গেলেন। ঘরে এই সময় কেউ থাকার কথা না। খুব মনে আছে দরজা-জানালা সব বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলেন। অথচ দেখলেন বিছানার কোনে একজন বসে আছে। মুখ দেখা যায় না, কালো একটা আলখেল্লা পড়া।
জুলমাত খোন্দকার চিৎকার করে উঠতে চাইলো, কিন্তু মনে হল কেউ একজন গলা চেপে ধরে আছে। ফলে নিজের ফ্যাসফ্যাস গলাই অজানা মনে হলো তার কাছে। ভয়মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো-ক্কে ক্কে আপনি?
লোকটি সেভাবেই বসে থেকে কেবল মুখটা জুলমাত খোন্দকারের দিকে ঘুরিয়ে আনলো। মুখটা ভয়াবহ সাদা, কেবল চোখ দুটোই কালো। মোটেই স্বস্তি দেয় না এই মুখ। অমঙ্গলের পরিস্কার ঈঙ্গিত সেখানে।
জুলমাত খোন্দকার আবারো প্রশ্ন করলো-কে আপনি?
লোকটি নির্মোহ ভঙ্গিতে কেবল বললো-আমি মৃত্যু।
ধরা যাক লোকটার চেহারা ঠিক এরকম
জুলমাত খোন্দকারের চোয়াল ঝুলে পড়লো। তার বয়স এখন ৩৫, বিয়ে করেনি। আয়শা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা চলছে। মাঝে মধ্যে ফোনে কথাও হয়। জুলমাত খোন্দকারের ঠিক এসময়ে আয়শার কথা মনে পড়লো।
ভয় পেলে একটু কথা জড়িয়ে যায়, তোতলানোর ভাব আসে। জুলমাত খোন্দকার ভীষণ ভয় পেয়ে জানতে চাইলো-আ আ আ আপনি এখানে কেন?
মৃত্যু নামের লোকটা সেই একই ভঙ্গিতে বললো-আপনাকে নিতে এসেছি। আপনার সময় হয়ে গেছে।
জুলমাত খোন্দকার অসহায়ের মতো খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো মৃত্যুর দিকে। তারপর এইটুকুই বলতে পারলো-এতো তারাতারি?
মৃত্যুর চোখে একটু কী করুনা দেখা গেল? জুলমাত খোন্দকারের অন্তত তাই মনে হলো। মৃত্যু বললো-তালিকা আমি তৈরি করি না। এই দেখেন আমার হাতে লম্বা তালিকা। আমার হাতে সময় নেই। আরও অনেক জায়গায় যেতে হবে।
জুলমাত খোন্দকার সত্যি তাকিয়ে দেখলো, মৃত্যুর হাতে লম্বা একটা কাগজ। সেখানে অনেক নাম।
মৃত্যু তার সঙ্গে কথা বলছে দেখে খানিকটা সাহস ফিরে পেল জুলমাত খোন্দকার। ভাবলো কিছুক্ষণ ঠেকিয়ে রাখা যায় কীনা। মনে পড়লো অনেক আগে দি সেভেন্থ সিল নামে একটা সুইডেনের সিনেমা দেখেছিল। সেখানে নায়কটা মুত্যুকে ঠেকিয়ে রাখতে মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলা শুরু করেছিল।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জুলমাত খোন্দকার নিজে ভাল দাবা খেলতে পারে না। সুতরাং দাবা খেলে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। অন্য পথ ধরতে হবে। সাহস করে কথাটা বলেই ফেললো।
বললো-এসেছেন যখন, একটু সময় দেন। গ্রামে মা-বাবা থাকেন। আমি মারা গেলে তারা আমার জমানো টাকা কিভাবে পাবে সেটা একটু ঠিকঠাক করে রাখি। আরও ছোটখাট কিছু কাজ আছে। আর তো এই পৃথিবীতে আসতো পারবো না। এইটুকু সময় অন্তত আমাকে দেন। সে আয়শার কথা আর বললো না। কী লাভ মৃত্যুকে আয়শার পথ চিনিয়ে দেওয়া।
মৃত্যুর খানিকটা দয়া হল। বললো-বেশি না কিন্তু। আমাকে আবার আরেক জায়গায় যেতে হবে।
জুলমাত খোন্দকার ভাবলো, সময়টা কাজে লাগাতে হবে। রান্না ঘরে গেল সে। যত্ন করে দুটো স্যান্ডুয়েচ বানালো। তারপর আলাদা আলাদা প্লেটে নিয়ে বসলো আবার বিছানায়। একটা বাড়িয়ে দিল মৃত্যুর দিকে। অবাক হয়ে দেখলো মৃত্যুও ক্ষুধার্ত হয়। স্যান্ডুয়েচটা খেয়ে শুরু করলো।
এবার জুলমাত খোন্দকার যত্ন করে দুকাপ কফি বানালো। ব্রাজিল থেকে তার এক বন্ধু কফিটা এনে দিয়েছিল। ঢাকা থেকে সে কিনে রেখেছে কফি ক্রিম। জুলমাতের অলস সময়ের সবচেয়ে বড় বিলাসিতা হচ্ছে আয়েশ করে মগ ভর্তি কফি খাওয়া।
কাপ ভর্তি কফিটা এবার সে রাখলো মৃত্যুর সামনে।
মৃত্যু সেটিও নিল। জুলমাত খোন্দকার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো সেদিকে। কষ্ট আর কৌশলটা বৃথা যায়নি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে এলিয়ে পড়লো বিছানায়। গভীর ঘুমে মৃত্যু। ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল জুলমাত খোন্দকার।
ঘুমিয়ে গেলেও জুলমাত খোন্দকার জানে পালিয়ে গেলে লাভ হবে না। মৃত্যু ঠিক তাকে খুঁজে বের করবে। অন্য উপায় বের করতে হবে। মৃত্যুর পকেট থেকে সে তালিকাটা বের করলো। দেখলো সত্যিই তার নাম সবার আগে। জুলমাত খোন্দকার ইরেজার দিয়ে ঘষে ঘষে প্রথম নামটা মুছে ফেললো। তারপর সেই নামটা নিজ হাতে লিখে দিল সবার শেষে। তারপর অপেক্ষায় থাকলো মৃত্যুর, ঘুম থেকে জেগে উঠার জন্য।
টানা ৬ ঘন্টা ঘুমাল মৃত্যু। উঠেই আবার হাই তুললো। তারপর তাকালো জুলমাত খোন্দকারের দিকে। একটু হাসিও দেখা গেল তার মুখে। জুলমাতকে বললো-অনেক ঘুম পেয়েছিল। সারা রাত কাজ করেছি তো তাই। কফিটাও ছিল মজার। আপনি অনেক যত্ন করেছেন। অন্য সবাই ভয় পেয়ে উল্টা পালটা করে। আপনি করেননি। আপনার উপর আমি খুশী। তাই আমি সিদ্ধান্ত বদল করেছি। কেবল আপনার জন্যই এই সিদ্ধান্ত বদল।
তারপর মৃত্যু জানালো সেই সিদ্ধান্ত। বললো- কেবল আপনার জন্যই পুরোটা অদল বদল করলাম। আপনার নাম ছিল শুরুতে। তাই পালটে দিলাম। এই মুহূর্ত থেকে তালিকার একদম শেষ নামটা দিয়ে কাজ শুরু করবো...
আবার চোয়াল ঝুলে পড়লো জুলমাত খোন্দকারের।
হা হা হা......ব্যপক হইছে...ফাটাফাটি...
ধইন্যা
মুভি নিয়ে রিভিউ লেখার নতুন স্টাইলটা দারুণ লেগেছে।
এই রিভিউ না তো। মৃত্যুর সঙ্গে দাবা খেলা ছাড়া আর কোনো মিল নেই। মুভিটা দেখে আদলটা নিয়েছি মাত্র।
আমার বোঝার ভুল। আমি মুভির সাথে যোগসূত্র স্থাপন করেছিলাম। পোস্ট ইউনিক। দারুণ!
কৌতুকটা কিন্তু মৌলিক না
বেচারা জুলমত
হুম, ভাগ্য, সবই ভাগ্যের ব্যাপার
দারুন গুরু। চমৎকার হৈছে
(আমি যে ঘোরাঘুরি পোস্টে আপনার ভয় দেখাইলাম একজনরে... আপনিতো কিছুই কৈলেন্না .... )
বইলা আসছি তো।
মৃত্যুর সাথে দাবা খেলা???!!!!!
ইয়া নাফসি......ইয়া নাফসি.........
====================
রম্য দারুণ হয়েছে।
দাবা খেলার ছবি দিলাম তো
ajrailer sathe emon kora jay kemne?chintay porlam post pore.
Ei cinemata eka dekhle voy pabo,koekjon mile dekhte iccha korche.
আরে বেলি আপা নাকি ? আছেন কিরাম ?
valai achi.rastai daraya bristite viji.apne kiram dadavai?
মুভিটা দেখবা। দি সেভেন্থ সিল আমার দেখা সবচেয়ে কঠিন সিনেমা।
হাঃ হাঃ
মজা পাইলাম ।
আরে, দারুনতো! আহারে জুলমত, বুদ্ধির প্যাচ কষতে গিয়া হইলি হাবা হাসমত!
পুরাই হাবা হাসমত
বুনন টা খুব ভাল হয়েছে।
অসাধারণ!
ধইন্যা
ব্যপক হইসে! ফাটাপাটি...
ধইন্যা মীর
একদম টপক্লাস হইছে।
রায়হানভাইরে ইদানিং দেখা যায় না কেন!
আপনে আছেন তাইলে
আমিও একই কথা ভাবতেসিলাম। রায়হান ভাই কই?
উত্তর-মাসুমীয় হইছে
~
অনেক ভালো লাগছে । এটা বইয়ে দেয়া উচিত ছিলো।
বই তো আগেই বের হয়েছে। আর এটা তো এখনকার লেখা
হুম। যে পথেই যাই না কেন মুক্তি নাই
হুম। ভাগ্য
আগে কন - মুভিটা দেখা শেষ করে আপনার মাথা ধরে নাই? আমি কোয়ার্টার দেখার পরেই মাথা ধরায় আক্রান্ত হইছিলাম। তারপর বহুবার চেষ্টা করেও শেষ করতে পারি না। মৃত্যুর পর আবার ট্রাই নিতে হবে
মুভিটা দেখার পর নেট ঘাইটা লেখাপড়া করতে হইছে। তাতে আমি ১০% বুঝছি মনে হয়
হে হে, তাইলে বুঝেন, কেন এই ছবি এদ্দিনেও শেষ করতে পারি নাই।
অট-আপনার মোবাইল নাম্বার ঠিক আছে? একটা জরুরী বিষয়ে আলাপ করতে চাই, কোন সময় সুবিধা হয় আপনার?
এনি টাইম নীড়দা
এধরনের কি একটা জানি পড়েছিলাম, এ মূহুর্তে মনে করতে পারছি না।
লেখা অসাধারণ হয়েছে
মন্তব্য করুন