আমার মেয়ে
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমার মেয়েটা অসম্ভব মায়াবতী। কিন্তু সেই মায়ার কথা সে কাউকে বলতে পারে না। চোখ জুড়ে তার সমুদ্র। অল্পতেই সেই সমুদ্রে সুনামী ওঠে। কেউ কিছু বললে কিছু বলতে পারে না, চোখ বেয়ে শুধু পানি পরে। কাউকে সে ভালবাসার কথা বলতে পারে না, রাগের কথাও না। মেয়েটাকে স্কুল থেকে আমি নিয়ে আসি। একদিন দেখলাম, মন খারাপ করে স্কুল থেকে বের হয়ে আসলো। কি হয়েছে জানতে চাওয়া মাত্র দেখি চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। কারণ আর কিছুই না, তার পাশে বসে যে মেয়েটি, সে কিছু একটা বলেছে। তার মায়ের হয়েছে মুশকিল। কিছু বলতেই পারে না। সঙ্গে সঙ্গে চোখে পানি।
প্রিয়ন্তীর জান হচ্ছে তার ছোট ভাই, রাইয়ান। ছোট হলেও সে ভাইয়া বলেই ডাকে। আবার আদর করে নানা নামেও ডাকে। স্কুল থেকে বের হয়েই জানতে চায়, ‘বাবা, ভাইয়া কি করে?’ বাসায় ঢুকেই দৌড়ে ভাইয়ের কাছে যায়, রাইলু বলে কোলে নেয়। ভাইয়ের জন্য তার রাজ্যের প্রশ্রয়। ভাইয়ের সব কিছুতেই সে মুগ্ধ। রাইয়ান যখন মজার মজার কথা বলে সে মুগ্ধ হয়ে শোনে। নিজেই বলে, ‘বাবা, রাইয়ানের অনেক বুদ্ধি। আরও বলে, ‘রাইয়ান কিভাবে এতো বুদ্ধি করে কথা বলে, আমার তো এসব কিছু মনেই আসে না।’
রাতে ঘুমানোর আগের কথা বলি। সে নিজের ব্যাগ গুছাবে। তারপর ভাইয়ের ব্যাগ গুছাবে। পেনসিল বক্স দেখবে। পেনসিল সার্প করবে। ইরেজার আছে কিনা দেখবে। সবকিছু ঠিকঠাক করে তারপর ঘুমাতে যাবে এই মেয়ে। ওদের মা বেশি ব্যস্ত থাকলে ভাইকে পড়াবেও সে। যত্ন করে পড়ায় রাইয়ানকে। আমার ছেলেও বলেও, ‘আপু ইজ গুড টিচার।’ একদিন রাতে সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় ফিরে দেখি প্রিয়ন্তী টেবিলে বসে হোমওয়ার্ক করছে। এতো রাতে কেন? ওদের মা বললো, রাইয়ান হোমওয়ার্ক না করেই ঘুমিয়ে গেছে, তাই প্রিয়ন্তী ভাইয়েরটা নিজেই লিখে দিচ্ছে, তা না হলে তো টিচার বকা দেবে। অথচ প্রিয়ন্তীর স্কুল সেই সাতে সাতটায়, উঠতে হবে সাড়ে ৬ টায়।
তার একটাই কমপ্লেইন। আর তা হল, তার মা রাইয়ানকেই বেশি ভালবাসে, বেশি পছন্দ করে। তাতে আবার তার রাগ নেই। কারণ ভাইয়াকে সেও পছন্দ করে। প্রিয়ন্তী তার মাকে প্রায়ই প্রশ্ন করে, ‘মা, মা, তুমি রাইয়ানকে বেশি ভালবাস, তাই না? বলো, বলো, আই ডোন্ট মাইন্ড।’ তার মা তখন বলে, ‘না, মা। আমি দুজনকেই বেশি ভালবাসি।’ তখন সে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আই অ্যাম হ্যাপি’।
সবার জন্য তার মায়া। সবচেয়ে বেশি মায়া সম্ভবত তার নানীর জন্য। যতই লোভনীয় হোক, কোনো কিছু একা খেয়েছে এমন উদাহরণ প্রিয়ন্তীর নেই। বাইরে কোথাও গেলে একটা বিস্কিট দিলেও সে অর্ধেকটা লুকিয়ে নিয়ে আসবে তার নানীর জন্য। আমি সারাদিন বাসায় থাকি না, তার মা তাদের জন্য নাস্তা বানায়। ভাল কিছু বানানো হলে আমার জন্য রাখবেই আমার মেয়ে। একা সে কিছুতেই খাবে না।
আমি বড় বেলায়ও শাক-সব্জি খেতে চাই না। আমার মেয়ের কোনো সমস্যা নেই। যা দেওয়া হবে সেটাই চুপচাপ খেয়ে চলে যাবে। তবে কচুর লতি হলে আর কিছুই লাগে না। ঢেড়স যদি রান্না করা হয়, সেটাও তার পছন্দের। বরবটির ভর্তা দিলেও চলবে। এই মেয়েকে নিয়ে কোনো সমস্যাই হয় না আমাদের।
আমার জন্মদিনের কথাটা বলি। ওইদিনও অফিস ছিল। অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখি দেখি আমার রুমে এক হাজার টাকা রাখা। কে রাখলো টাকা? আমার ছেলে ও মেয়ে মিলে এই হাজার টাকা আমাকে দিয়েছে একটা শার্ট কেনার জন্য, জন্মদিনের উপহার। আমার মেয়ের একটা সঞ্চয় আছে। ঈদের সময় সালাম দিয়ে যা পায় সব একটা বক্সে রেখে দেয়। তার দেখাদেখি রাইয়ানও রাখে। আমার জন্মদিনের দিন সে ওই বক্স থেকে ৫শ টাকা বের করে তার মাকে দিয়ে বলেছে, ‘মা, এইটা দিয়ে বাবাকে একটা মেরুন কালারের শার্ট কিনে দিও (কারণ তারা জানে আমি এই রং পছন্দ করি)।’ এটা দেখে রাইয়ানও তার সঞ্চয় থেকে ৫শ টাকা বের করে দিয়েছিল ওদের মাকে। তারপর তাদের নিয়ে যেতে হল শপিং-এ। নিজেরা পছন্দ করে শার্ট কিনলো আমার জন্য। আমার জন্মদিনের সেরা উপহার সেই শার্ট।
আজ মেয়ের জন্মদিন না। কোনো উপলক্ষ্যও নেই। তারপরেও প্রিয়ন্তীকে নিয়ে লিখতে মন চাইল, তাই লিখলাম।
প্রিয়ন্তী
এই শার্টটাই ওদের কিনে দেওয়া
প্রিয়ন্তীর জন্য অনেক আদর। এমন একটা মেয়ে এমন একটা বোন থাকলে আর কী লাগে।
সেইটাই। অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে
প্রিয়ন্তীকে অনেক আদর! মায়া নিয়েই বড় হোক। আকাশের সমান.
oshomvob valo laglo... prionti ke bolchi.. "emon maya diye shobai ke joriye rekho shob shomoi".. babar kach theke ekhon onek dure ..nijer shongshar ,chakri.poralekha niye etoi besto khub shomoi kore babar bashai giye babake shomoi deya hoina.. .amar nijer choto belar kotha mone holo.. amar jomano taka diye nana upolokkhe baba ke gift ditam shai deyar majhe onek anondo..jedin prothom beton peye abbur hatte ami upohar diyechilam..abbur chokhe je anonder pani chilo seta amar chokh ke ekhono vijiye dai...
apnar lekhata pore khub beshi abegi hoe giyechilam.. eto boro comment likhe fellam...
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
অসম্ভব মায়াময় লেখা।
প্রিয়ন্তী আর রাইয়ানের জন্য অনেক অনেক অনেক অনেক আদর ও ভালোবাসা।
বাবার জন্য মেয়েদের ভালবাসা চিরন্তন।
অনেক ভাল লাগ্লো। অনেক দোয়া থাকলো প্রিয়ন্তির জন্য
সেইটাই
প্রিয়ন্তীর গল্প পড়ে বুঝলাম, মেয়েটা অসাধারণ লক্ষীমেয়ে। আমি সত্যিই এমন কিউট বাচ্চা দেখি নাই। পিঠাপিঠি ভাইবোন হলে সাধারণত মারপিট, ঝগড়াঝাটি হয় তাদের। প্রিয়ন্তী কি মিষ্টি! যেমন দেখতে, তেমন তার স্বভাবগুলো।
প্রিয়ন্তী অনেক বড় হোক। সাফল্য আর সামর্থে ভরে উঠুক প্রিয়ন্তীর জীবন।
শুরুতে সামান্য মারামারি করেছে। এখন মেয়েটা একদমই করে না, অনেক মায়া তার ভাইয়ের জন্য
মাশাল্লাহ!
অনেক, অনেক শুভকামনা থাকলো আপনাদের পুরো পরিবারের প্রতি!
প্রিয়ন্তীর জন্য অনেক অনেক আদর। মা-বাবার আদরে অনেক ভাল থাক মামনি।
বড়ো মায়াভরা লেখা। মন ভিজে ওঠে, চোখকে সামলাই।
(আর, একটা গোপন দুঃখ নতুন করে জেগে ওঠে - আমার একটা কন্যাসন্তানের শখ ছিল, হয়নি।)
কবি বলেছেন, একবার না পারিলে করো শতবার
লক্ষি একটি মেয়ের বাবা আপনি। খুব ভাল লাগল আপনার লেখা পড়ে। অভিমানী মামনি আনেক বড় হবে মানুষ হবে। এমন আনন্দে আদরে ভালবাসায় ভরে থাকে যেন ওর সারাটি জীবন।
অভিমানটা কমুক একটু
বাবার মেয়ে...মেয়ের বাবা
ইয়েস
মায়াবতী মেয়ের বাবার মায়াভরা লেখা পড়ে চোখে পানি চলে অাসছে । অনেক দোয়া প্রিয়ন্তির জন্য । এমন মায়া দিয়ে ভরে রাখুক প্রিয়জনদের । অনেক বড় হোক ।
মায়া থাকুক, অভিমানটা কমুক
কি ভীষন আদুইরা একটা লেখা!
আপনার বাচ্চা দু'টাই কি দারুন মায়াময় কাজ কারবারে ভরপুর। আসলে সব বাচ্চারাই এমনি, কেবল সব বাবা-মা এমনি করে সেসব লিখে আনতে পারে না।
আসলেই একট বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা সবাই অসাধারণ
অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে
হুমায়ূন সট্যাইল চলে আসছে মাসুম ভাই, এইভাবে লিখলে কামাল ভাইয়ের সাথে দোসতানা খতম
মন্তব্য করুন