লক্ষ্যহীন জীবন এবং অনিশ্চিত যাত্রা
এক এক মানুষের জীবনে এক এক রকম লক্ষ্য থাকে। কেউ ডাক্তার হতে চায়, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক বা আরও অন্যকিছু। ছোটবেলায় ডাক্তারী পেশাটা আমাকে খুব আকর্ষণ করত, হাসপাতালে কোন অসুস্থ রোগী দেখতে গেলে ভাবতাম, ইস! আমি যদি ডাক্তার হতাম, তাহলে এই রোগীদের কত সেবা করতে পারতাম! হাইস্কুলে ওঠার পর শিক্ষকতা পেশাটাকেও খুব শ্রদ্ধা করতাম, মনে হত দুনিয়াতে শিক্ষকতা পেশাটাই সবচেয়ে কঠিন, কারণ ছাত্রদেরকে কোন বিষয়ে জ্ঞান দান করার চেয়ে কঠিন কাজ দুনিয়াতে আর কিছু নেই। যদিও এই শিক্ষকতা পেশাটার প্রতি আমার প্রচন্ড শ্রদ্ধা ছিল, কিন্তু নিজে কখনও বড় হয়ে শিক্ষক হতে চাইতাম না সেসময়, কারণ আমি নিজে কখনও সেই পরিমাণ বুদ্ধিমত্তা ধারণ করতামনা কখনও যা ব্যবহার করে ছাত্রদেরকে জ্ঞানদান করতে পারি। ছাত্রাবস্থায় যখন ছিলাম, কোন বিষয় নিজে বুঝলেও সেটা সহপাঠী কাউকে বোঝাতে পারব, সেই আত্মবিশ্বাস আমার কখনই ছিলনা, এই আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণেই জীবনে কখনও শিক্ষক হতে চাইনি। কিন্তু ছোটবেলার সেই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছেটা এসএসসি পাশ করার পর কলেজে পড়ার সময় পর্যন্ত ছিল। কিন্তু এইচএসসির পর যখন দেখলাম রেজাল্ট তেমন আহামরি কিছু না, তখন সেই ইচ্ছেটা আস্তে আস্তে দমে যেতে থাকল। ছোটবেলা থেকেই বড় ভাইদের কম্পিউটারের কাজকর্ম দেখে কম্পিউটারে আগ্রহ একটু আধটু যে ছিলনা, সেটা বলবনা, কিন্তু সেটা যে কালক্রমে পেশা হিসেবে চলে আসবে জীবনে, সেটা সেই সময় স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। এইচএসসির পর অনেকটা বাধ্য হয়েই কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশুনা করলাম, তখন মাঝে মাঝে একটা কথা মনে হত, ডাক্তারী যে পড়লামনা, সেটা একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে, কারণ ডাক্তারী পড়ালেখা শেষ করতে অনেক সময় লাগে, অনেক ধৈর্য্য আর পরিশ্রম করতে হয়। আমার মত অলস আর অকর্মণ্যকে দিয়ে কখনই ডাক্তারী পড়ালেখা সম্ভব হতোনা।
যাই হোক টেনেটুনে অনার্স পাশের পর বড় ভাইয়ের ইচ্ছায় একসময় ভেবেছিলাম দেশের বাইরে যাব, কিন্তু পরিবারের সবার ছোট হওয়ার কারণে সেটা তখন সম্ভব হয়নি। আমার নিজের মাঝেও সেরকম ইচ্ছে ছিলনা বাইরে পড়তে যাওয়ার, কারণ সবার ছোট হওয়ার কারণে আমি অনেকটা হোমসিক টাইপের ছেলে ছিলাম, বাবা-মা ঘেঁষা। দেশের বাইরে না গেলেও বাবা-মা কে ছেড়ে প্রায় চার বছর ঢাকা থাকতে হয়েছিল এমবিএর জন্য। সেখানেও জীবনের নানান চড়াই-উতরাই দেখেছি। বেশীরভাগ অভিজ্ঞতা ছিল কষ্টের, কাছের মানুষ ভেবে যাদের মনে করতাম, একসময় একে একে তারাই যখন দূরে সরে যেতে থাকল, তখন জীবনটা খুবই দুর্বিসহ মনে হত। ব্যক্তিগত জীবনের নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে এমবিএতেও রেজাল্ট খুব একটা আহামরি কিছু করতে পারিনি, অবশ্য ব্যক্তিগত জীবনের ঐসব ঝামেলাই যে আমার মিডিওকার রেজাল্টের জন্য একমাত্র দায়ী সেটা বলবনা, আমার নিজের অবহেলাও অনেকটা ছিল। সব মিলিয়েই তখনকার জীবনটা ধীরে ধীরে অসহ্য হয়ে উঠতে থাকল, শেষদিকে শুধু মনে হত, কখন এমবিএ শেষ করব, কখন ফিরে যাব আবার নিজের শেকড়ে।
একসময় নিজের শেকড়ে ফিরে আসলাম ঠিকই। এমবিএর মেজর সাবজেক্ট অনুযায়ী একটা চাকরীও পেলাম, প্রায় দেড় বছরের মত সেই জায়গায় থাকার সময়ও জীবনে ঝামেলা কম আসেনি, অফিসিয়াল নানান ঝামেলা, ইন্টারনাল পলিটিক্স – সব মিলিয়ে মনে হত, কি ভুল করলাম এই পেশায় এসে! তারপর হঠাৎ একদিন একটা সুযোগ পেয়ে একই অফিসের আইটি বিভাগে যোগ দিলাম, ঐখানেই এখনও আছি। এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি কি আসলেই এই পেশায় উপযুক্ত? জীবনে অনেক কিছুই করতে চেয়েছিলাম, তার বেশীরভাগই করতে পারিনি। হতাশা প্রায়সময় চেপে বসে নিজের মাঝে। ইদানিং সাংসারিক জীবনের নানান ঝামেলাও তাড়া করে বেড়ায়। সাগরে বয়ে চলা জাহাজের নাবিক যেমন দিকহারা হয়ে জাহাজকে অনিশ্চিত পথে টেনে নিয়ে চলে, সেভাবে মনে হয় নিজের জীবনটাকেও টেনে নিয়ে চলছি অনিশ্চিত গন্তব্যে। এর শেষ কোথায় কে জানে? আমাদের সকলের জীবনও হয়ত কম-বেশী এমনই, কেউ জানিনা আমরা আমাদের গন্তব্য কোথায়। জাহাজের সেই দিকহারা নাবিকের মত অনন্তের পথে জীবন নামের জাহাজকে টেনে নিয়ে চলছি, হয়ত কখনও চির কাঙ্খিত সেই পারের দেখা পাব সেই আশায়........
পুরাই দেখি আমার কাহিনী লিখলেন
টেলিপ্যাথি

আশিক ভাই দেখি জটিল সিরিজ শুরু করায় দিলো।

অনেকদিন পর কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু আজ আর সময় নাই। কাল টাইম পাইলে লেখুম নে
============
লেখা দারুণ হয়েছে।
কি যে কন এইসব বস্তাপচা প্যাকপ্যাক আপনার কাছে দারুন লাগলো???

হ লাগছে। ভাবতেছি আমিও একটা লেখুম
কোপাইয়া লিখা ফালান

হ
দারুন লেখা। সব পেলে নষ্ট জীবন তাই যাই পাও তাই নিয়ে সুখে থাকো!
মস্তিস্কের ভয়াবহ বিকৃতি না ঘটলে এই আজাইরা ফাউল লেখাকে কেউ দারুন বলতে পারেনা।
এরপরে?
অনুর্বর মস্তিষ্ক থিকা যে এতদূর বাইরাইছে তাই কত বেশী, আপ্নে এরপরে আরও চান

বাহ। দারুণ লেখা। লেখা চলুক নিয়মিত।
ধন্যবাদ আপু। কালেভদ্রে ঝোঁকের মাথায় ছাইপাশ লিখে ফেলি
আপনি এত কম লেখেন ক্যান?!
আসলে লেখালেখির মত কঠিন কাজ আমারে দিয়া হবেনা, সেই ডরে লেখিনা

বাহ। দারুণ লেখা। লেখা চলুক নিয়মিত।
ধন্যবাদ।
ছোটকাল থেকেই আমি মস্তিস্ক নিয়ে টেনশিতো!
হ!
মন্তব্য করুন