হারিয়ে যাওয়া খেলা।
আজ এক কাজে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সাত বছরের ভাতিজা কে দেখলাম একটা লাঠি নিয়ে খেলছে। জিজ্ঞেশ করলাম, কি খেলছিস রে? বলে, “কিছু না। এমনি।‘ চেষ্টা করলাম খেলাটা বোঝার জন্য। কেমন খেলা, কি নিয়ম মেনে খেলা হছে । দেখলাম, শুধুমাত্র একটা লাঠি মাটিতে গাড়ার চেষ্টা। কে কতটুকু মাটিতে গাড়তে পারে। ভাতিজা একবার গাড়ছে, মাপ নেবার পর আরেকজন আবার মাটিতে গাড়ছে। তারপর জয় পরাজয়। গ্রামের বাড়িতে মাটি পেয়ে নতুন একটা খেলা তৈরি করেছে।
মনে পড়লো, আমরা শহরেই লাঠি নামক এক খেলা খেলতাম। অনেকটা ডাংগুলির মতো। এটা দলবদ্ধ খেলা। টস করে একজনের লাঠি মাটিতে রাখতে হতো। অন্য সবার লাঠির এক প্রান্ত লাল ইট স্পর্শ করে রাখতে হতো। আমরা নিজেদের লাঠি দিয়ে মাটিতে পরে থাকা লাঠিকে বাড়ি দিয়ে দূরে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতাম। এর মধ্যে লাঠির মালিক লাল ইট স্পর্শ না করা কাউকে ছুয়ে দিলে, তার লাঠিকে পরেরবার দূরে নিয়ে যাবার জন্য নির্ধারণ করা হতো। আর যে ছুয়ে দিলো, তাকে মাথায় করে নিজের লাঠিটা খেলা শুরুর স্থানে নিয়ে আসতে হতো। পথের কোথাও লাঠিটা মাথা থেকে পড়ে গেলে আবার সেই লাঠিকে দূরে নিয়ে যাবার চেষ্টা। এভাবেই চলত।
সাত চারা নামক একটা খেলা ছিল। এটা অনেকেই খেলেছেন। এছাড়াও ‘চারা‘ নামক একটা খেলা ছিল। মাটির কলস কিংবা ঢাকুন-এর ভাঙ্গা টুকরা ছিল চারা। মাটিতে একটা ঘর কেটে একজন চারা ছুড়ে মারত। তারপর অন্যজনকে চ্যালেঞ্জ করা হতো ওই চারার কাছাকাছি অন্য একটা চারা পৌঁছানর। বাজিও ধরা হতো। বাজির বিভিন্ন উপকরণ ছিল, যেমন ম্যাচের খোসা, K2 বা স্টার সিগারেটের প্যাকেট। কখনো চকলেটের মোড়ক। এই খেলাটা খেলতাম উঁচু নিচু মাটিতে বা মাটির টিবিতে।
আরেকটা খেলা ছিল চাকা বা রিং। ছোট একটা লাঠি দিয়ে রাস্তায় সাইকেলের টায়ার, চাকা বা রিং বারি দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায় ছুটে চলা। এটা একটু বিপদজনকও ছিল। মনে আছে, একবার মিরপুর ১ থেকে মিরপুর ১০ এ স্টেডিয়ামের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। রাস্তায় রিকশার তলে , কিংবা ম্যানহোলে পড়ার সম্ভাবনা থাকত। আর এর ওর সাথে ধাক্কা খাওয়া তো খেলারই একটা অংশ। একবার আমার একটা রিং(রীতিমতো ওয়ার্কশপ থেকে অর্ডার দিয়ে বানানো) ম্যানহোলে পড়ে যাওয়ায় আমার খুবই ক্ষতি হয়েছিল। কেননা রডের তৈরি রিং দিয়ে এক্সপার্ট-রাই খেলত। এই রিং-এর ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য, চিকন আর একটা রড বা তার দিয়ে হ্যান্ডেল বানাতে হতো। খরচ একটু বেশি, তবে রিং-টা রাস্তায় চালানো বেশ আরামদায়ক ছিল।
আনটিশ খেলাটা খেলতাম মার্বেল দিয়ে। মাটিতে ছোট একটা গর্ত করে, দূর থেকে মার্বেল গড়িয়ে দেয়া হতো। যার মার্বেল গর্তের কাছাকাছি পৌঁছাত, সে প্রথম সুযোগ পেত অন্যর মার্বেলকে টার্গেট করার। প্রথমে গর্তে মার্বেল টা ফেলতে হতো। বুড়ো আঙ্গুল মাটিতে স্পর্শ করে মধ্যমা দিয়ে ছুড়ে দেয়া। তারপর গর্ত থেকে অন্যের মার্বেলকে টার্গেট করে মার্বেল ছুড়ে দেয়া। লাগাতে পারলে মার্বেলটা আমার। মার্বেল দিয়ে আরেকটা খেলা ছিল ‘গড়ানতিস’। এই খেলায় একসাথে অনেকগুলো মার্বেল জেতা যেত।
বম্ব বাস্তিং খেলাটা খেলতাম টেনিস বল দিয়ে। যার হাতে বল যেত, সে অন্যর গায়ে সর্বশক্তি দিয়ে বল ছুড়ে মারত। তবে কেও বলহাতের বাক্তিকে ছুয়ে দিলে, তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাওকে বলটা মারতে হতো। এটাও ছিল বেশ বিপদজনক। দেহের কোমল স্থানে লাগলে দম বেড়িয়ে যেত।
বউচি, বরফপানি, গোল্লাছুট, দারিয়াবান্ধা, এমনকি কুতকুতও খেলেছি।
–এরকম আরও বহু খেলা কি হারিয়ে গেলো!
[একটা খেলা খেলতে পারিনি, তা হচ্ছে চুপি চুপি চলন্ত রিকশার পিছনে ওঠে গিয়ে বসে পড়া। বিনা ভাড়ায় কিছু দূর গিয়ে আবার নেমে পড়া। তবে, রিকশার পেছনের চেইনের গিয়ার যথাস্থানে লাগলেই হোল। হাফ প্যান্ট পরিহিত অনেককেই এ খেলার কারণে ত্বরিত মুসলমানি করাতে দেখেছি। ]
আমি নিশ্চিত আরও বহু খেলার নাম এই পোষ্টে দেয়া হয় নি।
বাদ যাওয়া খেলার নামগুলো মনে পড়লে বলবেন কিন্তু.........
সুন্দর ও ঝরঝরে লেখার হাত আপনার। শেষের থার্ড ব্রাকেটবন্দী ভয়ংকর ঘটনা কখনো চোখের সামনে ঘটে নি। তবে পোস্টের বাকি অংশ স্মৃতি জাগানিয়া।
থার্ড ব্রাকেটের ঘটনা আমার সামনেই ঘটসিল, তাই ওই খেলায় আর আগাইতে সাহস পাইতাম না।
আপনার লেখাও আমার বেশ ভালো লাগে, বিশেষ করে শেষের আগের পোস্টটা অসাধারন। কাহিনীর যোগসূত্র ঘটিয়েছেন খুবই নিপুন হাতে। ধইন্ন আপনারে।
চমৎকার
সবগুলাই কমন পরছে... আমাদের সেই পুরোনো খেলাগুলো একটু সময় নিয়ে তুলে আনেন... ভালো একটা কাজ হবে কিন্ত...
টুটুল ভাই,
পুরানো খেলাগুলোর কথা ভেবেই এই পোস্ট-টা দেয়া।
মনে হচ্ছে আরও কিছু খেলার নাম বাদ পড়ে গেছে।
তবে চিন্তাটা মাথায় থাকলো। আপনাদের কোন খেলার নাম মনে পড়লে, খেলার নিয়ম কানুন সহ লিখবেন প্লিজ।
সুন্দর পোস্ট। খেলাগুলোর কয়েকটি ছোটবেলায় খেলেছি, শৈশবের মতো এগুলোও জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে।
থাঙ্কু…আপা।
ছোটকালে অনেক রকম খেলা খেলছি।
মনে আছে, বাটার প্লাস্টিকের জুতা পইরা কুতকুত খেলতাম।
মেয়েদের আরো বহুত রকমের খেলা খেলতে দেখতাম।
ওপেনটি বায়স্কোপ – টাইপএর খেলা বহুত খেলতে দেখসি।
নাম জানা নাই, এমন আরো কিছু খেলার নাম কন না......
আহা শৈশব!
~
এখোনও আছে তবে গ্রামে। শহরে এতো জায়গা কই এই খেলা গুলা খেলার।
গ্রামেও তো খেয়াল করলাম না, দুই একজনেরে জিগাইসিলাম।
হেরা কয়, পোলাপানের বলে এখন খেলার সময় নাই।
স্কুল, প্রাইভেট পড়া...ডিশ দেখা... আরো কত কিছু......
অনেকে তো খেলার নাম-ই জানে না।
চলন্ত রিকশার পেছনে উইঠা কত্তদিন ঝুলতে ঝুলতে এদিক সেদিক চইলা গেছি এই তো সেদিনও, অনার্সের টাইমে আমাদের কেমিস্ট্রি ম্যাডামের রিকশার পেছনে ঝুলতে ঝুলতে আমাদের প্রাইভেট পড়ার এলাকায় পৌছায়া গেসিলাম
কানামাছি, এককা - দোককা, টিলু একসপেরেস, রুমাল চোর, ফুল টোকা, বরফ পানি
সুন্দর পোস্ট।
ডাংগুলি খেলছি মনে আছে।
আপনে মারবেল খেলেন নাই কখনও?!
খেলি নাই মানে!
খুব খেলসি।
তয়, আন্তিস-এ ঠিক জুইত করতে পারতাম না।
গড়ানতিস বেশি খেলতাম। আর নাক্কি মুঠ।
মন্তব্য করুন