ইউজার লগইন

পিএইচডি অ্যাপলিকেশন ব্যর্থ হওয়ার অভিজ্ঞতা: পর্ব ১

অনেকেই যখন পিএইচডি করতে যায় তখন বেশ জ্ঞাননির্ভর পোস্ট দিয়ে ব্যাখ্যা করে কিভাবে কিভাবে সে পিএইচডি পেলো। এই জ্ঞানটা নিশ্চিতভাবেই খুব জরুরি। তাদের নিয়মগুলো, পরিশ্রমগুলো থেকে হবু পিএইচডি করতে আগ্রহীরা অনেক কিছু শেখে।
তবে আমার মনে হলো, আচ্ছা ব্যর্থ পিএইচডি অ্যাপলিকেন্টদের অভিজ্ঞতাও জানানো জরুরি। এটাও হবু আগ্রহীদের কাজে দেবে। যদিও যারা আমার মতো পিএইচডি ফান্ড পায় না তারা লজ্জায় বলেও না। আমি তাই ভাবলাম নিজেরটাও তুলে ধরি। ব্যর্থতার কথা কেউ তো বলে না। বলে সফলতার কথা। আমি না হয় ব্যর্থতার কথা বলেই যা যা শিখলাম সেটা জানালাম। বিষয়টা হলো, আমি চেষ্টাটাকে চালিয়ে যাইনি। কেন পস দিয়ে রেখেছি। সে ব্যাখ্যা দ্বিতীয় পর্বে বলবো। আপাতত গল্পটা শুরু করা যাক---

আমার আন্ডারগ্রেড করা যেদিন শেষ হয়। সেদিন কানে ধরে বলেছিলাম– আর পড়াশোনা করবো না। এই শেষ ডিগ্রি। বাসা থেকে জোর করে আমাকে প্রথমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে ভর্তি করানো হলো। আমি এক সেমিস্টার করে আর করি নাই। ততক্ষণে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে চাকরি হয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত নিলাম মাস্টার্স করলে অন্য সাবজেক্টে করবো, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নয়। এক বছর চাকরি করার পর সিদ্ধান্ত উপনীত হলাম, মাস্টার্স প্রয়োজন। নিজের ইউনিভার্সিটিতেই মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনে ভর্তি হলাম। মাস্টার্সে পড়ার সময় থেকেই রাজু স্যার (অধ্যাপক জাকির হোসেন রাজু) আমাকে নানাভাবে ওনার গবেষণাকর্মে যুক্ত করেন। আমাকে উৎসাহ দেন গবেষণায় মনোযোগ দেওয়ার। নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন। উনি যেহেতু চলচ্চিত্র গবেষক, এবং চলচ্চিত্র বিষয়ে বাংলাদেশে প্রথম পিএইচডি’র খেতাবটা রাজু স্যারের। তাই আমার আগ্রহের কমতি নেই ওনাকে নিয়ে। ওনার সামনে বসে থাকতেও আমি উৎসাহ বোধ করতাম। সেই থেকে শুরু স্যারের মতো কাজ করবো। যাইহোক মাস্টার্স শেষ হলো। রাজু স্যার শুধু একদিন বললেন, আপনি কি পিএইচডি করতে আগ্রহী? আমি শুধু বললাম– জ্বি স্যার। উনি তখন আমাকে নানাভাবে পরামর্শ দিলেন কী কী করতে হবে।

এরপর রাজু স্যার একদিন আমাকে একটি মেইল ফরওয়ার্ড করলেন। হংকং পিএইচডি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম। বললেন এখানে অ্যাপ্লাই করতে। আমি ঘেটেঘুটে একটা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করলাম। সেখানে একজন অধ্যাপককে আমার গবেষণার আগ্রহের বিষয় নিয়ে লিখলাম। খুব শর্ট একটা মেইল। এটাই ছিল আমার প্রথম কোনও পিএইচডি অ্যাটেম। তার আগে অনেকের কাছে শুনেছি অধ্যাপকরা নাকি খুব সহজে রিপ্লাই দেয় না। আশার কথা হলো, উনি দুইদিনের মধ্যেই রিপ্লাই দিলেন। বললেন, আমার মাস্টার্সের থিসিসটি ওনার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। আমার পিএইচডি’র আইডিয়াটা যেন ওনাকে পাঠাই মাত্র ৫০০ ওয়ার্ডে।

আমি তখন আবার রাজু স্যারের সঙ্গে কথা বললাম, আমার আরেক শিক্ষক আনোয়ার স্যারের সঙ্গে কথা বললাম, আমার ইউনিভার্সিটির বড় ভাই এখন ডেনমার্কের অ্যালবর্গ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললাম। সবার কাছে প্রশ্ন ছিল, মাত্র ৫০০ ওয়ার্ডে পুরো আইডিয়া কিভাবে লিখবো? আমার মাথায় ঢুকে না। তবুও শুরু করলাম সবার পরামর্শ নিয়ে। লেখার পর খালিদ ভাইকে পাঠালাম। তিনি আরও কিছু সাজেশন দিলেন। তবুও ৫০০ শব্দের মধ্যে রাখতে পারলাম না। হয়েছে ৬০০ শব্দের একটু বেশি। আমি অধ্যাপককে পাঠালাম। তিনি ফিরতি রিপ্লাই দিলেন। প্রথমেই আইডিয়াটির কোন কোন দিক ওনার পছন্দ হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা দিলেন। কোনটা পছন্দ হয় নাই সেটাও বললেন। কী কী সংযুক্ত হতে পারে সেটাও বললেন। তারপর বললেন, ঠিক করে আবার পাঠাও, তবে যদি এবার ৫০০ শব্দের ১ টি শব্দ বেশি হয় তবে আর আমি তোমার মেইলের রিপ্লাই দিব না। আমি আবার ওনার সাজেশন অনুযায়ী ঠিক করলাম। কোনোভাবেই ৫০০ শব্দে আসে না। অনেক কষ্টে কাট-ছাট করে ৫০০ শব্দে আনলাম। এই কাজটা করতে আমার ১৫ দিনের বেশি সময় লেগেছে। যাইহোক পাঠালাম, উনি খুব পছন্দ করলেন। তারচেয়ে বেশি খুশী হলেন, উনি যেভাবে দেখতে চেয়েছেন আমি ঠিক সেভাবেই আইডিয়া পেপারে সেটা তুলে ধরেছি। উনি তখন পরবর্তী স্টেপে গেলেন। বললেন, এবার তোমাকে আমি ১ মাস সময় দিলাম। এই আইডিয়ার ওপর ভিত্তি করে প্রপোজাল লেখা শুরু করো। সর্বোচ্চ ৩০০০ ওয়ার্ড। সেখানে গুরুত্ব দেবে রিসার্চ ম্যাথোডোলজি এবং লিটারেচার রিভিউয়ের ওপর।

আমি যেন সোনার হরিণ হাতে পেলাম। মনে হলো এই সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না। আমি সকালে অফিস করি। রাতে বাসায় গিয়েই পড়তে বসি। এভাবে সময় যাচ্ছে। হঠাৎ একদিন দেখি অধ্যাপক মেইল করেছেন। জানতে চেয়েছেন আমার কাজ কতটুকু অগ্রসর হলো। সঙ্গে দুটি পেপারও পাঠিয়েছেন। বলেছেন, লিটারেচার রিভিউয়ে ওই দুটি পেপার কাজে লাগতে পারে। পড়ে দেখলাম কোনও কাজেই আসবে না। তবুও আবার পড়লাম। কোনোভাবেই বুঝলাম না। এটা চীনের প্রাসপেকটিভে লেখা পেপার। আমার বিষয় বাংলাদেশ কেন্দ্রিক। কোনোভাবেই আমি মানে বুঝে পাই না। পরে আবার ওনাকে মেইল করলাম, এই পেপারের কি কি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সেটা জানালাম। সেটাও উল্লেখ করলাম– আমার গবেষণায় ঠিক কোথায় এটা কাজে লাগবে সেটা বোঝে আসছে না। তিনি তখন সুন্দর একটা মেইল করলেন, বললেন আমি জানি। তোমার চিন্তাটাকে ব্রড করার জন্য পাঠিয়েছি। এটা রেফারেন্সে ইউজ করতেই হবে এমন কিছু তো বলেনি।

যাইহোক ১ মাসের মধ্যে প্রোপোজাল পাঠালাম। উনি ১ সপ্তাহ পর খুব প্রশংসা করে মেইল করলেন। সঙ্গে বললেন, তোমাকে আমি পিএইচডি স্টুডেন্ট হিসেবে অ্যাকসেপ্ট করবো। তোমার আগ্রহ আছে কাজ করার। আর আমার মনে হয়েছে তুমি আমার টিউনিংটা ধরতে পেরেছো।

তারপর বললেন, এবার ফেলোশিপের জন্য অ্যাপ্লাই করো।

প্রথম পর্ব থেকে শিক্ষা:

যারা পিএইচডি করতে চান। তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো যে অধ্যাপককে আপনি মেইল করছেন তার পালস বোঝা। তিনি কী চান। আপনার প্রোপোজালে কী কী বিষয় উল্লেখ করতে হবে সেটার যদি কোনও গাইডলাইন তিনি দেন তবে সেটা ফলো করুন।

দ্বিতীয়ত, কিছু না বুঝলে দ্রুতই তাকে জানাবেন না যে আপনি বুঝে উঠতে পারছেন না। বরং বার বার ট্রাই করুন। ট্রাই করেও যদি না বোঝেন তাহলে অধ্যাপককে যখন মেইল করবেন তখন তাকে বোঝাতে হবে যে আপনি চেষ্টা করেছেন।

শেষ নিজের আইডিয়াকে সহজ ভাষায় অল্প কথায় লিখতে শিখুন। এটা একদিনে পেরে ওঠার বিষয় নয়। এটা বহুদিনের চেষ্টার ফসল।

------------------------------------------------

আপনারা হয়তো ভাবছেন, অধ্যাপক খুশ তো পিএইচডি নিশ্চিত হলো না কেন? বিষয়টা হলো অধ্যাপক ম্যানেজ করা হলো পিএইচডির প্রথম ধাপ পার করা। এরও পরবর্তী বহু ধাপ বাকি আছে। সে ধাপের বিষয়গুলো এবং আরও কোন কোন দেশের অধ্যাপকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যর্থ হয়ে কী কী শিখেছি সেটাও লিখবো।

দ্বিতীয় পর্ব রেডি হচ্ছে। Big smile Steve

পোস্টটি ১২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


ভাল লাগলো আপনের অভিজ্ঞতা পড়তে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। আসলেই ফান্ড ম্যানেজ করাটা একটা কঠিন কাজ। তবে অসম্ভব কিন্তু নয় Smile

নুরুন্নবী চৌধুরী (হাছিব)'s picture


দারুন তো! পরের পর্বের অপেক্ষায়.. Smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.