বাংলাদেশের বর্তমান নারী এবং সামাজিক অবক্ষয়!
কেসলারের ল’অব কোয়েন্সিডেন্ট বলে একটি কথা আছে। এই ল’ যা বলতে চায় তা হলো, পৃথিবীতে কোন একটি জায়গায় একই ঘটনা হঠাৎ করে বার বার ঘটতে থাকে। এই ল’কে অনেকে বলেন, দিস ইজ রেয়ার ল’ অব কোয়েন্সিডেন্ট। অর্থাৎ এই ল’ সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না।
বাংলাদেশে বিগত কয়েকদিন যাবত যে এই ল’অব কোয়েন্সিডেন্ট ঘটছে; তা কি কেউ লক্ষ্য করেছেন? একই ঘটনা কিংবা বলতে পারেন একই বিষয়ভিত্তিক ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। কিছুদিন আগে গুলশানে এক দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করেছে দুই ঘাতক। বিষয় ছিল প্রেম! ২৪ মার্চ গুলশানের কালাচাঁদপুরের বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রধারী দুই তরুণ এই দম্পতিকে গুলি করে। নিহত সাদেকুর রহমানের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এলাকার বখাটে ছেলে রুবেল। কিন্তু সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার অপরাধে নিহত হতে হলো সাদেকুর রহমানকে ও তার স্ত্রীকে।
আবার, চট্টগ্রামে একটি মেয়ে পাখি শিকারীদের পাখি শিকার করতে বারণ করায় নিজেই শিকার হয় গুলির। ঘাতকরা তাকে বলেই গুলিটা করে। তাকে বলা হয়, আয় তাইলে তোরেই শিকার করি। এখানে হয়তো বিষয় প্রেম নয়, তবে এখানে বিষয় হচ্ছে, নারীর উপর হামলা। প্রাণে মেয়েটি বেঁচে গেছে ঠিকই কিন্তু নষ্ট হয়েছে তার অমূল্য একটি চোখ।
থেমে থাকে ঘটনার চক্র। ২৬মার্চ রহস্যজনকভাবে বান্ধবীকে ধারালো চাপাটি দিয়ে আঘাত করলো আশরাফ নামে এক যুবক।। প্রেমিকা ইশিকার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হয় শুধুমাত্র অর্থের কারণে। তাই বান্ধবী এবং বান্ধবীর পরিবারকে জিম্মি করে ২০ লাখ টাকা দাবি করে ছেলেটি। তারপর পুরো পরিবারকে আকষ্মাত হামলা করে আশরাফ।
গতকাল ৬মার্চ ইলোরা নামে এক স্কুল ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। কারণ হচ্ছে, উত্তক্ত করছে বখাটেদের দল।
সর্বশেষ আজকে পত্রিকায় দেখলাম, প্রেমে সাড়া না পেয়ে বখাটেদের দেওয়া আগুন নিয়ে পুকুরে ঝাপ দিয়েও বাচতে পারলো না স্কুল ছাত্রী পিংকি।
এধরনের ঘটনা অনেক আছে। হচ্ছে। যেগুলো মিডিয়া কাভারেজ পাচ্ছে সেগুলো হয়তো আমাদের চোখে আসছে। কিন্তু অন্ধকারে ঘটছে আরও ঘটনা। নারীরা চাঁদে পর্যন্ত চলে গেছে। তাঁরা প্রমাণ করতে পেরেছে তারা পুরুষের সমকক্ষ। কিন্তু তারপরও কোথায় যেনো তারা পিছিয়ে রয়েছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি ৫১ মিনিটে একটি করে মেয়ে ছেলেদের দ্বারা উত্তক্ততার শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে ৩২ ভাগ নারী হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া। এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে বাংলাদেশের অবস্থা কি করুণ পরিণতিতে পৌছাচ্ছে।
পুরুষরাও যে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছে না তাও কিন্তু নয়। যেমন, ১ এপ্রিল দৈনিক সমকালে দেখলাম, সিলেটে এক স্ত্রীর ত্রিভুজ প্রেমের বলি হলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ হোসেন মন্টু নামে এক ব্যক্তি। স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা হওয়ার কারণে পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করা হলো।
এছাড়াও ২৬মার্চ আশরাফের ঘটনাটির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সামাজিকভাবে ইশিকার পরিবারের তুলনায় আশরাফ অনেক গরীব। এমনকি জমি-জমা বিক্রি করে আশরাফকে লন্ডনেও পাঠায় তার গরীব পিতা। কিন্তু ইশিকার ভালোবাসার টানে সে ফেরত আসে। অবশেষে ভাগ্যের কাছে তার এই পরিণতি।
ঘটনার গভীরতায় যাই থাকুক না কেন! আসল কথা হচ্ছে ধীরে ধীরে মানুষের মনুষত্ববোধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একবাক্যে বলতে গেলে মানুষগুলো সব জানোয়ার হয়ে যাচ্ছে। যত আইন পরিবর্তন কিংবা যত অধিকার আন্দোলন করি না কেন তাতে কোন লাভ নেই। জানোয়ারদের জন্য আইন বা আন্দোলন করে খুব একটা সুবিধা করতে যাবে না।
ইভটিজিং ছাড়াও এই দেশে যে হারে পরকিয়া প্রেম বেড়েই চলেছে তাতে তো সামাজিক অবক্ষয়ও সর্বনিম্নে পৌছে গেছে। কতগুলো পরিবার এই পরকীয়া প্রেমের শিকার হচ্ছে তা পরিসংখ্যান দেখলে হয়তো রীতিমত ভড়কে যেতে হবে।
একদম যদি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে যাই তাহলে ব্লগে না আলোচনা করাটাও আমার পারিবারিক বাধা। আমার মতো আরও কত পরিবার আছে যারা মান-সম্মানের ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। ভেতরে আগুন জলে কিন্তু মুখে মিষ্টি হাসি। সে আগুনের ধোয়াও কেউ অনুভব করতে পারে না। পরিবারের একটাই কথা, সাংবাদিক আসবে...নানান ধরনের প্রশ্ন করবে....আদালতে যেতে হবে.....উকিলের বিছরি বিছরি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে..... অন্যকে উলঙ্গ করতে গিয়ে নিজের ব্যক্তিত্বকেও উলঙ্গ করতে হবে.... এই চাপে সহ্য করতে হবে.... পাল্টা মিথ্যা অভিযোগের জবাব দিতে হবে..... এতো সব আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের দারা হবে না।
আমার পরিবারের মতো এই মতামত হয়তো বাংলাদেশের হাজার পরিবারের। কত মা, কত বাবা, কত ভাই দেখছে একটি মেয়ের স্বপ্ন ধ্বংসের করুণ চিত্র তা হয়তো রয়ে যাবে সব সময় অন্ধকারে।
তাই সুপ্রিয় ব্লগারবন্ধুদের বলতে চাই, এক কালো ব্যাধি আকড়ে ধরছে আমাদের সমাজকে। প্রতিদিনের চিত্র বলছে সে কথা। সন্ত্রাস কিংবা চাঁদাবাজ কিংবা ছাত্রলীগ তান্ডব কিংবা রাজাকার ইস্যূ সব কিছুর উর্ধে এই সমাজ। সমাজের ভেতরে কুরে কুরে নোংরা কীট খেয়ে ফেলছে অনেকগুলো পরিবারকে। রক্ষা করতে হবে......না হলে, সেই কেসলারের ল’অব কোয়েন্সিডেন্ট ঘটতেই থাকবে। রেয়ার কেস স্ট্যাডিতে থেকে যাবে বাংলাদেশের নাম।





কিন্তু সমাধান কি?
সমাধান নাই।
সমাধান নাই।
চলতে থাকবে এভাবে?
অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার এই আইনী দুর্বলতা, অপরাধ প্রবনতাকে প্রবল করে। যেকোন ধরনের অপরাধ পরকীয়া থেকে কারো গায়ে আগুন দেয়া।
কথা ঠিক কইছেন....
সমাজে সুস্থ বিনোদন প্রয়োজন। মননশীলতার চর্চাই ঠেকাতে পারে অবক্ষয়। এর জন্য পরিবারগুলোকে আরো শক্তিশালী হতে হবে। রাষ্ট্রেরও অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার।
আপনার বিশ্লেষণ ভালো লাগলো
আপনার বিশ্লেষণের পর বেশ কিছু দিন সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলো। যার মধ্যে অন্যতম ছিলো বখাটেদের ধরে ধরে কান ধরে উঠ-বোস করানো। কিছু বখাটেদের পত্রিকায় ছবিও ছাপা হয়েছে। এরপরে এখন এ কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।
আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, সরকার কিছু না করলে বিষয়টা একভাবে এগোয়। কিন্তু কোন কাজ হাতে নিয়ে সেটা মধ্য পথে বন্ধ করে দিলে সেটা কী কখনো সুফল নিয়ে আসতে পারে?
আপনার লেখায় ও মন্তব্যে আছে সমস্যার সমাধান নেই। আমি কিন্তু বিশ্বাস করি সমাধান আছে। অপরাধীর চেয়ে নিরাপরাধের শক্তি সবসময়ই বেশি। কিন্তু তারা আফ্রিকার সভ্যতার আলো না পৌছানো মানব জাতির মতো। নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। সমাধান লুকিয়ে আছে সচেতনতায়।
মন্তব্য করুন