৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর
আমার মনে হয়, ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনটা একটা দিক থেকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। '৯০-এর পর এই পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে ('৯৬-এর তামাশার নির্বাচন ছাড়া) তাতে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিই তাদের পরাজয়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারও যদি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতো, তবে আওয়ামীলীগ হয়তো পরাজিত হতো। কিন্তু তার পরে ঘটনা কী হতো। ১৮ দলীয় জোট নির্বাচিত হলে, বিএনপির ঘনিষ্ঠ সহযোগী জামায়াতের কারণে পাকিস্তান ইন্টিলিজেন্স আইএসআই-র নির্দেশে যুদ্ধাপরাধীদের 'শূয়রের খোয়াড়' থেকে মুক্ত করে দেবেন বেগম খালেদা জিয়া । (আইএসআই-এর তৎকালীন প্রধান সেদেশের সুপ্রীম কোর্টে বলেছেন, ১৯৯১-এর নির্বাচনে তারা খালেদা জিয়ার বিএনপি-কে এক কোটি টাকার উপর দিয়েছে।)
তদুপরি, বর্তমানে আমরা দেখছি, খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে! ফাঁসির আদেশ হয়েছে তার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর! আর শিগগিরই যুদ্ধাপরাধের রায় আসবে তার আরেক কেবিনেট মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর। অতএব, এই সব রায় কার্যকর হলে খালেদা জিয়া ও তার বিএনপির ইজ্জতের উপর সফেদ হামলা হবে, তা বলাই বাহুল্য। বর্তমান সরকার যেমন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তার মন্ত্রীদের হলফনামার সম্পদের বিবরণী প্রকাশ বন্ধে অশুভ তৎপরতা শুরু করেছেন, খালেদা জিয়াও তদ্রুপ তার এবং তার দলের মান-ইজ্জত রক্ষার্থে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে নিশ্চিত বানচাল করবেন। কেননা, জামায়াত বিএনপির সাথে থাকাটাকে তারা তাদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করে।
গত ৪২ বছর ধরে যে যুদ্ধাপরাধীদের খোয়াড়ে ঢোকাতে জাতি ব্যর্থ হয়েছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীরা এখন শেষমেশ 'শূয়রের খোয়াড়'-এ ঠাঁই পেয়েছে গত নির্বাচনে জনগণের আওয়ামীলীগকে ম্যান্ডেট দেবার কারণেই। খালেদা জিয়ার স্বচ্ছ আন্তর্জাতিক মানের বিচারের ফাঁদে পড়ে তার রাজবন্দী ('রাজাকার যে বন্দী', প্রকারান্তরে) এই যুদ্ধাপরাধীরা যদি সুপ্রীম কোর্ট থেকে সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বের হয়ে আসে, তবে কি জাতি হিসেবে আমরা যে গ্লানিমুক্তি বা কলঙ্কমুক্তির পথে আগাচ্ছি, তা কি লজ্জায় থমকে দাঁড়াবে না, মিথ্যে প্রমাণিত হবে না?
তবে তাহলে তিরিশ লক্ষ শহীদান এবং মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই স্বাধীনতার কাছে আমরা কি আরো একবার জাতি হিসেবে বেঈমান বলে প্রমাণিত হবো না? '৭১-এর শহীদ এবং বীরাঙ্গনাদের আত্মাকে আবারও অশান্ত করে তুলবো না?
কথা উঠেছে, সবদলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হওয়ায় গণতন্ত্রের গতি ব্যাহত হবে ৫ই জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচনে। কথাটার মধ্যে যতটুকু সত্য লুকিয়ে আছে, তার চেয়ে বেশি সত্য বোধ হয় জনগণের কাছেই সুবিধৃত হয়ে আছে। সরকারগুলোর জনগণের নিজস্ব মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানের সম্পূর্ণ আন্তরিকতার পরিবর্তে দূর্নীতি থেকে অধিকতর দুর্নীতির দিকে আরো ৫ বছরের জন্য যাত্রা করাটা নিশ্চিত করবে। কেননা, এই দুই দলই দুর্নীতিতে “কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।” সেক্ষেত্রে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে এই মূহুর্তে পুনরায় নির্বাচিত হতে যাওয়া আওয়ামী সরকারকে আমি ততদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় দেখতে চাই, যতদিনে বেশিরভাগ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয়ে যাবে। (১/১১-এর সরকারকেও জনগণ এক বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দু'বছর ক্ষমতায় রেখেছে।) এরপরের আন্দোলনের এ্যাজেন্ডা বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্রতা পাক সেটাই কামনা করবো।
আমাদের সামনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং তার রায় কার্যকর করার যে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে গত ৪২ বছরের নিভৃত কান্না, রক্তক্ষরণের পর, তার চূড়ান্ত সফলতা না আসা পর্যন্ত বিচার এবং রায় কার্যকরের প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটুক তা স্বাধীনতার পক্ষের দেশপ্রেমিক জনগণের কেউ চায় না। মনে রাখা উচিত, এই শহীদান এবং বীরাঙ্গনাদের সম্ভ্রমের বিনিময়েই আমরা বাংলাদেশ নামক এই ভূ-খন্ডটা পেয়েছি। সুতরাং তাদের দীর্ঘ যুগের অশান্ত আত্মার শান্তি প্রদানই আমাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এ থেকে ব্যত্যয় ঘটা আমাদের জন্য কোনক্রমেই সুখের নয়, আনন্দের নয়, শান্তির তো নয়ই! বাংলাদেশ শুধু গ্লানি মুক্ত নয়, অভিশাপ মুক্তও হতে চায়।।
বাংলাদেশ শুধু গ্লানি মুক্ত নয়, অভিশাপ মুক্তও হতে চায়।আমরা সাধারন জনগন চাই একটু শান্তি।। আর চাই দেশ টা যেন কলঙ্ক মুক্ত হয়।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
কি জানি সদা শংকা সদা ভয় কি হয় কি হয়।
ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
বিএনপিপন্থীদের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর নাই। জামাতের সঙ্গে তাদের যে কি আঠা, বোঝা বড় দায়।
হুম, এটাই এখনকার সমস্যা। ভাল থাকবেন।
মন্তব্য করুন