প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন এবং জামায়াত শিবিরের অপপ্রচার
আজকের (১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩) দৈনিক ইনকিলাবের ইন্টারনেট সংস্করণে “ফুঁসে উঠেছে তৌহিদী জনতা” শিরোনামের রিপোর্টটি পড়লাম। রিপোর্টটির মূল বক্তব্য হচ্ছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম, আমাদের প্রিয় নবী (সাং), ইসলামী অনুশাসন ইত্যাদির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে। শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের ইসলামের শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। জামায়াত শিবির এবং বিএনপি যখন রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন তারা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের নিরপেক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি শাহবাগের আন্দোলনের সাথে ধর্মের কোন বিরোধিতা নেই। ইসলাম আমাদের প্রাণের ধর্ম। বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান খুবই খোদাভীরু, ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যেই আমাদের বেড়ে ওঠা। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক কোন বক্তৃতা বা বিবৃতি দেয়া হয়নি। আপনারা একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন, গত দুই সপ্তাহ যাবৎ কোনপ্রকার অঘটন ছাড়াই শাহবাগের আন্দোলন এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে হাজার হাজার ছেলে মেয়ে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ৪১ বছরের কলঙ্ক থেকে দেশকে মুক্ত করার আন্দোলন করছে। কোন বেয়াল্লাপনা নেই, নেই কোন অশ্লীলতা। প্রজন্ম চত্বর থেকে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার বক্তব্য প্রদান করা হয়নি। অথচ জামায়াত শিবির রাজাকারের দল আমাদের ধর্মভীরু জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের আপামর জনগণের নিকট আবেদন আপনারা জামাত শিবিরের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াত ইসলামীসহ যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের বিরোধিতা করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ভারতের দালাল হিসাবে আখ্যায়িত করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। জামায়াত শিবিরের ভন্ড রাজনীতিবিদরা যখন রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে তখনই তারা ধর্মের ধোয়া তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছে।
বিশ্বে প্রায় ৫১টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে যেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫% থেকে ৯৯% ইসলাম ধর্মাবলম্বী। ৫১টি দেশের মধ্যে হাতে গোনা ৬টি দেশে যেমনঃ পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, ইয়েমেন, মৌরিতানিয়া ইসলামী প্রজাতন্ত্র চালু রয়েছে। অবশিষ্ট ৪৫টি দেশের মধ্যে ১৭টি দেশ সেক্যুলারিজম ষ্টেট যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর বাংলাদেশ তো ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই স্বাধীন হয়েছে। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থ সকল ধর্মের প্রতি সমান দৃষ্টি। কোন ধর্মের প্রতি বৈরী আচরণ করা যাবে না। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক স্বাধীনভাবে স্ব স্ব ধর্ম পালন করতে পারবে। সেক্যুলারিজম অর্থ হলো রাষ্ট্র থেকে ধর্মশালা বা ধর্মীয় উপাশনালয় আলাদা থাকবে। রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের কোন সংঘাত নেই। রাজনীতি এবং ধর্মনীতি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কারণ একটি রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। এমনকি যারা কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না, যাদেরকে ধর্মবিশ্বাসীরা নাস্তিক বলে তারাও রাষ্ট্রের নাগরিক। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল ধর্মের বা বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্ব নাম জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ) বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছে। পাকিস্তানের নাগরিক সৈয়দ আবুল আলা মুওদুদী সূচিত জামায়াতে ইসলামী হিন্দ যা ১৯৪১ সালের ২৬শে আগষ্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই রাজনৈতিক দলটির কার্যক্রম বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধ করা হয়। খোদ পাকিস্তান সরকার ১৯৬৪ সালে এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ সালে জামায়াতের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী জিয়াউর রহমানের সরকার ১৯৭৬ সালের আগষ্ট মাসে সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অনুমতি দিয়ে এক অধ্যাদেশ জারি করে। এসময় ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে জামায়াত ইসলামী যুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের বিরোধিতাকারী রাজাকার আল-বদর আল শামস এর প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ শাখার কার্যক্রম পুরোমাত্রায় শুরু হয়।
জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু হওয়ার পর থেকেই এরা এককভাবে বাংলাদেশের জনগণের সামনে দাঁড়ানোর সাহস পায়নি। এছাড়া তাদের সেই শক্তিও ছিল না। কখনো আওয়ামীলীগ কখনো বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ আন্দোলন করেছে। এদের একক কোন শক্তি নেই। এরা পরগাছা। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেখেছি বাংলাদেশে বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানের মতো দুধর্ষ জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল। এরা ক্ষমতা গ্রহণের পর ধর্মের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি বার বার আঘাত করেছে। যশোরের উদিচী হামলা, রমনা বটমুলে বোমা বিস্ফোরণ, সারাদেশে ৫০০টির বেশি সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ, বঙ্গবন্ধু এভ্যিন্যুতে গ্রেনেট হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র আটক ইত্যাদি ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। এরা ধর্মের ধোয়া তুলে মানুষ খুনের রাজনীতি করে। আর যখনই কোন সংকটে পড়ে তখনই মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে সুরসুরি দেয়। কিন্তু আর নয়। বাংলাদেশের জনগণ জামাত শিবিরের অপরাজনীতি বুঝতে পেরেছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদেরকে আর বেকুব বানাতে পারবে না। জামাত শিবির রাজাকারের দল সাবধান হয়ে যা। বাংলাদেশের জনগণ তোদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ধর্মের নামে অপরাজনীতি এবং মানুষ খুনের রাজনীতি বন্ধ কর। নইলে বাংলাদেশের আপামর জনগণকে সাথে নিয়ে তোদের মোকাবিলা করা হবে।
জামাত শিবিরের সকল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন সফল হোক সার্থক হোক।
জামাত শিবির রাজাকার নিপাত যাক ।
শুভ্র সরকার, জাপান।
জামাত শিবির রাজাকার,
এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়!
জামাত শিবির রাজাকার নিপাত যাক ।
মন্তব্য করুন