হঠাৎ শ্রীমংগল
সাজ্জাদ ভাই বলল, চল শ্রীমংগল যাই । কোন কথা নাই ব্যাগ গুছিয়ে তৈরী হয়ে নিলাম। ৩ জুন ভোর ছয়টায় গাড়ী ধরতে হবে। তাই ভোর পাচটায় সাজ্জাদ ভাই এর ফোন গাড়ী নিয়ে আসতেছি বাসা থেকে বের হও। কোথায় থাকবো , কোথায় যাবো কিছুই জানি না, সাজ্জাদ ভাই বলল যে রাস্তায় যেতে যেতে বিস্তারিত বলবো।
রাস্তার বিড়ম্বনা-
সকাল ৬ টায় সায়দাবাদ থেকে হানিফ এর বাস শ্রীমংগল এর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলো এবং রাস্তার জ্যাম এর কারনে ফ্লাই ওভার পার হতে ৮ টা ও ভুলতা পার হতে ৯:৩০ বেজে গেল অতপর শমশেরনগর গিয়ে গাড়ীর চাকা পাংচার হল, সময় তখন দুপুর ১২:৩০ টা। চাকা ঠিক করে দুপুর ২ টার দিকে শ্রীমংগল এবং সেখান হতে সিএনজি নিয়ে আমাদের গন্তব্য শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ২৩ কি.মি দুরে শহরস্থী বাজার (পাচাউন) এর কাছে ক্যাপ্টেনস হাউজে ।
আথিতিয়তা গ্রহন-
দেওয়ান গিয়াস আহমেদ সাহেব জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসাবে কাজ করতেন তাই তার বাড়ীটি এলাকায় ক্যাপ্টেনস হাউজ নামে পরিচিত। আমরা দুপুর ৩ টা নাগাদ ক্যাপ্টেন সাহেবের আন্তরিক আথিতিয়তা গ্রহন করলাম । পৌছাঁনোর সাথে সাথে তাজা লেবুর সরবত ও হালকা নাস্তা দেয়া হল। দুপুরের খাবারের অনেক আয়োজন নদীর তাজা মাছ, মাংস, বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভর্তা,ভাজি, শুটকী মাছ, ডাল ইত্যাদি ।ভর পেট খাবার পর সামান্য বিশ্রাম তবে খারাপ লাগলো একারণে যে, ক্যাপ্টেন সাহেব আমাদের জন্য না খেয়ে এতক্ষণ বসে ছিলেন ।
এলাকার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ২৩ কি.মি দুরে শহরস্থী বাজার (পাচাউন)এর কাছে ক্যাপ্টেনস হাউজ , যা দিনারপুর চা বাগান এর সাথে অবস্থিত। পার্শ্বে সাইফ চা বাগান এবং মির্জাপুর চা বাগান ।এই তিন চা বাগান মিলে বিশাল এলাকা । কিছু দুরে রয়েছে একটি নদী যা হাইল হাওড়ের সাথ সংযুক্ত। দিগন্ত বৃস্তিত ক্ষেত আর মাঠ যা বর্ষায় ভয়ন্কর রূপ ধারন করে। গিয়াস আহমেদ সাহেব এর পূর্বপুরুষেরা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী ও প্রচুর জমি-জমার মালিক ছিলেন।গিয়াস সাহেব নিজেও বেশ জনপ্রিয় তা বোঝা যায় তার সাথে রাস্তায় বের হয়ে। বর্তমানে গিয়াস সাহেব এর নিজেরই ৮০ বিঘার মতো জমি/পুকুর/ক্ষেত/বাগান রয়েছে। বাগানে বিভিন্ন ফল-ফলাদীর গাছ রয়েছে আম/জাম/কাঠাল/লটকন/তেতুঁল/লেবু। রয়েছে বিশাল সব সেগুন গাছ। বিকালে প্রচুর জাম, লটকন গাছ থেকে পাড়া হল । গিয়াস সাহেব যে একজন সজ্জন ব্যক্তি তা বোঝা গেল, গাছের জাম/লটকন সামান্য কিছু রেখে বাকিটা এলাকার শিশু-কিশোরদের মাঝে বিতরন করে দেয়াতে। বাচ্চাদের আনন্দ দেখে আমরাও অনেক আনন্দ পেলাম, শুনলাম সব সময়ই নাকি এমনটি হয়ে থাকে।
লুকানো সৌন্দর্য্য-
দিনারপুর চা বাগানের সাথে গিয়াস সাহেব এর বাড়ী এবং চা বাগানের মাঝে মাঝে উনার বেশ কিছু পুকুর আর জমি/ক্ষেত রয়েছে। আমাদের নিয়ে চললেন চা বাগান সহ তা দেখাতে । দেখলাম চমৎকার সাজানো চা বাগান, বেশ বড় বড় কয়েকটি সুন্দর পুকুর, পুকুরে বেশ মাছ আছে বোঝা যায়। চারদিক নিশ্চুপ, নিরিবিলি, ইচ্ছা করে পুকুরে বড়শী ফেলে সারাটা দিন কাটিয়ে দেই। চা বাগানের বেশ কিছুটা ভিতরে ২০০৭ সালে নির্মিত বড়ছড়া নামক একটি সুইস গেট রয়েছে। যেখানে অবিরাম স্বচ্ছ পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। পড়ন্ত বিকেলে বাগানের শ্রমিকেরা বরশী দিয়ে টপাটপ পুঁটি,টেংরা মাছ ধরছে। আমরাও তাদের সাথে যোগ দিলাম মাছ শিকারে। সুইস গেট এর ছড়া দিয়ে হাঁটা শুরু করলে আর থামতে ইচ্ছা করবে না, চা-বাগান, রাবার বাগান আর বনের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা এই ছড়ার সৌর্ন্দয অতুলনীয়। চারদিকে র্নিঝুম, আলো-ছায়ার খেলা, বয়ে চলা পানির কুলকুল শব্দ আর মাঝে মাঝে পাখির কলতানসহ বনের অজানা শব্দ। সে এক অসাধারণ অর্বণনীয় সুন্দর । যা না দেখলে শুধু ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
রাতে খাবার পর পুকুর ঘাট এবং বাসার সামনের মাঠে রাত পযর্ন্ত গল্প চলল।শুনলাম এই জায়গাটা নিয়ে ক্যাপ্টেন সাহেবের স্বপ্নের কথা। কিভাবে জায়গাটাকে পযটন বান্ধব করা যায়, তার বাড়ীটাকে কিভাবে রিসোট এ রূপান্তর করা যায় সেই পরিকল্পনা। পাশাপাশি চাঁদ বিহীন আকাশে তারার মেলায়ে এ্যাস্ট্রোনমি চর্চা । গভীর রাতে ঘন ঝুম বৃষ্টির গান শুনতে শুনতে ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ।
পরিশেষে-
পরদিন ঝকঝকে সকাল। বাড়ীর লাগোয়া মাঠের গাছে কাঠবিড়ালীর দুরন্ত ছুটোছুটি আর গৃহপালিত প্রানীর কলতান ছেড়ে আবার শহরে ফিরে আসা। সারাদিন লাউয়াছড়া, সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা এবং মাধবপুর লেক ভ্রমন। ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন গিয়াসকে যার আন্তরিক আমাদের মুগ্ধ করেছে। ক্যাপ্টেন সাহেবের স্বপ্ন পূর্ণ হোক সেই শুভ কামনা রইল।
বিঃদ্রঃ ছবি মোবাইলে তোলা তাই ছবির কোয়ালিটি তত ভালো নয়।
বেশ ভালো ট্যুর দিলেন!
মন্তব্য করুন