দিন প্রতিদিন বইমেলায়--(৬)
কাল মেলায় ছিলাম। উদ্দেশ্যবিহীন, কেনাকাটাহীন। হিল্লোল দা এর সাথে দেখা, কথা হলো- উনার সাথে থাকা লোকদের বলছে-- আমরা বন্ধুর বড় ব্লগার শান্ত মিয়া, বইমেলা নিয়ে লিখছে নিয়ম করে। আমি অবাক হলাম এইভেবে যে- এই ব্লগ কেউ কেউ এখনো পড়ে। এবারের মেলাটা ভালো যাচ্ছে না। কারন অর্থনৈতিক, সেই কারনে পছন্দের বই কেনা হচ্ছে না। বইয়ের দামও বেশী। নতুন নতুন অনেক বইয়ের নাম শুনি, গত বছর হলেও কিনতাম চোখ বন্ধ করে। এবার আর সেই বিলাসীতার সুযোগ নাই। আশা করছি মনে মনে যে লিষ্টটা আছে, তা এই বইমেলায় কিনে ফেলবো। না পারলে আর কি? জান তো দেয়া যাবে না। আমি সারা বছর জুড়েই টুকটাক বই কিনি, বন্ধুদের থেকে ধার নিই, এবার কেনা হলো না তাতে কি আর করা যাবে? মাঝে মধ্যে মুদ্রার ওপিঠ ও দেখতে হয়। আগে যে আমি রিকশা ছাড়া চলাফেরা করি নি, তাকে এখন যেতে হয় বাসে। আসার সময় দাঁড়িয়ে। চাপাচাপি ঠাসাঠাসি ঘামের গন্ধ নাক মুখ বন্ধ করে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলি বাসে। মাঝে মধ্যে মন উদাস থাকলে হেঁটে ফিরি। বাসে উঠলে অবশ্য বাংলাদেশ খুজে পাই একটুকরো। ভালো ভালো জামাকাপড় পড়া তরুন সমাজ ভাড়া মেরে খায়। অনেকে হাফ দেয়। হাতে যে গ্যাজেট গিয়ার দেখি সেই অনুসারে ন্যায্য ভাড়াটা দেয়া খুবই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু দেয় না এটাই ভাব। আর স্টুডেন্ট ভাড়া সেতো আরেক মজার। অনেক স্টুডেন্টদের আজকাল যত টাকা ওয়ালেটে থাকে, অনেক ভালো ভালো ভদ্রলোকদেরও সেইটাকা পকেটে থাকে না। তাও এইটাই ভাব, যে ভাড়া কম দিবো, পারলে কিছু কর। এদিকে বাস চালক হেল্পাররাও ছেঁচরা, যতক্ষণ না পুরো বাসে লোকে লোকারন্য না হচ্ছে তার আগে তারা বাস চালাবে গ্রামীনের টুজি ইন্টারনেটের গতিতে।
বইমেলায় গিয়ে এখন বই দেখি প্রচুর। কেনাকাটাও হচ্ছে অনেকের। মেলায় অনেক মানুষ এখনো আসেন লিষ্ট বানিয়ে। বাজারের ফর্দের মতো গোটা গোটা অক্ষরে লেখা থাকে বই আর প্রকাশনার নাম । অনেকে আবার মুখস্থ করে আসে নাম। এরকম এক ভদ্রলোকের সাথে দেখা হলো, তিনি খুঁজছেন প্রথমার স্টল, দেখিয়ে দিলাম, আবার আসলেন শ্রাবণ খুজতে তাও দেখিয়ে দিলাম। তারপর আবার দেখা হলো জাগৃতির সামনে, খুজছেন এবার কি, প্রশ্ন রাখলাম? উনি খুশী মনে আমার সাথে পরিচয় হলেন, খোজ খবর নিলেন। বললেন আমাকে কিছু খাওয়াতে চান। আমি বললাম আমি বাইরে কিছু খাই না। বাংলা একাডমীর স্টলের সামনে দেখি অনেকে ডিকশেনারী কিনে প্রচুর। বিবর্তনমুলক বাংলা ডিকশেনারী নামের যে জাহাজ টাইপ বইটা আছে, আদৌ তা কেউ পড়ে বা ইউস করে কিনা তা আমার জানা নাই। সেরকম একটা বই, মাসরুর আরেফীনের অনুবাদ, হোমারে ইলিয়াড। এরকম বেঢক সাইজের। কেউ তা পড়ার জন্য কিনছে কিনা তা আমার জানা নেই। পাঠকসমাবেশ থেকে রইসুদ্দিন আরিফের একটা বই ই আমার পড়তে খবর হয়ে গিয়েছিলো। বইটাকে বিছানায় রেখে আমি এ পাশ ওপাশ করতাম। মন্ত্রী মহোদয় ওবায়দুল কাদেরকে দেখি- সময় পাবলিকেশন্সে বসে থাকে, মন্ত্রীর সাথে ছবি তোলার জন্য তাঁর বই অনেক অল্পবয়সী লোকদের কিনতে দেখলাম। জাফর ইকবাল স্যার ভালো, স্টলে ভীড় করেন না। তাম্রলিপি নাকি কারা তাঁকে একটা চেয়ার টেবিল দিয়েছে, তিনি বসে অটোগ্রাফ প্রত্যাশীদের চাহিদা মিটান। তবে উনার বড় গুন হলো এই ভীড়ের মধ্যেও পরিচিত কাউকে চিনেন, নাম ধরে তাঁর সাথে কথা বলেন। আগে আমার মেলায় সব থেকে প্রিয় জায়গা ছিল লিটলম্যাগ। রাস্তার ও পারে হবার কারনে আর যাওয় হয় না। মিস করি। সামান্য একটা লিটলম্যাগেই ছিল সবার মিলন মেলা, এখন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন।
আহমদ ছফার 'হারানো লেখা'বইটা পড়ছি। সেই বইয়ের অনেক লেখাই আমার আগে পড়া। যেগুলো পড়া নয় সেগুলার কিছু লেখা ফরমায়েশী আর কিছু লেখা দায়সারা ভাবে । তবে কিছু লেখা ভালো। নব্বইয়ের দশকে আহমদ ছফার কলাম লেখার খুব ঝোক ছিল। সম্ভবত তিনি ধারনা করতেন যে কলাম লিখে বিখ্যাত হবেন আরো। তবে পত্রিকায় কলাম দিন শেষে তাৎপর্য হারিয়ে ফেলে তাতো জানা কথাই। তবে তাঁর কিছু কিছু কলাম অসাধারণ এখনো। এই দ্বিদলীয় ঝঞ্ঝাট প্রবণ রাজনৈতিক হাঙ্গামা যতদিন থাকবে ততদিন এইসবের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে অবশ্যই, এক গল্প শুনেছিলাম দীপঙ্কর দার মুখে, আহমদ ছফার কাছে অনেকে আসতো চাকরী খুজতে। অনেককে উনি কথা দিয়ে ফেলতেন, আর ভুলে যেতেন। এখন সেই লোকজনতো চাকরীর আশ্বাস পেয়ে বারবার আসতেন। ছফা নিরুপায় হয়ে ফোন দিতেন, কাজী শাহেদুল ইসলামের কাছে, ডায়লগ একটাই--' আপনার অফিসের এমন একটা লোকের নাম বলেন যার পায়ে ধরে থাকলে একটা চাকরী মিলবে'। কাজী সাহেব পড়িমরি করে বলতেন, ভাই লজ্জা দেন কেন? লোক যা আছে সবাইকে পাঠান। এখন আমাদেরও উচিত শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার পা ধরে অনন্তকাল বসে থাকা! যদি তাঁদের দয়া হয়, কোনো একজনের একটা শুভ উদ্যোগে যদি মানুষ হত্যা বন্ধ হয় তবে তাতে খারাপ কি? এইভাবে আর কতদিন!
সিরাজুল ইসলাম স্যারের বহুল আলোচিত 'জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতা ও জনগনের মুক্তি' বাজারে এসেছে। ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্তে যা তিনি সিরিজ আকারে লিখতেন। অসাধারণ এক বই। শুধু মাত্র এই প্রবন্ধের সিরিজটা পড়ার জন্য আমি নতুন দিগন্ত কিনতাম নিয়মিত। দেশভাগ ও উনিশশতকের যত বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যাপার ও ব্যাক্তি আছেন, কার কি ভুমিকা ও তাঁদের মুল্যায়ন উনি করেছেন অসাধারণ ভাবে। বইটার দাম ১২০০ টাকা। সংহতি বের করেছে। মেলায় হয়তো কিনতে পারবো না। তবে বইটা আমি কিনবোই! আর সংহতি থেকে বের হওয়া কর্নেল জামানের বইটা তো অবশ্যই কিনবো। সমগ্র মেলায় শুধু সংহতি প্রকাশনীই আমাকে আপসোস করতে বাধ্য করেছে। যে মেলায় এখনো দারুন বই আসে।
এই ব্লগ কেউ কেউ এখনো পড়ে। সবসময়ই পড়বে
এখনো এবার বইমেলায় যাওয়াই হলো না। তবে এই লেখাটা পড়ে ২ টা বই কিনার ইচ্ছা হচ্ছে। বইমেলা নিয়ে আগে অনেক্ই লিখতো, তুমি লিখছ তাই ভালো লাগছে। কেউই না লিখলে খালি খালি লাগতো।
এত বই পড়ার সময় পাও কেমনে? ইউনিতে থাকতে গোগ্রাসে বই গিলতাম কিন্তু এখন ছুটিরদিন ছাড়া অন্য কিছু করার টাইমই পাই না। আর ছুটির দিনেও হাবিজাবি কিছু না কিছু প্ল্যান থাকেই।
দুই টুকরা মেলায় অনেক খালি জায়গা আছে
কিন্তু আগের বইমেলার ফিলিংটাই কেন জানি পাই না!
ঢাকার এই একটা মাত্র জায়গার ভিড় দেখে মেজাজ খারাপ হয় না!
বরং এবারের মত অবস্থা দেখে খালি খালি লাগে, মন খারাপ হইয়া যায়।
দেখা হলো না তোমার সাথে এবারের মেলায়।
আপ্সুস!
মন্তব্য করুন