Ek Akela Is Shaher Mein!
ধরেন বছর অনেক আগে রাতে ঘুমাতে পারছিলাম না, সোডা হোস্টেলের ছেলের দলেরা গাচ্ছে, তুমি যে ক্ষতি করলা আমার আল্লাহয় করবে তোমার বিচার। মনটা চাইছিলো শালা তোরা আমার ঘুমের বারোটা বাজালি তোদেরও বিচার করবে আল্লাহ। আবার আমাদের কৈশোরে আসিফের গান ছিল, ও পাষানী বলে যাও কেন ভালোবাসোনি। এত জোরে বাজতো সিডির দোকানে মন চাইতো, তুই আর কোথা থেকে ভালো, এত জোরে গান বাজাস? কার ঠেকা পড়েছে ভালোবাসার। তখনই আমার মাথায় এসেছিল, পুরুষ সুরকার গীতিকার ও শিল্পীদের দুটো প্রবণতা, নারীকে গানে গানে আসমানে তুলবে ভক্তিরসে, বলবে পরী, অপরুপা, বিধাতা গড়েছে নিজের হাতে, তুমি না এলে সব কিছুই থাকতো আধারে নয়তো গান হবে বকাঝকা আর ব্লেইম গেমের খেলা। কেন তুমি অচেনা হলে, পাষানী, আল্লাহয় করবে বিচার, অপরাধী, কেন তুমি ভুলে গেল, কেন তুমি চলে গেলে, কেন তুমি আসো না, কেন কথা রাখো না, কেন বাসো না ভালো, কেন তুমি বদলে গেছ এসবে ভরা সব গান!
জামালপুরে ঘুৃৃম না আসা রাতে মনে পড়ে ৪৬-৪৭ বছর আগের 'ঘারোন্দা' ছবির গান। গানটা এত সুন্দর, 'এক একেলা ইজ শ্যহের ম্যায়/ রাত ম্যায় অউর দুপেহের ম্যায়/ আবদানা ঢুনতা হ্যায়/ আশিয়ানা ঢুনতা হ্যায়।' সচারাচর হিন্দি সিনেমায় এই ধরনের নাগরিক ম্যালানকলি কম আসে। গানটা শুনলেই আমার মনে হয় মহীনের ঘোড়াগুলির কোনো গানের হিন্দি ভার্সন। তখনই ভুল ভাঙে, গানটি লিখেছেন গুলজার সাহেব। গেয়েছেন ভুপিন্দর সিং। কয়েক বছর আগে প্রয়াত ভুপিন্দর সিংয়ের কন্ঠে তখন এত করুণ সুর ছিল। ভুপিন্দর সিং অন্য একটা ছবিতে পার্শ চরিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। আরো কিছু অভিনয়ের প্রস্তাব ছিল তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন বোম্বে থেকে। অভিনয়কে সিরিয়াসলি নিলে তিনি হয়তো ভালো করতেন। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার, গানের প্রতি যে নিবেদন সেটার সাথে আপোষ করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল কম। ' ঘারোন্দা' ছবিতে রুনা লায়লারও একটা গান ছিল।
সিনেমাটার গল্প সাধারণ। তখন ভারতে মিডিল সিনেমার যুগ। এসব গল্পই হতো। জারিনা ওয়াহাব ও অমল পালেকার নতুন সংসার করছে। তারা একটা নিজেদের বাসা চায়। অনেক সাধনায় একটা বাসা ম্যানেজ করতে গিয়ে ডেভলোপারের প্রতারণার স্বীকার হয়। সিনেমাটা দেখলে আমার মনে হয় বিটিভির কোনো সাপ্তাহিক নাটক দেখছি। কিন্তু এই সাধারণ গল্পের ভেতরেই অসাধারণ একটা ব্যাপার ছিল। অমল পালেকার আগে খুব ইগো সচেতন ছিলেন। 'ঘর' সিনেমাটা তার করা হয়নি যে তিনি প্রযোজকের অফিসে মিট করে সবার সাথে ইন্ট্রডিউস করতে যান নাই, অথচ পরিচালক সিনেমাটায় তাকে নিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। গানে অভিনয়ে ও সিম্পলিসিটি দিয়েই এই সিনেমা দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করে ফেলেছিলো। প্রচুর পুরস্কারের সাথে এটা ভীমসেন খুরানার এক ধরনের সিগনেচার কাজের ধারা তৈরী হয়েছিল। আরেকটা সিনেমা তিনি বানিয়েছিলেন, উত্তম ও শর্মিলাকে দিয়ে, 'দুরিয়া'। এছাড়া তিনি দূরদর্শনের এনিমেশন সিরিজের পুরোধা পুরুষ। আজকাল অমল পালেকার কে দেখি সাউথের সিনেমার প্রশংসা করেন প্রাণভরে, দেখে অবাক লাগে। সারাজীবন 'বয় নেক্সট ডোর' রোল করার পর এসব কথা শুনলে মনে হয় এরা আরেক প্যারাডক্সিকাল আর্টিস্ট। যাই হোক সিনেমাটা না দেখলেও গানটা হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন।
মন্তব্য করুন