সুনাগরিকের ভোট কার্যক্রম
ছোটবেলায় পরিবেশ পরিচিতি সমাজে পড়েছিলাম রাষ্ট্রের নাগরিকের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য। যারা তা পালন করে তাঁদের সুনাগরিক বলে। সুনাগরিকের অনেক কাজের কয়েকটা হলো রাষ্ট্রের আইন কানুন মেনে চলা ও ভোটে অংশগ্রহণ। ভোট নিয়ে আমার ছোটবেলা থেকেই যথেষ্ট ফ্যান্টাসি। বড়রা ভোট দেয়, আমিও একদিন বড় হবো, খুলনা নেভী স্কুলে আলম আরা ম্যাডামের আঙ্গুলে দেখতাম দাগ, আমি প্রশ্ন করেছিলাম ম্যাডাম কাকে ভোট দিলেন? উনি বললো 'এইসব কেউ কাউকে বলে না, দেখোনা টিভিতে- আমার ভোট আমি দিবো যাকে খুশী তাঁকে দিবো' আমিও একদিন ভোট দিবো এইসব নিয়ে যথেষ্ট আদিখ্যেতা ছিল। প্রথম ভোট দিয়েছিলাম সেই ২০০৮ সালে, সকালে ব্লগ ছিল, উত্তেজনা ছিল, বয়স কম ছিল। যুদ্ধাপরাধের বিচার করবে তাই সকাল সকাল নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে চলে আসছি। মুরুব্বীরা ছিল লাইনে, উনাদের আলাপ শুনে মেজাজ খারাপ হয়েছিল। এখন সেইদিন নাই, ঘুম থেকে উঠেছি, নাস্তা করলাম, কিছু সময় টেষ্ট খেলা দেখলাম, আস্তে ধীরে বের হয়ে দেখি ভোটটা দেয়া যায় কিনা? এবারে্র আমার ভোটে অংশগ্রহণ ছিল শুধু জোনায়েদ সাকিকে ভোট দেয়ার জন্যেই। এছাড়া এই পাইলিং কামালের মেয়ে কিংবা টিজেড রাজীব কিংবা বজলু কমিশনারের মতো লোকদের ভোট দেয়ার আসলে মানেটা কি? পিকের ভাষায় বলি, ভোট ইস ওয়েষ্ট অফ টাইম! যে ভীড় দুই ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে ভোটকার্য সম্পাদন করলাম। এত ভীড় আমি জীবনেও আশা করি নাই। লাইনে সব টেবিল ঘড়ি একমাত্র আমি টেলিস্কোপ!
ভোট যেমন হয় তেমনই হলো। তবে টেলিভিশনে দেখলাম ভোট আরেক রকম। কারচুপি, জাল ভোটে ছেয়ে গেছে, নানান সব ভোট চুরির খবর। আমার আশেপাশে শুধু দুই তিনটা কেন্দ্রেই আওয়ামীলীগের কমিশনার ক্যান্ডিডেট তুহিন ভাই সমানে ব্যালট সিল মেরেছে। আর কোথাও তেমন খবর পাই নি। বিরোধী দল গুলোর কাছে আরো অনেক হয়তো খবর ছিল তাই তাঁরা বর্জন করলো। ছোটভাই শুভ জানালো, সে ৯ টা ভোট দিয়েছে, বড় ভাইদের অনুরোধে। আর ইভান ভোট দিতে যায় নাই কেন্দ্রে গন্ডগোল বলে, মইন ভাই যায় নাই বকশী বাজারে কারন খোজ নিয়ে দেখলো উনার ভোট কে জানি দিয়ে চলে গেছে। উনি আনন্দিত কারন তিনশো টাকা রিকশা ভাড়া লাগলো না বলে। এছাড়া সবাই ঠিকঠাক মতোই ভোট দিলাম আমার পরিচিত ভুবনের । তবে বিপুল মানুষ হয়তো ঠিকঠাক মতো তা পারে নি। তা না হলে এত জাল ভোটেও, ইসির হিসাবেই উত্তরে সিটিতে কেন ৩৫ ভাগ ভোট কাষ্ট হয়েছে? দক্ষিণে একটু বেশী। চট্টগ্রামে সবার থেকে বেশী। সেখানে সব কিছুই বেশী বেশী। কারন আজ থেকে ১১ বছর আগে ছিলাম যখন চট্টগ্রামের এক হেরে যাওয়া কমিশনার প্রার্থী খরচ করেছিল দেড়- দুই কোটি টাকা। তাহলে এখন মেয়র কমিশনাররা কত খরচ করে তা অনুমান করাও কঠিন। আর আ,জ,ম নাসিরের নাম আমি ছোটোবেলা থেকেই শুনি। কমার্স কলেজে তাঁর ক্যাডার বাহিনী আছে, চিটাগাং ভার্সিটিতে আছে, এমইএস কলেজে আছে, মেয়র হবার পরে আমি আশাবাদী যে স্কুলের বাচ্চাদের কাছেও গোলা বারুদ থাকবে, অকসিলারি ফোর্স হিসেবে। আমার প্রিয় শহর চিটাগাং ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি হতাশ যেমন হতাশ আমার প্রিয় এলাকা নিয়েও। আমি ক্যান্ডিডেট কমিশনার রাজীবকে নিয়ে এত মশকরা, স্ট্যাটাস বিনিময় করলাম, উনি 'আমরাই ঢাকা'র নমিনেশন না হয়েও ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করে জিতে গেলেন দারুণ ভাবে। বিজয় মিছিলে পুরো এলাকা শব্দে উন্মাতাল। তবে পুরো নবোদয়, সোসাইটি, লিমিটেড, কাটাসুরের জনগনের আগামী ভয়াবহ দিনগুলোর জন্য আমার অগ্রীম সমবেদনা জানিয়ে গেলাম। তবে এবার আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতেছে ভালো। শুরুতেই যে তুহিন ভাইয়ের নাম নিলাম উনি জাল ভোট মেরেও হেরেছে বিপুল ভোটে। রতন, সেন্টু, মিজান এরাও জিতেছে নয়া নয়া আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের এত সব প্রশাসনিক সাহায্য ও ভোট কারচুপির পরেও। তবে আমাকে সবচেয়ে অবাক করে বিএনপির ভোট। আনিসুল হক না হয় সরকারের আনুকূল্যে ও গুড পারসোনালিটির ভালো ইউস করে ভোট পেয়ে জিতলো। কিন্তু তাবিখ আওয়ালের মতো এক অচেনা অজানা লোক, যারা তৃনমূল রাজনীতির অভিজ্ঞতা হলো বস্তির মাঠে ফুটবল খেলা, নির্বাচন বর্জন করার পরেও সে ভোট পায় লাখ লাখ। বিএনপি আওয়ামীলীগের নামে আগামী দিনে কলাগাছ দাঁড় করিয়ে দিলেও লাখ লাখ ভোট কামাবে, ব্যাপারটা বড়ই আজব। ভোটাভুটি জিনিসটাই আসলে কামের কিছু না। আমি চিন্তা করেছি আর ভোট দিবো না। কাজ নাই আর? যে মুন্না জীবনে আমাদের এলাকার লোকজনের সাথে মিশে না, এখন স্থানীয় বিএনপি নেতা হবার কারনে জেলে, সেই ব্যাক্তি কোনো প্রচার ছাড়াই কাটা চামচ মার্কা নিয়ে প্রায় কমিশনার হয়েই গিয়েছিল। ১৮০০ ভোটে হারলো। বিএনপির এত ভোট ডানে বামে, আর সেই বিএনপি তাঁদের একটা কর্মসূচি সফল করার জন্য ১০০ লোক পায় না। এই বিপুল সমর্থক লইয়া বিএনপি কি করিবে?
অনেকেই গনতন্ত্র ভোটাধিকারের জন্য হাপিত্যেশ করছেন? গত দেড় বছরে এইসব আদৌ ছিল কি? কিংবা তার আগের লম্বা দিনগুলোতে। ভোটাধিকার, গনতন্ত্র, মত প্রকাশ, সুস্থ সামাজিক জীবন, ভালো আইন শৃঙ্খলা কবেই এদেশ থেকে নির্বাসনে গিয়েছে। যে বৃদ্ধ মানুষটা ভোট দিতে না পেরে কেঁদেছে আর বলেছে-- 'বাবা আমার ভোটটা কে জানি দিয়ে দিছে, এইটা কোনো বিচার হইলো বাবা? তাঁর আবেগ আমাকে স্পর্শ করে নাই, সবার মতো উল্টো বলেছি 'আইছেন কেন এত দূর? আনিসুল হক সাহেবকে স্বাগতম। আপনি আপনার পরিবারের কাছ থেকে ৫ বছর সময় নিয়েছেন, সেই সময়টুকু আরাম আয়েশে কাটান, আপনার ২২ টা প্রতিষ্টানকে সময় দিন। স্মার্ট আলোকিত মানবিক সবুজ ঢাকার দরকার নাই। আমরা জেনে গেছি এই ঢাকাতে আমাদের কিভাবে দিন কাটাতে হয়! অনেকেই বললো-ভাই ভোটটা টেলিস্কোপ মার্কায় দিয়ে নষ্ট করলেন বেহুদা।
আমি খালি একটা কথাই বলি, কোন ভোট নষ্ট হয় না- আবার সব ভোটই নষ্ট। আমাদের দেয়া এযাবত কালের সব ভোটের জয়ী প্রার্থীরাও জিতেও তো আর আমাদের জিতিয়ে যান না। তিনি শুধু তাঁর লোকজনকে নিয়েই জিতেন। যত ভোট দেয় সবই জনগনের দিন শেষে দীর্ঘমেয়াদী পরাজয়! তবে ভোটে সব চেয়ে ভালো বিজনেস করছে মিডিয়া। একেক সময় তাঁরা একেকরকম, সকাল থেকে বিকাল তাঁরা দেখালো কিভাবে ভোট কারচুপি চলছে, রাতে এসে তাঁরাই বলছে বিএনপির সাংগঠনিক ফেইলর, পোলিং এজেন্ট দিতে না পারার ব্যর্থতা।, আগের দিনগুলোতে সিইসি সাফল্য, মাত্র অল্প কিছু কেন্দ্রেই নাকি সমস্যা, ইত্যকার হাবিজাবি নাটক। টেলিভিশন মিডিয়া এইদেশে এক আজব দশা, না ভালো অনুষ্ঠান বানাতে পারে, না পারে ভালো খবর দিতে।
সবই আম্লীগ-বিনপির খেলা !! তোমার কথাডাই কই- আম্লীগ আর বিনপির নামে আমগাছ, জামগাছ, কলাগাছ দাড়াইলেও লাখ লাখ ভোট পাইবো
কথা সত্য। আমাদের সবার কাছেই তথ্য আছে
পাঞ্চ লাইন
এসব ভোট নিয়ে চিন্তা কইরা আমাদের আম জনতার লাভ নাই। আম্লিগ আর বিএনপি যেই লাউ সেই কদু। আমরা হুদাই দর্শক, আর কিছুই না।
কথা সত্য। তবে এরকম চুরি না করলেই ভালো হতো, কারন আনিসুল হক এমনিতেই পার হয়!
মন্তব্য করুন