দাহকাল বলে যায় কালের খবর, বিষমাখা তীর থাকে বিষের ভেতর!
কাল প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম, মৃত্যু না হলেও দু চারটা হাড্ডি পাউডার হওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু আল্লাহর বিশেষ রহমতে, বিস্তৃত বন্ধু বান্ধবদের ভালোবাসায় ও মায়ের দোয়ায় কিছুই হয় নাই। শুধু মাথায় আর হাতে ব্যথা পেয়েছি যা প্যারাসিটামলেই নিরাময়ের পথে। এখন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা তেমন কিছু না, তবে যখন হলো সেইসময় কিছুটা হতভম্ব হয়ে বসে ছিলাম। কাল দুপুরে বাসায় ফিরছি এমন সময় নামলো বৃষ্টি রিমঝিম করে। বৃষ্টিতে ভিজতে তো হবেই। যত কম ভিজে বাসায় চলে যাওয়া যায়। এমন সময় পিসিকালচার হাউজিংয়ের চার নাম্বার রোডের ওখানে আছে, সরাইখানা সুইটস, তাঁদের দোকানের ট্রে রাখা ফুটপাথে, তার সাথে বারি খেয়ে পিছলে আমি রাস্তায় পড়ে যাই চিটপটাং হয়ে। আশেপাশে মানুষের ধারনা ছিল আমার মাথা ফেটেছে ও এবং হাত ভাঙছে। আমি মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত নেই, গা ঝাঁরা দিয়ে উঠে গেলাম, দেখি পুরো শরীর টনটন করছে ব্যথায়। সিনক্রিয়েট হবে অযথা তাই আল্লাহর নামে হাঁটা দিলাম। দেখি হাঁটতে পারছি। এত পছন্দের পাঞ্জাবীটা ছিড়ে গেল, হাত ছুলছে ভালোই, তবে তখনই মনে হয়েছে যাক এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। বাসায় এসে গোসল করলাম, কাউকে জানাই নাই কিছু। ভাত খেলাম, দেখি মাথায় অসহ্য ব্যথা। ঘুম দিলাম, ঘুম থেকে উঠে পুরো শরীরে ব্যথা। চুপচাপ থাকলাম। রাতে বেঘোরে ঘুমালাম, সকাল ১০ টায় ঘুম থেকে উঠে দেখলাম শরীর একদম ঠিকঠাক। হাতেই শুধু ব্যাথা। ভাবছিলাম এই সামান্য আছাড় খেয়ে আমার এই দশা, শুকরিয়া জানাচ্ছি। যারা প্ল্যান্ড চাপাতির কোপ খেয়ে মরে তাঁদের কি জানি না কি অবস্থা হয়। সকাল সকাল গরম ভাত খেয়ে অফিসে যাচ্ছে, অফিসে না গিয়ে যেতে হলো মর্গে লাশ হয়ে। কি যে হতভাগ্য একটা ব্যাপার তা যদি কেউ জানতো। হয়তো ভিক্টিম জানে আঘাত আসতে পারে, কিন্তু তা এত পরিকল্পিত ও সুচারুরূপে সম্পন্ন হবে তা ভাবনারও হয়তো বাইরে। মাসকাবারি লিষ্ট ধরে ধরে খুন হচ্ছে, প্রশাসনের মদদে, আমাদের নির্লিপ্ততায়। মরার পরে সংখ্যাগুরু জনগন বলে নাস্তিক মারছে ভালো করছে, ইমানী দ্বায়িত্ব পালন করছে। আর আমার মতো মডারেট চুদির ভাইরা গান লাগাবে, আসল ইসলাম কি, যদি কিন্তু তথাপি, আর সবাইকে উপদেশ দিয়ে বেড়াবে যা দিনকাল সাবধানে চলাফেরা করাই ভালো।
আমি এখন চিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছি। চিন্তা করে কিছুই হবে না, আমাদের ভাগ্যে আছে ধুঁকে ধুঁকে এই বেঁচে থাকা টুকুই। এই দেশ নিয়েও আমি যথেষ্ট হতাশ। তবে চিন্তা আসে যখন মাথায় আসে লিষ্টের তিন চারজন আমার ঘনিষ্ঠ সুহৃদ। আল্লাহ না করুক, তাঁদের যেন কিছু না হয়। খুব দোয়া করি, আল্লাহ তুমি সহায় হও। রাষ্ট্র বাঁচাবে না কারন সংখ্যায় খুবই কম, প্রশাসন বাঁচাবে না কারন আমাদের ক্ষমতাই সীমিত, রাজনৈতিক দলের চিন্তা ভোট নিয়েই, সুশীলদের চিন্তা পিঠ বাঁচিয়ে সব পক্ষকেই কয়েকটা নরম কথা শোনানো। কষ্ট থাকবে বন্ধুদের বুকেই, আর স্বজনদের অন্তরে তাই আল্লাহ ছাড়া এই বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায় নাই। আমাদের সবার অবস্থা এখন প্রখ্যাত লেখক জাফর ইকবালের মতোই মাইনকার চিপায় পড়া। যাদের পক্ষে বেশীর ভাগ কথা যায় তারাই আমাদের মনে করে শত্রু। আর এমনিতে তো বিরোধীরা শত্রু ভাবেই। সুখে আছে বিএনপির সালাউদ্দীন। চলে গেছে শিলং মানসিক হাসপাতাল। দেশটাই যেন এক মানসিক হাসপাতাল, বদ্ধ উন্মাদেরা আমাদের খুঁজছে মারার জন্য আর উন্মাদদের দেশে স্বপ্ন নেই বেঁচে থাকার তাই অনেকে নাও ভাসাচ্ছে মালোশিয়ার পথে। সেই স্বপ্নেও মরিচিকা, মরছে সাগরে বাঁচছে একে অন্যের মুত্র খেয়ে। আর আমরা আছি এখানে মুতবেন না- তা আরবী না বাংলায় হবে তা নিয়ে বচসা করতে। ভন্ডামীর চুড়ান্ত এইদেশের মানুষের জন্য তাই টিকে থাকবে রেডিও মুন্না আর প্রিয় ডটকমের মেয়েদের ক কোন দোকানের কি মানের আন্ডার গার্মেন্ট কিনে দিবেন তা নিয়ে লাইফ স্টাইল টিপস।
যাবতীয় যন্ত্রনার এক সমাধান পেয়েছি। দারুন এক হেডফোন গিফট পেলাম বন্ধু থেকে। ব্যাপক বেইজ, দারুন সাউন্ড, পুরো মাতিয়ে রাখে যখন শুনি। যেখানেই যাই সেই হেডব্যান্ড হেডফোনটা সাথে থাকা চাই। আর শব্দ বুঝি এরকম কোনো গান শুনি না, শুনি এ আর রেহমান কিংবা হ্যারিস জয়রাজ, ইলিয়া রাজাদের তামিল তেলেগু গান। সুর টুকুই শুনি আর সব কিছু ভুলে যাই। টানা শুনে শুনে মনে হয়, বুঝে গেছি গানের কথা,। নেটে সার্চ দিলেই গানের মিনিং পাওয়া যায়, ইচ্ছে করে না। সুরের ভাষাতেই থাকি। আর কোরিয়ান সিনেমা দেখা বাদ, তেলেগু দেখার ফাকে এখন দেখছি মালায়লাম সিনেমা, মালায়লাম সিনেমা মন্দ না। তবে তাঁদের আর্থিক দৈন্যতা চোখে পড়ে। অবশ্য মালায়লামের মানুষদের নামগুলোও অদ্ভুত, কেরালাকে দেখতে সিনেমায় অনেকটা বাংলাদেশের মতোই লাগে। তবে তাঁদের নদী অনেক ছিমছাম এবং নদীর পার নদীর মতোই সুন্দর। সাম্প্রতিক মালায়লাম সিনেমার সেরা মুভি মনে হয় 'দ্রিশায়ম'। ২০১৩ সালের মুভি। অলরেডি এই সিনেমাটা চার ভাষায় রিমেইক হয়েছে, হিন্দিটা রিমেইক করবে অজয় দেবগন। খুব সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বানানোর চেষ্টা ওদের পারে কিন্তু না। ওদের সুপার স্টার হলো মামোন্তি, আর ওদের উত্তম কুমার হলো প্রেম নাজির। তবে তামিল তেলেগুর মতো বড় একটা সিনেমা ইন্ড্রাষ্টি হতে তদের এখনো মেলা দেরি। সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমার পুরষ্কার বিতরনী দেখছিলাম, ব্যাপক তাদের আয়োজন। একটা রাজ্যের সিনেমা পুরষ্কার তাও কত ভালো প্রেজেন্টেশন আর ওদের স্টারগুলো যথেষ্ট ক্যাজুয়াল, কি পোষাক আসাকে- কি কথা বলায়। খালি নায়িকারাই খুব ভাবে থাকে। আমাদের মেরিল প্রথম আলোর ওরকম একটা ভারতীয় রাজ্যের একটা চ্যানেলের স্ট্যান্ডার্ডেরও এওয়ার্ড অনুষ্ঠান বানাতে মেলা দেরী। আমরা শুধু পারি তোষামোদে। সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য মারা গেলেন, আমাদের তাঁর লেখা নিয়ে মুল্যায়ন নাই, আছে শুধু তাঁর কাহিনী নিয়ে নাটক উপলক্ষ্যে যে সফর ছিল তা নিয়ে নষ্টালজিয়া। মধ্য মেধার একজন লেখকের লেখা আমাদের কাছে গুরুত্ব পায় না, পায় তাঁর উপন্যাস নিয়ে নাটক বানানোর সুখস্মৃতি। সমরেশ মজুমদার, সঞ্জীব, শীর্ষেন্দু, এদের সবার উপন্যাস নিয়েই কম বেশী নাটক হয়েছে ধারাবাহিক। আমার টেলিভিশন স্মৃতিতে দেশ টিভিতে সাতকাহন ছাড়া আর কোনোটাই মুল গল্পের চরিত্রগুলোর ধারে কাছেও যেতে পারে নাই। মামা টিভি কিনে নাই, আমি মানা করছি। টিভি দেখে কি হবে, মামী এরচেয়ে সিনেমা দেখুক আর উনার প্রিয় রাইটার সুনীলের বই পড়ুক, বাচ্চা সংসার তো আছেই সময় কাটানো ঘটনা না, টিভি এখন এই দেশে অত্যাচার। টিভি দেখা নিয়ে আবীরের এক রুমমেটের গল্প মনে পড়ে গেল। ভদ্র লোক কিভাবে জানি আবীরের কাজিনের আত্মীয়। আবীরের সাথেই থাকে যেহেতু বাসাটা কাজিনের। সারাটা দিন সেই মাঝবয়সী ভদ্রলোক স্টার জলসা দেখে। মুরগীর খামার করে অনেক টাকা কামিয়েছে সব বাদ দিয়ে এখন ঢাকায় আরাম আয়েশ করে। সব দেখে, সিরিয়ালে নায়িকার পক্ষে কিছু আসলেই উনি খুশী, ভিলেনরা ধরা খেলে উনার ডায়লগ, 'ভালো হইছে না টুট টূট, এবার বুঝবি ঠেলা;। আবীর বলছে মহিলাদের চেয়েও উনার সিরিয়াল আসক্তি মারাত্মক। রিপিটও মিস করে না। এরকম লোকদের জন্যেই এখন টেলিভিশন দেখা টিকে আছে!
ক্রিকেট সিরিয়াল টিকে থাকুক, মানুষ মরুক
ভদ্রলোকের ফুন নাম্বারটা দেও। মুরগীর খামার করে টেকা কামিয়ে জলসা দেখুম
সাবধানে চলাফেরা কইরো। মারাত্নক দুইটা এক্সিডেন্টে নিজেও ভুগেছি অনেক, তাই রাস্তাঘাটে চলতে সারাক্ষণই ভয় থাকে আমার। সবাই নিরাপদ থাকুক।
দেশ নিয়ে কিছু বলার নাই আসলে। আমরা বললেই কি আর ভাবলেই কি! দেশের যারা মাথা তারা যাই করবে তাই মেনেই আমরা টিকে থাকব।
শান্ত. তোমার বন্ধু কত্ত ভালো! হেডফোন গিফট দেয়
আমার বন্ধুও ভালো, গিফট দেয় কিন্তু তোমার মতো লিখতাম তো পারি না 
এখন ভালো আছেন?
হেডফোনের ছবি দেন তো দেখি।
মন্তব্য করুন