নীরব রাতের ভাবনা
জামালপুরে একটা জিনিসই আমার ভালো লাগে খুব। তা হলো এমন নিশুতি রাত। পিনপতন নিঃস্তব্ধ একা একা একেকটা মুহূর্ত। খুব আনন্দ লাগে এমন রাত গুলোতে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতে। হালকা বাতাস আসে, জানলার পর্দা সরে যায়, ঘুটঘুটে অন্ধকার, শেয়ালের ডাক, খারাপ লাগে না, মনে হয় এই বেশ ভালো আছি। যদিও রোজার দিনে একটু অসুবিধা, রাত দুটা থেকেই হুজুররা মসজিদে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয়। এখানে অনেকে রাতে রান্না করে খায়, সেই সুবিধার্থে।আমার বিরক্ত লাগে, কিন্তু কিছু করার নাই। হুজুররা বারবার অনুরোধ করে ঘুম থেকে জাগুন, সেহরী খান। এমন একটা ভাব যেন মসজিদ সবাইকে খাওয়াচ্ছে। সময়ের শেষের দিকে শুরু হয় নতুন জিনিস, আহবান জানায়, জলদি খান, এখনি খান, আর মাত্র ১০ মিনিটে না খেলে রোজা রাখতে পারবেন না। হুজুরেরা জানে না যে সেহরী না খেলেও রোজা হয়। সেহরীতে দু বেলার খাবার এক সাথে খাওয়া কোনো ইসলামিক কালচারের অংশ নয়। তবে দেখতে দেখতে রোজাই শেষ।
ফেসবুক আলেমদের এখন নতুন হুজুগ, একদিন আগে রোজা শুরু করা, এক বা দুই দিন আগে ঈদ করা। গত কবছর ধরে এই ট্রেন্ড বেশী দেখছি শিক্ষিত নানান মানুষের কাছে। আজব এক অবস্থা, আগে যে জিনিস কুমিল্লা চাদপুরে আর কিছু পীরের মুরিদেরা করতো, এখন তা অনেকেই করছে বা করতে চায়। আমরা কি সউদী টাইমে নামায পড়ি, আমরা আমাদের সময় মতো রোজা রাখি, নামায পড়ি। চাঁদ একেক টাইমজোনে একেক সময় উঠে, আমি কেন গ্লোবাল ঈদ পালনের নাম করে সউদী সময়ে ঈদ পালন করবো। আর আমার যেদিন ঈদ সেদিন আমার বাবা মা সমাজ পালন করছে রোজা। তাহলে ঈদের খুশী হলো কিভাবে? হুজুরদের মুখেই তো শুনি ঈদ সবার জন্য আসে।এই ইন্টারনেটের উসিলায় অনেক কিছুই আসছে নতুন নতুন, যার আমি আগা মাথা বুঝে পাই না। ঈদের দিন রোজা রাখা তো হারাম, তাহলে একই এলাকায় থেকে ওদের ঈদে রোজা রেখে আমি হারাম কাজ করছি, কিংবা রোজার দিনে তারা ঈদ পালন করে হারাম কাজ করছে, এর বিধান কি। আগেই ভালো ছিল, বিটিভিতে ঘোষনা শুনতাম তার আগে আমরা চাঁদ দেখতে সন্ধ্যা থেকেই বাইরে থাকতাম। চাঁদ উঠলে খুশী না উঠলে কি আর করা ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতাম। তবে ২৯টা রোজা সব সময়ই মনে আনন্দ দিতো। যাক কাল থেকে আর রোজা রাখতে হবে না। এত বড় হয়েও এখন আমার কাছে ব্যাপারটা মজা দেয়। মনে হয় যাক শান্তি, কাল সকাল থেকে চা খেতে পারবো, আর কোনও বাধা নাই। অনেকদিন সকালে নাস্তা করা হয় না। ঈদের খুশী বলতে এখন বাবা মার সাথে থাকা, আর ভালো মন্দ খাওয়া। এছাড়া এইসব বন্ধু বান্ধব ছাড়া হীন ঈদ পালন খুবই বিরক্ত লাগে।
জামালপুরে এবার অদ্ভুত। কারেন্ট যাচ্ছে না মোটেও। ঢাকা থেকে বাড়ীতে আসলাম ঝামেলা ছাড়া। বাসের সার্ভিস খারাপ, এছাড়া সবই ভালো। বাস প্রায় লোকালের মতো যাত্রী নেয়। যারা বসে যাবে তাদের ভাড়া ডাবল, যারা দাঁড়িয়ে যাবে তাদের ভাড়া আসলটা। কি বাজে অবস্থা। তবুও সময় বেশি লাগলো না। বাস থেকে নেমে ১৫ মিনিটেই রিক্সা নিয়ে বাড়ীতে। শহরের খুব কাছে বাড়ী হলে যা হয় আর কি।তবে জেলা শহর কিংবা মফস্বলকে একরকম গ্রামই বলা যায়। তবে গ্রামের সেই সরলতা হারিয়ে গেছে কবেই। সবার মনে এখন শহুরে চাতুর্যতা, ভন্ডামী আর ভিলেজ পলিটিক্সের সেই পুরোনো কালচার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢূকে গেছে।সবার মুখেই এখন শুধু টাকার আলাপ। কার টাকা বেশী তার সাথে সাথে থাকো, যাকাত ফেতরা দিলেও তো কিছু পাবা। গ্রামে অনেক জমি জমা থাকা মানুষও এখন ঈদের ভদ্রলোকদের যাকাতের সন্ধানে থাকে, আর দুর্নীতির টাকার যাকাত পেলে মুগ্ধতার সীমানা নাই। ভাই পাড়া প্রতিবেশীকে যাকাত দিতে পেরে অনেকে আবার ব্যাপক খুশী। জসিম উদ্দীণের সেই গ্রাম কবেই হারিয়েছে। গ্রামে এখন জী বাংলা আর স্টার জলসার ডিপো। শুধু ভারতীয় বাংলা সিনেমা দেখানোর জন্য ছয়টা ভিডিও চ্যানেল। সিরিয়ালের সব চরিত্রের নাম সবার জপে জপে মুখস্থ। অন্যদিকে তোফায়েল হোসেন ভৈরবীর ওয়াজও খূব খায় মানুষে। কি যে কুকথা উনি ওয়াজে বলেন তাও সবার প্রিয় সূরে সূরে বলার কারনে। অদ্ভুত এক বৈপরীত্বময় সমাজ এখন। সুদে টাকা লাগায় সবাই, জুয়া খেলাও চলে সমানে আবার ভালো ইসলামি ডায়লগও দেয়। পারিবারিক কলহ ও স্বামী স্ত্রীর মারামারি অতি দৈনন্দিন ব্যাপার। সবুজ সুন্দর গ্রাম যেমন ঠিক আছে, অসভ্যতা অন্ধকার গ্রামীন জীবনও সেই সাথে তাল মিলিয়ে চলছে।
সব সময়ের মত এবারও বাড়িতেই থাকা। এরুম ওরুম করেই সময় কাটানো। তবে টিভি ভালো লাগে না আর। আগে টিভিতে অনেক কিছুই চিনতাম জানতাম, এখন নতুন নতুন অনেককেই দেখি, অনেক নাম শুনি, ভালো লাগে না, আগ্রহ পাইনা। দেশে এত টিভি চ্যানেলে দেখার মত কিছুই নাই, সারাদিন সংবাদ আর বিজ্ঞাপন। মাঝে মাঝে নাটক যা শুরু আর শেষ দেখি, কি দেখায় বোঝা দায়। ঈদে এতকিছু হবে তার প্রোমো দেখতে মাঝে মধ্যে, কি সব বানায়। দেখেই বলে দেয়া যায় কি হবে নাটকে -গত কবছর ধরে আমাদের টেলিভিশন নাটক নির্মাণ মেধার মান এত কমেছে যা বলার মতো না। ভালো যে দুচারটা নাটক হয় তা মানুষ ইউটিউবেই দেখে। এত কষ্ট করে টিভি দেখার মানে কি? টিভিতে চোখে পড়ে মাঝে মাঝে রান্না ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্টান , তারা যা দেখায় দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব না। এত জনবিরোধী অনুষ্টান দুনিয়ার আর কোথাও হয় কিনা জানি না। আর বিনোদনের কথা তো বাদই দিলাম।বিটিভি নাকি এবার ভালো বাজেট নিয়ে নেমেছে, দেখা যাক কেমন হয় তাদের আনন্দ মেলা। আনন্দ মেলায় আনন্দ নেই তো সেই ২০ বছর ধরে। এই তো চলছে দিন, ঘরকুনো জীবন যাপন, বই পড়তে পড়তে আর টুকটাপ রিমোট বদলাতে বদলাতে।





ছাগলের সাথে সাথে বলদের পরিমাণও বাড়তেছে শুধু দিনে দিনে!
চমৎকার ঈদপালন শেষে ভালোয় ভালোয় ফিরে আসেন, ভালো থাকেন।
জামালপুর যাইতে মঞ্চায়
ঈদ মোবারক, শান্ত।
ঈদ আর খাওয়া দাওয়া মুবারক শান্ত।
তোমার দিনলিপি পড়তে পড়তে ভাবছি, এগুলো যত্ন করে তুলে রাখতে হবে। একটা সমাজের একটা নির্দিষ্ট সময় আর শ্রেণীগুলোকে এঁকে রাখছে এই ব্লগগুলো
অনুষ্ঠান****
মন্তব্য করুন