কাটে না সময় যখন আর কিছুতেই--------
প্রিয় বাবা
ইদানীং ফোন ধরে তোমার সঙ্গে খুব বেশী কথা বলা হয়ে ওঠে না, দু্চারটে কথা বলার পর - আর কথা বিশেষ খুঁজে পাই না। কিন্তু ফোন রেখে দেবার পর মনে হয়, তোমাকে কি যেন বলা হল না। মনে হয়, আরেকটু কথা বললে ভালো লাগতো।সারাদিন চুপিচুপি মন ভার করে ঘুরে বেড়াই।
বয়স যে মানুষের জীবন থেকে কত কিছু কেড়ে নেয়! ভাবতেই অবাক লাগে। যত বয়স বাড়ছে, একটা জিনিষ দ্রুত হারাচ্ছি, সেটা হল সহজ হবার ক্ষমতা। আজকাল তোমাকে ঠিক কি বলবো খুঁজে পাইনা, সহজ হতে পারি না। অথচ একটা সময় ছিল, তুমি আমার কাছে পাতার পর পাতা চিথি লিখতে। কত সুন্দর ছিল সে সব চিঠি! আমিও পাতার পর পাতা সে সবের ুত্তর দেবার চেষ্টা করতাম। তুমিইই বলেছিলে, নেহেরু জেলে বসে ইন্দিরাকে অনেক চিঠি লিখতেন। তুমি জেলে ছিলা না ঠিকই কিন্তু আমাদের ছেড়ে একবার তুমি অনেক দূরে ছিলে। এখন বুঝতে পারি, ওটা তোমার জন্য একটা নির্বাসনই ছিল। সেই জন্যই বুঝি এত্ত এত্ত চিঠি লিখতে! ভাগ্যিস দূরে ছিলে, নইলে কি এত সুন্দর চিঠি পেতাম। সেই চিঠিগুলো আমার নিজস্ব বিকাশের ক্ষেত্রে অনেক কাজে লেগেছে।
এখন ভীষন আফসোস হ্য়; মনে হয় চিঠিগুলো কেন রাখলাম না! আসলে তখন আমার কতই বা বয়স বলো! চিঠিগুলো সংরক্ষণের মূল্য তখন বুঝতে পারিনি।
তুমি একদম অন্যরকম বাবা ছিলে, তুমি মুক্তিযুদ্ধ করেছ। তোমার মুখে যুদ্ধের সাহসী আর ভয়াবহ গল্প গুলো শুনতে শুনতেই তো মুক্তিযুদ্ধকে চিনতে শিখেছি। কোথাও গেলে অন্যদের বাবা আনতেন, জামা-কাপড় নতুবা মজার মজার খাবার আর তুমি? সাথে করা আনতে কত রকমের বই। ট্রেনে কিম্বা লঞ্চে যাবার সময় খুব মজা হত, টসটসে কমলা লেবু আর সেদ্ধ সাদা ডিমের সাথে কিনে দিতে একটা বই। বই পড়তে পড়তে পৌঁছে যেতাম গন্তব্যে।
তুমিই প্রথম শুনতে শিখিয়েছ, ফিরোজা বেগম। শুনিয়েছ কমল দাশ গুপ্তের কথা, তালাত মাহমুদ আর শাহীন সামাদের কথা। শহীদুল্লাহ কায়সার কিম্বা জহির রায়হানের কথা তুমি না বললে অত ছোট বয়সে জানাই হতনা।
তুমি যখন যে এলাকায় যেতে, খুঁজে খুঁজে বের করতে সে এলাকার বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের।আর সেখানে নিয়ে যেতে আমাকে। কে ভাষা আন্দোলন করেছেন, কে জড়িত ছিলেন তেভাগা আন্দোলনের সাথে। কে ভালো ছবি আঁকেন----- কত মানুষের সান্নিধ্যে যে গিয়েছি! তুমি সব সময় আমাকে বলতে, "একটা ডায়েরী রাখ সঙ্গে। সব লিখে রেখ।" তখন লিখে রাখলেও এখন সব হারিয়ে ফেলেছি বাবা।
পড়াতে পড়াতে আম্মু কাজে উঠে গেলে, তুমি পড়াবার নাম করে এসে প্রায়
দাবা খেলতে আমাদের সাথে।
পাগলের মত দাবা খেলতে পছন্দ করতে তুমি। কোনো দিনও আম্মুর সঙ্গে পারতে না। হেরে যাচ্ছ বুঝতে পারলে, তোমার মাথা এলোমেলো হয়ে যেত, তখন নিজের গুটি নিজেই খেতে।
এক এক দিন সন্ধ্যায় খেলতে বসলে সারারাত পার করে দিতে।
বাবা আজকাল সব মনে পরে যায়। শৈশবের মত হয়ে যেতে ইচ্ছা করে। তোমার হাতে ভাত না খেলে পেটই ভরত না। ইউনিভার্সিটিতে থাকতেও তোমার হাতে ভাত মাখা খেয়েছি।
সারাজীবন সাদাসিধে নিভৃতচারী তোমাকে আজকাল অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করে। তোমাকে ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। ানেক কিছুই ইচ্ছা করে... কিন্তু কিছুই করা হয় না।
বলা হয় না, বাবা তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
কিছু করতে না পারার অক্ষমতা থেকেই তোমাকে লিখতে বসা।
বাবা, তুমি খুব ভালো থেক।
ইতি তোমার আদরের
শাপলা
চলবে
কী মায়াভরা চিঠি! চলবে জেনে আশ্বস্ত হলাম
কিছুটা অফটপিক-
১। বাবা বোধহয় শাহীন মাহমুদকে চিনিয়েছিলেন, উনি শাহীন সামাদ হন অনেক পরে, আগের স্টাইল বাদ দিয়ে আঙ্গুরবালা-ঘরানায় গান শুরু করার পর।
২। আমার হিটলার বাপকে এইরকম কিছু জীবনেও লেখা সম্ভব না
তাও তো হিটলার বাপের নিজাম ডাকাত হওয়া নিয়ে লেখে ফেলছেন, আমার রস-কসহীন বাপকে নিয়া কি লেখবো?
হমম আমার বাবাও মহা হিটলার টাইপের মানুষ ছিলেন, এখন কেমন যেন নরম ছেলেমানুষের মত হয়ে গেছেন, চাইলেও আর তার হিটলারী কিছু মনে রাখতে পারি না।
এই লেখাটায় মানুষটা না হয়, নিজাম ডাকাতই থাক।
তুমি ঠিকই বলেছ নুশেরা, তিনি শাহীন মাহমুদকেই চিনিয়েছিলেন। শুধু শাহীন মাহমুদ নয়, বেনু মাহমুদের কথা জানাছি বাবার কাছে থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহীন মাহমুদ কে আমাদের হলে প্রায় নি্যমিত বিচারক হিসেবে পেতাম, সেই জন্যই বোধ হয় শাহীন সামাদ নামটাই য়লে এসেছে।
ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য। এটা ঠিক লেখার জন্য লেখা নয়--- এম্নি!
আমি এখনো বাবার হাতে মাখা ভাত খাই। কিন্তু ফোন করলে কি কথা বলবো খুঁজে পাই না। কেমন আছো ভালো আছি বলা হলেই বলি ফোনটা মাকে দিতে। সারাক্ষন অপরাধ প্রবনতায় ভুগি কিন্তু কথা খুঁজে পাই না।
চলুক লেখাটা
হম আমারও তাই হচ্ছে ইদানীং।
আপনার বাবার জন্য রইল শ্রদ্ধা আর আপনার জন্য শুভেচ্ছা।
'বাবা আমার কাছে শ্রেষ্ঠ কবিতার মত, মাকেও তাই মনে করি (কবি আফসার)' আসলে সব সন্তানের কাছেই বাবা- মা এরকম। তবে নিজেকে ঠিক ভাগ্যবাদের দলে ফেলবো কিনা বুঝতে পারছিনা। কারণ ফোনে কথা খুঁজে না পাওয়ার নিদারুণ যন্ত্রণা থেকে বাবাই আমাকে রক্ষা করেছেন।.............এমন আপ্লুত হলাম রে আপি তোমার এই লেখা পড়ে! অনেক শ্রদ্ধা চাচাজীর জন্য। আর আমার শাপলা আপির জন্য শব্দের কাছে নতজানু হলাম। ভালো থাকা হোক.......
এমন করে বললে কি বলতে হয়, আমার জানা নেই- আমি বিনীত। ধন্যবাদ বাতিঘর।
পোস্ট পড়লাম। অনেক ভাল লাগলো। কিন্তু নুশেরা আপুর কমেন্ট কিচ্ছু বুঝলাম না।
ধন্যবাদ রনি।অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
চুপচাপ পড়ে গেলাম।
আমিও চুপচাপ কিন্তু বিনীত।
অনেক শুভাকামনা রইল।
আব্বা চলে গেছেন আমার কৈশোরে, বিয়ের পর বাবা পেয়েছি। কী আশ্চর্য! বাবার কণ্ঠস্বর, হাইট, অবয়ব, রাগ, মমতা...সব আমার আব্বার মতো। কী করে এটা সম্ভব জানিনা। বাবার বাড়ি লক্ষ্মীপুরে ঈদ করলাম, ৫দিন থেকে এলাম, মন খুব খারাপ এখনো। শাপলার লেখাটা আমার আব্বা-বাবা দুইজনের কথাই তুমুলভাবে মনে করিয়ে দিয়েছে।
ধন্যবাদ রশীদা। আপনার মন্তব্যটা পড়ে আমিও ভীষন আপ্লুত হলাম।
বাবা আবার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। আপনার লেখাটা মন ছুঁয়ে থাকলো। ভালো থাকেন।
আপনার বাবাকে শ্রদ্ধা এবং আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা।
বাবা.............বাবাকে কখন লিখেছি ভুলে গেছি................................................আর কখনো লেখা হবে না বাবাকে.......
কেন লিখুন না আবার, আমরা পড়ি।
সুন্দর এবং হৃদয়ছোঁয়া কিন্তু চিঠিটা মনে হয় আরো বড় হওয়া লাগতো।
কেমন আছেন শাপলা'পু?
হম, আরিগাতো।
তবে মাইন্ড ডাজ হাউ হাউ
মানে মন কেমন কেমন করে (দেশের জন্য বাবা-মা'র জন্য) তাছাড়া আছি ভালোই।
あなたは歓迎されて
মন ভালো হয়ে যাক শীগগির।
ভালো থাকা হোক নিরন্তর।
হৃদয়ছোঁয়া চিঠি...
ক্যামন আছেন?
টুটুল ভাই ভালো আছি। আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
মন্তব্য করুন