শোনা কথায় বইমেলা: ফেব্রুয়ারি ৭
আগের পর্বগুলোতে সরাসরিই লিখেছিলাম- বইমেলা আর শাহবাগের মধ্যে এখন আর কোনো পার্থক্য নাই। পত্রপত্রিকাগুলো খবর দিচ্ছে, শাহবাগ থেকে উৎসাহিত হয়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। তার মানে বইমেলা আস্তে আস্তে বাংলা একাডেমী থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। লিখেছিলাম- শাহবাগের একেকটি মানুষ একেকটি বই। তার মানে এরকম লাখ লাখ বই এখন সারা দেশে, প্রতিবাদমুখর। সেই সাথে কিছু প্রশ্নও জাগছে মনে, কেন অন্য শহরের মানুষগুলোর এক বা দুদিন পর থেকে প্রতিবাদ শুরু করলেন? শাহবাগে যেমন প্রতিবাদী মানুষজন রায়ের ঘণ্টাখানিকের মধ্যে প্রতিবাদ করতে দাড়িয়ে গেলেন, তেমননি কেন হলো না অন্য শহরগুলোতে? সবকিছুকে ঢাকাকে অনুসরণ করা কি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে?
সকাল থেকে শাহবাগে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে শরীর খারাপ এবং অন্যান্য কারণে শেষ পর্যন্ত যেতে যেতে বিকেল। রাজু ভাস্কর্য থেকেই দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কেউ কেউ একা একাই পোস্টার আঁকছেন, অনেকে দলবেঁধে গান গাইছেন, স্লোগান দিচ্ছেন, আবৃত্তি করছেন। প্রচুর মাইক, প্রচুর স্লোগান, প্রচুর উদ্যম। আমরা দুজন- আমি আর বিজয় লক্ষ্মী চৌধুরী হাঁটছি- এদিকওদিক। হাজারো জনতার মধ্যে আমরাও একটি ক্ষুদ্র অংশ। একটু সামনে এগোতেই দেখি রবি আর সিমু নাসেরকে। তাঁরা একটি খাঁচা বানিয়ে তার ভেতরে ঢুকে আছেন- খাঁচার সামনে লেখা- “এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে”? এই প্রতীকী প্রতিবাদের মানে কী জিজ্ঞাসা করতে চাইলাম- কিন্তু যে পরিমাণ শব্দ হচ্ছে তাতে কথা বললেও বুঝা যাবে না। তাই আর জিজ্ঞাসা করা হলো না- তবে যারা খাঁচার ভেতরে বসে আছেন তাঁদেরকে মনে হয়েছে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কয়েকজন মানুষ।
একটু এগিয়ে দেখি গান হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের গান। পাশে কালো পিচে আঁকাআঁকি করছেন কয়েকজন তরুণ। বীভৎস জল্লাদের মুখ। পোস্টারেও আঁকা হচ্ছে একের এক এক। লেখা হচ্ছে স্লোগান। সামনে অনেকে গোল হয়ে বসে গান গাইছেন। সমবেত সুরে গণসঙ্গীত। এ এক অভূতপূর্ব পরিবেশ!
প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘোরাঘুরি পর হঠাৎ করেই দেখা এবির ব্লগারদের- টুটুল ভাই, আরাফাত শান্ত, মাসুম ভাই, রাসেল ভাই, লিপি আপা, আরিফ জেবতিক ভাই, শুভ ভাই, বিষণ্ন বাউন্ডুলে, আনিকা আপা এবং আরও অনেকে। বিষণ্ন বাউণ্ডুলে দেখলাম পিচ্চি মানুষ- অবশ্য লেখা পড়ে মনে হয়েছিল হয়তো বা তিনি বুড়োজাতীয় হবেন! আনিকা আপাকে দেখলাম অনেকদিন পর! আরিফ জেবতিক ভাই দেখা হতেই বললেন- আপনিও চলে এলেন ঢাকাতে! কবে এলেন? সবাই দেখলাম আমার প্রতি আন্তরিক- হয়তো একটু দূরে থাকি বলে আন্তরিকতা বাড়ছে দিন দিন। কবে আসলাম, কবে যাবো- খোঁজখবর নিলেন সবাই। সবাই যদি এরকমভাবে খোঁজখবর নিতে থাকেন- তাহলে তো ভাবই বেড়ে যাবে আমার! মন কি আপ্লুত হয় না একটু হলেও?
আলোচনা হলো অনেক- নানা দিক দিয়ে। মূল বিষয় একটাই- প্রজন্ম চত্বর এবং এর আন্দোলন-প্রতিবাদ। কথা হলো ব্লগ নিয়েও। বিষণ্ন বাউণ্ডুলে আগের লেখার একটি বক্তব্যের প্রশংসা করলেন- শাহবাগের প্রতিটি মানুষ মানেই একেকটি বই এই কথাটির; পাশাপাশি জানালেন একটি মারাত্মক অভিযোগ- আমি নাকি সচলে যেভাবে কমেন্টের উত্তর দিই চটজলদি, এবিতে সেরকমটা দিই না। খানিকটা থমকে গেলেও অভিযোগটা আসলে সত্য। উত্তরটাও মনে হলো জানানো দরকার- বললাম, এবিতে মন্তব্য করার প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। ‘জবাব’-এ ক্লিক করার পর প্রথমে একটি নতুন পেজ খুলে, তারপর মন্তব্য লেখার করার পর মন্তব্য প্রকাশ করতে চাইলে আপডেট হয়ে পেজটি আবার নতুনভাবে খুলে। অর্থাৎ একটি মন্তব্য করতে গেলে পৃষ্ঠাটি দুইবার লোড হতে হয়। অনেক সময় নেট এতো স্লো থাকে যে, পুরো প্রক্রিয়াটি আসলে বিরক্তিকর মনে হয়। সচলে এই ঝামেলা নেই। সম্ভবত মন্তব্যের অংশটি অ্যাজাক্সে করা। ক্লিক করলে সাথে সাথেই নিচে মন্তব্যের বক্স খুলে যায়, মন্তব্য করলে প্রায় সাথে সাথেই প্রকাশিত হয়। অনেকটা ফেসবুকের মতো। এবিতে এই সিস্টেমটা করলে মন্দ হয় না। দ্বিতীয়ত, এবিতে কিছুক্ষণ লগইন না করা থাকলে একটু পরেই লগআউট দেখায়। এটাও আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। কারণ আমার ল্যাপটপ সারাদিন খোলা থাকে, যে ওয়েব সাইটগুলো নিয়মিত ব্যবহার করি, এবি ছাড়া অন্য সাইটগুলোতে একবার লগইন করলে আর কিছু করতে হয় না। বারবার লগইন করতে করতে আসলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। ফেসবুকে যদি বারবার লগইন করতে হতো, তাহলে মনে হয় মানুষ একটু কম হলেও ফেসবুকে লগইন করতো। বিষণ্ন বাউণ্ডুলে মনে হয় একমত হলেন আমার সাথে।
বেশ কিছু সময় কাটানোর পর শাহবাগ থেকে ছবির হাঁটে গেলাম শান্ত, বিষণ্ন আর বিজয়ের সাথে। সেখান থেকে চা খেয়ে বইমেলা। সেখানে দেখা হলো বুয়েটের শিক্ষক ও লেখক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর সাথে। তাঁর বইটি নেড়েচেড়ে দেখলাম। তাঁর কয়েকজন ছাত্র (সম্ভবত) বই প্রকাশ করেছেন- শিক্ষক-শিক্ষার্থীর খুনসুটিও দেখলাম কিছুক্ষণ। ফারসীম ভাইয়ের বইটির যিনি প্রচ্ছদ করেছেন, তিনিও (আবদুল্লাহ আল মামুন) একজন লেখক। মহাকাশ নিয়ে তাঁর লেখা বইটিও দারুণ লাগলো। সবচেয়ে আর্কষণের বিষয় হলো বইটিতে প্রচুর ছবি দিয়ে মহাকাশকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সবগুলো ছবিই রঙিন। শুদ্ধস্বরের স্টলের সামনে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করলাম- উদ্দেশ্যহীনভাবে। দেখা হলো টুটুল ভাই, তারেক রহিম ও ডা. তন্ময় কৈরির সাথে। পরে অবশ্য দেখা হয়েছে মনিকা রশিদ, জুয়েইরিযাহ মউ আর মেহদী হাসান খানের সাথে।
বইমেলায় আনাগোনা কমে গেছে। ফলে পরিচিতি যাকে দেখি, তাঁকেই আরও আপন মনে হয়। কিছুদিন আগেও যেখানে বইমেলার প্রতিটি কোণ দাপিয়ে বেড়িয়েছি, এখন সেখানে আমার পদার্পণ পড়ে দুয়েকবার। দিনটি তাই কাটলো দারুণভাবে, দারুণ উদ্যমে।
সত্যিকার অর্থে ঢাকা শহর আমাকে টানে না- রাজশাহীতে তাই ভালোই আছি। কিন্তু বইমেলা বা এরকম আরও কিছু বিষয়ের জন্য ঢাকা অনন্য- দেশের অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে। এই একটি মাস ঢাকাকে মিস করবো। প্রতিটা বছরই।
"বইমেলা বা এরকম আরও কিছু বিষয়ের জন্য ঢাকা অনন্য- দেশের অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে। এই একটি মাস ঢাকাকে মিস করবো। প্রতিটা বছরই।"
আপনার সাথে দেখা হলো না ।
আপ্লুত হন তবে ভাব না বাড়ুক । 

ফেরার সময় খাচাটা খালি দেখলাম । লোকজন বলছিলো জেলখানা চলে আসছে । তাতাতাড়ি ফিরলাম বলে দেখা হলো না কি হলো কিন্তু আপনার লেখা থেকে জানতে পারলাম ।
এত মানুষ! ।ইচ্ছে করে কি হচ্ছে বসে থাকি সারাক্ষণ, তা তো হয় না ।
এবি কর্তৃপক্ষ ব্লগ বিষয়ে আপনার লেখাটুকু বিষয়ে একটা ব্যবস্থা নিক ।
একমত
আমার লেখায় আপনি নিয়মিত মন্তব্য করেন। খুব ভালো লাগে।
চারিদিকে আপনার এতো প্রভাব!
জ্য বাংলা
লেখা ভালো হইছে। এবিতে কমেন্ট জ়বাব দেয়া গেন্জামের তেমনি আমারে এতো অলসতা লাগে যে চাইলেও উত্তর দেয়া হয় না!
প্রভাব কই দেখলেন! আমি তো দেখি ভালোবাসা!
আমার নেট স্পীড বেশি না। কিন্তু তাও এভাবে মন্তব্য করতে কখনো সমস্যা মনে হয় নাই।
আর মানুষের অভিযোগে মন খারাপ কইরেন্না। আপনে সচলে যেসব ভারি ভারি লেখা লেখেন, সেগুলা এখানে লেখেন্না বলে আপনারে বিশেষ ধন্যবাদ
মন্তব্য করাটা আসলে ইচ্ছের ব্যাপার! আমি একটু আলসে টাইপ- তাই আমার কাছে হয়তো এরকমটা মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ব্লগ নিজেদের উন্নতির জন্য চেষ্টা করছে- এবির কোনো মাথাব্যাথা নাই। এই আর কি!
মন খারাপ তো করি নাই! বরং খুশি হয়েছি। একজন মানুষ কী সুন্দরভাবেই না আমার একটা ভুল কিংবা সীমাবদ্ধতা ধরিয়ে দিয়েছেন। অন্তত এটুকু নিশ্চিত যে, তিনি দুই জায়গাতেই আমার লেখা পড়েন। এই মনোযোগটা আমি কয়জনের কাছ থেকে পাবো, বলেন তো? সত্যিকার অর্থে ব্লগজীবনে যে কয়জন আমার লেখা নিয়ে সরাসরি আমার কাছে মন্তব্য করেছেন, বিষণ্ন বাউণ্ডুলের মন্তব্যগুলো তাদের মধ্যে একটি।
আর লেখার ব্যাপারে আমার কাছে ভারি আর হালকার কোনো বিষয় নাই। এমনকি কোন লেখা কোথায় পোস্ট করবো- তা নিয়েও ভাবি না। যখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই লিখি, পোস্ট করি।
ছবি পুস্টান
কীসের ছবি? আপনার?
এইটা কিডা!
আমি যেই জনারে চিনি তিনি হলে, এখানে লেখালেখির দাবী জানালাম।
পোস্ট প্রসঙ্গে।
সিরিজ শুরু হয়েছিল বইমেলা নিয়ে। বই বিষয়ক যে-কোনো ইস্যুর পর্যবেক্ষণ আমার পছন্দ, এখন গণজোয়ারে সব ভেসে গেছে। তা যাক। সময়ের গতিতে লেখা চলুক। ছন্দ পতন ঘটেনি আমার।
আমিও যারে চিনি- তিনিই যদি হন তাইলে লেখার দাবি জানাইলাম!
বইমেলাকে ঘিরে লেখা শুরু হলেও বইয়ের সাথে ওতপ্রোতাভাবে জড়িত অনেক কিছু- সেগুলোও উঠে আসছে লেখায়। লেখার প্রবাহই ঠিক করবে লেখা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রতিটা পর্ব পড়ার জন্য এবং কমেন্ট করার জন্য।
চিন্তার বিষয়।
এখন থেকে বড় বড় ভাব ধরে ঘুরা শুরু করতে হবে।
ঢাকার যতো বদনামই থাকুক কিছু কিছু দিন আর মাসে ঢাকাকে মিস না করে উপায় নেই
(
মন্তব্য করুন