কাছেদূরের বইমেলা (১)
ঢাকা থাকতে প্রতিদিনই যে বইমেলায় যেতাম, তা নয়; কিন্তু একটা স্বান্ত্বনা ছিল যে, চাইলেই যেতে পারবো। যাওয়া হতো অধিকাংশ দিনই, হয়তো বই কেনা হতো না, দেখা হতো না কারোর সঙ্গেই; কিন্তু মেলা চত্বরে খামোকাই বসে থাকতে ভালো লাগতো, কিংবা অনর্থক ঘুরাঘুরি।
লেখকদের আর প্রকাশকদের বইমেলায় প্রতিদিন যাওয়ার নির্দিষ্ট কারণ থাকে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিটা বইমেলাতেই আমার সরব উপস্থিতি ছিল- সেই সরবতা অবশ্য কেবল আমাতেই বিরাজমান। এর মাঝে মাত্র দুটো বছর আমার নতুন বই বেরিয়েছিল মেলায় - ২০১০ ও ২০১৩ সালে। ২০১৩ অর্থাৎ গত বছর আমার সম্পাদনায় বেরিয়েছিল ‘বাংলাদেশের শিক্ষা: সমসাময়িক ভাবনা’ বইটি, প্রকাশক শুদ্ধস্বর। ফলে ওই দুটো বছরের অনুভূতি অন্য বছরগুলোর মতো ছিল না। আবার ১৯৯৯-২০০২ সাল পর্যন্ত সময়গুলোতে বইমেলায় শিক্ষাবার্তার স্টলে বসতাম নিয়মিত। ওই সময়ের অনুভূতি ছিল একেবারেই অন্যরকম। কিন্তু সব অনুভূতি ছাপিয়ে এবারের বইমেলা আমার কাছে একেবারেই দূরের এক অনুভূতি জানান দিচ্ছে- কাছের, নৈকট্যের সেই অনুভুতি আবার ফিরে পাবো কিনা জানা নেই। না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এক ধরনের বিচ্ছেদ ঘটেছে আমাদের মধ্যে, তার দায়ভার কিংবা দোষটুকু কেবল আমারই। বইমেলার কোনো দোষ নেই এতে।
সত্যি বলতে কি, বইমেলা থেকে আমি তেমন কোনো বই কিনি না। সারা বছর যে বইগুলো কিনি, সেগুলো পড়ে শেষ করতে পারি না; বইমেলায় নতুন করে কেনার মতো পয়সাও থাকে না। এখন আরও গরীব হয়ে গেছি, ফলে মেলা আমার কাছে কেবল আফসোসেরই বিষয় এখন। কিন্তু এই আফসোসটুকুও হয়তো থাকতো না, যদি অন্তত প্রতিদিন একবার করে মেলায় যেতে পারতাম। বইমেলা তো শুধু মানুষ আর বইয়ের মধ্যকার বন্ধন সৃষ্টি করে না! পৃথিবীর সবচেয়ে দামী যে বই, যে বইয়ের সংখ্যা এখন প্রায় ৭০০ কোটি, সেই বই, মানুষ-বইয়ের পরস্পরের সঙ্গে এক ধরনের অদৃশ্য বন্ধনও সৃষ্টি করে দেয় আমাদের এই বইমেলা। বন্ধুরা একেকটি বই কেনেন, সেগুলো ফেসবুকে প্রচার করেন, ব্লগে লিখেন সেগুলোর কাহিনী কিংবা শুধু প্রচ্ছদটুকু ধরেই তাদের আবেগ-অনুভূতির কথা বলে যান- সেগুলো পড়ে হিংসা হয় সত্যি, কিন্তু আন্দোলিতও করে বেশ। বন্ধুভাগ্যে আনন্দিত হওয়া সুবন্ধুর লক্ষণ, কিন্তু, সত্যি কথাই বলি, বইয়ের ক্ষেত্রে, যখন দেখি বন্ধুরা নানা বই কিনছেন, পড়ছেন, ভাগাভাগি করছেন, তখন আনন্দিত হতে পারি না- প্রবল হিংসার জন্ম হয় নিজের মধ্যে- নিঃসন্দেহে এ এক ধরনের ছোটলোকামি।
ঢাকার অধিকাংশ জিনিস আমি অপছন্দ করি, খোদ ঢাকাকেই অপছন্দ করি; কিন্তু যে গুটিকতক জিনিসের জন্য ঢাকাকে অতুলনীয় মনে হয়, তার একটি হলো বইমেলা। এই মেলার জন্য আমার পরাণ কাঁদে। সেটার তীব্রতা টের পাই কেবল আমি। কষ্টপূর্ণ অনেক অনুভূতি লুকিয়ে আছে আমার মধ্যে, বইমেলা সেখানে নিজের মতো করে জায়গা করে নিয়েছে।
ঢাকার অধিকাংশ জিনিস আমি অপছন্দ করি, খোদ ঢাকাকেই অপছন্দ করি; কিন্তু যে গুটিকতক জিনিসের জন্য ঢাকাকে অতুলনীয় মনে হয়, তার একটি হলো বইমেলা। এই মেলার জন্য আমার পরাণ কাঁদে। সেটার তীব্রতা টের পাই কেবল আমি। কষ্টপূর্ণ অনেক অনুভূতি লুকিয়ে আছে আমার মধ্যে, বইমেলা সেখানে নিজের মতো করে জায়গা করে নিয়েছে।
কথাটায় ১ লাখ লাইক!
অনেক ধন্যবাদ শান্ত ভাই।
বই মেলায় যাওয়াটা নেশার মত।
আমিও বই মেলায় বই কিনতে যাই না যাই নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে নতুন প্রচ্ছদ দেখতে !
বইমেলায় অনর্থক ঘুরাঘুরি করাটাও আনন্দের।
বইমেলা মানে প্রাণের মেলা, শান্তর লেখার সাথে একমত- "বছরে তিনটা ফেব্রুয়ারী আসুক, তাতে তিনটা বইমেলা হোক।"
বছরে ফেব্রুয়ারি একটাই থাকুক। এর আবেদনই অন্যরকম। তিনটা ফেব্রুয়ারি এলে হয়তো আবেদনটুকু নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বছরের এই একটা মাস... দূর্দান্ত কাটে
ইশকুলতো বন্ধ... আসছেন নাকি?
যাওয়ার ইচ্ছা আছে, ইশকুলের ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ কিন্তু খোদ ইশকুল তো বন্ধ না!
বইমেলা নিয়ে একটা অপূর্বঅনুভূতি এটা।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এ মেলার বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। ঠিক বিকেন্দ্রীকরণ নয়; একই আদলে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর-এ আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমি অথবা জেলা পাবলিক লাইব্রেরি প্রকাশকদের সহযোগিতায় এ উদ্যোগটা নিতে পারে। তাতে আপনার দু:খ ঘুচবে সেটি বলছি না। কিন্তু বইমেলা আরও অনেক পাঠকের কাছে পৌছাতে পারবে।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ঢাকার বইমেলা আসলে একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। জেলাভিত্তিক বইমেলা হলে তো দারুণ হয়, কিন্তু তা বোধহয় ঢাকারটায় না যাওয়ার অনুভূতি পূরণ করতে পারবে না।
কবে আসবেন গৌতম দা স্যার? আগেভাগে পোষ্ট দিয়েন, তাইলে যাব, বই গিফট না দিলেন, চা তো খাওয়াবেন! আপনার সাথে দেখাও হবে।
কবে যে যাই! আপনারা তো যেতেও বলেন না!
মন্তব্য করুন