দ্রোহ ও দহন
রূপবতী কন্যাদের কাহিনী যেমন হয় ঠিক তেমন লাগলো না আমার রূপার গল্পটা। কয়েক দশক ধরে রূপা নামের যে চরিত্র আমরা চিনি তেমন নয় কেন রূপা এ প্রশ্নটা স্ট্র দিয়ে জ্যুস খেতে খেতে আমার মনে হচ্ছিলো। এ মনে হওয়াটা আজ প্রায় তিন বছর হতে চললো কিন্তু আমার মাথা থেকে অক্ষরের রূপ দিতে সময় পাওয়া গেল না। আজ আবার রূপার সাথে দেখা হওয়াতে আমার মাঝে ফ্ল্যাশব্যাক মতো হচ্ছে। এও আমি জানি বরাবরের মতো নিজের দৈনন্দিনে আবার ডুবে যাবো। এসব মনে করার মতো যে মনটা লাগে সেটা আমার ঘুমিয়ে পড়বে কোন উত্তেজনা ছাড়াই।
কেন যে লেখালেখি নামক ঘুণপোকা এভাবে ঘোরে! বাচ্চাদের চিৎকারে কথায় মনোযোগ কি কোথাও থিতু হবার জো আছে! এ রাত সাড়ে আটটায় কোথায় জ্যান্ত হাতি পাওয়া যাবে চিন্তা করতে করতে চুল আরেক দফা পেকে যাবার যোগাড় যখন তখন রূপা আমার সাথে একই টি-শার্টের নীচে ঘুরতে থাকাই ভালো।
ভেবেছিলাম একসাথে ঘোরাটা ভালো হবে আটত্রিশ ডিগ্রী গরমে দুজন একসাথে ঘোরা আসলে কোন সুখকর ব্যাপার নয়। হাত অজান্তেই ল্যাপটপের ব্যাগের দিকে চলে গেল। রূপাকে নামাতে কী-বোর্ডের দিকে ঝুঁকে পড়েছি কি পড়িনি টিভিতে হালকা স্বরে ভেসে এলো গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মৃত্যু সংবাদ। বছরের পর বছর ধরে না বুঝতে পারা যাদু বাস্তবতার জনকের মৃত্যু আমাকে বাস্তবে টেনে এনে বলতে থাকলো রূপার গল্পটা আসলে আমার বিষণ্ণ প্রেমিকার চোখের মতো।
সাহিত্যের ব্যাকরণ না জানা সে সাথে সাহিত্য করার অকারণ ইচ্ছা কতটা বিপজ্জনক তা নিজের লেখার উপর চোখ বোলালে টের পাই।
উবু হয়ে জুতার ফিতে বাঁধাটা কি কোন কঠিন কাজ! মোটেই না। অথচ এটা করতে গিয়েই মাথাটা টলে গেল রূপার, লাঞ্চটাও তাড়াহুড়োতে করা হয়েছে হাফ। এবেলা এ এলাকা ছাড়তে না পারলে আজ আর বাসায় ফিরতে হবে না। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধন উপলক্ষে সতোরো তারিখ প্রথমে অফিস বন্ধ ঘোষণা করলেও মন্ত্রীর আবার কি মনে হতে ঘোষিত ছুটি বাতিল করলেন। স্টেডিয়ামের আশেপাশে যান চলাচল বন্ধ করে মন্ত্রী মনের সুখে অফিসগুলো খুলে দিলেন। তিনটার ভেতর এলাকা ছাড়তে হলে প্রথমে যেতে হবে হেটেঁ, তারপর রিকশায়, এরপর ট্রেনে। এ কাজগুলো করতে গিয়ে সবসময়ের ফিট্ রূপা আজকে ঘেমে নেয়ে একাকার। মনের ভেতর বুড়বুড়ি কাটছে সিলেট বেড়ানোর প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করার মৃদুমন্দ ক্ষোভ।
সিলেট যাবার জন্যে রূপা সিঙ্গাপুরে পাওয়া ট্রেনিংটা ও একরকমের এভয়েড ই করেছে। বাসের টিকেট ফেরত, হোটেল বুকিং ক্যান্সেল সব মিলিয়ে মেজাজটা চটাং হবার জন্যে যথেষ্ট। মাথা ব্যথায় অস্থির হতে হতে কোনরকমে রূপা একটা রিকশায় চড়ে বসে। বাসায় গিয়ে ঢুকতে পারলে হয়, সটান শুয়ে পড়বে। আজকে বাসায় মানুষজনও কম। মা বাবা গ্রামের বাড়ী, ভাই ভাবী আছে হয়তো। শরীর এত খারাপ লাগার কোন যুতসই কারণ খুঁজে পাচ্ছে না রূপা মোটেই।
এই গতানুগতিক গল্প লিখে আমি কি করব? রূপার গল্পটা তেমন জমছে না, এজন্যই তিনবছর হলেও লেখা হয় না। মেয়েদের সেই স্ট্রাগলের প্যানপ্যানে কাহিনী।
-রূপা তুই বাসায় আসার পরে কি হলো?
ফোনের সাউন্ডটা লাউড স্পীকারের মতো, মোবাইলের ভলিউম একটু কমিয়ে রূপাকে জিজ্ঞেস করলাম।
-আরে দোস্ আমি কি তখন জানি ঘটনা কোথায় প্যাঁচ খেয়েছে! আমি ঘরে ঢুকে কোনভাবে কাপড় চেঞ্জ করে আম্মুর রুমে শুয়ে পড়লাম কিছু না খেয়েই।
তারপর?
বিকেলে অনেক কষ্টে উঠলাম। বললাম আমি কিছু খাবো না এখনই ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে যাব। সবাই ভাবলো বরাবরের মতো আমর মাইগ্রেন পেইন উঠেছে। সেজন্য এ অবস্থা। আমি নিজেও তাই ভেবে গেলাম ঘুমাতে।
-সেই ঘুম কখন ভাঙ্গলো?
-ভোররাত চারটায়। সেইসাথে লুজমোশন। কোনভাবে ভোর চারটা থেকে সাতটা পার করলাম বাসার কাউকে ঘুম থেকে উঠালাম না।
-তোর জামাই
-আমার জামাই আগের মতোই বউ নামক ডিউটিতে দিচ্ছে কামাই।
হুম। আচ্ছা রাখি।
ফোন রাখতে রাখতে পরের কথা মনে পড়লো আমার। রূপার ভাবী ডায়রিযার এ অবস্থা দেখে রূপার ভাইকে দিয়ে ডাক্তার এনে স্যালাইন পুশ করে দিলো। ডাক্তার অনেকবার জিজ্ঞেস করলো রূপা প্র্যাগন্যান্ট কি না। রূপা সে আশা অমূলক ভেবে নিশ্চিন্তে স্যালাইন দিতে বললো ডাক্তারকে।
আঠারো উনিশ বিশ একুশ রূপা অফিসে গেল না। এর মাঝে রূপা মিরাকেল হলেও হতে পারে ভেবে প্র্যাগন্যান্সি টেস্ট করলো। পজিটিভ।
ল্যাব টেস্ট পজিটিভ।
রূপার পুরো পরিবার আনন্দে আত্মহারা।
এখন আমি বুঝতে পারছি আসলে রূপার গল্পটা এখান থেকেই শুরু।
রাজা রূপাকে খবর শুনেই এক অদ্ভূত হিসাব জানার প্রক্রিয়া শুরু করলো-
-তুমি ট্রেনিং নিতে গেলে কবে?
১৫ তারিখ গতমাসের।
-সোহেলর অফিসে গেলে কবে?
ঐদিনই।
-এই তো হিসেব মিলে যাচ্ছে।
কিসের হিসাব?
-না আমার ক্রেডিট কার্ডের।
রূপা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই প্রশ্ন শুনতে শুনতে একসময় জিজ্ঞেস করে ফেলে কি জানতে চাও সরাসরি বলো না। এক কথা আর কতবার জিজ্ঞেস করবে?
-ফ্যাটাসটা কি আমার?
রূপা কোন কথা না বলে ব্যাগ গুছাতে থাকে, বমির পরিমাণ এত বেশী যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ফরজ।
রূপবতী বউকে অকাজের রাজার সন্দেহ। রূপার কথা ভেবে আমার তেমন কোন দুঃখবোধ হয় না। ওর নিজের জীবনের এসব জটিলতার জন্যে ও নিজেই দায়ী। আমরা হাজারবার মানা করেছি নিজের সাথে যায় না এমন মানুষের সাথে জোট না বাঁধতে, রূপা কি এক ব্যালেন্সের ইকুয়েশন করতে গিয়ে পুরো সম্পর্কটাই একটা কোশ্চেন মার্ক এর উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
অহেতুক জটিলতা আমার চরম অপছন্দ, তাই রূপার জন্যে বাস্তবিকই আমার মনে কোন কষ্টবোধ দানা বাঁধে না, তারচাইতে বরং একে আমার একটা ইন্টারেস্টিং কেস স্টাডি মনে হতে থাকে। যেটার ডালপালাগুলো বেশ হৃষ্টপুষ্ট।
অফিসে খবরটা জানাতেই খুব শুকনো অভিনন্দন বার্তা আদান প্রদান হলো। যেন এ এক শতাব্দী প্রাচীন কুকর্ম, তুমি ঘুমিয়েছো এবং ঘুমানোর ফল সবাইকে জানাচ্ছো; তার সাথে তুমি এও চাচ্ছো তোমাকে শারীরিক এই বিশেষ অবস্থার জন্যে একটু ছাড় যেন দেয়া হয়। রূপা কর্পোরেট অফিসের কেতা কিছু কিছু জানে তাই একবারে ছুটির আবেদন জানায়। ছুটি মঞ্জুর না মঞ্জুর পরের ব্যাপার, ও আসতে পারবে না এটাই মোদ্দা কথা। ঢাকা শহরে বাইশ কিলোমিটার রাস্তা আসা যাওয়া মানে চুয়াল্লিশ কিলোমিটার রাস্তা আপ ডাউন করা এ শরীরে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ; রূপা প্রথমবারের মতো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। অফিসে যা হবার হবে, চাকুরী থাকলে থাকবে না থাকলে নাই এমন একটা মনোভাব নিয়ে রূপা গৃহযাপন শুরু করে।
-জানো জালাল ভাই এর ওয়াইফের মিসক্যারেজ হয়ে গেছে, রিকশা করে অফিসে আসতো যেত, এ কারণে না কি এ অবস্থা।
রূপা রাজার দিকে ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। একটা ভালো কোন ঘটনা বলে না। এমনিতেই রূপার দিনরাত ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, না খেতে পারে না ঘুমাতে পারে, বমি বমি এবং বমি। পানি খেলেও বমি। তার উপর রাজার দেয়া মানসিক চাপ, বাচ্চার পরিচয় অস্বীকার, ঘন ঘন হসপিটালে যাওয়া এসব তো আছেই। আছে নিদারুণ আশঙ্কা, পনেরোদিন হয়ে গেছে এখনো বাচ্চার হার্টবিট পাওয়া যায়নি। চাকুরীটা রাখতে পারবে কি না বুঝতে পারছে না।
রাজার বলা বিভিন্ন ঘটনাগুলো শুনলে মনে হয় কষে একটা মার দেয়া যেত!
-রূপা আপা আপনার তো ১৫দিন ছুটি হয়ে গেছে, স্যার বলেছে আপনি যেন জয়েন করেন। আর ছুটি এক্সটেন্ড করা যাবে না।
আমি মেডিক্যাল পেপার সহ অ্যাপ্লাই করব। আমার জার্নি করা নিষেধ।
রাতগুলো এত দীর্ঘ। ঘুম আসে না। কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না ডাক্তারের এডভাইস ছাড়া। অনেক
বলে কয়ে বারবিট নামে একটা ঘুমের ওষুধ পেয়েছে ডাক্তারের কাছ থেকে রূপা যেটা খাওয়া না খাওয়া ওর জন্যে সমান। আজকে সারাদিনে ১২ বার বমি করেছে রূপা, রাতে জাস্ট টকদই সামান্য ভাত খেয়েছে। বহুদিন পর হঠাৎ রূপার চোখ দুটো লেগে যায় তন্দ্রায়।
একা তিনতলায় কত বছর রূপা,অকস্মাৎ দম বন্ধ হয়ে রূপা ধড়মড় করে মশারীর মধ্যে উঠে বসে,ভীষণ চেষ্টা করে একটু বেশী অক্সিজেন পাবার জন্যে,হাঁসফাঁস করা অবস্থাতেই ভেতরে দম ঢুকে রূপার। রূপা লহমায় বুঝতে পারে ওর বাচ্চার হার্টবিট ঢুকলো ওর ভেতর। রূপা ফজরের নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
রূপার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়, বিনা চিন্তায় আলট্রাসনো করতে ঢুকে পড়ে, টেকনিশিয়ান বলে বেবির হার্টবিট পাওয়া যাচ্ছে।
এবার সময় এসেছে শ্বশুরকূলকে বলার তাদের পুত্র রূপার সাথে কি ব্যবহার করছে। কিভাবে তার সন্তানের পরিচয় নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছে রূপাকে।
আমি রূপাকে বলতে থাকি এগুলো বলে কোন লাভ হবে না। তোদের ভেতর বেসিক বোঝাবুঝির অভাব, সেজন্যই অবিশ্বাস। রূপা বুঝতে চয় না। রাজার ভদ্র নিপাট ভালো মানুষের মুখোশটা এ বাড়ি ও বাড়ি দু বাড়িতেই নিমেষে খসে পড়ে। রাজা দিনে দিনে আরো হিংস্র হয়ে উঠতে থাকে।
আমাকে তো একটা কাছাকাছি শাখায় ট্রান্সফার দিলে আমি চাকুরীটা চালাতে পারি।
না আপনি যে পোস্টে ঢুকেছেন সেখানে আপনাকে বদলীর নিয়ম নেই। আমাদের কোম্পানীতে আপনার দু বছর হয়নি আপনাকে মাতৃত্বকালীন ছুটিও দেয়া যাবে না।
স্যার আমার বিয়ে হয়েছে ছয় বছর, এত বছর পরে আমি কনসিভ করেছি, আমাকে একটু সাহায্য করুন বদলী করে দিন। আমার চাকুরীটা থাকুক।
না রূপা আপনাকে আমরা বদলী করতে পারব না,আপনার ছুটি শেষ। এবার লিভ উইদাউট পে নিবেন অথবা রিজাইন করবেন। স্যার আমি কি একবার ডিভিশনাল হেডের সাথে দেখা করব?
দেখা করতে পারেন।
রূপা ডিভিশনাল হেডের সাথে দেখা করে। তিনি সিগারেটের ধোঁয়ায় নিজেকে ঢেকে একই কথা বলেন, বদলী হবে না-রিজাইন করেন। কিংবা এইচআর হেডের সাথে দেখা করেন।
আপা আজ হবে না, এইচআর হেড মোবারক সাহেবের মুড ভালো না, তার পিএস রুনা বলেন।
আপু একটু দেখেন না, আমি এ শরীরে এত দূর থেকে এসেছি। রূনা আপা আমার আ্যাপ্লিকেশনটা কি স্যারকে দিয়েছেন?
রুনা মোবারক সাহেবকে অ্যাপ্লিকেশনটা দেয় তো নি ই রূপাকে একবার দেখাও করতে দিতে রাজী না, যেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার অ্যপায়েন্টমেন্ট চাচ্ছে রূপা।
রাজার সাথে সম্পর্কটা জীবন্ত অর্থবহ থাকলে রূপা এ চাকুরী কবেই ছেড়ে দিতো।
আপু আমি সিয়াম,, এইচআর থেকে। আপনাকে একটা বুদ্ধি দেই, আপনি বড় কোন জায়গা থেকে ফোন দেয়ান তাহলে আপনার বদলীটা হয়ে যাবে।
আপনার তো হিমোগ্লোবিন কম, ওয়েটও কম, বাচ্চার গ্রোথ ভালো না। আপনি রেস্টে থাকেন। একদম মুভ করবেন না-ডাক্তারের এহেন ও কথায় রূপা আরেকবার ভাবিত হয়ে যায় আগামীর কর্মপদ্ধতি চিন্তা করে।
আপু মোবারক স্যার আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন, চলে আসেন আজকে হেড অফিসে। রূপা মনে মনে হাসে এখন ফোন করে দেখা করতে চাচ্ছে... ঠেলার নাম বাবাজি। বদলীটা এবার হবে রূপা জানে।
রূপা পরের দিন বদলীর কপিটা নিয়ে চলে আসে। বাসা থেকে এখন কর্মস্থলের দূরত্ব ১৫ মিনিট। প্রেশার ৫০ এ নেমে গেলেও কষ্ট করে রূপা অফিসে জয়েন করে। শাখা অফিস রূপাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করে না। বসার জায়গা কাজের ডিপার্টমেন্ট কিছুই দিতে রাজী না। তাদের উপর ডিমওয়ালা ডবল ডেকার বাস জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, এসব কথা রূপার কানে ভেসে আসে। রূপা গায়ে মাখে না। এগুলো ওর কাছে এখন গৌণ। যেমন গৌণ বাথরূমে বমি করে পড়ে থাকা রূপাকে তুলতে আসার ব্যাপারে স্বমেহনে ব্যস্ত রাজার দেরী করা।
আমি আবার রূপাকে বলি রূপা এসবের পরেও তো তোর চাকুরীটা আছে, মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য হয়তো বা পদোন্নতিটা পাস নি। তোর কাজের ক্ষেত্রটা বদলে গেছে। রূপা বলে সেটাই আমার লড়াইটা আমাকেই লড়তে হয়েছে। হিমোগ্লোবিন ৮ এ নেমে যাওয়াতে রক্ত দিয়েছে ভাই, হাসপাতালে থেকেছে মা, রাজা বাসায় ঘুম।
তুই আশা করেছিলি সে তোকে ফিল্মের প্রেমিকদের মতো মুখে তুলে স্যুপ খাওয়াবে!
না সেটা রূপা আশা করেনি। ওদের সম্পর্কটা তেমন নয়। দুটি সামাজিক চাপ না নিতে পারা মানুষ যখন শুধু কাগজের সম্বন্ধে বাঁধা পড়ে থাকে কিছু সুবিধা না হারানোর জন্যে তখন তাদের যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হয় তেমন ব্যবহার রাজার কাছ হতে রুপার আশা ছিল। আমি বলতে বাধ্য হই রাজা তো কখনো শখ করে ও বাচ্চা চায়নি তাহলে তুই কেন বাচ্চার দায়িত্ব তার উপর চাপানোর জন্যে এত মরীয়া!
ফোনের ওপ্রান্তে ভেসে আসা দীর্ঘশ্বাসে আমি রূপার কষ্ট এর স্বরূপটা একবার বোঝার চেষ্টা করি, আবার বিরক্ত হই।
রূপা ঐসব দিনগুলো ভাবে ক্যালেন্ডার গুণে রাজার সাথে ঘুমানো..কী অস্থির সেই ঘুমানো, কোন ভাব নেই ভালোবাসা নেই, একটা বাচ্চার জন্যে জান্তব এক আয়োজন, প্রতিবার রূপা ভাবে এবার বুঝি কাঙ্ক্ষিত মুক্তি মিলবে। আর ক্যালেন্ডারে নিষ্ফল দাগ দিয়ে শয্যা পাততে হবে না।
সেই সেদিন যেদিন শেষ ঘুম ২১ জানুয়ারী, তার আগের যে লেনদেন সেদিন রূপা কখনোই না পৌঁছানো চূড়ান্ত লহমার আগে, রাজার ফুরিয়ে যাবার আর্তনাদের পূর্ব মুহূর্তে নিজের আয়াতুল কুরসী পড়ার নিজেকে ভুলবার সেই প্রয়াসের কথা আজো মনে করে, আমাকে বলে।
আমি আমার দার্শনিক মনোবৃত্তিতে ভাবি মানুষ বেঁচে থাকার একটা কার্যকারণ চায়। রূপাও একটা শিশুর ভেতর তা খুঁজতে চেয়েছে সব ব্যর্থতা অপ্রাপ্তি শেষে।
একটা বিষণ্ণ, কলহ সংকুল দিন রোদে শুকোতে দিয়ে রূপার মেয়ে যেদিন সুস্থভাবে পৃথিবীর গোড়ায় চলে এলো, আমি সেদিন থেকে ভেবে যাচ্ছি মানুষ চাইলে কি না পারে!
এ শরীরে চাকুরীও বাঁচিয়ে মা হয়ে গেল রূপা। কারো স্বীকৃতি অস্বীকৃতি বিলীন হয়ে যায় রূপার কণ্ঠে ভেসে আসা শব্দগুচ্ছে ”আমার মেয়ে কি করেছে জানো...”
রূপার বিদ্রোহ কাজের জায়গায় ব্যক্তিগত জীবনে সব দগ্ধে সোনা হয়ে যায় নিজের স্বাবলম্বনের আনন্দে।
পড়লাম.... চলুক!
চলুক
চমত্কার শুরু, লেখার স্টাইলটাই নতুন। এক্সপেরিমেন্ট নাকি ইভুল্যূশন?
পরবর্তী অংশ লিখার সময় পাচ্ছি না
গল্পটা এখানেই এডিট করে যেমনতেমনভাবে শেষ করলাম
মন্তব্য করুন