গল্প: কিন্তু পূরণের জন্য মনোনীত হয়ে গিয়েছিল পুরোনো একটা ইচ্ছে
মজার বিষয় হচ্ছে, আমি সবসময় স্বপ্ন দেখেছি, বিদেশে গিয়ে পড়া-শুনা বা দোকানের কাজ বা অন্য যেকোন কিছু করে দেখতে হবে, দেশের বাইরে জীবনটা কেমন; কিন্তু কপালে কখনোই সে সুযোগ জুটলো না।
অথচ তুমি সবসময় চাইতে রুটে ফিরে যেতে, সুযোগ হলে গ্রামে একটা স্থায়ী জীবন গড়ে নিতে, সেই তুমি কি না চলে গেলে সুদূর বিদেশে। আর আমি আটকে থাকলাম আমাদের এই দুইরুমের ফ্ল্যটে। স্বপ্নের এই বাসাটায়।
পৃথিবীটা যে খুবই আজব একটা জায়গা সে কথা কে না জানে? তাও আমি দেখি, ওস্তাদ সবসময় এটা আমাকে জানানোর নানান তরিকা খুঁজে খুঁজে বের করার পেছনে একটা ভালো রকম সময় খাটান।
যে কারণে ছোটকাল থেকে এরকম নানাবিধ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমি বার বার জেনেছি, এই পৃথিবী এক আজব জায়গা। বা বলা যায়, আসলে আমাদের নিয়তিই হচ্ছে এমন অবিশ্বাস্য একটা জায়গায় জীবন কাটানো।
টেবিলের ওপর পড়ে থাকা শেভরনের একটা কার্ডে সেদিন দেখি তিতির পাখির ছবি। দেখে তোমাকে মনে পড়ে গেলো। অতলান্তিক সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া টুকরো-টাকরা স্মৃতিগুলো যেন জলের অতল থেকে পাঠিয়ে দিলো কয়েকটা বুদবুদ। ওরা পানির ওপরে উঠতে গিয়েই টুপ করে ফুটে যাচ্ছিলো, আর আমি পুরোনো দিনের স্মৃতিকাতরতায় বিভোর হয়ে যাচ্ছিলাম। কত শতশত কথা এসে মনে পড়ার জন্য কিউ দিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলো, অবাক হয়ে দেখছিলাম।
বিয়ের পর প্রথমদিকে যখন আমরা রান্না করতে জানতাম না একদমই, তখন একবার ইলিশ মাছ রান্না করেছিলাম কাকরোল দিয়ে। কাকরোল চাকা চাকা করে কেটে বিচিগুলো ফেলে দেয়া হলো, সবুজাভ হলুদে মিশ্রিত একটি সবজি যেটার ভেতরের দিকে টকটকে লাল; সেটাকে ছেড়ে দেয়া হলো তেল-মশলা মাখানো ইলিশ আর পেঁয়াজের মধ্যে। রান্নার মাঝামাঝি অবস্থায়। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বলেই হয়তো, সেই কাকরোল-ইলিশের স্বাদ আজো মনে আছে। এখন আমি আর খেতে পারি না, কিন্তু তাই বলে কোনকিছুর স্বাদ ভুলে যাই নি।
তবে আমি এখন ভালো রান্না করতে পারি, তোমাকে আরামসে ভাপা ইলিশ আর চন্দ্রমুখী আলুর ভর্তা করে খাওয়াতে পারবো। সঙ্গে চিংড়ির পুর দিয়ে করলা অথবা আলু-করোলার পুড়পুড়ি থাকতে পারে; থাকতে পারে পুঁইশাক বা লতির সঙ্গে ইলিশের মাথার কাটাকুটো দিয়ে রান্না করা চচ্চড়ি; কিংবা তুমি চাইলে কোনকিছুই না, সঙ্গে থাকবে শুধু মাটির চুলায় পোড়ানো বেগুন এবং সর্ষের তেলে ভাজা শুকনো মরিচের ঝাল ঝাল ভর্তা।
দেয়ালে টাঙানো মস্ত মনিটরটা মাঝে মাঝেই আমাকে ভ্যংচায়। সামনের ফোমের জোড়া গদিটায় শরীর ডুবিয়ে আমি সে ভ্যাংচানি দেখি। টিভিটা তুমি কত শখ করে কিনেছিলে! এটা ছাড়া মুভি দেখা না-কি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে তোমার।
আমি ভাবি, কালে কালে কত দেখলাম! আজীবন আমি ১৪ ইঞ্চি সিআরটি মনিটরে সিনেমা দেখে আসছি, কোনো সমস্যা হয় নি; আর একজনের চিকনমতো ৪২ ইঞ্চি এলসিডি মনিটর ছাড়া চলছে না, তাও আবার দেয়ালঝোলা হতে হবে।
তবে এ কথা সত্য যে, সেবার আমরা দু'জন থ্রী-কোয়ার্টার প্যান্ট আর গেঞ্জি পরে, কম্বলের ভেতর ঢুকে, ফোমের ভেতর ডুবে যেতে যেতে ব্লাড ডায়মন্ড সিনেমাটি দেখে আসলেই খুব মজা পাইসিলাম। মুভিশেষে তোমার ডায়লগটাও দারুণ ছিলো, ইশ্ নায়িকাটার সঙ্গে তোমার যদি বিয়ে দিয়ে দিতে পারতাম ভালো হইতো, বেচারী বড় দুঃখী!
আমি অবশ্য বুঝি, আমাকে মেয়েটির ঘাড়ে গছিয়ে তোমার মনে মনে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-র সঙ্গে কিছু একটা করে ফেলতে। আজ ভালো লাগছে এই ভেবে যে, সেই রাতে এরপরে আর তোমাকে অন্য কিছু ভাবার বা করার সুযোগ দিই নি।
আমাদের হোম থিয়েটার, আমাদের সেই হোয়াইট ফোম, এমনকি তার কুশনও একই রকম আছে। খালি মাঝে মাঝে যখন ওগুলো কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে ভ্যাংচায়, তখন আমি সে সবের মাঝে তোমায় খুঁজে পাই।
তুমি কোন একটা কিছুকে থোড়াই কেয়ার করতে। আমি সবকিছু নিয়ে ভাবতে ভাবতে মাথা ঘামিয়ে ফেলতাম। ঘাম যখন জুলফি বেয়ে নামা শুরু হতো, তখন হয়তো তুমি নিতান্ত অনিচ্ছায় সেটা হাতের আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিতে।
ঐ অতোটুকুকেই ক্রেডিট কার্ডের ব্যলান্স হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। তাই তো তোমার সবকিছু আমার ভালো লাগতো। প্রতিটি কথা, প্রতিটি নড়াচড়া, হাসি, কিল, ঘুষি সব।
আমার স্বীকার করতে মোটেও দ্বিধা নেই, আমি তোমার গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলাম। তোমার সঙ্গে কি একটা মুভি যেন দেখতে দেখতে একবার কল্পনায় আমি ইতালিতে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে পাহাড়ের পর পাহাড় জুড়ে কমলা আর জলপাই’র বাগান। একদিকে আগুনের মতো কমলা রং চোখ ঝলসে দিচ্ছে, আরেকদিকে মায়াবী একটা অন্ধকার, তাকালেই চোখ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। মাঝখানের সরু পথ ধরে তুমি উঠেই চলেছো তরতরিয়ে।
তোমার ছোট ছোট করে কাটা চুলগুলো ছিলো অনেক মোটা, শক্ত আর ঘন। কোঁকড়া চুলওয়ালাদেরও এমন হয় না। তাই তোমার চুলটা আমার কাছে দারুণ অন্যরকম মনে হতো। পৃথিবীর মানুষ একটু 'ভিন্নরকম' হওয়ার জন্য কতকিছুই না করতে চায়। অথচ তুমি না চাইতেই কত কিছু পেয়েছিলে।
সেই পাহাড়ে চড়ার সময় তোমার পুতুলের মতো কাঠামোটাকে যেমন অন্ধভাবে অনুসরণ করছিলাম, সেটা করেই আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিধি বাম, পুরোনো একটা ইচ্ছে পূরণের জন্য মনোনীত হয়ে গেল।
একটা রোড এক্সিডেন্ট হলো। আমাদের এই ফ্ল্যাটটায় অদৃশ্য আমি হয়ে আটকা পড়ে যাবার পর বুঝতে পারলাম; আমি যে চিরকাল তোমার ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতে চেয়েছি মনে মনে, আল্লাহপাক সেই ব্যাবস্থাই করেছেন। তবে পৃথিবীটা যে খুব অদ্ভুত একটা জায়গা, সেটা প্রমাণ করতে ছাড়েন নি মোটেও।
---
গল্প লেখার সময় কি ক্ষিদে লেগেছিলো বেশি? বাই দ্যা ওয়ে, আলু করোলার পুরপুরি জিনিসটা কি?
একটা ইনফো দেন, ঐ পারেও কি রেঁধে খেতে হয় নাকি? আপনি ওতো ভালো রান্না ঐপারে যেয়ে কেমনে শিখলেন? ঐপারেও কি তাহলে কঁচুর লতি - ইলিশের মাথা মেন্যু? বেহেশতের মেন্যু নাকি দোজখের মেন্যু এটা?
গল্প ভালো বলতে বলতে মুখ ব্যাথা, হাত ব্যাথা। তাই আজকে আর কিছু বললাম না। এরপর থেকে যেদিন গল্প পঁচা হবে সেদিন এসে বলে যাবো আজকে ঠিক হয় নাই।
পুঁইশাক দিয়ে ইলিশের মাথা-কাটাকুটোর চচ্চড়ি, বেহেশতি খানা।
মিয়া একটু খারাপ কিছু লিখতে পারো না।যা দিয়ে তোমারে দাবাড় দিবো। এত ভালো লিখো কি করে??
আর তোমার বাসায় আমার দাওয়াত কবে??তারিখ বলো?
অফট পিকঃ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।করবা??
রাসেলের অফ টপিক সমর্থন করলাম।
ভাই আমারে খুঁজেন ক্যন? আমি কি দুষ করছি?
সরাসরি না করো।কিছু মনে করুম না।প্যাচাও ক্যান??(সিরিয়াস কমেন্ট)
আরে, সিরিয়াস হন কেনু? আপ্নে আগে দেশে আসেন। না তো করি নাই।
হ্যাঁ অথবা না কও।নো পিছলাপিছলি।
আমার ইমেল আইডি-russel_acct@yahoo.com
কেন হাসলাম কমুনা।
এইসব কয়া দিলে কেমনে কি রায়হান ভাই?
গোপন কোন কাহিনী আছে নাকি?
তানবীরার মত আমারও হাত আর মুখ ব্যাথা । তা'ছাড়া হাত দিয়ে কি লিখব, আর সবাই তাই নিয়ে আবার মীরকে পেচ্ছাপেচ্ছির মধ্যে জড়াবে, তাই চুপ থাকি ।
[পুঃ পুড়পুড়ি তো সবখানে হয়না, এটা কোথায় পেলেন?]
আরে না না নাজমুল ভাই। বিন্দাস্ বলেন। পেচ্ছাপেচ্ছি ব্যপার্স না।
আপ্নাদের এলাকায় কি পুড়পুড়ি হয়?
হয় না আবার ? একেক সময়ে একেক বস্তুর । আপনার এলাকা কোনদিকে ?
পুরো গল্পটার সাথেই মিশে গেলো মন।মীর সবসময় গ্রেট।
কমেন্টটা প্রিয়তে গেল। কমেন্টার অনেক আগেই প্রিয়তে গেসে। আর কি কৈয়াম?
এরকম ইচ্ছেপূরণকে মাইনাস। গল্পের প্রধাণ অংশ পড়ে বলতে ইচ্ছে হলো, ওরে আমার প্রেম......
*আমিও রাসেলের অফটপিক মন্তব্য পছন্দ করলাম।
প্রচুর বকেয়া মাইর জমসে বুঝতে পারতেসি। নাইলে লীনা'পু অ.ট. লাইক করবে ক্যন?
তয় লীনা'পুরে পাইলেই আমার খালি গল্প করতে ইচ্ছা করে। ইচ্ছাপূরণের আরেকটা ঘটনা কই। কলেজে পড়ার সময় বাংলা টিচার দুর্দান্ত সাহিত্য পড়াতেন। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার লেকচার শুনতাম। আমাদের পিচ্চি মফস্বল শহরে সাহিত্যিক হিসেবে তার নাম-ডাকও কম ছিলো না। তিনি যখন পঞ্চপান্ডবের দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের ব্যাখ্যা শুরু করতেন, তখন স্টাক্ হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কি করা যায়, জানতাম না।
আমার খুবই ইচ্ছে ছিলো, স্যরের সঙ্গে শেক-হ্যন্ড করার, তার খানিকটা কাছাকাছি গোত্রীয় ছাত্র হওয়ার এবং তার সান্নিধ্য পাওয়ার। তো ঐ শেক-হ্যন্ডের আশাটা ওস্তাদের কাছে ইন্টারপ্রীট হইলো, আমি একটু স্যারের স্পর্শ চাই -এরকমভাবে।
ওস্তাদ সেটা কবুল করলো। কলেজ থেকে টিসি কেন খাইসিলাম; সেই কাহিনী আরেকদিন কমু। ওস্তাদ আমার মনের আশা কেমনে পূরণ করলো বলি, কলেজের বাসস্ট্যন্ডে (কলেজ ছিলো শহরের বাইরে, বাসই যাওয়া-আসার সবচে' বড় ভরসা, সবার জন্য) ছুটির পর ভরা মজলিসে ঠাডানি চটকনা পড়লো অন মাই লেফট চিক্।
ষন্ড ব্যটার গায়ে মোষের মতো জোড় ছিলো, এক চটকনায় শ্রদ্ধা-ভক্তি সব মাথা থেকে ছিটকে বের হয়ে ধুলার সঙ্গে মিশে গেল। কারণ স্যার শুধু অভিযোগ পাইয়াই আমারে ঐ শাস্তি দিসিলো, পরে প্রমাণ হয় আমি জড়িত ছিলাম না। যেইটা আমি আইভি, হুমায়রা, সোনিয়া, তৌফিক, গালিব, ভটু, সাব্বির, রেজাদের সামনে চটকনাটা হজম করার সময়ই জানতাম।
গল্প শুনতে ভালো পাই, মীরের ইচ্ছে অব্যাহত থাকুক
এই গল্পটা বিশ্রী, মীর
[অন্দ্রিলা একবার আমাকে এমন কিছু বলেছিলো, এখন বুঝি কেন]
রজার দ্যট্ বস। আফারম্যটিভ টু য়ু।
মীর............
বাচ্চু তুমি তোমার গল্পে বেহেশতি খানা পাকাও আর আমি বাস্তবে তোর গল্প গোগ্রাসে খাই। তোর লেখা গুলো এতই মুখরোচক হয় যে, রসিয়ে খাবার কোন উপায়ই থাকেনা। গোগ্রাসেই খেতে হয়।আজকের লেখাটা এক নিমেষে খেয়ে ফেলার পর, মনের ভেতর কেমন শূণ্যতা বোধ হল। কেমন আহারে "আর নেই আর নেই একটা ভাব....."
ছ্যাক খাওয়ার গল্প, ব্যর্থ ভালোবাসার গল্প এবির পাবলিক খায়না ,আমি অনেক খাইটা খুইটা একখান লিখছিলাম (ইরা-অসি ও ভালোবাসা- বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী) কমেন্ট পাইছে মোটে ২২টা। সে থেইকা এবিতে গল্প পোস্ট দেয়ার স্বাদ মিট্টা গেছে। মীর, আপনি লেখেন ভালো...চালিয়ে যান।
এবার একটা সুখের গল্প লিখেন দেখি।
নাহ, কোথাও কিছু হইছে!
তবে এরকম ঝরঝরে গদ্য বিনা কারণে আসে না সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না।
এতক্ষণ একজন মৃত মানুষের গল্প পড়ছিলাম? কি সুন্দর চলছিল রোমান্টিক স্মৃতিচারণ, শেষে এসে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ।
মীর আপনার গল্পের নাম তো কপিরাইট আইনের খপ্পরে পড়ল বলে । যদি রবীন্দ্রভারতী এই ব্লগের ঠিকানা চেনে । রবিবাবুর একটা গল্প আছে কিন্তু ইচ্ছেপূরণ নামে । সাবধান । তবে বেঁচে যেতে পারেন ট্যাগে যদি লিখে দেন এটা পরমানু গল্প ।
মীরঃ দ্যা গ্রেট ।
অইখানে থাকে প্রেম, থাকে স্মৃতি, থাকে সুখ, প্রেমের সিম্পনি ;
অই বুকে প্রেম ছিল, স্মৃতি ছিল, সব ছিল তুমিই থাকো নি ।
শেষে এসে ভাল লাগছে। আমি ছ্যাকুগল্প ভাল পাই। মাঝে কিছুসময় ন্যাকা লাগছে। কিছু সময় ক্ষিদা লাগছে
হয়তো আকাশের বুকের গভীরে..
কিংবা তারও থেকে গভীরতর কোন এক অজানায়
তুমি বসে আছো নিবিড়,অসীম স্তব্দতার মুখোমুখী।
কত ইচ্ছাপূরণ হলো না!
সব ইচ্ছে পূরণ হতে নেই।
পৃথিবীটা সত্যিই আজব জায়গা!
ওস্তাদ সেই ব্যবস্থাই করেছেন!
সেইরাম।
ট্যাগ না দেখলে এটাকে স্মৃতিচারন বলেই ভেবে নিতাম!
মন্তব্য করুন