গল্প: ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে, তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
ঢাকা ইউনিভার্সিটির সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, দুইতলা। বেটি ফ্রাইডেনের দ্য ফেমিনিন মিসটিক বইটার মধ্যে নাক, চোখ, কান, মন সব ডুবিয়ে হারিয়ে গেছে তিতলি।
মেয়েটার আর ক'দিন পরে সিক্সথ্ সেমিস্টার ফাইনাল। পড়াশোনার ভীষণ চাপ, দেখলেই বোঝা যায়। ওকে একটু দুর থেকে দেখতে দারুণ লাগছে! চেয়ারের ওপর দুই পা তুলে আশপাশের, টেবিল, মোটা ডিকশনারি, জানালার কাঁচ, বাইরের কুয়াশা, পুরো পরিবেশটাকে কেমন জমিয়ে নিয়ে বসে পড়ছে মেয়েটা।
সায়ানের ইচ্ছে করলো, পেছন থেকে গিয়ে ওর দুই গালে নিজের দু'হাতের চারটা-চারটা ঠান্ডা আঙ্গুল ছোঁয়াতে। তবে লাইব্রেরীর মধ্যে এই কাজটা করা ঠিক হবে না। আশপাশের পন্ডিতেরা বিরক্ত হতে পারে। যদিও পন্ডিতদের বিরক্তি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না, তবুও একটু টেকনিক্যল সমস্যা আছে বলে চাইলেই আদর করে ওর গালে হাত ছোঁয়ানো যাচ্ছে না। কয়দিন ধরে মেয়েটা ভেতরে ভেতরে কেমন একটা রাগ পুষে রেখেছে এবং সেটা বোঝা যাচ্ছে। আগে সেই রাগটা ভাঙানো দরকার।
সে গিয়ে ওর পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো। লাইব্রেরীর চেয়ার টান দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হয়। ফোমের চেয়ারগুলো ছাড়া অন্যগুলোয় ছারপোকার আস্তানা। কামড়ে মেজাজটা সারাদিনের জন্য গরম করে দেয়। তাই ফোমের চেয়ার ছাড়া অন্যকোন চেয়ার না টানাই ভালো, এটা সে জানে।
সায়ানকে অনেকক্ষণ আগেই দেখেছে মেয়েটা। যখন ও দোতলার বড় দরজাটা দিয়ে লাইব্রেরী হলটায় ঢুকছিলো তখন থেকেই। পাশে এসে বসার পর তিতলি জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যপার? এত দেরি হলো কেন?
-ঘুম থেকে উঠতে পারছিলাম না, আলসেমী লাগছিলো ভীষণ।
-কেন? আমার সঙ্গে দেখা করতে হবে বলে?
সায়ান মনে মনে বললো, বাপ্রে বাপ্। গলার কি ভোল্টেজ!
কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পর তিতলি বললো, এত যদি বিরক্তি লাগে তুমি আমার সঙ্গে দেখা না করলেই পারো। কেউ তো মাথার দিব্যি দিয়ে বসে নেই।
-কই, সকাল থেকে তো মাথা আর মোবাইলের ওপর তুমি চেপেই আছো।
-ও, আমি তোমাকে জোর করে টেনে এনেছি? ভালো কথা, আমি যেহেতু এনেছি, আমিই আবার বলছি, চলে যাও।
-সকালে তাড়াহুড়োয় নাস্তা না করেই বাসা থেকে চলে এসেছি। না খেয়েই চলে যাবো?
-অবশ্যই চলে যাবে এবং আর কখনো আমার সঙ্গে দেখা করবে না।
-এমনকি কোন টাকাও নিয়ে আসি নি। সেটাও না নিয়ে চলে যাবো?
-মেজাজ খারাপ করে দিও না। তোমাকে চলে যেতে বলেছি, চুপচাপ চলে যাও।
লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আসলো সায়ান। এমনিতেও লাইব্রেরীর ভেতর ঢুকলে ওর কোনো কারণ ছাড়া মাথা বনবন করতে থাকে। কখন বের হবে সেই চিন্তায় চড়তে থাকে দুশ্চিন্তার পারদ। চট করে সরে পড়ার সুযোগটা তাই হাতছাড়া করলো না সে। অবশ্য জানে তিতলিরও সাধ্য নেই এখন আর বেশিক্ষণ ভেতরে বসে থাকার।
লাইব্রেরীর সামনে বেলালের দোকান। ক্যম্পাসটা আসলে এত ছোট যে চাইলেও কারো চোখের আড়াল হওয়া সম্ভব না। হয় বেলালের দোকান, নাহয় মধু, নয় আইবিএ, নাইলে সর্বশেষ ডিপার্টমেন্ট, এছাড়া আর কই-ই বা যাওয়া যায়?
সায়ান দোকানের রকে বসলো। প্রচুর নতুন-নতুন পোলাপান ক্যম্পাসে দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশেরই মুখ অচেনা। আগে যখন এই রকটা ছিলো না, বিশাল তেঁতুল গাছটার গোড়ায় হেলান দিয়ে বসার জায়গা ছিলো, তখন এখান দিয়ে যে যে যেত তাদের প্রায় সবার নাম বলে দিতে পারতো সায়ান।
এখন অফিসের কাজের চাপে ক্যম্পাসে খুব কম আসা হয় সায়ানের। আর এটা এমন একটা জায়গা যে, একদিন কেউ না আসলে পরদিন সেটা নতুন একজন এসে দখল করে নেয়। তারপর দিনও যদি নতুন ছেলেটা সেখানে থাকে, তাহলে ঐ জায়গার মালিক সে-ই। পুরোনোজন বাদ। কারো জন্যই ওখানে সময় থেমে থাকে না।
দেখতে দেখতে আটটা বছর পার হয়ে গেছে। কি আশ্চর্যের কথা! এই বেলালের দোকানের সামনে দিয়ে সবুজ ঘাসে ছাওয়া বিরাট জমিটার পরে ছিলো শালিক চত্বর। কেউ কেউ বলতো কাঠাল চত্বর। এখন সেই ঘাসে ছাওয়া শাড়ির জমিনও নেই, বিখ্যাত শালিক চত্বরও নেই। নেই সেখানকার সেলিমের চায়ের দোকান।
দোকানের সামনে কয়েকটা করে বড় বড় পাথর গোল করে বিছানো ছিলো। সে পাথরগুলোর ওপর বসে কত আড্ডা এক সময় পিটিয়েছে ওরা, কত চা আর সিগারেট ধ্বংস করেছে। সেইসব দিনগুলো হারিয়ে গেছে। শালিকে এখন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন উঠেছে। আগে মসজিদের যে দেয়ালটার ওপর বসে বসে এক-একটা ২৪ ঘন্টার দিন পার করতো সায়ান, সেই দেয়াল এখন জীর্ণ হতে হতে হারিয়ে গেছে।
এখন যেসব ছেলে-পিলে ক্যম্পাসে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়ায় তারা কি জানে, সে জায়গাগুলো একসময় কেমন ছিলো? কিংবা এখনকার শিশুরা যখন বুড়ো হবে, ক্যম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যাবে; তখন কি এখন যেমন দেখা যাচ্ছে ঠিক তেমনই থাকবে সবকিছু?
সায়ান এই ভাবনাটার গভীরে পৌছে যাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে দেখলো তিতলি এক কাপ চা নিয়ে ওর পাশে এসে বসেছে।
যদিও তখন সাড়ে এগারটার একটু বেশি বাজে, তাও শৈত্যপ্রবাহ চলার কারণে চারিদিকে কুয়াশা ধরে ছিল ভালোমতোই। মানুষজনও কম ক্যম্পাসে। ডিসেম্বরের ছুটি শেষে এখনো অনেকে ঢাকায় ফেরে নি। মায়ের ঊষ্ণ রাজত্বে রাজঅতিথির মতো জীবন কাটাচ্ছে। সে মোহ ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা বড় কঠিন।
অনেকক্ষণ থেকে একটা চাপা মাথাব্যথা চিনচিন করে জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্ব, কিন্তু সেটাকে পাত্তা না দিয়ে সায়ান বললো; চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
-কোথায় যাবো?
-এমনিই, কোথায় যাবো জানি না, কিছুক্ষণ ঘুরে আসি চলো।
-চা'টা অন্তত শেষ করি?
-সেটা তো খাচ্ছোই। খেতে খেতে রিকশা দেখো।
-আজব!
এরই মধ্যে রিকশা একটা ঠিক করা হলো মোহাম্মদপুরের দিকে যাবার জন্য। শনিবার দিন রাস্তা-ঘাট এখন আর ফাঁকা থাকে না। বিশেষ করে নিউ মার্কেটের ওদিকটায় তো যাওয়াই যায় না। তবে হাতে কাজ না থাকলে মানুষের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ, অস্থির ছোটাছুটি দেখার মধ্যেও মজা আছে।
ওদের রিকশা যখন নিউমার্কেটের পেছনে শাহনেয়াজ হল-পোস্ট অফিস ঘুরে ঢাকা কলেজের সামনে এসে ঘন্টাখানেকের জ্যমে আটকে গেল, তখন ওরা দুইটা লেইস্ চিপসের প্যাকেট, একটা হাফ লিটার কোকের বোতল, একটা প্রিমিয়াম আর একটা শেল-এন-কোর আইসক্রীম শেষ করে কিছুক্ষণ কর্মহীন বসেও থাকলো।
তিতলি আজ কতদিন পর সায়ানের সঙ্গে বেরিয়েছে। ইদানীং ছেলেটাকে পাওয়াই যায় না। জ্যমে বসে থাকতে থাকতে বিষয়টা নিয়ে সে কিছুটা অনুযোগ জানানোর চেষ্টা করলেও, সায়ান সেটা পাত্তা দিলো না খুব একটা। তিতলি মনে মনে ভাবলো, ছেলেটা খুব কেজো হয়েছে। ফিলিংস্ গুলোকে পাত্তা দেয়ারও সময় নেই।
মোহাম্মদপুর পর্যন্ত যাওয়া হলো না। রাইফেলস স্কয়ারের সামনে রিকশা ছেড়ে দিলো ওরা। যেহেতু একটা মার্কেট দেখাই যাচ্ছে, সুতরাং কিছু জরুরি জিনিস জোগাড় করে নেয়া যাক- বললো সায়ান। তারপর সোজা চারতলায় গিয়ে প্রথমেই একগাদা ডিভিডি কিনে ফেললো। ওর নুতন ল্যপটপের ডেডিকেটেড-গ্রাফিক্স কি রকম সার্ভিস দেয়, সেটা নাকি চেক করা ভীষণ দরকার।
তিতলি একটু একটু খেয়াল করছিলো, ছেলেটা বেতন পেয়েছে কিন্তু জানাচ্ছেও না। এমনকি ওর জন্য কিছু কেনা লাগবে কি না, এসব জানার ইচ্ছেও দেখাচ্ছে না। এসেই নিজের যা দরকার নেয়া শুরু করেছে। আর নিচ্ছেও কেমন হাভাতের মতো, কোনকিছু সম্পর্কে মতামত নেয়ার দরকারই মনে করছে না। যেন মত জানতে চাইলে ও বাঁধা দেবে।
মনে মনে ভাবলো, ভালোই তো, সপ্তাহে একটাদিন দেখা মেলে। তাও নতুন অফিসের কথা বলে আজ দু'মাস পর একটা দিন মিলেছে, যেদিনে নাকি ওর কোনো কাজই নেই। এই হচ্ছে কাজহীন দিনের বাহার? বাহ্ বাহ্ বেশ।
সায়ান ডিভিডি কেনা শেষে তিতলিকে নিয়ে আগোরায় গেল। চকলেট, প্রিঙ্গলস্ আরো কি কি সব কেনা শুরু করলো। প্রিঙ্গলস্-এর একটা নতুন ফ্লেভার দেখে দুইটা বড় বড় কৌটা কিনে ফেললো। বেশ কিছু দেশি-বিদেশি বাদামের কৌটাও ব্যগে ঢুকে গেল। তিতলি জানে, এগুলো সব ওর জন্য কিনছে এমন একটা ভাব করে থাকলেও, আসলে এসব বেশি পছন্দ করে সায়ানই।
তবে সায়ান কিন্তু নিজের জন্যই কিনছিলো। কেনা-কাটা শেষ করে সে তিতলিকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার কি কিছু লাগবে বাবু?
-না গো, আমার কিচ্ছু লাগবে না।
-না লাগলে তো হবে না, চলো দেখি তোমার জন্য কি কেনা যায়?
-না প্লিজ, আমি কিছু কিনবো না।
-হোয়াই গাল? জিনিস-পাতি কেনা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। মন-টন তো ভালো থাকেই, শরীরও ফুরফুরা লাগে। ঘুরতে বের হয়েছি এখন যদি শরীর ম্যজম্যজ করে তাহলে কেমনে কি? তুমি বলেছিলে তোমার নাকি জিন্সের প্যান্ট লাগবে। চলো প্যান্ট কেনা যাক্।
তিতলি খানিকটা অনিচ্ছা স্বত্তেও আবার মার্কেটে ঢুকলো। তিনতলায় কিছু ভালো ভালো দোকান আছে, এক্সপোর্ট কোয়ালিটির প্যান্ট পাওয়া যায়। দুইটা গ্যবাডিনের প্যান্ট, দুইটা জিন্স কেনা হলো। দেখে ভালো লাগায় একটা ফতুয়াও নিয়ে নেয়া হলো। যদিও তিতলির খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো।
এভাবে টাকা খরচ করতে দেখলে ওর ভালো লাগে না। অকারণেই এসব কেনা হচ্ছে। কোনটিই যে খুব দরকার, না কিনলেই নয়; এমন না। যে কারণে ও প্রবল বাঁধা দিচ্ছিলো। সেসবের কিছুই কানে তুলছিলো না ছেলেটা। রং থেকে কেনা হলো খানদুই কামিজ। এবার তিতলি ক্ষেপেই উঠলো। হুংকার দিলো, কি ব্যপার, টাকা-পয়সা উড়াচ্ছিস মনে হচ্ছে?
-কই? দুইটা মাত্র কাপড় কিনলাম। তুই যে কী কিপটুস হইছিস!
-দে পকেটে টাকা যা আছে আমার কাছে দে।
-টাকা নাই। আর আমার টাকার দিকে তোর এত চোখ কেন?
-আমার চোখ থাকবে না তো কার চোখ থাকবে? দে বলছি মানিব্যগ?
সায়ান ওর মানিব্যগ বের করে দিলো। সেটা থেকে তখন মাত্র এক-দেড়শ' টাকা বের হলো। যা করার এর আগেই করা হয়ে গেছে। তিতলির খুব মেজাজ গরম হলো। সে এটা লুকালোও না। বললো, বেতনের টাকা দিয়ে সারা মাসের খরচ চালানোর দায়িত্ব তো তোর থাকে না। তুই পেইনের বুঝবিটা কি? সুযোগ পাইলেই খালি ফুটানি। এইসব ভালো লাগে না একদম।
-না লাগলে একটা কাজ করি চল্। ম্যলা ঘুরাঘুরি হইসে, তিনটা বাজে, এবার খাই।
-হ, এইটা ভালো কথা। চল খাই। কই খাবি?
-জিয়ান।
-ওই কুত্তা, তোর পকেটে আছে দুই টাকা। তুই জিয়ান যাইতে চাস ক্যান?
-জিয়ানতো সস্তারই দোকান। চল্।
-দুইজনের এক হাজার টাকা লাগবে।
-তুই দিবি। তোকে আমি এত কিছু কিনে দিলাম, তুই আমাকে খাওয়াবি না?
-ওই, খাওয়াবো না বলসি? রিকশা ঠিক কর।
সাড়ে তিনটা থেকে সব চীনে রেস্তরা বন্ধ। এটা দেখে তিতলির আবারো মেজাজ খারাপ হলো। সায়ানের অবশ্য খুশি ধরে না। খ্যাক খ্যাক হাসি সে গোপনও করলো না। ওর হাসি দেখে তিতলিও একসময় হেসে ফেললো। রিকশা নিয়ে চলে আসলো আইবিএ'তে। শামসু মামাকে জানানো হলো, তাদের দুইজনের ভয়াবহ ক্ষিদে লেগেছে। পোলাও আর মুরগীর রোস্ট খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। সঙ্গে লাগবে পটলভাজা। আর ঝাল সালাদ। শামসু মামাটা আলাদিনের জিনির মতো। সেই বিকেলবেলায় ওদের আবদার শুনে বললেন, মামারা বসেন। ব্যবস্থা হচ্ছে।
ওরা বসে বসে দেখলো, ভাজা রুই, সরিষা ইলিশ, দেশি মুরগীর রোস্ট, সিঙ্গারার আলু, মিষ্টি কুমড়ার সবজি, আলুভর্তা, ঘনডাল, ধোঁয়া ওঠা পোলাও -আসছে তো আসছেই। শামসু মামাকে এই জন্য সবাই ভালবাসতো। কোনদিন এই ভদ্রলোক কোন খাবারের অর্ডারে না বলতেন না। তা যখনই হোক না কেন। তার রসুইঘর খোলা থাকলে একটা ব্যবস্থা হবেই হবে।
তিতলি আর সায়ানের বেলা গড়িয়ে গেলো খেতে বসে। খেয়ে দু'জনে সেখানেই দুই পা ছড়িয়ে দিলো। এখন এক কাপ চা, একটা সিগারেট; ভাগ করে খাওয়ার রীতি তাদের। সকালের রাগ ততক্ষণে পড়ে এসেছে তিতলির। এটা দেখে অবশ্য সায়ানের ইচ্ছে হলো, ওকে খানিকটা ক্ষেপিয়ে দেয়ার। নাহলে আসলে মজা পায় না ছেলেটা। বললো, অফিস থেকে পিকনিকে যাচ্ছে সবাই।
-কোথায়?
-গাজীপুর, সম্পাদকের এক বন্ধুর বাগানবাড়িতে, দুইদিনের পিকনিক।
-ওইখানে কি তোদের অফিসের ওই মেয়েটা, কি নাম, দীবা; সেও যাবে?
-ইয়াপ্। ওর সঙ্গে আমার আলাপ-আলোচনাও ঠিক হয়েছে।
-কি আলাপ-আলোচনা?
-পিকনিকে গিয়ে কি কি করবো।
-সেটা ওর সঙ্গে ঠিক হয়েছে মানে?
-মানে সবাই-ই একসঙ্গে বসে ঠিক করসি। ওর সঙ্গে আমি একলা না।
-তুই ওখানে যাইতে পারবি না।
-কেনো?
-আমি বলসি তাই। যাইতে পারবি না ব্যস্, যাইতে পারবি না।
-আচ্ছা, তাইলে তুই চল।
-আমি কই যাবো?
-আমার সঙ্গে পিকনিক করতে। একজন করে গেস্ট নেয়া যাবে, কোন অসুবিধা নাই।
-না তোর অফিসের পিকনিকে আমি কেন যাবো?
-অফিসের পিকনিকে না গেলে না যা। অন্য কোথাও চল্।
-কই যাবো?
-শীতের দিন যেহেতু, সেহেতু চল কক্সবাজার যাই। সেন্টমার্টিন-টার্টিন ঘুরে আসবো। চল।
-এহ্, তুই বললি আর হয়ে গেল মনে হয়।
-তো আর কি? বললাম দেখেই তো হয়ে গেল। হয় আমি পিকনিকে যাবো, নাইলে তুই আমার সঙ্গে কক্সবাজার যাবি।
-কোথাও যাবো না, যা ভাগ। আর তুইও কোথাও যাইতে পারবি না। আমার পাশে বসে থাক। আরেকটা সিগারেট নিয়ে আয়। খেয়ে-টেয়ে হলে চলে যাই। সামনের সপ্তাহ থেকে ফাইনাল পরীক্ষা। প্রচুর পড়া বাকী আছে। পড়তে হবে।
-কেন? হলে যাওয়ার চিন্তা এখনই কেন? তোর সঙ্গে আমার দীর্ঘ-দীর্ঘদিন ধরে দেখা নাই, সাক্ষাৎ নাই, পাশাপাশি বসে একটু মনের কথা বলার সুযোগ নাই। মোবাইলে কথা বলতে গেলে খালি ঝাড়ি মারিস। আজকে একটু দেখা হইসে। আর সন্ধ্যা না হইতেই শুরু করলি হলে যাওয়ার কথা।
-আচ্ছা হলে যাওয়ার কথা বলবো না। কিন্তু তুই পিকনিকে যাইতে পারবি না।
-সেইটা আমি এমনিতেও যাবো না। কিন্তু আমাদের দুইজনের তো কোনো একটা জায়গায় যাওয়া দরকার। সেইজন্য একটা প্ল্যান করসি।
-কি প্ল্যান?
-আজকে রাতে চিটাগাং যাওয়ার প্ল্যান।
-কি?
-হ্যাঁ, হলে গিয়ে ব্যগ-বুগ গুছায়ে নিয়ে আয়। একসাথে বাইর হই। এখান থেকে আমার বাসায় যাবো। সেখান থেকে আমিও রেডী হয়ে দুইজন একবারে বাইর হবো। ১১ টা ৪৫-এ বাস। এই যে টিকিট।
পকেট থেকে সত্যি সত্যি দুইটা গ্রীন লাইন স্কানিয়া'র টিকিট বের করলো সায়ান। বি৩ আর বি৪। রাত পৌনে বারোটায়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনে থেকে ছাড়বে গাড়ি। টিকিট দেখে একটা বড় ঢোক গিললো তিতলি। চোখ বড় বড় করে বললো, তুই টিকিট-মিকিট সব কেটে এনেছিস?
-ইয়েশ বেব। কালকে সকালে আমরা হোটেল আগ্রাবাদে উঠবো। রুম বুকিং দেয়া আছে। একদিন-একরাতের জন্য দুইদিনের পুরা বিল অ্যাডভান্স করতে হয়েছে। এখন নাকি সিজনাল টাইম ওদের। রুম-টুম পাওয়া সমস্যা। চিটাগাংয়ে দেখার সবচে' সুন্দর যে জায়গাটা ছিলো ফয়'স লেক, সেখানে এখন কনকর্ডের পার্ক একটা বানিয়ে কি অবস্থা করেছে জানি না। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন একদিকে ছিলো চিড়িয়াখানা, আরেকদিকে ছিলো ফয়'স লেক। দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যেতাম। মুগ্ধ হয়ে হেঁটে হেঁটে ফয়'স লেকের এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে চলে যেতাম। চল তোকে নিয়ে জায়গাটা দেখে আসি। আর চট্টেশ্বরীর ঐদিকে ওয়ার সিমেট্রি আছে। ছোট-বড় অনেক পাহাড় আছে, ডিসি হিল আছে; প্রত্যেকটা জায়গা তোকে নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে হচ্ছে না। গেট রেডী।
-চিটাগাং-এর পর? ঢাকায় চলে আসবো?
-আরে কি কয়! এরপরই তো মূল ঘুরাঘুরি শুরু হবে। চলে যাবো কক্সবাজার। ওইখানে দুইদিন-দুইরাত। ভালো হোটেলে রুম পাইসি। কক্সবাজারে মজা করার অনেক কিছু আছে। বীচ-টীচ দেখা যাবে, বার্মিজ মার্কেটেও ঘোরা হবে। বৌদ্ধদের পাহাড়গুলায় চড়বো-টড়বো। বুধবার সকালে চলে যাবো সেন্ট মার্টিন। ওখানে সারাটাদিন ঘুরতে হবে। মাছভাজা খেতে হবে। নির্জন কোনো জায়গা দেখে তোর হাতে হাত রেখে বসতে হবে। তোর নাকের সঙ্গে আমার নাক ঘষতে হবে। সবকিছু শেষ করে সন্ধ্যায় আবার কক্সবাজার ব্যাকও করতে হবে। রাতটা আবার হোটেলে কাটাবো। আমি আর তুমি, একা একা। তারপর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। এই যে দ্যাখো, ফিরতি টিকিট। এইবারও গ্রীন লাইন। বলো কিরকম হইছে প্ল্যানটা?
পকেট থেকে আরো দুইটা টিকিট বের করে তিতলির হাতে দেয় সায়ান। সবগুলো টিকিট হাতে নিয়ে বড় বড় চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে তিতলি।
ওর গভীর কালো চোখে তখন মহাশূন্যের সমান মায়া খেলা করছিল। আর বাইরের পরিবেশে খেলছিল গোধূলীর সোনালী আলো। গাছের পাতার ফাঁক, টানা রেলিং-এর গরাদ সবকিছু ভেদ করে সে আলোর একটা রশ্মি হঠাৎ তার চিবুকের গোড়াটিতে গিয়ে সে সময় ঠিকরে পড়েছিলো।
---
মীর, প্রিয়তে রাখলাম আপনার গল্প। নাম দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল যে এরকম কিছু।
আপনার গল্প পড়ে আমার নিজেকে খুবই বুড়ি মনে হচ্ছে। আমি যে সময়কে কল্পনা করি সে সময়ে বন্ধুর সাথে কক্সবাজার কিংবা চিটাগাং যাওয়া ভাবাই অসম্ভব ছিলো। বড়জোর বোটানিক্যাল গার্ডেন কিংবা বলধা গার্ডেন।
গল্প অপূর্ব হয়েছে। থু থু দিলাম আপনার হাতে যাতে কারো নজর না লাগে।
আপনেই তো বললেন, ব্যটাদের মনের অবস্থা লেখার জন্য। এখন আমাকে পচান কেনু?
নিরঙ্কুশ প্রশংসায় মন ভরে গেছে থিংকিউ আপু। রিয়েল থ্যংক্স।
ওয়াক থু।তাতাপুর মতো আমিও দিলাম।
তিতলীরে ভাগায় নিয়ে গেলা।তয় বিয়ের আগেই এমন হানিমুন করা ভালো না।
আপনারে ইস্পিশাল ধইন্যা। সম্ভবত দ্রুতই আপনার কপালে তিতলি জুটবে। কেননা তানবীরা'প্পু বলেছেন সবুরে তিতলি ফলে।
মুগ্ধ, মুগ্ধ। মুগ্ধতায় মন ভরে গেলো। থ্যাংকু মীর। সকালবেলায় মনটাকে ভরিয়ে নিলাম।মীরের হাতে নজর না লাগার জন্য থুতু, কাজলের কালো টিপ দুইটাই দিলাম।
জয়িতা'পু মাঝে-মইধ্যে কী-বোর্ডের ধুলা ঝাড়পোছ কৈরেন। আপনারে আমার প্লীজ লাগে।
। আপনাদের ্ত সুন্দর লেখা লেখা পড়ি, সারাদিন কমেন্ট করি, কী বোর্ডে ধূলা পড়ার স্কোপ কই?
তবে কি জানেন!আপনার সব লেখাই দুর্দান্ত, কিন্তু কিছু কিছু লেখা পড়ে আমি আকন্ঠ ডুবে যাই। কৃতজ্ঞ হই লেখকের প্রতি।মন ফিরে পায় আমার আমিকে।
বুঝতে পারছি। দু'একটা বাদে অধিকাংশ লেখাই পেইন হয়। যাক ব্যপার না।
আমি আপনার প্রত্যেকটা, একদম প্রত্যেকটা লেখা পড়ে এরকম ফীল করেছি।
পোলায় দেখি বেশী বুঝে। ।আমি আপনার লেখার পাংখা।কিছু কিছু লেখায় পড়ে আমার ভাবনাগুলো পেয়ে যাই।কিন্তু আপনি তো বলেন না যে এগুলো আমিই আপনাকে বলেছি।
আমার লেখা?লেখাতে ইচ্ছে করে কিন্তু গুছায়া লিখতে আর পারি কই?আবার আমি হইলাম আইলসা।
্মিস আইলসা কাল আজিজের আড্ডা কেমন হলো??
মিস আইলসা?
কাল ঢাকায় ছিলাম না তো!
এইটা নিয়ে একটা সিরিজ করতে পারো।তিতলীর পার্ট লিখবে তাতাপু আর সায়ানের পার্ট লিখবে তুমি।
ম্যালাদিন পর এইরকম পুতুপুতু প্রেম কাহিনী পড়তেছি।খুব ভালো লাগছে।
সায়ানের পার্ট খালি আমি লিখুম ক্যান? এইবার আপ্নে লেখবেন।
আজিব।।
আমি কি ঢাকা ইউনিতে পড়ছি??
আমি কি চিটাগং ভালোমতো চিনি??
আমি কি পত্রিকা অফিসে চাকরী করি??
সব তো তোমার সাথে মিলে। আর আমি কি লিখবো??
সায়ান ফার্স্টে সরকারী চাকুরী করতো।
সুতরাং ইচ্ছা থাকলে সম্ভব।
পড়া শেষ করে বুঝলাম, আমাদের দিন গিয়েছে বিগত হয়ে.......
এইটা বুঝতে আপনার পড়া শেষ করা লাগলো নীড়দা! আমি তো শুরু করেই বুঝলাম আঁরার দিন গেইয়্যে গই
বদ্দা কিয়া কন? ন' বুজির কিল্লাই?
মুগ্ধ।
বি.টি.ডব্লিউ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কেউ ছোট কইল, এই প্রথম দেখলাম!!!
বি.টি.ডব্লিউ
চড়তে চড়তে ছোট হয়ে গেছে।
মীর ভাই, কেমন করে এমন লেখেন? সুপার্ব!
থিংকিউ। আরিফ ভাই, ছবিপুস্ট দেন। দেইখা চোখ আর মন জুড়াই।
পুতুপুতু প্রেমটা খানিকটা ড়কিং প্রেম হইছে
ধন্যবাদ।
ক্যাম্পাসের বর্ননাটা ভাল হইছে। মসজিদের দেয়ালটা আমিও মিস করি খুব। কিন্তু কোন মামা আপনেরে বিকাল ৪টার সময় রুই মাছ ভাজা, ইলিশ মাছের তরকারী, দেশী মুরগীর ঝোল (!), এইগুলা দিবে? নীরবে পাঠায় দিতেন দুইজনরে, বিশ্বাস করা যাইত সহজে
কাহিনীর প্রত্যেকটা লাইন সত্য। বিশ্বাস করলেন না? বড়ই আফসুস।
আরেকদিন আপ্নারে পাইলে আইবিএ'র ক্যন্টিনে নিয়া ঐগুলা সব খাওয়ামু। না খাইতে চাইলে জোর কৈরা। আগে থিকা জানায় দিলাম।
ওকে ডিল। বিকাল ৪টাই হইতে হবে। এইখানে যা যা লিখছেন সব লিস্ট কইরা নিয়া যামু। আইবিএতে আমরা যাইতাম ভাতভাজী নামক একটা জিনিষ পাওয়া যাইতো ঐটা খাইতে। আর মনে হয় থাকতো মোরগ পোলাও জাতের কিছু একটা। একদিনে এতো কিছু রান্ধে, তাও আবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত সেইটা থাকেও, বিশ্বাস যাইতে ভালই কষ্ট হইতেছে।
পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটার দিকে হৈলে কেমন হয়? সন্ধ্যা নামার সময়।
আর রান্ধে না, গিয়া কৈলে নতুন কৈরা রাইন্ধা দেয়।
ক্যান? সন্ধ্যা নামার সময় ক্যান? আর রাইন্ধা দেয়! আমি এই আইবিএ ক্যান্টিন চিনিনা!
বাকি কাহিনি নিয়ে উপন্যাস হতে পারে
ইয়ে মানে অ্যাগোরায় এলে পরের বার সায়ান যেন আমাকে ফোন দ্যায়, কথা আছে
উখে। টুটুল ভাইরে ফোন দিতেসি অহনই।
আপ্নে আছেন কিরাম। নতুন কিছু লেখেন না কেনু?
আপনার হাতে যাতে কারো নজর না লাগে সে জন্য তানবীরা আগেই থুথু দিয়েছে, হাত তাই আজ আমার নজর লাগা এড়িয়ে যেতে পারলো । অভিনন্দন মীর । চালিয়ে যান, সাথে আছি ।
তাইলে তো সামনে বিপদ। কোনো না কোনো একদিন ধরা খাবোই।
থুতু থেকে উপন্যাস পর্যন্ত সবকিছুতেই একমত জানালাম।
অনটপিক: অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম। মুগ্ধতার রেশ কাটছেই না। হ্যাক্সো ব্লেড দিয়াও না
আজ-কালকার ব্লেডগুলাতেই যত সমস্যা আপু। আমিও সেই কবে থেকে একটা পোস্টে আটকে আছি।
ও আল্লাহ!!! কি দম বন্ধ করা গল্প!! বহুদিন পর এরম একটা প্রেমের গল্প পড়লাম । সায়ান!!! এর গল্প আরো চাই ।
বাপ্রে কি কমেন্ত! আপ্নের ফুলকপি ভাজা-ভাজি কেমন চলতেসে? চাইসেন যখন পাবেন। তয় সায়ানই পাবেন কিনা কৈতারি না।
আমার কমেন্ট নিয়া কি টিটকারি মারলেন?
কমেন্টা ভাল্লাগসে দেইখাই দু'একটা মনের কথা কৈছি গো আফা। বুঝলেন্না।
আপনার লেখা পড়ে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না :)।সায়ানকে বিরা......ট একটা ধন্যবাদ চিটাগাং আসার জনে্য
সায়ানরে জানায় দিমুনে। চিটাগাং থিকা রুমিয়া নামের এক সুন্দরী ধইন্যা পাঠাইসে। আপ্নের নতুন লেখা কৈ??
যা একখান পঁচানী দিলেন যাউগ্গা.. ।নতুন লেখা কেন জানি লিখতে পারতেসিনা।টাইম ও পাইতেসিনা
ঘুমাতে যাবার আগে কি মনে করে এবিতে ঢুকলাম।
ঢুকেই মীরের গল্প।
শিরোনামটা চেনা মনে হল। চেক করে দেখলাম, নাহ ঠিকই আছে।
গল্পটা মনোযোগ দিয়ে পড়লাম না, কারন জানি এটা আবার পড়া হবেই। তারচেয়ে গানটাই শুনলাম একবার।
কেমন মন উদাস করে দিলো অন্তহীন এর এ গানটা
চন্দ্রবিন্দুর অরিজিনাল গানটার ধারে-কাছে যায় নি এটা। আপনার একটা পোস্টে আগেও এ লিংকটা দেখেছিলাম। আপ্নে চন্দ্রবিন্দুরটা শুইনেন।
মীর মানেই পাত্থুর ।
(
দারুন!!!
ভালো একটা কাজ করছেন, নইলে তাতা'পু পরের পার্ট আনতেন কি না কে জানে!!!... কিন্তু যে দারুন করে পরবর্তী ঘটনা আনলেন আপনি... ভাল্লাগছে...
আহা! সায়ান স্টাইলের কাউরে পাইলে কি মজাই না হইতো, আলাদিনের জ্বিনি'র থেকেও কাবিল পোলা!!... মনে করার আগেই সব মনের হাউশ পূরন করে দিচ্ছে!!!...
ইশ! কি সুন্দর!
মন্তব্য করুন