ইউজার লগইন

গল্প: কপট চোখ রাঙানিসমৃদ্ধ একটা ছোট্ট কথোপকথন

পেশাজীবনের শুরুর দিকের ঘটনা। ইশরাত আমাকে দেখলেই দৌড় দিতো। খুব আশ্চর্য হতাম। ও'ও রিপোর্টার। কিন্তু কোথায় কাজ করে সেটা কোনোদিন জানার সুযোগ পাই না। অ্যসাইনমেন্ট শেষ হওয়ার পর আমি বেশ ক'দিন কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মূহূর্তের মধ্যে সে ফুড়ুৎ হয়ে গেছে। এবং কিছুটা যেন আমাকে নজরে রেখেই ফুড়ুৎ হয়ে গেছে। হয়তো একদম কাজ শেষে আমি নোটবুকটা বন্ধ করার জন্য একটু নিচের দিকে তাকিয়েছি। ওটা ব্যগে পুরে ওকে গিয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করবো, কিন্তু চোখ তুলে দেখি নেই।
কারণটা কি আমি বুঝতে পারতাম না। একদম প্রথমদিন আমি ঠিক ওর পাশের সিটটায় গিয়ে বসেছিলাম। ওকে তখনো দেখি নি। পুরা হলে ঐ একটাই সিট খালি ছিলো। আমি বসার পর খেয়াল করলাম, এতক্ষণ আসলে অন্যকেউ ওর পাশে বসার সাহস পাচ্ছিলো না। এই সিটটাকে লাস্ট চয়েজ হিসেবে ধরে রেখে সবাই একে একে বসেছে। তারপর আমি ঢোকার সময় কেবল ওটাই খালি ছিলো। কোনোদিকে না তাকিয়ে বসে পড়েছি।
বসে পাশে ও'কে দেখে চমকে গেলাম। এরকম সিরিয়াস সুন্দরী কারো পাশে বসে পড়াটা আসলে ঠিক হয় নি। কারণ হলের সবাই মেয়েটিকে চোখে চোখে রেখেছিলো। দু'একজনের চোখে আমার প্রতি বেশ বিরক্তিও ফুটে উঠতে দেখলাম। ওদের খানিকটা বাড়তি জ্বালানি জোগাতেই, অ্যসাইনমেন্ট শেষে ও'র সঙ্গে দুইটা জরুরি কথাও বলে ফেললাম। সেদিন ও'কে চীফ গেস্টের স্পীচের একটা অংশ ক্লিয়ার করে দিতে বলেছিলাম। জিনিসটা বুঝতে আমার একটু সমস্যা হচ্ছিলো। ও দেখলাম ঝটপট কথাটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আমি থ্যংকস্ দেয়ার আগেই।
এরপরের বার ও নিজে থেকে আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলো। শহীদ মিনারে একটা সোশ্যাল এক্টিভিটি চলছিলো। ইকোনমি রিলেটেড সোশ্যাল এক্টিভিটি। অ্যসাইনমেন্ট শেষ হতেই ও দূর থেকে আমার কাছে এসে একজন গেস্টের স্পীচ চাইলো। পায় নি নাকি। আমি বের করে দিলাম। ভেবেছিলাম ও হয়তো নিজের প্যডে টুকে নেবে। কিন্তু ও শুধু একবার সেটা পড়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে থ্যংক ইয় বলে চলে গেল। আমি কোনো কথা বলার সুযোগ পেলাম না। এমনকি কোথায় যাবে সেটা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। তার আগেই সে এলাকা ছেড়েছে।
কিন্তু থার্ড ডে'তে ও'কে আমি ভালো একটা সিচুয়েশনে পেয়ে গেলাম। সেদিন আমাদের মাস্টার্সের ভাইভা চলছিলো। সবাই ডিপার্টমেন্টের করিডরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম। ভাইভার জন্য একটা ক্লীন-কাট দিয়ে আসতে হয়েছে। আমি বেলমন্ট থেকে একটা প্যান্টও বানিয়েছিলাম। আসলে মাস্টার্স পরীক্ষা দেয়ার একটা ব্যপার আছে। আমার জীবনের খুবই প্রিয় একটা পরীক্ষা। নানাকারণে।
সেদিনই প্রথম জানতে পেরেছিলাম, আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে ওর কলিগ। ঘটনাটা কি হয়েছিলো বলি। তখন ক্যম্পাসে কেবল গরমের ছুটি পড়েছে। দেখলাম করিডরে এতক্ষণ গুলতানি মারছিলো মাহবুব, ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ইশরাত। আশ্চর্য এই মেয়েটি হঠাৎ এখানে আসলো কিভাবে? মাহবুব ঠিক আমাদের সামনের অফিসেই কাজ করে বলে জানি। তবে কি ওর সঙ্গে কাজ করে নাকি?
ওর নাম আমি আগে থেকেই জানতাম। ওর গলায় ঝোলানো বারকোড দেয়া আইডি কার্ডটায় একবার মূহূর্তের জন্য চোখ বুলাবার সুযোগ পেয়েছিলাম কোনো একদিন। শুধু নামটুকুই পার হতে পেরেছিলাম। তারপর সে সরে গিয়েছিলো সামনে থেকে।
আমি বন্ধু তামান্নাকে বললাম, তোর হাতের সুন্দর আংটিটা দে তো একটু। ও একটু বিস্মিত হলেও, খুলে দিলো। কি বিষয় সেটা দেখার জন্য। আমি পকেট থেকে পয়েন্ট এন্ড শ্যূট বের করে নিপ-এর হাতে দিয়ে বললাম, মাহবুবদের উল্টাদিকে দেয়ালের উপর গিয়ে বয়। ক্যমেরা রেডী কর। তারপর আমি যা কিছু করবো, সব ভিডিও করবি।
কলাভবন যাদের চেনা তারা জানে এই দেয়াল কি এবং ছেলেপিলে সেটার ওপর কিভাবে বসে কিংবা হেলান দেয়। নিপ আর তামান্না কথামতো দেয়ালের ওপর গিয়ে বসে নিজেদের মনে ক্যমেরা খুটখাট শুরু করলো। ওদের দিকে আলাদা মনোযোগ দেয়ার দরকার মনে করলো না কেউ।
আমি আংটিটা নিয়ে কড়া চোখে ইশরাতের দিকে এগিয়ে গেলাম। প্রথমে সোজা হেঁটে ওদের চার-পাঁচজনের আড্ডায় কারো প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে ঢুকে পড়লাম। এরপর কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে ইশরাতের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এমনভাবে যাতে চোখ তুললেই আমার চোখে চোখ পড়ে। দেখি মেয়েটি একদম চোখ তুলছে না। কয়েক মূহূর্ত তাকিয়েই রইলাম।
আমি নিশ্চিত ছিলাম, ও বুঝতে পারছিলো আমার উপস্থিতি। এখন আমার দিকে একেবারেই না তাকানোটা আসলে সম্ভব না। কিন্তু মেয়েটি আমাকে বেশ অবাক করে দিচ্ছিলো। ও কোনমতেই আমার দিকে তাকাচ্ছিলো না। এতে করে আমি আরো নিশ্চিত হচ্ছিলাম, ও জানে যে আমিই এসে দাঁড়িয়েছি। দাঁড়িয়ে ওর দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
বিষয়টা দুইটা চুম্বকের উত্তর মেরু আর উত্তর মেরুর মতো হয়ে গেল। কোনভাবেই চুম্বক দু'টো জোড়া লাগছিলো না। নিপ আর তামান্না বোধহয় আমার এতক্ষণ ধরে একই টেম্পো'তে পারর্ফম করে যাওয়া দেখে একটু নড়েচড়ে বসেছিলো। আমি ইশরাতকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম,
আপনি কেমন আছেন? অনেকদিন ধরে আপনার সঙ্গে দেখা হবে বলে অপেক্ষা করছি।
ও দুইটা পূর্ণ চোখ তুলে আমাকে দেখলো। এই ঘটনাটা কোনো অভিনয় ছাড়াই দারুণ একটা শট হিসেবে টেক হয়ে গেল। আমি একটু অপেক্ষা করলাম। ধারণা করছিলাম, সম্ভবত প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আমার দিকে একটু তাকিয়ে থাকা ছাড়া ও আর কিছু করবে না। চোখ নামিয়ে নেবে। তারপর কি বলা যায় সেটা নিয়ে একটু চিন্তা করবে। ঠিক সেই সময়টায় আমাকে দ্বিতীয় ডায়লগটা দিতে হবে।
অপেক্ষার পালা শেষ হলো। আমি ওকে বললাম, আসলে একটা জিনিস আমার আপনাকে দেয়ার খুব ইচ্ছে। সেকারণেই এতদিন ধরে খুঁজছি। যাক্ আজ আপনাকে পেয়ে ভালো হলো। এটা বিশেষ কিছু না। একটা ওয়েডিং রিং। আপনি নেবেন? বলে রাইট পকেট থেকে আংটিটা বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলাম।
জরুরি একটা বিষয় হচ্ছে, ভাইভা উপলক্ষে আমাদের সবারই আলগা একটা ড্রেসিংও করা ছিলো। যে কারণে পুরা ফিল্মটা কস্টিউমসহ দারুণভাবে শ্যূট হয়ে গেল। কেউ কিচ্ছু টের পাওয়ার আগেই। সবাই ধরেই নিয়েছিলো আমি বোধহয় ইশরাত বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছি।
কিন্তু তামান্না হঠাৎ করে প্রথমে মুখ চেপে একটু হেসে হাততালি দিয়ে ফেললো; আর সবাই বিষয়টা যে দুষ্টামী ছাড়া আর কিছুই না- তা বুঝে ফেললো। কাজটা এক অর্থে ভালোই হয়েছিলো। মূহূর্তের জন্য একটা টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো আমাদের ডিপার্টমেন্টের করিডরে, যেটা থেকে ঐ এক ঘটনায় রিলিফ পেয়ে যায় সবাই। এমনকি আমিও ভেতরে ভেতরে বুঝতে পারছিলাম অভিনয়ের কাজটা সহজ নয়।
যদিও তামান্না পরে আর স্বীকার করতে চায় নি, কিন্তু আমি আজো নিশ্চিত সে আমার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েই তালি দিয়ে বসেছিলো। আর ইশরাত সেদিন আমাকে ইয়া কপট এক চোখ রাঙানি দিয়ে বলে গিয়েছিলো, আপনি একটা ভয়ংকর!
---

পোস্টটি ১০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


ইয়ে মানে, এটার ডিসক্লেমার কবে আসপে? Wink

বরাবরের মতোই দারুন, অসাধারণ Smile

মীর's picture


এটার ডিসক্লে যে কপে আসবে, ক্কৈত্তাম্পারিনাগো আফা Crown

সন্ধ্যা প্রদীপ's picture


অসাধরন................ Smile

মীর's picture


এটা আবার কোন ধরন? Wink

জ্যোতি's picture


মানুষ এত সুন্দর লিখে কিভাবে? অবাক লাগে। মীর কেমন আছে? জিজ্ঞেস করলেও ছেলেটা বলে না কেন? Sad

মীর's picture


ছেলেটা আপনাকে গুলি করবে। একটা গুলি জোগাড় করেছে গুল্লি

জ্যোতি's picture


প্রিয় মানুষজন গুল্লি করলেও অসুবিধা নাই Big smile । কিন্তু ছেলেটার খোঁজ জানতে চাওয়ার অপরাধে আমার জন্য ক্রসফায়ার নির্ধারণ করা হলো! Sad

মীর's picture


জ্বি না। খোঁজ-খবর না রাখার অপরাধে ওয়াটারগান দিয়ে অনবরত গুলি করে যাওয়ার শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে।
অফিসের নেটে দৃষ্টাপ তো কি হৈসে?? বাসায় নেট নাই?

জ্যোতি's picture


আমি খোঁজ না নিলে আর কে নেয় বলেন তো দেখি!
আম্মার শরীরটা ভালো ছিলো না বলে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে দিন কাটছে তাই বাসায় নেটে বসার সময়/ এনার্জি থাকে না। Smile

১০

মীর's picture


ঝাড়ির জবাবে পাল্টা ঝাড়ি? উত্তম।

১১

লীনা দিলরুবা's picture


ডিসক্লেইমার ছাড়া গল্প মানায় না তো Wink কতকিছু বলবেন আর ডিসক্লেইমার দিবেন্না তা তো হবে না, পরে বলতেছি গল্প কেমন হৈছে Big smile

১২

মীর's picture


কই আমি তো কিছু বলি নাই। আপনে কি করেন? লেখেন না কেন? সারাদিন এত কাজ করে কি লাভ?

১৩

লীনা দিলরুবা's picture


পিছলান ক্যান! ডিসক্লেইমার না দিলেও চলবে Smile
গল্প ভালো হৈছে।
আমার আর লেখা Sad সময় আর চিন্তা দুইটাই সীমাবদ্ধ..........তবে একটা নিয়া আছি, দেখা যাক।

১৪

মীর's picture


পিছলানোর একটা ইমো থাকা উচিত। তাহলে আসলে মজা হবে Big smile
শুনেন গল্প কেমন হইসে আমি জানি। মিথ্যা কথা বললে আল্লা গুনা দেয়।
আমার মনে হয় সময়ের চিন্তায় দুইটাই গোল পাকিয়ে আছে। আগের মতো চিন্তা করা বাদ দিয়ে দেখতে পারেন।

১৫

মেসবাহ য়াযাদ's picture


দুর... যত্তসব...

১৬

মীর's picture


আসলেই Big smile
ভাই কি অবস্থা?

১৭

নাহীদ Hossain's picture


ইসরাত কি এখনো ভয় পায় ? Smile

১৮

কামরুল হাসান রাজন's picture


একটানে পড়ে ফেললাম Smile আপনি কোথায় কাজ করেন ভাই? কলাভবনের দেয়ালের কথা বলে অনেক পুরান কথা মনে করায়ে দিলেন Sad

১৯

আরিশ ময়ূখ রিশাদ's picture


চমৎকার। বরারবরের মতো ভালো লাগল

২০

শওকত মাসুম's picture


তারপর?

২১

এস এম শাহাদাত হোসেন's picture


তারপর বিজ্ঞাপন বিরতি? এটাই জাতীয় সমস্যা ..

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মীর's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাগতম। আমার নাম মীর রাকীব-উন-নবী। জীবিকার তাগিদে পরবাসী। মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প-কবিতা-আত্মজীবনী ইত্যাদি লিখি। সেসব প্রধানত এই ব্লগেই প্রকাশ করে থাকি। এই ব্লগে আমার সব লেখার কপিরাইট আমার নিজেরই। অনুগ্রহ করে সূ্ত্র উল্লেখ না করে লেখাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না। যেকোন যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: bd.mir13@gmail.com.
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং!