ইউজার লগইন

গল্প : ২০ কাপ চা আর ২০ টার বেশি সিগারেট খাওয়া দিনগুলো

১.
আমাদের অফিসের রানা ভাই তার নামের বানান লিখেন Shuhel Rana. তাকে যতই বলি এটা সোহেল রানা হয় নাই, এটা হইসে সুহেল রানা- তিনি ততই উদাসী হাসি দেন। বলেন; ভাইজান, বাপ-মায়ে আকিকা কইরা নাম রাখসে সোহেল রানা, বানান রাখসে Shuhel Rana. আমি কি করুম কন?

আমি তার যুক্তি শুনে হাসি। জানতে চাই, বাপ-মায়ে এই বানান রাখসে নাকি মেট্রিকের ফর্ম ফিলাপের সময় কোনো ইংরেজি মাস্টার এই কাহিনী করছে? রানা ভাই বলেন, নারে ভাই। আমার ঘটনা বাপ-মায়েই ঘটাইসে। আর কেউ এর মধ্যে নাক গলানোর সাহস পায় নাই।

শান্ত, নিরীহ, নিরামিশাষী এই ভদ্রলোকের সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি সবার প্রক্সি দিয়ে দেন। তার আর আমার ডিপার্টমেন্ট এক না। তাই আমাকে কখনো তার প্রক্সি নিতে হয় না। কিন্তু তার ডিপার্টমেন্টের কতজনের প্রক্সি যে তাকে আমি দিতে দেখি!

আমার নিজের কিন্তু অফিসে কারো প্রক্সি দিতে খুব বিরক্ত লাগে। অফিসের কাজের ব্যপারে আমাদের সবারই মোটামুটি মাসিক একটা পরিকল্পনা থাকে। এর মধ্যে কেউ হুট করে তার লেট নাইটটা করে দেবার অনুরোধ করলে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করি, অনুরোধের যুক্তিযুক্ততা কতটুকু। যদি দেখি যে- না, সিরিয়াস কারণেই হেল্প চাচ্ছেন ভদ্রলোক; তখন আর মানা করি না। ভূপেন হাজারিকা বলে গেছেন- মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য; একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? কিন্তু কোনোক্রমে যদি টের পাই যে, ব্যাটা বন্ধুদের সঙ্গে মদ খাবার জন্য আমার ঘাড়ে ঝামেলা চাপানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে; সঙ্গে সঙ্গে লম্বা সেলাম ঠুকি। দৌড়ের উপর থাকো বাবা।

এটাকে অফিসের নিয়ম বানিয়ে ভালোভাবেই স্যূট করে গিয়েছিলাম। আমি একটু একলাই থাকতাম। কলিগদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় আলাপ করতাম না। চুপচাপ নিজের ডেস্কের মনিটরটাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা আমার একটা প্রিয় কাজ ছিলো। এজন্য অনেকে আমাকে খানিকটা রিজার্ভ ধরনের মানুষ মনে করতো। অনেক ধূর্ত সিনিয়র কলিগ আমাকে অপছন্দও করতেন। কিন্তু আমি সেসব গায়ে মাখতাম না।

এরকম একদিন নিজের ডেস্কে বসে আছি, এমন সময় নিশা এসে আমার কাছে জানতে চাইলো, আপনার নাম কি?

আমি নাম বললাম। এই মেয়েটি এক বছর হলো জয়েন করেছে, এখনো কলিগদের সবার নাম জানে না! আমি কিছুটা অবাকই হলাম দেখে। তবে সেটা প্রকাশ করলাম না। হয়তো সে আমার নাম জানে। কেবল কথা শুরুর একটা উপলক্ষ দরকার বলে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছে। মেয়েটি আমাকে আরো খানিকটা অবাক করে দিয়ে এরপরেই বলে বসলো, চলেন নিচে গিয়ে চা খাই।

আমি তখন কেবলমাত্র একটা লম্বা কাজ শেষ করে, বসের কাছে সেটার ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিয়ে নিজের সিটে এসে বসেছি। ইচ্ছে, প্রিয় মনিটরটাকে খানিকক্ষণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা। তাই মেয়েটিকে বললাম, চায়ের বিল কে দেবে?
সে বললো, আমি দেবো, আবার কে?
আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, না যাবো না।
বলে মনিটরের ভেতরে ঢুকে গেলাম।

মেয়েটিকে একটা সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। চাইলে সেটা সে কাজে লাগাতে পারতো। কিন্তু সে সেটা যেকোন কারণই হোক কাজে লাগায় নি। এখন তাকে দুম করে নিষেধ করে দেয়া যায়। কিন্তু মেয়েটি আমার পাশে তিন-চার সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলে ফেললো, আচ্ছা চলেন বিল আপনেই দিয়েন, তাও আমার এখন এক কাপ চা খাওয়া খুব দরকার।

মাঝে মাঝে কিছু মানুষের দেখা পাওয়া যায়, যারা আশপাশের মানুষের মনের ভেতরকার ব্যপার-স্যপারগুলো চট করে বুঝে ফেলতে পারে। নিশা নামের একেবারেই অপরিচিত এ কলিগটিকে আমার হঠাৎ সেরকম একটি মেয়ে বলে মনে হলো এবং আমি নিজের ভেতর তার সঙ্গে চা খেতে যাবার এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হতে দেখতে পেলাম। বিষয়টাকে আমার কাছে 'আজব' বলে মনে হচ্ছিলো। আমরা দু'জনে ওসমান গনির কেন্টিনের দিকে রওনা হলাম।

তখনো আমাদের পরিচয় পর্ব পুরোপুরি সম্পন্ন হয় নি। পথিমধ্যে দু'একটা বাক্য বিনিময় করে বুঝতে পারলাম, স্বাভাবিক আগ্রহের বশেই আমরা একে অপরের প্রাইমারী ইনফোগুলি জানি এবং আমার নাম জিজ্ঞেস করার বিষয়টা আসলেই কথা শুরু করার একটি প্রক্রিয়া ছিলো মাত্র। মেয়েটি আমার নাম আগে থেকেই জানতো।

এর পরদিন থেকে দেখা গেলো, প্রতিদিনই আমরা দু'তিনবার করে ওসমান গনির কেন্টিনের দিকে যাচ্ছি, একসঙ্গে। আগে এই অফিসে আমার চা-সিগারেট খাওয়ার কোনো পার্টনার ছিলো না। তাই চা-সিগারেট খাওয়া কমে গিয়েছিলো। সেটা কিছুদিনের মধ্যেই বেড়ে গেলো। ক্যাম্পাস লাইফে প্রতিদিন ২০ কাপের বেশি চা খাওয়া হতো। সিগারেটও খাওয়া হতো ২০ টার বেশি। সেই আমি কর্মজীবনে ঢুকে দিনে-রাতে মিলিয়ে সাকুল্যে দুই কি তিন কাপ চা আর গোটা পাঁচেক সিগারেটের গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। আমাকে এই 'পীড়িত' অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছিলো নিশা। ওর প্রতি প্রথম কৃতজ্ঞতাবোধটা আমার ভেতর এ কারণেই তৈরি হয়েছিলো।

একদিন রাতের বেলা আমার কাজ শেষ হয়ে এসেছে প্রায়। এমন সময় নিশাকে দেখলাম অফিসের ফেরার গাড়ি ধরার জন্য ব্যাগ গোছাতে। তার দিকে আমি শুধু তাকিয়ে ছিলাম। ডাক দিই নি বা কাছে আসার জন্য ইশারাও করি নি। কিন্তু মেয়েটি হাতের কাজ শেষ করে আমার ডেস্কের পাশে এসে দাঁড়ালো। কি অবস্থা, কি করেন?- জিজ্ঞেস করলো। আমি তার উত্তর না দিয়ে জানতে চাইলাম, আপনার বাসা কোথায়? নিশা একটা এলাকার নাম বললো। যেটা আমার বাড়ি ফেরার পথেই পড়ে। আমি বললাম, তাহলে চলেন আপনাকে আমি আজ পৌঁছে দিয়ে আসি। কপ্টারের সঙ্গেও আপনার পরিচয় হোক। নিশা জানতে চাইলো, কপ্টার কে? বললাম, আমার বাহন। তাকে আপনার পছন্দ হবে।

সেদিন রাতে অবশ্য আমরা সরাসরি বাড়ি গেলাম না। সেদিন রাজধানীতে একটা খুব ভেজা ভেজা ধরনের বাতাস বইছিলো কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছিলো না এবং কোনো এক বিচিত্র কারণে সেদিন রাস্তায় যানজট ছিলো না। তাই কপ্টারে চড়ার পর থেকেই আমার খুশি খুশি লাগা শুরু হয়ে গেলো এবং আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম সেই খুশির ভাবটা নিশার মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম, আপনার হাতে কি কিছুক্ষণ সময় আছে? ও বললো, আছে। শুনে আমি তাকে নিয়ে শাহবাগের দিকে মোটরসাইকেল ছোটালাম।

একসঙ্গে চা-সিগারেট খাওয়া, শাহবাগ এলাকায় আড্ডা দেয়া, বাসায় ফেরা'র মতো কয়েকটা ছোট-খাটো ঘটনার ভেতর দিয়ে অল্প সময়ে নিশার সঙ্গে আমার একটা ফেয়ার বন্ধুত্ব দাঁড়িয়ে গেলো। আমরা দু'জন একসঙ্গে অফিসে আসতে পারতাম না। কারণ আমাদের নয়টা-পাঁচটার অফিস ছিলো না। একেকদিন একেকজনকে একেকসময় অফিসে আসা লাগতো। কিন্তু যাবার সময় দু'জন দু'জনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম। দু'জনের সব কাজ শেষ হয়ে যাবার পর একসঙ্গে বের হতাম। বের হয়েই বাসায় চলে যেতাম না। শাহবাগে যেতাম, সড়কদ্বীপের নীলরঙা পানির গ্যালনগুলোর কয়েকটা জড়ো করে সেগুলোর ওপর বসে ফুটা ভাই আর রসুদ কাকাদের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা পেটাতাম। নিশা অনেক এনার্জিটিক একটা মেয়ে ছিলো। দিনভর কাজ করেও ওর প্রাণচাঞ্চল্য কমতো না। আড্ডার আসরে একাই চিৎকার-চেঁচামেচি আর হৈ-হুল্লোড় করে মাতিয়ে রাখতো সবকিছু।

রাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার ব্যপারে অনীহা ছাড়াও আমাদের দু'জনের মধ্যে আরো বিভিন্ন বিষয়ে মিল খুঁজে পাওয়া গেলো। আমরা কেউই রাতে বাসায় গিয়ে ভাত খেতে পছন্দ করতাম না। তাই প্রায়ই আড্ডা শেষে আমরা বের হতাম খাদ্যানুসন্ধানে। আড্ডার আসরে সবচেয়ে শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকতো রসুদ কাকা। প্রায়ই আমরা তিনজন পূবালী ব্যাংকের সামনে গিয়ে ডিম আর রুটি দিয়ে বানানো রোল খেতাম। রাত ১২টার সময়। এটা বেশ সুস্বাদু একটা খাবার ছিলো। বিশেষ করে বেশি করে পিয়াজ-মরিচ দিয়ে কড়া করে ভাজা ডিম আর ডাবল রুটি দিয়ে বানানো রোলটা আমার বেশি প্রিয় ছিলো। ওটা গোটা চারেক খেয়ে নিলে সারারাতে আর কিছু খাওয়া লাগতো না। নিশা অবশ্য আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অতো খেতে পারতো না। তারপরেও আমার সঙ্গে থাকতে থাকতে ওরও খাওয়া-দাওয়ার প্রতি একটা বাড়তি ঝোঁক তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। আমরা মাঝে মাঝে ভালো ডিমভাজি খাওয়ার জন্য ধানমন্ডির ক্যাফে ম্যাংগোতে চলে যেতাম। বাসার ডিমভাজির পর ওটাই ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমার তৃতীয় প্রিয় ডিমভাজি ছিলো মধুর কেন্টিনের ঝালফ্রাইটা।

কোনো কোনো রাতে রোল খাবার পর রসুদ কাকার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিশা আর আমি পিকক রেস্টুরেন্টের দিকে চলে যেতাম। ভেতরে অবশ্য ঢুকতাম না, কারণ ওখানে মেয়েদেরকে নিয়ে ঢোকা যায় না। নারীবাদীরা এটা নিয়ে একটা আন্দোলন করতে পারে চাইলে। কিন্তু আমি সেটা নিয়ে কথা বাড়াতে চাই না।

যাহোক, আমরা বারের ওয়েটারদেরকে দিয়ে দু'টো বিয়ারের ক্যান আনাতাম। কোনোদিন ব্যারন্স, কোনোদিন হাইনিক্যান, কোনোদিন রয়েল ডাচ, কোনোদিন অ্যাটলাস- যেদিন যা পাওয়া যায়। কোনো কোনো দিন কপাল খুব খারাপ থাকলে কোনোটাই পাওয়া যেতো না। পাওয়া যেতো হান্টার। মনে আছে, মাঝখানে টানা কয়েকদিন শুধু হান্টার খেয়েই থাকতে হয়েছে কারণ অন্যান্য বিয়ার আমদানী বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

পিকক থেকে ক্যান সংগ্রহ করে আমরা বাড়ির পথ ধরতাম। রাতের ঢাকায় সাইকেলে চড়ে বিয়ার খেতে খেতে বাড়ি ফেরার একটা দারুণ মজা আছে। এটা যে করে নাই, সে বুঝতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। আর রাত মানে সামান্য ১০টা-১১টা না। দেড়টা-দুইটা হতে হবে মিনিমাম। আমরা দু'জনে সেরকম সময়েই বাড়ি ফিরতাম।

কোনো কোনোদিন আবার আমাদের সরাসরি বাড়িতে ফেরা হতো না। মদ্যপান করে আমাদের দু'জনের মাংস খাওয়ার ইচ্ছে দেখা দিতো। কিছুতো করার নাই। কারণ শখের তোলা লাখ টাকা। রাত যতই হোক, আমরা গিয়ে উঠতাম নাজিরা বাজারের বিসমিল্লাহ হোটেলে। দুইজন দুই প্লেট বীফ চাপ, গোটা চারেক পরোটা এবং দুই প্লেট সালাদ সহযোগে উদরপূর্তি সেরে বাড়ির পথ ধরতাম। আমি ওকে নামিয়ে দিয়ে তারপরে ফিরতাম। তবে মদ্যপান আমাদের প্রতিদিনের রুটিন ছিলো না। মানে আমরা দু'জন যে কেবলি মদ্যপ হবার তাগিদে একে অপরের সঙ্গে মিশতাম, বিষয়টি তেমন ছিলো না। দেখা হবার পর থেকে আমাদের দু'জনের পুরোটা সময়ই কাটতো নানাবিধ আনন্দের মধ্য দিয়ে। আড্ডা দেয়া, মোটরসাইকেলে করে উল্টা-পাল্টা ঘুরে বেড়ানো, বিয়ার খাওয়া, ফূর্তি করা সবই ছিলো সময়টাকে উপভোগের অংশ। আর দু'জন মানুষ একসঙ্গে থাকাকালীন সময়গুলো তখনই উপভোগ্য হয়ে ওঠে, যখন তাদের মধ্যে মনের মিল থাকে। আমাদের দু'জনের মধ্যে সেটা ছিলো দারুণ মাত্রায়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মোটামুটি বিকেল থেকেই আমরা দু'জনে হাজির থাকতাম শাহবাগের সড়কদ্বীপে। বন্ধু-বান্ধবদেরকে কোনো বিল দিতে দিতাম না। অনেকে টাকা দেয়ার চেষ্টা করে না পেরে আমাদের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করতো। আমরা দু'জন সেই বিরক্তি অকপটে মেনে নিয়ে দাঁত বের করে থাকতাম। এভাবে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘোরাঘুরি আমাদের ভালোই চলছিলো। বিপত্তি বাধলো যেদিন প্রথম খেয়াল করলাম, আস্তে আস্তে মেয়েটির প্রতি আমি আসক্ত হয়ে পড়ছি- সেদিন থেকে। আমার দৈনন্দিন কার্যকলাপগুলোর প্রতিটিতে ওর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ না থাকলে সেগুলো ঠিকঠাকমতো সম্পন্ন হতো না। ঠিকঠাকমতো হওয়া তো দূরের কথা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেসব কাজ হতোই না।

নতুন কেনা প্যান্টের কাপড়টা দর্জির দোকানে দিয়ে আসতে আমার নিশাকে দরকার পড়তো। ল্যাপটপের ব্যাটারি পাল্টানোর জন্য নিশাকে দরকার পড়তো। নিশা সময় দিতে না পারলে আমার ফেলোশিপের অ্যাপ্লিকেশনটা নিয়ে বসার সুযোগ হতো না। এমন এক আজব ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছি টের পেয়ে, আমি ভীষণ বিমর্ষ হয়ে পড়লাম। আমার বিষণ্নতা নিশা ঠিক দুই দিনের মাথায় টের পেয়ে গেলো। টের পেয়ে একসময় হুট করে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি আমার প্রেমে পড়েছেন?

আমি তখন কি যেন একটা খুটখাটের কাজ করছিলাম। হঠাৎ তার এ ধরনের প্রশ্ন শুনে ভালোমতোই হকচকিয়ে গেলাম। অথচ কথাটা মেয়েটি হালকা চালেই জিজ্ঞেস করেছিলো। আর আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম- আয়হায়! টের পেয়ে গেলো কেমনে?

পরমুহূর্তেই অবশ্য বুঝতে পারলাম, নিশা আমার সঙ্গে দুষ্টামী করছে। আমিও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রিপ্লাই করলাম, হ্যাঁ কিভাবে বুঝলেন? কথাটা বলার সময় তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। স্পষ্ট দেখতে পেলাম মেয়েটিও এক সেকেন্ডের জন্য হকচকিয়ে গেলো। এবং পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে আমার দিকে চোখ ফেরালো। আমি সেইম আমার রি-এ্যকশনটাই মেয়েটির মধ্যে দেখতে পেয়ে আরো একবার হকচকিয়ে গেলাম।

তিনদফা পাল্টাপাল্টি হকচকানোর পর আমাদের দু'জনের মধ্যেই এক ধরনের মানসিক অবসাদ তৈরি হলো। আমরা তখন ওসমান গনির কেন্টিনে গেলাম। দু'জনে দু'কাপ চা খেলাম। কিন্তু তেমন কোনো কথা হলো না। অথচ একটু আগেই পুরোদমে দুষ্টুমী করছিলাম। যেসব কথাবার্তা খানিক আগে আমাদের মধ্যে হয়ে গেছে, তার রেশ তখনো খুব ভালোভাবে বজায় থাকার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা ছিলো না।

সেদিন রাতে নিশা আমাকে একটা খুব অদ্ভুত একটা টেক্সট পাঠালো। তেমন টেক্সট সে আমাকে আগেও কখনো পাঠায় নি, কিংবা পরেও না। আমরা একে-অপরকে সাধারণত আপনি সম্বোধন করলেও, মাঝে মাঝে তুমি-তোমারি বা তুই-তোকারিও করতাম। বন্ধুত্বটা গাঢ় হয়ে গেলে, এগুলো নিয়ে আসলে কেউই মাথা ঘামায় না। ওর টেক্সট-এ লিখা ছিলো,

"যতই তোমাকে দেখি ততই অদ্ভুত মনে হয়'
অদ্ভুত মনে হয় তোমার আচরণ
অদ্ভুত মনে হয় এই পৃথিবী"

আমি এটার কোনো মাথামুন্ডু বের করতে পারলাম না। এটাকে কোনো কবিতাও মনে হচ্ছিলো না। কারণ পরিচিত কোনো ছন্দের ফরম্যাটে একে ফেলা যাচ্ছিলো না। সেক্ষেত্রে এটাকে আমার তথ্যের ক্যটেগরীতে ফেলতে হচ্ছিলো বারবার। কিন্তু এমন একটি তথ্য মেয়েটি কেন আমাকে দিতে চাইবে- তা ভেবে ভেবে আমার সারারাত ঘুম আসলো না। সকালে ফজরের নামাজের আযান শুনতে শুনতে হঠাৎ আমার মনে পড়লো, সারারাত জেগে থাকার কোনো দরকার ছিলো না। নিশা হয়তো অন্য কাউকে টেক্সটটি পাঠাতে গিয়ে ভুল করে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। শুধু শুধুই আমি নির্ঘুম রাত কাটালাম। কতখানি গভীর প্রেমে ডুবে গেলে এমনটি ঘটে, সেটা ভেবে আমি আরো শঙ্কিত হয়ে পড়লাম। এই প্রেম নিশার কাছ থেকে আমি কিভাবে লুকাবো? সারাটা সকাল ভেবেও কোনো কূল-কিনারা করতে পারলাম না।

এরই মধ্যে আমি একদিন খেয়াল করে দেখলাম, আমার মধ্যে নতুন এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। নিশা খুব বিচিত্র ধরনের কিছু বিষয়আশয় নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে এবং সবসময় আমার সঙ্গে সেগুলো নিয়ে আলোচনার ব্যপারে উৎসুক ভঙ্গিতে ঘোরাঘুরি শুরু করেছে। ওর উৎসাহ দেখে আমাকে সেসব আলোচনায় অংশ নিতেই হতো। শুধু অংশ নেয়াই না, তার সঙ্গে সেসব বিষয় নিয়ে পরিকল্পনাতেও বসতে হতো এবং সেটা আমার জন্য খুব মনোঃকষ্টের ব্যপার ছিলো। কারণ পরিকল্পনাগুলো হতো নিশার বিয়ে নিয়ে।

মেয়েটির প্রথম শর্ত ছিলো, তার পাণিপ্রার্থী ছেলেকে অনেক ধনী হতে হবে। গুলশান-বারিধারা বা ধানমন্ডি এলাকায় নিজেদের পৈত্রিক ভিটে থাকতে হবে। অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্যাপার্টমেন্ট থাকলেও চলবে না। ওর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের অনেক ফলপ্রসূ আলোচনাও হতো। কিভাবে নিশার হবু বয়ফ্রেন্ড বা স্বামীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির প্রকৃত খোঁজ-খবর আমরা বের করবো, সেটার একটা ফুলপ্রুফ পরিকল্পনা করা হয়ে গিয়েছিলো।

কিন্তু রাতে বাড়ি ফেরার পর আমার নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ মনে হতো প্রতিদিন। মনে হতো, খুব দ্রুতই প্রিয় বন্ধু নিশা জীবন থেকে হারিয়ে যাবে। তার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। সকাল সকাল ক্লায়েন্টের অফিসে যেতে হবে বলে, আর কেউ ভোর সাতটায় ফোন করে আমার ঘুম ভাঙাবে না।

বন্ধুত্বের খাতিরে ওর সঙ্গে সারাদিন হাসিমুখে নানারকম পরিকল্পনা করতাম। কিন্তু রাতে ঘরে বসে একা একা নিজের হাতে বানানো স্টিকটায় অগ্নিসংযোগ করার পর আমার আর ভালো লাগতো না। নিশার জন্য সত্যি সত্যি মনটা হু হু করতো। যেটার কথা আমি কাউকে বলতে পারতাম না।

এর মধ্য দিয়েই দিন পার হয়ে যাচ্ছিলো। আমাদের আড্ডাবাজিতে মধ্যে কখনো গ্যাপ পড়তো না। আগের মতোই অফিস থেকে বের হয়ে দু'জন চলে আসতাম শাহবাগে। ১২টা বাজার আগে উঠতাম না। তবে মদ্যপানের অভিসারে বের হওয়াটা কমে গিয়েছিলো। নিশাও আর প্রতি রাতে বলতো না, "চল্, আজকে বিয়ার খাই।" সুন্দর সম্পর্কটা কোনো কারণ ছাড়াই কিছুটা আলগা হয়ে গেলো। খুব বেশি আলগা নয়। একে অপরের সব খোঁজ-খবরই রাখতাম। শুধু পাগলামিগুলো করতাম না। যত দ্রুত সম্পর্কটা গভীর হয়েছিলো, আমি একদিন খুব অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম; ততদ্রুতই সেটা আবার অগভীর হয়ে যাচ্ছে।

২.
বড় বড় ঘটনাগুলো মানুষের জীবনে আসে, মূলত তার চলার পথের বাঁকগুলো দেখিয়ে দেবার জন্য। নিশার জীবনেও তেমনি একটা ঘটনা ঘটে গেলো। ওর অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো অনেক ভালো। যেটা নিয়ে আমি প্রায়শই ওকে ক্ষেপাতাম। এত কষ্ট করে বছর বছর ফার্স্ট হয়ে সে আজ যে চাকুরী করছে, টেনে-টুনে কোনমতো ভার্সিটিটা পাশ দিয়ে আমিও সেই একই চাকুরী করছি। কি মজা! এটা শুনলে ও কপট রাগের একটা ভঙ্গি করতো। এবং উদ্বাহু হয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হতো। কিন্তু আমি জানতাম, মনের ভেতরে এটা নিয়ে ওর একটুও আক্ষেপ ছিলো না।

একদিন সে এসে আমাকে জানালো, ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সায়েন্স স্টাডিজের একটা স্কলারশিপ নিয়ে অচিরেই নাকি নেদারল্যান্ড চলে যাবে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে রাজি হলাম না। সেটা ওর নিরাসক্তভাবে বলার কারণে। কিন্তু অল্পক্ষণেই বুঝে ফেললাম, ঘটনাটা সিরিয়াসলি ঘটে গেছে। সত্যি কথা বলতে কি, খবরটা শুনে আমি খুব বেশি খুশি হলাম না। কিন্তু সেটা অপ্রকাশিত থেকে গেলো। মেয়েটিকেও খুব বেশি খুশি মনে হচ্ছিলো না। কিন্তু সেও বিষয়টাকে খুব সন্তপর্ণে অপ্রকাশিত রেখে দিলো।

চাকুরী ছাড়ার আনুষ্ঠানিকতা সারতে আরো মাসখানেক সময় লাগলো। সে সময়টা আমাদের দু'জনের খুব ভালো কাটলো। আমরা যে একে অপরকে কতটা ভালবাসি সেটা যেন এক নতুন উপলব্ধিতে ধরা দিলো। নিজেদের মধ্যে স্বীকৃত কোনো প্রেম ছিলো না ঠিকই কিন্তু আমাদের চলাফেরা দেখে আমরা নিজেরাও মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়ে পড়তাম। একদিন রাতে আমরা দু'জনে কপ্টারে চড়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ফেরীঘাট থেকে ঘুরে আসলাম। ঝিরঝিরে বৃষ্টি সারাটা রাত আমাদেরকে সঙ্গ দিয়েছিলো।

আমাদের দুইজনের ছিলো দু'টি পাতলা কিন্তু টাইট 'রেইনকোট'। সেটা দিয়ে খুব সুন্দর করে পুরোটা শরীর মুড়িয়ে নেয়া যেতো। ঢাকা থেকে মোলায়েম অর্ধশত কিলোমিটারের যাত্রা। মাওয়া ঘাটে গিয়ে খেলাম ভাজা ইলিশ। দুইজনে যে মাছটা দেখিয়ে দিয়েছিলাম সেটা মূলত তিন-চারজনে মিলে খাওয়ার মাছ। সেটাই দু'জনে মিলে শেষ করে ফেললাম। ওটাই ছিলো আমাদের দু'জনের একসঙ্গে করা শেষ ভুড়িভোজন। হলুদ-মরিচের গুঁড়া আর লবণে ভাজা হয়েছিলো মাছটি। সাথে ছিল পদ্মাপাড়ের বেগুনভাজা আর শুকনো মরিচ দিয়ে বানানো আলুভর্তা।। মাওয়া ফেরীঘাটে সেবার ওই গভীর রাতের পরিবেশে ইলিশভাজা দিয়ে গরম ভাত যে অমৃতের মতো সুস্বাদু লেগেছিল, সে ব্যপারে একমত ছিলাম নিশা-আমি; দু'জনেই।

ইলিশ খাওয়ার পর ঘাটের পাটাতনে পা ঝুলিয়ে বসে বসে সিগারেট খাওয়ার অভিজ্ঞতাটা ছিলো আমাদের আরো একটা না ভুলে যাওয়ার মতো স্মৃতি। তখন রাত বোধহয় সাড়ে তিনটা কি চারটা বাজছিলো। ভোর হতে খানিক বাকি ছিল তখনও।

পদ্মার উন্মত্ত বাতাস আমাদের দু'জনের শরীরের মধ্যে এনড্রালিনের প্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। তারই তাড়নায় আমরা দু'জন দু'জনকে জীবনের প্রথম চুমুটি খেয়েছিলাম। তারপরে নিশা আমাকে বলেছিলো, তার খারাপ লাগছে আমাকে ছাড়া নেদারল্যান্ডস্ চলে যেতে।

আমি কোনো কথা বলতে পারি নি। ওকে দেশে থেকে যেতে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। কিন্তু সেটা আসলে ঠিক হতো না। কেননা ওর জীবনের পরিকল্পনাটা করার অধিকার কেবল ওরই ছিলো। এমনকি ওকে দেশে থেকে যাবার পক্ষে একটা সামান্য পরামর্শ দেওয়াকেও আমি সমীচিন ভাবতে পারছিলাম না।

সেদিন আমরা যখন রাজধানীতে প্রবেশ করলাম তখন সূর্যের আলো ফুটে গিয়েছে। সেটা ছিলো একটা রোজার মাস। সারারাত প্রায় সবখানেই মানুষের দেখা মিলেছে। সেই ভোরবেলাতেও নীলক্ষেত মোড়ের রাস্তায় দেখা মিললো ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হওয়া কিছু মুরুব্বী ধরনের মানুষের। আমরা তাদেরকে ভেজা-নির্জন রাস্তার একপাশে রেখে ছুটছিলাম শান্ত ও নিস্তরঙ্গ মনে।

অবশ্য ছোটার একটা বিশেষ কারণ ছিলো। দু'জনেরই চা খেতে ইচ্ছে করছিলো। রাতে ইলিশ খাওয়ার পরেও চা পাই নি। ওই হোটেলগুলোতে ব্যবস্থা ছিলো না। শহরেও কোথাও চাএর দোকান খোলা ছিলো না। অনেক খোঁজার পর তেঁজগা শিল্প এলাকার একদম ভেতরের দিকে একটা চায়ের দোকান পেয়েছিলাম। ভোরবেলা যেসব শ্রমিক গার্মেন্টেস্-এ যায়, তাদের জন্য খোলা ছিলো বোধহয়। আমরা দোকানে বসে দুই কাপ চা ও দুইটা সিগারেট খেলাম। তারপরে সাড়ে সাতটার দিকে নিশাকে ওদের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে এলাম।

এরপর ওর চলে যাবার আর বেশি দিন বাকি ছিলো না। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো, নিশাকে আমার কথাটা বলে দেয়া দরকার। আমি যে ওকে ভালোবাসি, কিংবা সারাজীবন ওর সঙ্গে থাকতে চাই, এখনকার মতোই হল্লাবাজ একটা জীবন কাটাতে চাই; বিষয়টা ওকে একেবারেই না জানানোটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু মনে হওয়াটা তত বেশি প্রবল হয়ে চেপে বসতো না, যতখানি হলে আমি ওকে বিষয়টার কথা বলতে পারি। আমার বুদ্ধিগুলো যে হয়তো তখন নয়, কিন্তু কয়েক বছর পর শুধুই সংকট বাড়াবে তাও বুঝতাম।

ওর সঙ্গে শেষবার যখন আমার দেখা হয়, সেদিনটির কথা আমার খুব স্পষ্টভাবেই মনে আছে। আমরা কোনো ঘোরাঘুরি না করে চুপচাপ পার্কে গিয়ে বসে ছিলাম। চা-সিগারেট খাওয়া হলো। রাজ্যের নানা বিষয়ে গল্প হলো। ঠিক হলো, পিএইচডি করে দুই বছর পর সে ফিরে আসবে। তখন আমরা আবার এখনকার মতোই ঘুরাঘুরি করে দিন কাটানো শুরু করবো। এ ধরনের একটা ডীল ফাইনাল হলো। ডীলের শর্ত হিসাবে, এই সময়কালের মধ্যে কেউ বিয়ে-শাদি করতে পারবে না- কথাটা অন্তর্ভূক্ত করা হলো। তারপরে আমি ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসলাম।

৩.
এরপর এটা একটা লম্বা সময় পেরিয়ে গেছে, যখন আমি গল্পটা লিখছি। মেয়েটির ফিরে আসার সময় অনেক বছর হলো পেরিয়ে গেছে। তবে সেই ডীলটা এখনো 'আনব্রোকেন' আছে। আমি অবশ্য ইচ্ছে করেই পরে আর কোনো খোঁজ নিই নি।

আজকাল মাঝে মাঝে অফিস করার সময় পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। কর্মজীবনে খুব সামান্য সময়ের জন্যই আমি দিনে "২০ কাপ চা আর ২০ টার বেশি সিগারেট" খাওয়া দিন পার করেছি। সেই সামান্য কয়টা দিনে একটি অসামান্য মেয়ে আমায় সঙ্গ দিয়েছিলো।

সেই সামান্য ক'টা দিনের আগে ও পরে অসংখ্য অগণিত দিন আমি নিজের মনিটরের ভেতর চোখ-কান-মুখ ডুবিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি। অফলপ্রসূ সেই সময়গুলো আমাকে নাড়া দেয়ার চেষ্টা করেছে। চোখে পানি নিয়ে আসবার চেষ্টা করেছে বারবার। কিন্তু আমি মন-দেহ সবকিছু শক্ত করে নিয়ে বসে থেকেছি। অপেক্ষা ছিলো নিশার ফিরে আসবার।

---

পোস্টটি ১৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

রুমিয়া's picture


দারুণ দারুণ !!!পড়তে পড়তে মনে হইতেছিল ইশরে শেষ না হয়ে যায় ..!! খুবই ভাল্লাগসে.. Smile

মীর's picture


আমার ভাল্লাগসে আপনে আমার কথা রাখসেন, এটা দেখে। থ্যাংকিউ ভেরী মাচ ডিউড।

এইবার আপনে নিজে একটা লেখা দেন। খ্রীঃপূঃ ২০০ অব্দের পর তো আর কোনো পোস্ট-টোস্ট দিতে দেখি নাই।

মীর's picture


সংশোধনী : "কথা মনে রাখসেন" হবে Smile

মাহবুব সুমন's picture


বাহ ! বাহ ! বাহ ! দারুন লাগলো। পড়ে মনের মাঝে হাহাকারের তৃপ্তি আসলো।

মীর's picture


ভাইজান বহুদিন পর আমার লেখা দেখা দিলেন। খুউব খুশি হইসি জানেন নাকি?

আরাফাত শান্ত's picture


দারুন দারুন দারুন
ফেসবুকে শেয়ার দিলাম আমার দুই বন্ধু পড়ে পুরা ফিদা!

মীর's picture


আর আপনের লেখাগুলো আমি যখন আমার বন্ধু-বান্ধবদেরকে বাইর করে করে পড়াই, তখন তারা একেকজন মাধুরী হয়ে যায়।

এইসব ফিদা-মাধুরীদের নিয়ে কি করা যায়, বলেন তো।

জ্যোতি's picture


অনেকদিন পর মীরের সেই লেখা । এতদিন মিস করেছি । কোথায় ছিলেন?
আহা ক্যাফে ম্যাংগো, ডিম ভাজি !!
নিশাকে স্কাইপ, এফবি.... কোথাও খোজেন । আবার দিনগুলি গল্পের মত খুব বেশী মিষ্টি হোক ।

মীর's picture


আহা ক্যাফে ম্যাংগো, ডিম ভাজি !!

মানে কি? আপনেও কি ডিম ভাজি খাইতে ওইখানে যান?

১০

স্বপ্নের ফেরীওয়ালা's picture


এক টানে পড়লাম..মচমচে... Smile

~

১১

মীর's picture


আপনার কাছ থেকে প্রশংসা পাইলে তো খানিকটা লজ্জা লাগা শুরু হয় ভাইজান। আছেন-টাছেন কেমন? আপনারে আমি খুব পছন্দ করি কিন্তু।

১২

অতিথি's picture


মাওয়ার রাস্তা শুরু থেকেই ভাল, ওবায়দুল কাদেরের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।

১৩

মীর's picture


কার্রেক্ট, সেন্ট-পারসেন্ট কার্রেক্ট। কিন্তু আমার লেখাতেও বলা হয় নাই, ওকা'র জন্য মাওয়া হাইওয়ের উন্নতি হইসে। খুউপ খিয়াল্কৈরা Wink

যাই হোক, প্রিয় অতিথি আপনার জন্য রইলো ধূমায়িত চা

ভালো থাইকেন এবং আমার প্রত্যেকটা পোস্টে আইসা হাজিরা দিয়েন। নাইলে কিন্তু হপে না।

১৪

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


দারুণ লাগলো। এতদিন কোথায় ছিলেন ?

১৫

মীর's picture


ছিলাম তো বস্ আশেপাশেই। লেখালেখির ফ্লো'টা অনেক কমে গেছে, তাই পোস্ট ছিলো না। কিন্তু আমি নিজে ছিলাম সবসময়ই।

আপনে কেমন আছেন? লেখাতো দেখি আপনারও কমে গেছে। ব্যপারটা কি?

১৬

রশীদা আফরোজ's picture


মীর,
আপনার কিছু কিছু লেখা আছে, যেগুলো পড়লে কখনো আপনাকে খেলার সাথী, আবার কখনো সহোদর বলে মনে হয়। কারণ বেশ মিলে যায়। মনে হয় এই পথ দিয়ে তো আমিও হেঁটেছি, এই রকম ভাবনা তো আমিও ভেবেছি (বিশেষ করে শৈশব, কৈশোর)...।
বড় মায়া হয়! কতোটা বোঝানো যাবে না।
গল্পটা পড়ার পর মনটা বিষন্ন ভালোলাগায় ভরে গেল। সাধারণত এই সময়টা কাজের ভেতর ডুবে থাকি কিন্তু গল্পটা এমনভাবে টেনে নিলো যে দেশব্যাপী জামাতের তাণ্ডবও এতোটা সময় আমার ধ্যান ভাঙতে পারেনি।
মীরের জন্য স্নেহমাখা ভালোবাসা।

১৭

মীর's picture


এই কমেন্টটা একটা অসাধারণ কমেন্ট। এটার উত্তর দেয়ার ক্ষমতা ওস্তাদ আমাকে দেয় নি। আমি রশীদা'পুকে একগুচ্ছ আন্তরিক ধন্যবাদ ও ১টি গোলাপ ফুলই কেবল দিতে পারি


ভালো থাকবেন আপুমনি। শুভেচ্ছা নিরন্তর। আপনার নতুন লেখা পড়ি না অনেকদিন। ব্যস্ততা ঝেড়ে এইবার একটা লেখা দেন। অপেক্ষায় রইলাম

১৮

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


ইশ! এত্ত সুন্দর করে মানুষ ক্যাম্নে লেখে!

১৯

মীর's picture


যেভাবে আপনি আমার সব পোস্টে সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করে যান, সেভাবে।
আছেন কেমন ভাইজান? দিন-কাল কাটছে কেমন?

২০

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


এক্সাম প্রায় শেষ আর বইমেলা শুরু হইতাছে,
সো মন ভাল থাকার সময় শুরু হবে হবে করছে আর কি! Smile

২১

তানবীরা's picture


মীর, মুচমুচে লেখা হয়েছে।

তোমার লেখায় স্টিক খাওয়া, বাইরে রাত অব্ধি ঘোরা, হালকা ঝিরঝিরে বৃষ্টি, বিয়ার, চুমু খাওয়া, শাহবাগ, বোহেমিয়ান লাইফের এই জিনিসগুলো ঘুরে ফিরে আসছে। তুমি কি হুমায়ূন আহমেদের মতো নিজস্ব একটা স্টাইল তৈরি করার জন্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এভাবে লিখছো নাকি তুমি খেয়াল করো না, আপনাতেই হয়ে যায়? তোমার এই লেখাটা আমার পড়তে যেয়ে বেশ কবার মনে হয়েছে, এই বর্ননাগুলো আগের লেখাগুলোতে অনেকবার যেনো পড়েছি।

উপলক্ষ নাকি উপলক্ষ্য কথাটা?

ভাল থেকো

২২

মীর's picture


সুন্দর মন্তব্যটার জন্য ধন্যবাদ তানবীরা'পু। এইটা আমাকে অনুপ্রাণিত করলো। পরের লেখাগুলোতে চেনা-জানা রাস্তাগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবো। তারপরেও হয়তো দেখা যাবে, শাহবাগ নাই কিন্তু পুরান ঢাকা ঠিকই চলে আসছে। দয়াগঞ্জ আসছে কিংবা মানিকনগর, রামপুরা বা বনশ্রী। কি করবো বলেন, অপচেষ্টাগুলোতো কাজে আসে না, বুঝেন না? সব উল্টাপাল্টা কথাবার্তা শুধু মনে আসতে থাকে। আর সেগুলোই লিখে ফেলি। টের পাই, একই কথা ঘুরে-ফিরে আসছে বারবার। কিন্তু টের পেলেও কিছু করার থাকে না। বড়ই বিপদে আছি আপামনি।

যাই হোক, ভালো থাকবেন সবসময়। মনে রাখবেন আমার কথা। নিজে লেখালেখি যে কমায়ে দিসেন, সেটা মনে হয় নিজেই এখন বুঝতে পারতেসেন। প্রচুর পরিমাণে লেখালেখি করবেন। ব্যস্ততাকে দূরে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করবেন। নিজের পুরোনো লেখাগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন, আপনার ভেতর দারুণ একজন লেখক লুকিয়ে আছে। সেটা আসলে পাবলিক প্রপার্টি। তাই সেটাকে আটকে রাখার চেষ্টা যত কম করবেন, জনগণ তত শান্ত থাকবে এবং আপনাকে শান্তিতে রাখবে; বুঝতে পারলেন?

২৩

পাঠক's picture


ভালো লেগেছে..

২৪

মীর's picture


ধন্যবাদ জনাব। আপনাকে দেখে আমারো ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন Smile

২৫

লীনা দিলরুবা's picture


তানবীরার কমেন্টটা গুরুত্বপূর্ণ।

মীর-এর কাছ থেকে অন্য প্লট- অন্য গল্প চাই।

২৬

মীর's picture


এই কমেন্টটা দেখার পর থেকে একটা গান শুধু আমার মাথার মধ্যে ঘুরতেসে আর ঘুরতেসে-

ভালো লাগছে, ভালো লাগছে; কেন তা বলতে পারি না...

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মীর's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাগতম। আমার নাম মীর রাকীব-উন-নবী। জীবিকার তাগিদে পরবাসী। মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প-কবিতা-আত্মজীবনী ইত্যাদি লিখি। সেসব প্রধানত এই ব্লগেই প্রকাশ করে থাকি। এই ব্লগে আমার সব লেখার কপিরাইট আমার নিজেরই। অনুগ্রহ করে সূ্ত্র উল্লেখ না করে লেখাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না। যেকোন যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: bd.mir13@gmail.com.
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং!