ক্ষমা নাই ওটার কোনো ক্ষমা নাই, শূকরটাকে বধ করবোই
১.
বেলা সাড়ে ১১টায় যখন টিভি স্ক্রীনের নিচের দিকে খবরটা গড়াতে শুরু করলো, তখন থেকেই মুখে থুথু জমে আছে। বারবার ফেলছি, বারবারই জমছে। মাঝে মাঝে মানুষ নিজে কোনো দোষ না করেও যে কি ভীষণ আত্মগ্লানিতে ভুগতে পারে, সেটা টের পেলাম এইবার।
কিন্তু আমি কেন আত্মগ্লানিতে ভুগছি? আমার কি দোষ? বুঝতে পারছিলাম না এবং মনকে কোনোভাবে বোঝাতেও পারছিলাম না। একটা প্ল্যকার্ড দেখলাম। লেখা আছে, অঝোর ধারায় কাঁদছে চোখ/ আমার নাহয় ফাঁসি হোক।
কি অর্থহীন একটা কথা! এ পর্যন্ত কোনো মানুষকে আমি এভাবে নিজের ফাঁসি চাইতে দেখি নি। এ ভাষায় প্রতিবাদ করতে দেখি নি। সে কেন ফাঁসি চায়? তার কি সমস্যা? সবই ভাবছি, সবই বুঝছি কিন্তু অর্থহীন কথা সম্বলিত ওই প্ল্যাকার্ডটিকে চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছি না। ঘুরেফিরে ওটাই সামনে ভেসে উঠছে। কেন এমন লাগছে কোনোভাবেই বুঝতে পারছিলাম না।
বিকালের দিকে গুড়ের চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ পার্কের ভেতর থেকে রাস্তার দিকে চোখ পড়লো। সেখানে তখন মশাল হাতে হাঁটছে কিছু যুবতী-যুবক। গুড়ের চা শেষ করে দৌঁড়ে গিয়ে ওদেরকে ধরলাম। পরিচিত মুখগুলো ব্যথায় ভরে আছে। দেখে চোখে পানি চলে আসলো। শাহবাগে পৌঁছে দেখলাম, অনেক মানুষ। সবার চোখে ব্যথার ছায়া। টলমল করছে চোখ। চোয়াল যতই শক্ত থাকুক, ওদের চোখের দিকে তাকালেই হৃদয়ের রক্তক্ষরণ টের পাওয়া যাচ্ছিলো। দেশের প্রতি পাগলের মতো ভালোবাসা ছাড়া আর কোনোকিছুই এভাবে গণমানুষের হৃদয় থেকে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে বলে মনে হয় না।
গান হলো, স্লোগান হলো, মোমবাতি জ্বালানো হলো। হলো না শুধু মুখভর্তি থুথু'র দলা থেকে রেহাই পাওয়া।
২.
বুধবার সকাল থেকে মনে হচ্ছিলো- আগামীকাল যখন হরতাল থাকবে না; তখন এই শাহবাগ দিয়ে কি আবার ৮ নম্বর, ১৩ নম্বর, ট্রান্স সিলভা, রাজধানী'গুলা চলা শুরু করবে? ট্রাফিক পুলিশ মোড়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি কন্ট্রোল করা শুরু করবে? মানুষ কি ভুলে যাবে- কসাই কাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাতে পারে নি তারা। ভুলে যাওয়া ছাড়া আর কি উপায়ে এত বড় ব্যর্থতার দায় থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব?
এইদিন মন-মেজাজ আরো খারাপ লাগছিলো অনলাইনে কিছু গ্যাঞ্জাম আর শাহবাগে কিছু সুসময়ের মাছির ভনভনানি দেখে। মাছিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফকির আলমগীর। এই লোকটা এক্সপোজারের জন্য এমন কিছু নেই যা করতে পারে না। আওয়ামী লীগের নেতাদের প্যানপ্যানানি শুনতেও ভালো লাগছিলো না। তবে ইনু সাহেবের কর্মকাণ্ড পর্যন্ত মেনে নেয়া যাচ্ছিলো। ওটাই ছিলো বাউন্ডারি। ওর চেয়ে বেশি দলীয় আনুগত্য কেউ দেখাতে আসলেই, তাকে ধরা খেতে হচ্ছিলো।
৩.
বৃহস্পতিবারটাকে দেখে মন ভালো হয়ে গেলো। ৭২ ঘন্টা পরে মন ভালো হওয়া। সেই যে টিভিত্রে স্ক্রল দেখে মন খারাপ হয়েছিলো সেটা কেটে যাওয়া। এদিন স্লোগান ছিলো আরো জোরালো।
হানিফ মিয়া মাইক্রোফোন নিয়েই পড়লেন তোপের মুখে। এদের জনসমর্থন যে কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, সেটা খানিকটা আঁচ করা যায় এসব ঘটনায়। অবশ্য এদের ঘটের বুদ্ধি যে কি আশঙ্কাজনক পরিমাণে লোপ পেয়েছে, তাও আঁচ করা যায় এ ঘটনায়। ব্যটা এখানে জনগণের মঞ্চ তৈরি হয়েছে, জনরায় ঘোষণা হয়ে গেছে আর তুমি আসচো আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার নসিহত দিতে! কাছা যে খুলে রেখে দেয়া হয় নাই, এই তো বেশি।
৪.
মুখের থুথু আজো আমার মুখেই জমে আছে। নানামহলে নানা কথা শুনতে পাচ্ছি। মুজাহিদ-কাদের মোল্লা আর মীর কাশেম আলীকে সেভ করে গোআ, নিজামীর ফাঁসি হবে। নতুন জামাতের কান্ডারি হবে ওই তিনটা। অনলাইনে ছাগুরা নাকি ইসলাম আর নবীকে গালি দিয়ে পোস্ট দিবে, যাতে পাবলিক সেন্টিমেন্ট শাহবাগবাসীদের বিরুদ্ধে যায়। আরো অনেক ভুজুং-ভাজুং।
কেউ কি জানে, আজকে এইসব ভুজুং-ভাজুং দেখার কিংবা শোনার কারো টাইম নাই? পাবলিক বড় ভয়ানক জিনিস। কোনো লজিকই এখানে খাটে না। বানের মতো সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। একপ্রস্থ পলি পরে এবং তার উপরে নতুন জীবনের উন্মেষ ঘটে। তাই মহলগুলোর ফিসফিসানিতে কান না দিয়ে আমি এখন রেডি হচ্ছি। থ্রি-কোয়ার্টার পরে আছি। এটা খুলে জিন্স পড়বো। শার্ট বা গেঞ্জি, যাহোক একটা কিছু গায়ে জড়াবো। আজ এর উপরে আর কিছু চড়াতে হবে বলে মনে হচ্ছে না। বাইরে খুবই গরম। পকেটে টাকা নাই, প্যাকেটে বিড়ি নাই। এসবে অবশ্য কোনো সমস্যা নাই। একবার কোনোভাবে শাহবাগে চলে যেতে পারলেই হলো। এক লাখ, আজ আমরা এক লাখ এক জায়গায় জমা হবো।
এই শাহবাগই কোনো না কোনো উপায়ে ওই রাজাকারটাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাবে। আর আমরা ওর চোখে-মুখে দলায় দলায় থুথু ছিটাবো। শূকরটাকে ফাঁসির দড়ি পরিয়ে দেবার আগেই। আশায় আছি। এটাই আমার প্রিয় বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশটাকেই আমি চাই। সবখানে, সবসময়।
---
- এই কথাটা বিভিন্ন দিক থেকে কানে আসলো।
মানুষের চোখ যখন শাহাবাগে ব্যস্ত তখন, হল-মার্কের চেয়ারম্যান জেসমিনের একসাথে ১১ মামলায় জামিন, পদ্মা সেতু মামলার দুই সচিবকে জামিন। আবার, বিএনপি যাতে সুযোগ নিতে না পারে তাই মির্জা ফখরুলের মুক্তি, বিনা বাঁধায় রিজভীর আগাম জামিন। ওদিকে, তেলের দাম বাড়িয়ে বিদ্যুত উৎপাদন কমানো হচ্ছে।
বাংলার মানুষ বহু দিন পরপর জেগে ওঠে। তাই, বাকী সব সামাজিক সমস্যা আর দুর্নীতির ফয়সলা একবারে হোক শাহাবাগে। সব রাজনীতিকদের বুঝিয়ে দেয়া হোক তাদের হেলা-ফেলা-ছেলে-খেলায় দেশ চলবে না, দেশ চলবে সাধারণ মানুষের ইচ্ছায়...
~
আসলে সেটাই ঘটবে ফেরী ভাই। সব অন্যায়, অবিচার ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাবে এবারের গণবন্যায়। মহাসমাবেশে দেখেছেন নিশ্চই; পা ফেলবার জায়গা ছিলো না, দাঁড়ালে আর বসা যাচ্ছিলো না, মানুষ মানুষের কোলের উপরে চড়ে বক্তৃতা শুনেছে, গায়ের সব শক্তি এক করে দাঁড়িয়ে থেকেছে, কিন্তু তাও কারো মুখে ক্লান্তির কোনো ছাপ ছিলো না। আমি এবার আশাবাদী বস্। এবার হবে, হবেই।
সত্বেও আপনার লেখায় মনতব্য দিচছি ।]
১] ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, পরতি দশকে বাংগালী তথা তরুণরা একবার করে জেগেছে, আনদোলন করেছে অপ-শকতির বিরোদধে,,খুন ঢেলেছে রাজ পথে এবং পরিণতিতে জয়ীও হয়েছে বার বার । কিনতু বিজয় নিজেদের দখলে থাকেনি কোনবার,হাইজেক হয়েগেছে।
২] আমার ূথুথু আটকে আছে আরো আগে থেকে, সে '৬৯ এর বিজয়ের পর থেকে। আমি দেখেছি, ছাতর সংগরাম পরিষদের ১১দফা শেখ মুজিবের মুকতির পর
কি করে যেন রাতারাতি বিশেষ একটি দলের হয়ে যায়, সবার মিলিত স্বাধিকার দাবিও ছয় দফার মাঝে বিলীন হয় ।
৩] আজ একুশের তাবত অরজনও নেতা ও দল বিশেষের বলে চালানোর চেষটা হচছে ।
৪] আমাদের যাদের বয়স হয়ে গেছ তাদের ঘেননার থুথু বোধহয় এজীবনে আর থুকবার সময় হবেনা । আমাদের এখন শুধু দেখে যাওয়া আর আশা করে থাকা ।
ভাল থাকুন !
বিরক্ত হইলাম কাদের ভাই। আপনে সম্ভবত দেশে নাই। থাকলে বুঝতেন, এখানে যা ঘটছে সেটাকে কোনো যুক্তিতেই ব্যাখ্যা করা যায় না। মানুষের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে সব অন্যায়, অবিচার, সবকিছু। আজ হিসাব করার সময় নয়। ঘেন্নার থুথু যদি গিলে ফেলতে চান, গিলে ফেলেন। গিলতে না চাইলে ফল কার ঘরে যাবে সে হিসাব কষা বাদ দিয়ে এ আন্দোলনকে আপনার বলে ভাবতে চেষ্টা করেন। থুথু ফেলবার সময়-সুযোগ সবই পাবেন।
”কীসের বিচার, কিসের দায়
আগে ফাঁসি, পরে রায়।”
ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই
কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই...
শাহবাগে গিয়ে, টিভিতে দেখে সত্যি চোখে পানি আসে আবেগে।
জয় হোক তারুণ্যের।
সেদিন ছবির হাটে গুড়ের চা দেখে আপনার কথা আলাপ করছিলাম আমি আর শান্তু।
শান্তু? এই শান্তুটা আবার কে? আমি তো একজনকে চিনতাম তার নাম শান্ত
চোখে পানি আসলে তো চলবে না। হাতে লাঠি রাখতে হবে। প্রয়োজনে বন্দুক।
মোবাইলে লেখি। পারি না ভালো। ভুল হয় অনেক। বুঝে নিবেন না? ছোট ভাইরে কত নামেই ডাকতে পারি। ভুল ধরেন যে! গুল্লির ইমো আসে না কেন?
আমগো লগে দেখা কইরেন একদিন!
প্রত্যেকদিনতো দেখা হচ্ছেই উস্তাদ। আপনার কি মনে থাকছে না?
প্রত্যেকদিন কমন দেখা হচ্ছে শান্ত ভাই, শুভ ভাই,রাসেল ভাই,টুটুল ভাই আর চা এর দোকানের ইমনের সাথে!
আপনে কুনজন?
মীর, আমার মনতব্যের ১ম প্যারা কিভাবে মুছে গেছে জানিনা । আমি লিখেছিলাম, শাহবাগের তরুণদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা, তারা জয়ী হোক । আমার পি সি খারাপ হয়ে পড়ে আছে । টেবলেট দিয়ে লিখছি ।ঠিক মতো হাত করতে পারছিনে এখনো । অনেক অসুবিধে সত্বে ও....। [আশা এ টুকু মিলিয়ে পড়ে নেবেন । ]
একপ্রস্থ পলি পড়ে এবং তার উপরে নতুন জীবনের উন্মেষ ঘটে - ভারী সুন্দর তো লাইনটা.
থ্যাংক য়ু।
মন্তব্য করুন