শঙ্খচূড়া তখন আপনমনে কি ভাবছিল
রাতের আঁধারে পদ্মার ঘন কালো জলরাশির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়ছিল শঙ্খচূড়ার সেই চুলগুলি। যার মায়ায় আক্ষরিক অর্থেই সাত সমুদ্দুর পাড়ি দিয়ে ছুটে এসেছিল আনন্দধারা। কার কোথায় জন্ম, কোথায় বেড়ে ওঠা জানা ছিল না তাদের কারোই। শুধু এক মহাজাগতিক মাহেন্দ্রক্ষণে একটি দশমিকের-পর-অযুতসংখ্যক-শূন্য-বসিয়ে-লেখা-এক-শতাংশ-সম্ভাবনা সমুদ্রের গভীর তলদেশ থেকে বুদবুদের মতো উঠে এসে ফেটে পড়েছিল তাহিতি দ্বীপমালার ক্ষুদ্র একটি অংশ, যাকে দ্বীপও বলা যায় আবার সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা চরও বলা যায়; তার জনমানবশূন্য সৈকতে।
শঙ্খচূড়া তখন আপনমনে কি ভাবছিল সেই জানে না আর। আনন্দধারা তখন কোথায় জীবনের সংগ্রাম খুঁজে বেড়াচ্ছিল ইয়ত্তা নেই তারও আর। কিন্তু বুদবুদটা ফেটে যাওয়ার পর, দুজনের জীবন পাল্টে গিয়েছিল ভীষণভাবে। অভিকর্ষ তার স্বভাববলে দু'জনের শরীর দু'টোকে নিচের দিকে টেনেছে ঠিকই, কিন্তু কোন অজানা আকর্ষণ দু'টি আপাতবিচ্ছিন্ন মনকে একদিকে টেনেছে অবিরাম।
সেই অমোঘ আকর্ষণে হিমালয়ের পাদদেশে খুব বৃষ্টি হলো বছরজুড়ে। বন্যায় ভাসলো আশপাশের আঠেরো গাঁ। মানুষের সেকি কষ্ট! গাভীর দুধ ভেসে গেল পানিতে। বাছুর ঠায় দাঁড়িয়ে মলিন চোখে চেয়ে রইলো। মানুষ বসে রইলো বাড়ির চালে। আর নৌকায় করে দলে দলে ট্রাফিক পুলিশের ভেস্ট পরা লোকজন এসে টোপলায় ভরা চাল, চিড়া, গুড়, লবন, স্যালাইন বিলিয়ে গেল।
অর্ধগোলক পেরিয়ে আনন্দধারা যেদিন তার শঙ্খচূড়ার দেখা পায় সেই দিনটিতেই বানের পানি নামতে শুরু করেছিল পদ্মার বুকে। শঙ্খচূড়ার উড়তে থাকা চুলগুলি ছোঁয়ার সুযোগটুকুও পায় নি সে। বুদবুদ ফেটে পড়ার চেয়ে তড়িৎ পদ্মার বুক সলিল সমাধি হয়েছিল।
দুঃখে ফেটে গিয়েছিল শঙ্খচূড়ার ছোট্ট বুকও। সেও রাখেনি মানবজীবন আর। আনন্দধারাকেও কখনো দেখা যায় নি এই চরাচরে তারপর।
মন্তব্য করুন