সাইবার যোদ্ধারা অপ্রতিরোধ্য : অনলাইনে কোনঠাসা জামায়াত-শিবির
আন্দোলনের এখন দু’টি ফ্রন্ট। প্রজন্ম চত্বর আর ইন্টারনেট। প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনে যেভাবে লাখো জনতা যোগ দিচ্ছেন প্রতিদিন, ঠিক তেমনিভাবে অনলাইনেও প্রতিদিন জামায়াত-শিবির তাড়ানোর কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছেন লাখো জনতা। অল্প সময়ে ব্লগস্ফিয়ার, ফেসবুক, টুইটারসহ সর্বত্রই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে তারা। প্রতিটি ব্লগেই তাদের বিরুদ্ধে ছাপানো লেখাগুলো ব্যপক পাঠকপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফেসবুকে শিবির বিরোধী স্ট্যাটাসগুলো শেয়ার হচ্ছে হাজার-হাজারবার। অপরদিকে নিজেদের ব্লগেও নিজেদের পক্ষে কিছু লিখে সুবিধা করতে পারছে না জামায়াত-শিবির। সোনার বাংলাদেশ ব্লগে তাদের পক্ষাবলম্বন করে ছাপানো লেখাগুলোয় গড়ে হিট পড়ছে ২৩টা-২৫ টা করে। মন্তব্যের সংখ্যা অধিকাংশ পোস্টেই শূন্য। গণপ্রতিরোধের মুখে জামায়াত-শিবির এখন আর নিজেদের ওপরেই ভরসা রাখতে পারছে না।
সেই সঙ্গে প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকে জোরদার ও বিপদমুক্ত রাখতেও ২৪ ঘন্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অনলাইনের যোদ্ধারা। শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ পাতায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিট পর্যন্ত লাইক পড়েছে ৩৭ হাজার ৯২৪টি। এ পাতাটির মাধ্যমে প্রতিদিনই উঠে আসছে জামায়াত-শিবিরের নানারকম নাশকতামূলক গোপন চক্রান্তের খবর। আন্দোলনের ৯ম দিন (বুধবার) সকালে খবর আসলো, প্রজন্ম চত্বরে পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়াবে শিবির এবং দোষ চাপাবে জনতার ঘাড়ে। শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ পাতায় খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণ সাবধান হয়ে গেলেন। বুধবার সারাদিন প্রজন্ম চত্বরে বিশেষ নজরদারি চালানো হলো। এভাবেই অনলাইনে গড়ে ওঠা শক্তিশালী প্রতিরোধ বারবার শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বিফল করে দিচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মধ্য দিয়ে উঠে আসছে অনেক প্রতিবাদী স্লোগান, আন্দোলনের নিত্যনতুন আইডিয়া, প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ খবরাখবর ও টুকিটাকি। আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে একজন পোলিওআক্রান্ত তরুণী স্ট্রেচে ভর করে আসছেন প্রজন্ম চত্বরে। তাকে নিয়ে একটি মর্র্মস্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়েছেন শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ পাতার সদস্য এ এন ফয়সাল আহমেদ। স্ট্যাটাসটির চুম্বক অংশ তুলে দেয়া হলো-
“রাত তখন প্রায় পৌনে ৩টা। স্থান- শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর (১০ ফেব্রুয়ারি)। দুপুরের পর এক কামড় পরটা আর ৩ কাপ লাল চা ছাড়া পেটে কিছু পরে নাই। সাইবার যোদ্ধা টিম তখন মোটামুটি বেকার। রাতে ৬-৭ জন থাকবে আর আমি সহ কয়েকজন ঢাকা ভার্সিটির হলে চলে আসবো। সকালে আবার টিম চেঞ্জ হয়ে রাতজাগারা ঘুমাবে।
কয়েকজন মিলে জাদুঘরের সামনে অলস সময় পার করছিলাম। এ সময় হঠাৎ দেখি একজন মোটামুটি ২৬-২৭ বছর বয়স্ক এক আপু আসছেন স্ট্রেচ এ ভর দিয়ে। খুবই অবাক হলাম - এতো রাতে একটা অসুস্থ মানুষ ও এই আন্দোলনে! নিজ থেকেই সামনে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলাম। দুটি কথা বলার অনুমতি নিয়ে জানতে পারলাম, নাহ কোন এক্সিডেন্টে তিনি পা হারাননি, জন্ম থেকেই পোলিওর কারনে এই অবস্থা। সরাসরি জানতে চাইলাম, এত রাতে এখানে আন্দোলনে? ভয়-দ্বিধা-সঙ্কোচ নাই? পাশে থাকা ছোট ভাইকে দেখিয়ে জানালেন, আমরা তো প্রথম দিন থেকেই প্রতিদিন রাত ৩ টায় বাসায় ফিরি। নিউ মার্কেটের দিকে বাসা হবে, জিজ্ঞাসা করা হয় নি। জানালেন, একেবারে নিখাদ মনের টানে, বিবেকের টানে ছুটে আসেন এখানে প্রতিদিন। সন্ধ্যা ৭ টায় অফিস থেকে সরাসরি শাহবাগে চলে আসেন। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেন। গায়ের জামা ঘামে ভিজে, আবার বাতাসে গায়ে শুকায়। প্রতিদিন কিছু তরুনকে জোর করে বাসায় নিয়ে খিচুড়ি খাইয়ে দেন। এর মাঝে একজন উনাকে মেসেজ ও পাঠিয়েছেন অজানা একটি নম্বর থেকে, এক পা তো লুলা, আরেক পাও লুলা করে তোকে পরপারে পাঠিয়ে দিবো।”
স্ট্যাটাসটি দেয়ার মাত্র ৫৪ মিনিটের মাথায় বেলা ১২টা ২৭ মিনিটে এর লাইকসংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৬৫৭-তে এবং স্ট্যাটাসটি শেয়ার করা হয়েছিলো ৮৮ বার। ফয়সালের মতো করে গণমানুষের কথা তুলে আনছেন আরো অনেক অনলাইন যোদ্ধা। ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্তর্জালে। সচলায়তনের ব্লগার ষষ্ঠ পাণ্ডব তার ‘শাহবাগের টুকরো গল্প’ লেখায় তুলে এনেছেন দুই সবজি বিক্রেতার কথোপকথন। তুলে দেয়া হলো হুবহু-
“মহল্লার সবজীর দোকানের পাশে রাস্তার ওপর মাংস বিক্রির অস্থায়ী ব্যবস্থা। সবজী বাছতে বাছতে এই দুই দোকানের বিক্রেতাদের কথোপকথন শুনি।
-শাহবাগ গেছিলি?
-হ। কাইল দুইটা বাজে গেছিলাম, ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা সাতটা।
-দোকান ফালায়া গেছিলি?
-ছোট বাইরে বহায়া গেছিলাম। ঠ্যাকা দিয়া রাখছে।
-দোফরে গেছিলি ক্যা?
-হুনছিলাম দোফরের দিগে শাহবাগে মানুষ কইম্যা যায়। হের লাইগা দোফরে খাইয়্যাঐ গেসিলাম গা।
-আইজ যাবি না?
-হ, যামু। দোকান বন্ধ কইরা রাইতে যামু। তুই যাবি না?
-হ, আর এক পিছ গোস আছে। এইটা ব্যাচা অইলেই যামু গা।
এই মানুষগুলোর পরিচয় কতোজনে জানে? অথচ কতো সহজে জ্ঞানপাপীরা এদের গায়ে ড্রাগঅ্যাডিক্ট, গাঁজাখোর, নাস্তিক, আওয়ামী লীগের ভাড়াটে এমনসব ট্যাগ লাগিয়ে দেয়! শাহবাগে যাবার ভাড়াটা কেউ এদের দেয় না। সেখানে স্লোগান দেবার জন্য কোন টাকাও এরা পায় না। দিনের কাজে এক ঘন্টা কামাই দিলে তাদের এক ঘন্টায় আয়ই মাটি। অথচ নিজের কাজ ফেলে, নিজের রোজগার মাটি করে এরা শাহবাগের আন্দোলনে অংশ নিতে যায়। কীসেন টানে তারা সেখানে যায় জ্ঞানপাপীরা কি তা উপলব্ধি করতে পারে?”
মঙ্গলবার বেলা ৩টা ৩৬ মিনিটে প্রকাশিত এ লেখাটিতেও দুই দিনে কয়েক হাজার হিট পড়েছে। লাইক পড়েছে ১১৬টি। পরিশীলিত ব্লগ হিসাবে খ্যাত সচলায়তনে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সর্বাধিক পাঠকপ্রিয় লেখা হিসাবে দেখানো হচ্ছিলো এটিকে।
এসবের পাশাপাশি শিবিরের পক্ষ থেকে প্রজন্ম চত্বরের যোদ্ধাদের নিয়ে করা বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদ এসেছে বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুক পাতা থেকে সারাদিনই। অগ্নিকন্যা লাকী আক্তার নিজেও একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, “যারা আমাদের নামে কুৎসা রটনা করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, দেখুন আমরা যারা রাজপথে নেমেছি তারা কোন ধর্মের বিপক্ষে নই। তাই মাদ্রাসার ছাত্ররাও এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। জামাত শিবিরের ধর্ম ব্যাবসার রাজনীতি আইন করে বন্ধ করতে হবে। আসুন আন্দোলনে শামিল হই। জোট বাধি। সারা বাংলায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেই। রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি। মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনায় জেগে উঠি। জয় বাংলা, জয় জনতা।” (শাহবাগে সাইবার যুদ্ধে'র সৌজন্যে পাপ্ত।)
রাজনীতিবিদদের আন্দোলনবিরোধী বক্তব্যেরও সমুচিত জবাব এসেছে নানাভাবে। জনপ্রিয় ব্লগার আরিফ জেবতিক তার একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “বিএনপি নেতারা বিভিন্ন জায়গায় বলতেছেন, শাহবাগে নাটক চলতেছে। হ ভাই, কথা সত্য। এই নাটকে নায়ক জনতা, ভিলেন জামায়াত-শিবির। নাটক-সিনেমায় একটা ভাড়ের চরিত্র লাগে, ঐ পার্টে আপনারা ছাড়া তো আর কাউরে দেখতেছি না।” স্ট্যাটাসটি দেয়ার মাত্র ১০ ঘন্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় এতে ২২৩১ টি লাইক পড়েছিলো এবং ৩১৮ বার সেটি শেয়ার করা হয়েছিলো।
টিমটিমে জামায়াত-শিবিরের অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম: আন্দোলনকারীদের পক্ষে ইন্টারনেটে গড়ে ওঠা গণজোয়ারের বিপরীতে জামায়াত-শিবিরের অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের অবস্থা তথৈবচ। জামায়াতী ব্লগ ‘সোনার বাংলাদেশ ব্লগ’-এর সঞ্চালক নির্বাচিত স্টিকি লেখা ‘বছরের সেরা প্রতিবাদ- বাংলাদেশের শাহাবাগ’-এ ২ দিনে লাইক পড়েছে মাত্র ৪ টি। মন্তব্য পড়েছে ৯২ টি এবং হিট পড়েছে ১৩১৪টি। এ পরিসংখ্যান বৃহস্পতিবার বেলা ১ টা ১০ মিনিটের। লেখাটিতে কোনো বক্তব্য না থাকলেও আন্দোলনস্থলের কিছু ছবি রয়েছে এবং ব্লগস্ফিয়ারের চিহ্নিত কিছু ছাগু লেখাটির মন্তব্য কলামে আন্দোলনবিরোধী ও অশ্লীল বিভিন্ন কথা-ছবি ইত্যাদি জুড়ে দিয়েছেন।
ছাগু শব্দের উৎপত্তি নিয়ে অনলাইনে চলছে গবেষণা: অনলাইনে সব জামায়াত-শিবিরকে মূলত ‘ছাগু’ নামে ডাকা হয়। এ নামটির উৎপত্তি ২০০৬ সালের ২৪ মে। কিভাবে নামটির উৎপত্তি হয়েছে তা নিয়ে একটি ঐতিহাসিক লেখা লিখেছেন ২০০৫ সালে বাংলা ব্লগের যাত্রা শুরুর সময়কার একজন ব্লগার সুমন চৌধুরী। ব্লগে বর্তমানে এ ধরনের ইতিহাসভিত্তিক লেখার প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়ে যাবার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সচলায়তন ব্লগের ‘বাংলাব্লগাবর্তে ছাগু শব্দের উৎপত্তি’ শীর্ষক লেখাটিতে বলা হয়েছে, (পাঠকের সুবিধার্থে ঈষৎ সংশোধিত)-
“প্রথম প্রথম জামাতি ব্লগাররা মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে না গিয়ে বিভিন্ন আহ্লাদী কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে ডেনমার্কে মহানবীর কার্টুনের মতো বিষয়গুলো গুঁজে দিতো। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, ধর্ম-অধর্ম এইসব নিয়েই চলছিলো প্রথম সপ্তাহগুলো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পোস্ট আসতো। রাজাকারী পোস্টও আসতে। প্রতিবাদও হতো। এইসব কিছুর পাশাপাশি আবার সাহিত্যচর্চা চলছিলো। ফেব্রুয়ারি মাসের (২০০৬) ২য় সপ্তাহে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ। কামারুজ্জামানপুত্র ওয়ালীর (ব্লগার) পরিচয় বেরিয়ে পড়ায় সে প্রতিরোধের মুখে পড়ে। মলি নামের একে ব্লগার তার প্রতিবাদে ‘মেরুদণ্ডহীন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি...’ নামের পোস্টটা দেন। তুমুল প্রতিবাদ হয়। তারপর থেকে ব্লগের যাবতীয় তর্কবিতর্কের কেন্দ্রে এসে পড়ে মুক্তিযুদ্ধ। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের তর্কে যারা যারা ধর্মীয় মৌলবাদের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন তাদের সবাই চলে যান মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পক্ষে। মার্চের শুরুতে জঙ্গীবাদ নিয়ে লেখা মাসুদা ভাট্টির ধারাবাহিক উপন্যাস ‘তরবারির ছায়াতলে’র প্রথম কিস্তি জামাতিব্লগারদের চাপের মুখে বা স্বেচ্ছায় সামহোয়ারইন কর্তৃপক্ষ মুছে দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ব্লগে মুক্তচিন্তার সমর্থক ব্লগাররা ৫ ও ৬ মার্র্চ ধর্মঘট করে। এরপর থেকে ব্লগ পরিস্কার দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। ব্রাত্য রাইসু, মাহবুব মোর্শেদ, সাদিক মোহাম্মদ আলম ধরনের কিছু ব্লগার ‘নিরপেক্ষ’ ভাব দেখানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বটম লাইনে এসে রাজাকারপক্ষ গ্রহণ করে ফেলেন। এরপর ১৩ মার্চ ব্লগার আস্তমেয়ে’র একটি পোস্টের ১১ নম্বর কমেন্টে আলবদরপুর ওয়ালী প্রগতিশীল ব্লগারদের বেইসবল ব্যাট দিয়ে পেটানোর হুমকি দিলে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক ব্লগাররা তার প্রতিবাদে শিম্পাঞ্জি দিবস পালন করেন। দুষ্টু ছেলে অরূপ (ব্লগার) কোত্থেকে যেন বাঁদরের হাতে বেইসবল ব্যাটওয়ালা একটি ছবি জোগাড় করেন। ঐ ছবিকে সামনে রেখে শুরু হয় একের পর এক স্যাটায়ার। জামাতিরা চেষ্টা করলো প্রতিরোধের। কিন্তু হলো না। স্যাটায়ার লেখার ক্ষমতা থাকলে ওরা আর মৌলবাদী হবে কেন? ব্রাত্য রাইসু, মাহবুব মোর্শেদরা নিরপেক্ষভাবে ওয়ালীকে বাঁচাতে এসে গণরোষের মুখে পড়লো। যাই হোক, বেইসবল ব্যাটহাতে শিম্পাঞ্জিই ছিলো ঐ মুহূর্তে একইসঙ্গে ধর্মীয় জঙ্গী আর জামাত-শিবিরের প্রতীক। অনেক কথা বলে ফেলছি। কিন্তু ছাগু আগমনের প্রেক্ষিতটা বোঝাতে কিছুটা অন্তত ইতিহাস জানতেই হবে। এর মধ্যে জামাতি ব্লগারদের মধ্যে আবির্ভাব হয় ত্রিভুজের। শুরুতে ওয়ালী, আস্তমেয়ে, ভুত ইত্যাদির দিকে মানুষের মনোযোগ বেশি থাকায় সে তেমন নজরে পড়েনি। কিন্তু মার্চের শেষ থেকে ক্রমশ সকলের নজর কেড়ে নিলো ত্রিভুজ নামের ব্লগারের লেখালেখি। মার্চের সেই সোনাঝরা পোস্টগুলো সে মুছে ফেললেও তার পুরোনো ব্লগগুলিতে নজর দিলেই মন ভালো হয়ে যেত। কখনো ডারউইন, কখনো ধর্মতত্ত্ব, কখনো টেকমোল্লাবাদ নিয়ে প্রচুর জ্ঞানগর্ভ লেখা আর তাতে জামাতচক্রের মুহুর্মুহু সমর্র্থনে এপ্রিল নাগাদ সরাসরি জামাতশিবির পরিবারের সদস্যদের ছাড়িয়ে ত্রিভুজই হয়ে ওঠে নতুন প্রজন্মের টেকমোল্লাবাদের আইকন। মে মাসের শুরুতে অমি রহমান পিয়াল প্রাপ্তি নামে ক্যান্সার আক্রান্ত একটি শিশুর চিকিৎসার জন্য ব্লগারদের সহায়তা কামনা করে একটি পোস্ট দেন। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে যার যার সামর্থ্যমতো চেষ্টা করতে থাকে। এ সময় দীক্ষক দ্রাবিড়ের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ত্রিভুজ ক্ষেপে ওঠে। একে গুতা দেয়, তাকে গুতা দেয় পরিস্থিতি। তখন ব্লগার অরূপ একটি লাল ত্রিভুজের ভেতর রামছাগলের মাথা ঢুকিয়ে একটি ছবি তৈরি করে সমমনা ব্লগারদের শেয়ার করে। দুষ্টু ব্লগাররা এবার পালন করে রামছাগল দিবস। সেটা ছিলো ২০০৬ সালের ২১ মে। ত্রিভুজ সেইসময়কার বেশিরভাগ পোস্টই মুছে ফেলেছে। ২১ মে রামছাগলের মাথা বেরিয়ে আসার সেই ছবিটাই ছিলো ত্রিভুজকে পঁচিয়ে করা রামছাগল দিবসের সবগুলো পোস্টের আইকন। সেখানে সমমনা ব্লগারদের প্রায় সবাই লিখলেও ব্লগার ‘মুখফোড়’ লিখলেন না। পাঠকরা রীতিমতো অপেক্ষা করেছিল কিন্তু তার দেখা পাওয়া গেল না। তিনদিন পরে তিনি লিখলেন, ‘কেন আমি ছাগুরাম প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম না’ শীর্ষক একটি পোস্ট। লেখাটায় তেমন মন্তব্য না থাকলেও ছাগুরাম শব্দটা ব্লগারদের মনে গেঁথে গেল। ৩১ মে মুখফোড় লেখেন প্রথম ছাগুরাম কাব্য।”
এ পোস্টটিতে আরো বর্ণনা করা আছে এরপর কিভাবে ব্লগে ছাগু শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে গেলো এবং সকল জামায়াত-শিবিরের অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা ছাগু তকমাটি পেয়ে গেলেন। ছাগু নামের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বাংলা ব্লগে আরো লেখা রয়েছে। তবে তথ্যসূত্রের বিচারে এ লেখাটিই সেরা। এ লেখাটিতে অসংখ্য তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। যেগুলো এখনো ইন্টারনেটে খুঁজলে পাওয়া যায়। এ লেখাটি ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২.৪৩ মিনিটে প্রকাশ হবার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩ দিনে কয়েক হাজারের বেশিবার পাঠ করা হয়েছে। ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে ৬৬৮বার।
চলছে জামায়াতকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেবার কার্যকর পন্থা নিয়েও আলোচনা: আমার ব্লগের ব্লগার ডা. আইজুদ্দিন এর আগে লিখেছিলেন ‘জামায়াত-শিবিরের স্পন্সর ইসলামী ব্যাঙ্ক কিভাবে বয়কট করবেন’। সেটি অনলাইনে ব্যপক পাঠকপ্রিয়তা পাবার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ১০মিনিটে তিনি হাজির হন ‘আল বিদা ইবনে সিনাহ’ নামের আরেকটি লেখা নিয়ে। এখানে জামায়াতী অর্থায়নে পরিচালিত ইবনে সিনাহ’কে কিভাবে বর্জন করা যায় তার একটি কার্যকর পন্থা হিসাবে তিনি ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস কপি করে তুলে দিয়েছেন। যাতে বলা হয়েছে- “আমজনতা ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) ওষুধ কিনে তেমন রেভিনিউ দেয় না ইবনে সিনারে। ইবনে সিনা ফার্মার রেভিনিউ আসে ডক্তারদের প্রেসক্রাইব করার কারনে। কাজেই জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইবনে সিনারে বর্জনের কাজটা সবচে ভালো করতে পারবে ডাক্তাররা।”
আর আমাদের প্রিয় ব্লগ আমরা বন্ধুতে মাসুম ভাইয়ের 'পুনরায় পাঠ- জামায়াত-শিবিরের প্রতিষ্ঠান: আসুন চিনে রাখি ও বয়কট করি' পোস্টটি স্টিকি করে রাখা হয়েছে টানা ৭ দিন ধরে।
এ্ই সবকিছুর টম লাইন ওই একটাই-
একদফা একদাবি/ রাজাকারের ফাঁসি চাই।
---
গবেষণামূলক দারুণ পোস্ট। ভবিষ্যতের দলিল হিসেবে এসব লেখা বেঁচে থাকুক।
দারুণ একটা পোস্ট। টানিয়ে রাখার মতো। কারণ যারা অনেক আগে থেকেই অনেক কিছু জানে না তারা জানতে পারবে এই পোস্ট পড়ে। মীরকে ধন্যবাদ।
জনতার জয় হোক।
দারুন পোস্ট। আমার ইদানিং ছাগুদের সাথে রসিকতা করতে খুব ভাল লাগে। সেদিন দুলালভাইয়ের পোস্টে একজনের সাথে রসিকতা করলাম পরে শুনলাম রাগে দূঃখে নাকি দুলাল ভাইরে ব্লক দিছে
উইকিপিডিয়ার কথাটা যোগ করি - উইকিপিডিয়াতে জামাতি ছাগুদের পেইড এজেন্টরা গত কয়েক মাসে গোপনে গোপনে তাদের রাজাকার নেতাদের সব আর্টিকেল ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলেছিলো। কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণরা এগিয়ে এসেছেন। উইকিপিডিয়ার এসব নিবন্ধে আগে ছাগু এজেন্ট এসে তাদের প্রোপাগান্ডা নির্বিঘ্নে ভরে দিয়ে গেলেও এখন আর ছাড় দেয়া হচ্ছেনা। ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে ওয়াচ করা হচ্ছে সব নিবন্ধ। ছাগু আক্রমণ হলেই ঠেকানো হচ্ছে সেই তথ্য সন্ত্রাস।
দারুণ ও প্রয়োজনীয় পোস্ট
একদফা একদাবি/ রাজাকারের ফাঁসি চাই।
দুর্দান্ত পোস্ট।
মন্তব্য করুন