বিষাদমাখা দিনগুলো কাটে কবিতায়
গত ক'দিন ধরে বেশ গরম পড়েছে আমাদের শহরে। দিনের বেলা রাস্তায় খুব কম মানুষই দেখা যায়। কেউ কেউ আছে, যারা সূর্যের আলোয় পুড়ে পুড়ে চামড়ায় একটা মীন ট্যান লাইন ফুটিয়ে তোলার জন্য, সবুজ ঘাসে চাদর বিছিয়ে শুয়ে থাকে। তারাও এখন সংখ্যায় কমে গেছে। গ্রীষ্মের আগমনের সাথে সাথে চারিদিকে যেমন বেশ একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল, সেটা এখন অনেক কম।
সন্ধ্যার পর আবার আবহাওয়ায় বেশ ভাল একটা পরিবর্তন চলে আসে। একটা ঝিরঝিরে ঠান্ডা বাতাস; সূদুর উত্তরমেরু থেকে অনেকগুলো ছোট-বড়, ঠান্ডা-গরম, গাছ-গাছালিময়-দালান-কোঠায় ভরা শহর পেরিয়ে, বয়ে যায় আমাদের শহরের ওপর দিয়ে। অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে আসার পরও, সেই বাতাসে মেরু অঞ্চলের রেশ লেগে থাকে ষোলআনা। আমার লোমকূপের গোড়াগুলো ওই বাতাসটাকে পছন্দ করে না একটুও। আর বাতাসটাও যা! দুনিয়ার আর সবকিছু রেখে ছোট্ট, স্পর্শকাতর লোমকূপের গোড়াদেরকেই গিয়ে ছুঁতে হয় ওর। যেন অন্য কোনো অঞ্চল বুঝবে না ওর কদর।
লোমকূপেরা বাতাসের এই কাব্যিক ঢংটাকে পছন্দ না করলেও, আমি করি। আমার মনে হয় কবিতা আসলে সবাইকে স্পর্শ করে না। বেশিরভাগ মানুষকে সে ছেড়েই দেয়। তাদের নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগ দেয়। কিন্তু কাউকে কাউকে ছাড়ে না। উত্তুরে শিরশিরে বাতাসের মতো ভীষণভাবে ছুঁয়ে দেয়। প্রকট করে ফুটিয়ে তোলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তুলনায় সেই ব্যক্তির ক্ষুদ্রতা। এ যেন কথার জাদুতে মানুষকে অসহায় করে দেয়া। উত্তুরে বাতাস তার শক্তি জোগাড় করে জমে থাকা বরফদের কাছ থেকে, কিন্তু কবিতারা? ওরা শক্তি জোগাড় করে জমে থাকা স্মৃতিদের ভিড়ে ঘুরে ঘুরে।
যেমন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের 'দিন যায়' কবিতাটা। জয়দেবের মেলার মতো একটা মেলা তো আমারও ছিল। বৈশাখী মেলা। সেখান থেকে ভেসে আসতো গান, ধুলাবালি আর নূপুরের শব্দ। আলবত ভেসে আসতো।
গ্রীষ্ম কালটাই আসলে যতো নষ্টের মূল। কি দরকার সূর্যটার প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেকসুর রোদ্দুর বিলানোর? আচ্ছা বিলাতে চায় বিলাক, কেন আমার বারান্দাতেই এসে সেই রোদকে আড়াআড়ি ঠিকরাতে হয়? আচ্ছা নাহয় পড়লো বারান্দায়; কেন আমি যখন সকালে ওখানে যাই একটু সময়ের জন্য, তখন সেই রোদের নিয়ম করে আমার অর্ধেক কপাল জুড়ে থাকতে হয়? কি সমস্যা সেই রোদের?
আমি বুঝি না। মাঝে মাঝে মনে হয়, সবকিছুর পেছনে কোথাও একটা অতৃপ্ত কিন্তু বাস করছে। কোথাও হয়তো একতাড়া অশরীরী যদি অপেক্ষা করে আছে, স্রোতের বেগে বের হয়ে আসার জন্য। আমি দেখি বার্চের চূড়াগুলো থম ধরে দাঁড়িয়ে অপলক তাকিয়ে থাকে আকাশপানে। ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে বহু আগে শেখা কোনো বাউল গানের সুর মনে পড়ে যায়। তখন মনে হয়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ঠিকই বলে গেছে, "দিন যায় রে বিষাদে, মিছে দিন যায়"।
"সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
অর্ধেক কপাল জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শুধু ঝড় থমকে আছে গাছের মাথায়
আকাশমনির ।
ঝড় মানে ঝোড়ো হাওয়া, বাদ্ লা হাওয়া নয়
ক্রন্দনরঙের মত নয় ফুলগুলি
চন্দ্রমল্লিকার ।
জয়দেবের মেলা থেকে গান ভেসে আসে
সঙ্গে ওড়ে ধুলোবালি, পায়ের নূপুর
সুখের চট্ কা ভাঙে গৈরিক আবাসে
দিন যায় রে বিষাদে, মিছে দিন যায়।"
---
বহুদিন পর ব্লগে লগ ইন করে প্রথম আপনার লেখা পেলাম। আছেন কেমন?
ধনেপাতা
আমি ভাল আছি। আপনি কেমন?
সবাই কী রকম করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। একটা সময় ব্লগে প্রতিদিন লেখা জমা পড়তো ১৫ থেকে ২০ টা করে অথচ এখন মাসেও ১০ টা হয় না।
ধন্যবাদ মীর ভাই আপনার লিখার জন্য।
Onek din por blog e ese apnar lekha porlam. Valo laglo. Kemon achen
ধন্যবাদ। আমি ভাল আছি। আপনি কেমন?
মন্তব্য করুন