জীব থেকে জড়, জড় থেকে বিলুপ্তি, বিলুপ্তি থেকে নক্ষত্রকণা
ছোট ছোট অনেক সুখের কথাই আমি মনে রাখতে পারি না। অথচ দুঃখগুলো ঠিকই মনের কোথায় যেন ঘাপটি মেরে থেকে যায়। সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় সময়গুলোতে ফিরে এসে মনে করিয়ে দিয়ে যায়- হু হু বাবা আমরা কিন্তু আছি। কোনোকিছুতেই যেন খুশি খুশি না মনে হয়।
ব্ল্যাক সী বা কৃষ্ণসাগর আর মারমারা সাগরকে যে প্রণালীটি সংযুক্ত করেছে তার নাম বোধ করি আমরা সবাই জানি। বসফরাস প্রণালী। এ প্রণালীটির নাম স্থানীয় ভাষায় সোনালী শিং। ওখানে গিয়ে রানী হেরাডিটাস গাভীর রূপ ধারণ করে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করেছিলেন জিউসের কাছ থেকে। সেই গাভীর শিং ছিল সোনালী বর্ণের।
ভালিটোভা নদীর যেকোন ব্রীজের ওপর দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিলে আমার মনে হয় ইউরোপের জাগরণের পর থেকে এখন পর্যন্ত পুরো বিবর্তনটার একটা ভাসা ভাসা ছবি দেখা যায়। এক মধ্যরাতে প্রায় ২টার বেশি বাজে মতো সময়ে, একদম একা আমি ভালিটোভা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে হঠাৎ পঞ্চদশ শতকের পোশাকে তোমায় দেখেতে পেয়েছিলাম। অথচ আমি সে সময় প্রাগে আরেকজনের স্মৃতি মন থেকে ধুয়ে ফেলে আসার আশায় গিয়েছিলাম।
সে আশা তো পূরণ হয়ই-নি, বরং পুরোনো আরও একটা স্মৃতি এসে পুরো অবস্থাটাকে লেজে গোবরে করে দিয়ে গিয়েছিল। সে সময় থেকে ধীরে ধীরে আমি কান্ট্রি-সং শোনা কমিয়ে হিপ-হপ শোনা বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। ব্লু সোয়েডের হুকড্ অন এ ফিলিং পুনঃস্থাপিত হয়েছিল ও.টি. জেনাসিসের কাট ইট দিয়ে।
তবে লেজে গোবরে অবস্থার মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল যে জন তার বিদায় কাঁদিয়েছিল আরও বেশি। প্রতিটি ভাঙ্গা-গড়ার খেলা আমায় শক্তিশালী করেছে ঠিকই, কিন্তু পরের ভাঙ্গনের তীব্রতাটাও ছিল অধিকতর শক্তিশালী। ধীরে ধীরে আমি রক্ত-মাংসের মানুষ থেকে, অনুভূতিহীন জড়পদার্থে রূপান্তরিত হয়েছি।
মনের গহীনে একটা টনের্ডো অনেকদিন ঘুরে ঘুরে হাহাকার করেছিল, যদিও কিসের হাহাকার তার কোনো দিশা পাওয়া যায় নি। আমি টনের্ডোটাকে পাত্তা দিতাম না দেখে সেটা রেগে ধীরে ধীরে আমার অনুভব-ক্ষমতাকে পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই আজকাল খুব কম বিষয়ের প্রতি নিজের আগ্রহের প্রতিফলন দেখতে পাই। জীব থেকে জড়, জড় থেকে বিলুপ্তি, বিলুপ্তি থেকে নক্ষত্রকণা- এই চক্রের পাকে আটকে পড়ার আগে আমি চেয়েছিলাম একবার হয়তো তোমার সাথে আমার দেখা হবে। যে জলে সেই টনের্ডোর নির্বাণ ছিল, সে জলের একটি কণা আঙুলে তুলে দেবো ছড়িয়ে মেঘপিওনের উদ্দেশে।
কষ্ট পেলে ভেবে নিয়ো তোমার-আমার সেসব দিনের কথা। আর সুখের দিনে থেকো তোমার ঘরের আগল খুলে। তোমার সাথে আমার ছিল এক জনমের মিতা, কেউ ছিল না বুঝতে সেটা, শুধু আমাদের ভুলে। কখনও যদি ভেবেছো সেদিন ছিলাম দু'জন সুখী, সেই স্মৃতিটার নেই কোনো দাম, দাও নি তুমি, আমিও না, হারিয়ে গেছে সোনালী ডানার পাখি।
---
মন্তব্য করুন